নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবেগ ও বাস্তবতার গল্প

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১১

আবেগ বড়ই অবুঝ, মাঝেই মাঝেই বাস্তবতা ধাঁর ধারেনা। আগে-পিছে ভাবেনা, সামনে-পিছনে দেখেনা,আগামির কথা চিন্তা করেনা। আবেগ সব সময়ই বর্তমানের কথা ভাবে, সাময়িক সুখ আর আনন্দের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে ভালোবাসে। ঢেকে রাখতে চায় নিজেকে নিজেরই আবেগের ঘন কুয়াশায়। আর পেতে চায় সকালের ভীষণ ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত মিষ্টি-মিষ্টি রোদের ভীষণ আরাম আর আবেশের অমোঘ উষ্ণতা। যদি ওটুকু পায় তবেই বর্তে যায় তখনকার মত।

এর পর যদি মেঘেও ঢেকে যায় সারা পৃথিবী। যদি ছেঁকে ধরে কুয়াশার পুরু চাদর, তবুও খুব একটা আক্ষেপ জাগেনা। জাগেনা কোন অস্থিরতা বা আসেনা কোন উদ্বিগ্নতা। কারণ প্রত্যাশা মত সকালে যে পেয়েছিল একমুঠো মিষ্টি রোদের উষ্ণ আলিঙ্গনের অনিঃশেষিত সুখ। তাই দিন মান ভালই কাটে, সুখে আর আনন্দে ভেসে-ভেসে। আর থাকে আবারও পরবর্তী সকালের, মিষ্টি রোদের, সুখের উষ্ণতার আর বর্ণিল সারাদিনের।

কিন্তু বাস্তবতা? বাস্তবতা তো এমন আনন্দের, মিষ্টি রোদের সুখের উষ্ণতার বা সুখে হারাবার মত সহজ আর সাবলীল নয়। বাস্তবতা কখনো কখনো বড়ই নিষ্ঠুর, নিরেট আর নিরাবেগের হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় কঠিন আর অসহনীয় এমনকি সহ্যতার সীমার বাইরে হয়ে থাকে। তবে কি বাস্তবতার কাছে আবেগের কোন দাম নেই? হয়তো আছে, হয়তো বোঝে, হয়তো করে উপলব্ধিও আবেগের উদ্বেলতাকে, উন্মাদনাকে, উচ্ছ্বাসকে আর উল্লাসকে। কিন্তু প্রশ্রয় দিতে চায়না বা চাইলেও পারেনা বাস্তবতার নিরেট বাঁধার কাছে। হার মানে, মানতে হয়, নিরুপায় হয়ে, হয়ে নির্মম আর নিষ্ঠুর। বাস্তবতা এমনই। হাত-পা বাঁধা, অদৃশ্য শেকলে। বাঁধা বাস্তবতার সকল মন-প্রান আর আবেগও; সমাজ, সামাজিকতা আর জীবনের নিতান্ত প্রয়োজনের কাছে।

আসলে এই হল ছেলেদের আর মেয়েদের মূল পার্থক্য! বিবাহিত এবং চাকুরীজীবী নারী-পুরুষের মাঝের বিস্তর বিস্তর এবং বিস্তর ব্যাবধান। চিন্তায়-ভাবনায়, বর্তমান-ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষায়, স্বপ্নে-কল্পনায়, সর্বোপরি আবেগে আর বাস্তবতায়। যেখানে ছেলেরা আগেবে ভাসে, সেখানে মেয়েরা বাস্তবতার দেয়ালে আঁটকে থাকে। যখন ছেলেরা স্বপ্ন দেখে তখন মেয়েটি তরকারী কাটে। যখন ছেলেরা ভাবনায় ভাসে, তখন মেয়েরা মশলা বাটে বা তৈরি করে। যখন ছেলেরা কানে হেড ফোন দিয়ে প্রিয় সঙ্গীতের মূর্ছনায় বান্ধবীতে বিভোর থাকে, তখন মেয়েরা রান্না শেষের পরে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য ছুটতে ছুটতে শীতেও গরম লাগিয়ে ফেলে!

যখন ছেলেটা মনের ভাবনা গুলোকে ল্যাপটপে বসে স্বপ্নে সাঁজায়, তখন মেয়েটা পরবর্তী দিনের বাচ্চা, বচ্চার বাবা আর নিজের কাপড় সাঁজায়। যখন ছেলেটা সুন্দরী সহকর্মীর আরও একটু কাছাকাছি যাবার ভাবনায় বিভোর, তখন মেয়েটা বসের লোলুপ দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তায় অস্থির। যখন ছেলেটা একান্ত অবসরে গীটারের টুং-টাং সুর তোলে বা তোলে বাঁশিতে মূর্ছনা, তখন মেয়েটি হয়তো বালতি বা গামলায় গরম পানিতে বাচ্চা ও বাচ্চার বাবার কাপড়ে জেটের ফেনা তুলে ময়লা তোলে! এছাড়াও আছে আরও কত সাংসারিক, সামাজিক সংঘাত ও মানিয়ে চলার নির্মম বাস্তবতা, যেগুলো আবেগ বোঝেনা, বুঝতে পারেনা এমনকি হয়তো বোঝার সাধ্যও তার নেই।

আবার এর উল্টোটাও আছে কোথাও কোথাও। ছেলেরা যখন অফিসে বসের নানা গঞ্জনা শুনে শুনে ব্যতিব্যাস্ত, মেয়েরা তখন ফেসবুকের লাইক-কমেন্ট আর ইনবক্সে ভীষণ ভীষণ ব্যাস্ত! ছেলেরা যখন ক্লায়েন্ট ডিলিং, মিটিং-মিনিটস এ ব্যাস্ত, মেয়েটি তখন বন্ধু-আড্ডা-গান, বা বিয়ের সাঁজ, বিউটি পার্লার আর হোয়াটস অ্যাপ আর মেসেজনারে মহা ব্যাস্ত! ছেলেটি যখন সারাদিনের অফিসের অসহ্য চাটুকারিতা ও নির্মম বাস্তবতার কাছে পরাজিত, মেয়েটি তখন স্টার জলসা আর জি বাংলার সিরিয়াল নিয়ে মোবাইল ফোনে মত্ত! তবে, তবে আমাদের সমাজে এই ধরনের ঘটনা উপরের আবেগ আর বাস্তবতার তুলনায় বেশ বেশ নগন্য।

এসব নিরেট বাস্তবতা আর ভেসে যাওয়া আবেগের সাথে যদি কখনো মিশে যায় হুট করে কুড়িয়ে পাওয়া কোন ভালোবাসা বা নিখাদ কোন বন্ধুত্ত বা অন্যরকম কোন ভিন্ন আবেগ আর আবেশ তো কেমন হয় সেই ব্যাপারটা? সেখানেও এসে যায় সেই আবেগ আর বাস্তবতার হিসেব-নিকেশ আর যদি এসে যায় চাওয়া-পাওয়ার গড়মিল বা মান-অভিমান, অনুনয় আর অপেক্ষার নিদারুণ আক্ষেপ তো কথাই নেই। শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি আর ভুল খোঁজাখুঁজি, অস্থিরতা আর আকুলতা, শেষমেশ এসে মনকে মনের বসে আনার মত আকুল আবেগের অবাধ্য আবস্তবতা। আর পেরিয়ে গেলে অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত আর উপেক্ষিত সময়, বোধে বা উপলব্ধিতে আসে আবেগ আর বাস্তবতা।

তাই আমার মতে, ছেলেরা হল আবেগ আর মেয়েরা হল বাস্তবতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। দুই একটি ক্ষেত্রে উল্টোটাও হতে পারে। হতেই পারে।

ছেলেরা বড় বেশী আবেগি মেয়েরা কেন বোঝেনা?

আর মেয়েরাও বড় বেশী বাস্তববাদী বা বাস্তবতার স্বীকার ছেলেরা কেন বোঝেনা?

এই বোঝা আর না বোঝার মাঝখানের ব্যাবধান বোধয় কখনো শেষ হবার নয়, হয়না। কখনোই হবেনা।

আর বোঝা না বোঝার এই ব্যাবধানটাই কি তবে বন্ধুত্ত, ভালোবাসা আর কাছাকাছি বা পাশাপাশির থাকার আকুলতা, আবেগ আর আকর্ষণ একে অন্যের বোঝা আর না বোঝার প্রতি?

আবেগ আর বাস্তবতার বেহিসেবি হিসেব নিকেশ?

কি জানি, তাই হয়তো?

তবে থাক এভাবেই থাক, আবেগ আর বাস্তবতার ব্যাবধান হয়ে, বন্ধুত্ত আর ভালোবাসার আবেগ, বাস্তবতা, আকর্ষণ আর আকুলতা হয়ে থাক অপেক্ষা হয়ে............

তাই আবেগের ক্ষমা চাওয়া, বাস্তবতার কাছে।

উৎসর্গঃ তোমাকে......

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২২

Shawal বলেছেন: খুব সুন্দর বলেছেন।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬

পারভেজ উদ্দিন হৃদয় বলেছেন: আবেগের ছেয়ে বিবেককে বেশি মুল্য দিতে হবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.