নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডার্লিং দার্জিলিং-পাঁচ (সেন্ট পলস স্কুল ও একটি আকাঙ্ক্ষা......)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১০

যেবার দার্জিলিং যাই এই স্কুল সম্বন্ধে তেমন কোন ধারনা আকর্ষণ বা বিশেষ দর্শন ইচ্ছা ছিলনা। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই কাঞ্চঙ্গঘার প্রেমে নিমজ্জিত হয়ে সকাল গড়িয়ে যাওয়াতে সেদিনের মত কালিম্পং বা মিরিখ যাবার পরিকল্পনায় শেকল পরিয়ে দার্জিলিং শহর ও এর আশে-পাশের স্পট গুলো ঘুরে দেখবো বলে মনস্থির করলাম।

সেই ভাবনা ভেবে নতুন করে শুরু করতে গিয়ে দেখি, দার্জিলিং এর রঙ-বেরঙ এর দোকান দর্শন আর কেনাকাটার নতুন নেশায় আক্রান্ত হয়েছেন আমাদের দলের প্রায় সকলেই, অবশ্যই আমি ছাড়া। কারণ ওসব ফালতু কেনাকাটার অর্থ-সময় বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নাই। আমি নিজেই এক ফকির, প্রায় ভিক্ষে করে-চেয়ে-চিন্তে যাই ভ্রমণের নেশাটা একটু কাটাতে সেখানে এই কেনাকাটার মত বিলাসিতা আমাকে মানায় না বা তেমন টানেও না।

তাই সেবার আমি আমার অন্যান্য সদস্যদের কেনাকাটার সুযোগ করে দিয়ে একা-একাই বেরিয়ে পড়লাম সারাদিনের জন্য কোন এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আর সেই অজানা গন্তব্য যে দার্জিলিং শহরের সবচেয়ে উঁচু চুড়া এবং সেই চুড়ায় অবস্থিত এমন মোহনীয় রঙ-রূপ আর সৌন্দর্যের আঁধারসম একটি অসাধারণ স্কুল হবে সেই চিন্তাই করিনি আর সেই স্কুল যে আমার ভিতরে একটি নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি করবে সে কল্পনাও করিনি।

তবে মাঝে-মাঝে ঘটেনা কল্পনার চেয়েও বেশী কিছু? এটি তেমনই একটি গল্প, যা সুপ্ত ইচ্ছা তৈরি করেছে আমার ভিতরে। তো সেই পাহাড়ের চুড়ায় উঠেই চোখে পড়লো সিনেমায় দেখা সেন্ট পলস স্কুল! দুই পাশের সবুজ মখমলের গালিচার মাঝে এক চিলতে পীচ ঢালা রাস্তা একেবেকে উঠে গেছে পাহাড়ের চুড়ায়, পাহাড়ের বুক চিড়ে, ঠিক সেন্ট পলস এর পিছনের সবুজে ছাওয়া খেলার মাঠ ও ছাত্রদের হোস্টেলের গেটে।

কিন্তু অনেক কষ্ট করে সেই চুড়ায় উঠে জানতে পারলাম যে প্রবেশ এখানে নয়, এটা স্কুলের পিছন দিক, স্কুলের ভিতরে যেতে হলে ঠিক উল্টো পাশে যেতে হবে! তার মানে আবার সেই পাহাড় ভেঙে নিচে নেমে গিয়ে ঠিক পাহাড়ের বিপরীতে সামনের গেটে যেতে হবে! একটু ক্লান্তি লাগলেও আকর্ষণের কমতি ছিলনা, আগে ছিল বায়ে আর এবার ডানে কাঞ্চজঙ্ঘাকে রেখে আর বামে পাহাড়ের পিঠ ছুঁয়ে-ছুঁয়ে সামনের দিকে যাচ্ছি। সাথে সেই সময়ের অপরিচিত “শব্দ” সেলফি তোলা চলছিল বিরামহীন!

আমার রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে স্কুলের বাচ্চারা চলছিল লাইন দিয়ে রঙিন ড্রেস পরে, দারুণ লাগছিল সেই সময়টা। আর তখন-ই এই অসম্ভব চিন্তাটা মাথায় এলো “ইস আমার ছেলেকেও যদি দার্জিলিং পড়াতে পারতাম!”

যাইহোক সেই ভাবনাকে সাথে নিয়েই পৌঁছে গেলাম সেন্ট পলস এর মূল ফটকে, কিন্তু ঢুকতে দেবেনা, এখানে পর্যটকদের প্রবেশ নেই, দেখার জন্য দার্জিলিং এ আরও অনেক-অনেক কিছুই আছে এই স্কুল খুবই Restricted! যথাযথ অনুমতি ছাড়া এখানে ঢুকতে দেয়া হয়না!

এবার আমার মাথায় নিষিদ্ধ রোমাঞ্চের নেশা পারদের মত চড়তে লাগলো, কি করি? আমাকে তো ঢুকতেই হবে যে ভাবেই হোক, তবে কোন অতিরিক্ত টাকা খরচ না করেই। এটা-ওটা ভাবতে ভাবতেই মনে পরে গেল আমার বাবাটার কথা! যেহেতু তখন সে অনেক-অনেক ছোট এইসব স্কুল-ফিস্কুলের সময় তার হয়নি তাই আগে এই চিন্তাটা মাথায় আসেনি তেমন ভাবে। আর মাথায় আসতেই, যেই গেটে বললাম বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ছেলের এডমিশনের খোঁজ-খবর নিতে চাই।

প্রাথমিক অবহেলা এবার বিনয়ে রূপ নিল! আর সাথে-সাথে টেলিফোনে ফাদারকে জানাতেই ভিতরে যাবার আন্তরিক অনুমতি মিলল! আমি তো মনে-মনে “ওয়াও!” বলে শব্দহীন চিৎকার! দিলাম। আর মনে-মনে বললাম “Yes Won The GAME”

এবার প্রথমেই অবাক করে দেয়া ফাঁকা-ঘাসহীন প্রায় ধুলো ধূসরিত ধপধপে সাদা মাঠ! ক্রিকেট চর্চার জন্য একাধিক নেট সেট করা। দর্শকদের জন্য তৈরি ছোট্ট গ্যালারী, আর এই মাঠ পেরিয়ে সামনের গেটে ঢুকতেই এক অপার্থিব প্রকৃতিতে সাজানো, বাগানের মত ছিমছাম সবুজ বন ও গাছ-গাছালি, ঝকঝকে নিল আকাশ আর দূরের শ্বেত শুভ্রতার মাঝে এক টকটকে লাল স্কুল বিল্ডিং যার চারিদিক ঝকঝকে-তকতকে।

এরপর ভিতরে গিয়ে এটা-ওটা খোঁজ খবর আর পরিবেশ দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম ওই সেন্ট পলস এর আর ফাদারের কফি ও ক্ষণিকের হেটে-হেটে এটা-সেটা দেখানো ও ছাত্রদের প্রতি তাদের যত্ন-আত্নি দেখে-শুনে আমি তো একেবারে ফিদা হয়ে গেলাম আর মনে-মনে কল্পনার রঙ দিয়ে জীবনের নতুন আর একটি স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম......

“ইস আমার ছেলেকে যদি এই স্কুলে পড়াতে পারতাম!”

জানি সাধ্যের বেশ বাইরে, তবুও স্বপ্ন দেখতে ও চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই কোনই।

তাই এখন এই স্বপ্নটাই দেখছি, দেখা যাক সময় তো এখনো আছে কিছু।

তাই বলি ডার্লিং দার্জিলিং ও সেন্ট পলসের প্রেমে পড়েছি।

আমি হেতায় যেতে চাই, বারে-বারে, ফিরে-ফিরে, যখন-তখন, ইচ্ছে মতন...

যদি............!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৮

মঞ্জু রানী সরকার বলেছেন: “ইস আমার ছেলেকে যদি এই স্কুলে পড়াতে পারতাম!” ইচ্ছোটা জাগে কিন্তু ফাইনালি বাচ্চাকে ছাগতে পারে না। দেখা যাক আপনি কি করেন। ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩

সজল জাহিদ বলেছেন: দেখবো চেষ্টা করে, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি যে অনেক অনেক বার দার্জিলিং গিয়েছেন সেটা জানি, আর আপনি যে মেয়ের জন্য ভাবা পিঠা বানিয়ে নিয়ে গেছেন সেটাও আমি জানি!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.