নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রেডিট কার্ডে ভালোবাসা......!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০


মেয়েটি একটি ক্রেডিট কার্ড করলো, নাহ ঠিক নিজ থেকে করেনি, তাকে জোর করে করানো হয়েছে!

ক্রেডিট কার্ড কি কেউ নিজ থেকে করে না করতে চায়?

বিভিন্ন ব্যাংকের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভরা এসে বসে থেকে থেকে বিরক্ত করে ফেলে, ঠিক কিনা?

তারপর অবশেষে আমরা ভীষণ ভীষণ বিরক্ত হয়ে মুখের সামনে সব সময় এসে বসে থাকা আর ক্ষণে ক্ষণে ফোন ও এসএমএস দিয়ে নিদারুণ বিরক্তির বিদায় করতে, নিতান্ত উপায় না পেয়ে একটি ক্রেডিট কার্ড করে থাকি।

এরপর আর কোন খোঁজ থাকেনা। সেই এক্সিকিউটিভের মুখও আর দেখা যায়না, সাথে থাকে নতুন ঝকঝকে ক্রেডিট কার্ড। এরপর শুরু হয় আরামে আর আনন্দে সেই ক্রেডিট কার্ডের সর্বাত্মক ব্যবহার। নগদ পয়সা তো আর লাগছেনা, সমস্যা কি? খরচ কর, যখন যেথায় আর যত খুশি! মন-প্রান খুলে, দারুণ উৎসাহে।

ঠিক তেমনি, রোজ রোজ ক্লাসের সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা আর প্রতিরাতে বা সন্ধায় বান্ধবীকে দিয়ে বাসার ল্যান্ডফোনে ফোন করে ডেকে নেয়ার (কারণ তখনো মোবাইল এতো সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি) গা ছমছমে ভয়াবহতা দূর করতে তার ভালোবাসার ক্রেডিট কার্ডের মায়াজালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। সে ক্রেডিট কার্ডও ছিল অসীম মেয়াদের। দিতে হতনা কোন মাসিক বিল বা আসতোও না কখনো কোন বিল! যে কারণে খরচও হতে থাকলো লাগাম ছাড়া। তবে বাৎসরিক একটা চার্জ ছিল! যেটা মেয়েটি ইচ্ছে করেই দিয়ে রাখতো! পাছে আবার ফেঁসে যায় কোন কারেন্ট জালে, যেখান থেকে বের হতে পারবেনা।

কিন্তু সেই ক্রেডিট কার্ড বড়ই চালাক! দেয় যখন-যেথায় আর যাই লাগুক মেয়েটির। কখনো স্নেহ, কখনো ভালোবাসা, কখনো নিঃস্বার্থ কোন উপকার, কখনো কাছে-পিঠে, কখনো রোদে বা বৃষ্টিতে, কখনো ছেঁকে ধরা কুয়াশায়, কখনো চিটচিটে গরমে। আর সেই ক্রেডিট কার্ডের নিয়মিত খরচের কারণে মাঝে মাঝেই পেত কিছু বোনাস! ফুল ও চিঠি স্বরূপ! যে বোনাসের লোভে লোভী হয়ে আর আরও বোনাস পেতে, আরও বেশী করে খরচ করা শুরু করলো সেই ক্রেডিট কার্ড।

আগে প্রয়োজনে খরচ করতো, এখন অপ্রয়োজনেও করে! আগে ক্রেডিট কার্ড মেয়েটির ইচ্ছে বুঝে জানান দিত বা এগিয়ে আসতো, আর এখন বোনাসের লোভে মেয়েটিই ক্রেডিট কার্ডকে সাথে সাথে আর পাশে পাশে রাখে। খরচ করে ইচ্ছা আর অনিচ্ছায়ও, প্রয়োজন আর অপ্রয়োজনেও! যে কারণে বোনাস পায় ঠিকই নিয়মিত, অনেক অনেক ফুল আর বড় বড় চিঠি! এভাবে বোনাস স্বরূপ ফুল আর চিঠির লোভে অসীম মেয়াদের ক্রেডিট কার্ডের খরচ করতে করতে এক সময় ভালোবাসার ঋণে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়লো!

লেখাপড়া শেষ হল। এবার বিদায়ের পালা। বিদায় নিতে গিয়েই বুঝতে পারলো সে আঁটকে গেছে ঋণের ফাঁদে, ভালোবাসার ক্রেডিট কার্ডের মায়াজ্বালে! নাহ, অনেক অনেক আর অনেক হৃদয় উজাড় করে দেয়া ভালোবাসার ক্রেডিট কার্ড তার কাছে ঋণের পরিশোধ চায়নি কখনোই। শুধুই দিয়ে গেছে, নিয়েছিল বাৎসরিক চার্জ মাত্র। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড জানতো খুব খুব আর খুব ভালো করেই যে এই ঋণের ভার সে বইতে পারবেনা। মেয়েটিকে তাড়িয়ে বেড়াবে প্রতিক্ষণ, প্রতি মুহূর্ত। করে তুলবে অস্থির আর উন্মাদ। কারণ এতো এতো ভালোবাসা আর ক্রেডিট কার্ডের ঋণের মায়াজালে বেঁধেছে যে সে কিছুতেই এর থেকে বের হতে পারবেনা। তাই কার্ড নিশ্চুপ! একেবারেই।

কিন্তু মেয়েটি তো ঋণ মুক্ত হতে চায়। কিন্তু কিভাবে? অনেক অনেক খুঁজে খুঁজে কোন উপায় সে বের করতে পারলোনা। তার ছিলনা তেমন কোন সম্পদও যা দিয়ে শোধ করা যায়, সাত বছরের ক্রেডিট কার্ডে পাওয়া ভালোবাসা। তাই সে নিজেকেই করলো সমর্পণ। পরিশোধে আজন্ম ঋণ! ক্রেডিট কার্ডে কেনা ভালোবাসার ঋণ! এবার ক্রেডিট কার্ড সুযোগ পেল, মহা সুযোগ, যে সুযোগের অপেক্ষায় সে এতো এতো সীমাহীন ঋণ দিয়েছে। দিয়েছে ভালোবাসা, সময় আর উজাড় করে সব সবটুকুই! বছরের পর বছর ধরে। কোন হিসেব না করে। সীমাহীন ভাবে।

এবার ঋণ গ্রহীতার ঋণ শোধের পালা শুরু হল। না ক্রেডিট কার্ড নিজ থেকে চায়নি। ঋণ গ্রহীতাই তার দায়বদ্ধতা থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু করলো। আর ক্রেডিট কার্ড চুপ করে গেল! না, এমন নয় যে আর ভালোবাসা দেয়না, দেয় যখন যেখানে আর জতটুকু দরকার, ঠিক ততটুকু। এখন শুধু দেয়া ঋণের মুনাফা পায় আর সুখে ভেসে গান গায়।

কিন্তু ঋণ যে পরিশোধ করে, সে পড়েছে মহা ঝামেলায়! কেমন?

এতো এতো ঋণ যে করেছে সে বুঝতেই পারেনি। তাই এখন সেই ঋণের মূল পরিশোধ তো অনেক অনেক দূরের ব্যাপার, মুনাফা দিতে দিতেই কুল কিনারা করতে পারেনা! যে কারণে সময় পেলেই মিনিমাম পরিমাণ পরিশোধ করে। তবুও পারেনা কুলিয়ে উঠতে, মাস শেষে যেই সেই। পাওনা যা ছিল তাই আছে, আগের বারের মিনিমাম পেমেন্ট মুনাফা হিসেবে খেয়ে নিয়ে সুখের চাদরে মুখ ঢাকা দিয়েছে! আর পরবর্তী পেমেন্টের জন্য বিল রেডি করে মেসেজ পাঠিয়েছে!

এভাবে দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর। মাসের শেষে বিল দেয়, বোনাসের অর্ধেক দেয়, তবুও কমেনা ঋণের পাহাড়! কমবে কিভাবে? ভালোবাসার ঋণ জমেছে, জমেছে দিন-মাস আর বছরের ঋণের সুদ আর তার চক্রবৃদ্ধি হার! কোন ভাবেই কমেনা এতটুকু ঋণ! তাই অবশেষে ঋণ গ্রহীতা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে। বলে দেয় আর পারবেনা সইতে, পারবেনা টানতে একা একা এই ঋণের বোঝা। তাকেও সঙ্গী চায়। মাফ করে সুদের হার, কমিয়ে ঋণের পাহাড়!

তাই শেষে সঙ্গী হল, এক অন্যের, ব্যাথা-বেদনার আর হাসি-কান্নার আর অপার ভালোবাসার। ভালোবাসার ঋণ এখন স্থবির। শোধ করেবেনা কেউ কখনো, যে যখন পারবে দেবে তার সাধ্যমত। এভাবেই চুক্তি হয়। কেটে যায় অনন্ত সময়!

তাই বলি কি মেয়ে হোক বা ছেলে, শুধু নিয়ে নিয়ে ঋণী না হয়ে, একটুখানি দিতেও হবে! হোক সে ভালোবাসা বা অন্য কোন কিছু।

পাছে এমন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে একা একা দেউলিয়া হয়ে অনন্ত আগুনে পোড়ে!

তখন না পারবে কইতে আর না পারবে সইতে.........!!!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার...কবিতার মত করে লিখেছেন!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যাবাদ। আরও আসছে......... হা হা হা

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৪

চন্দ্রপ্রেমিক বলেছেন: গল্পের মাঝে শিখছে। অপরিমেয়...

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬

সজল জাহিদ বলেছেন: ঠিক বুঝলাম না ভাই? গল্পের মাঝে শিক্ষা বোঝাতে চেয়েছেন কি?

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৯

চন্দ্রপ্রেমিক বলেছেন: শুধু ঋন নয়, দিতেও হবে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.