নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধু মাখা মুখ......!!

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮

ডাক্তার চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে একদম নিষেধ করেছে। না, ডাইবেটিস এখনো হয়নি তবে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাই আগে ভাগেই সতর্ক করে দিয়ে খাওয়া-দাওয়ায় লাগাম টানতে বলেছে। এতে করে সুস্থও থাকা যাবে আর বেশীদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। তাই ঘরে এখন ভীষণ কড়াকড়ি আর সাবধানতা তার খাওয়া আর বর্তমান জীবন-যাপন নিয়ে। এই নিয়ে খুব খুব মনোকষ্টে আছে সে। না পারে কইতে কিছু, না পারে সইতে।

অথচ কতইবা বয়স? এখনো ৪০ এর কোঠা পেরোয়নি! এখনই এতো এতো বাঁধা আর নিষেধাজ্ঞা যে সে হাপিয়ে উঠেছে। কি ভীষণ ভালোবাসতো সে মিষ্টি বা এই জাতীয় খাবার খেতে। মিষ্টি তার এতই পছন্দ ছিল যে সে চা-ই খেত একটু চিনির লোভে! যে কারণে সে এক কাপ চায়ে চিনি খেত তিন চামচ! আর চায়ের শেষে কাপের নিচে জমে থাকা চিনির সিরা টুকু খেত পরম মমতা আর তৃপ্তি নিয়ে।

চায়ের শেষে সিরা টুকু তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাবার জন্য সে ছোট বাচ্চা হয়ে যেত যেন। যে কারণে সেই অমৃত সুধা উপভোগ করতে সে একটু আড়ালে চলে যেত। চায়ের কাপটা উঁচু করে ধরে উল্টে ফেলত আর নিচে বের করে রাখত জিবহাটা! চোখ রাখতো একেবারে কাপের ভিতরে।

চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চিনির সিরা গুলো জড় হত একে-একে, চলে আসতো এক জায়গায় বেশ খানিকটা। দেখেই তার চোখ করে উঠতো চকচক, জিভের জমে যেত জল, আর সেই সিরা কাপের তলা থেকে গড়িয়ে মুখের কাছে আসতে আসতে জিভের জল ঘন হয়ে পরিনত হত লালায়। ঘন, লোভাতুর আর তৃষ্ণার্ত! আর সেই সিরা টুকু যখন জিভের ডগায় এসে পড়তো এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে, তখন নিজের অজান্তেই বুজে যেত তার দুই চোখ, সুখে-আনন্দে আর মিষ্টি মুধর আবেশে!

এতো গেল চিনির প্রতি তার অসম্ভব দুর্বলতার কথা। যখন খেত মিষ্টি তখনকার অবস্থা আরও ভয়াবহ তার। বিশেষ করে, গরম ও নরম তুলতুলে রসগোল্লার প্রতি তার আকর্ষণ আর দুর্বলতা সবচেয়ে বেশী। অনেকটা এমন, এক দিকে দারুণ মোহময় আর মন কাড়া কোন সুন্দরী যে তার জন্য অপেক্ষা করছে, তাকে করছে আহবান কাছে আসার!

আর অন্যদিকে সদ্য বড় কড়াই থেকে ধপধপে সাদা গামলায় নামানো গরম ও নরম তুলতুলে রসগোল্লা, যেখান থেকে ধোঁয়াও উড়ছে! কোনটি নেবেন আপনি? নিশ্চিত ভাবেই ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষই সুন্দরীর কাছে যাবেন। আরে কিসের রসগোল্লা নরম আর তুলতুলে? সেতো অনেক আছে, অনেক পাবেন, এমন সুন্দরী কোথায় পাবেন? আর আবারও যে পাবেন তার কি নিশ্চয়তা আছে? সুতরাং আগে সুন্দরী তারপরে রসগোল্লা!

অথচ তার কাছে আগে রসগোল্লা, সুন্দরী কোন ব্যাপারনা, গোল্লায় যায় সুন্দরী! আগে তার রসগোল্লা! হ্যাঁ, এমনই তার আকর্ষণ আর আবেগ গরম আর নরম তুলতুলে রসগোল্লার প্রতি।

সেই মানুষটিকেই যদি বলা হয় রসগোল্লা না খেতে আর চিনি ছাড়া চা বা কফি খেতে তবে কি অবস্থা হবে তার! তাও এমন নয় যে তার কোন বিশেষ অসুখ করেছে। এই পূর্ব সতর্কতা স্বরূপ যদি হয় এই পদক্ষেপ তবে কেমন দাঁড়াবে তার মানসিকতা? তাই আজকাল সে বেশ মুষড়ে পরেছে। চা আর উপভোগ করেনা আগের মতন। বেশ কিছুটা মন মরা হয়ে গেছে তার উচ্ছল আর উচ্ছ্বাস ভরা মুখ ও মানসিকতা। কিন্তু প্রতিদিন দুই-তিন কাপ চা না পেলেও তার চলেনা, তবে?

ছুটির দিন সকাল। সাধারণত খুব সকালেই সে চা নিত আগে। আজকাল নেয়না তেমন করে। চিনি ছাড়া কি চা ভালো লাগে? তাই আজকাল তখনই চায়ের ফরমায়েস দেয় সে যখন আর পারেনা। আর সেই চা সে উপভোগ করেনা এখন। আর চোখ-মুখ বিষিয়ে তুলে নাক বন্ধ করে গিলে ফেলে মাত্র। সকালে আজ চা নেয়নি সে। বাজারে গিয়েছিল। বাজার থেকে ফিরছে। গেটের কাছে এসে গিয়েই যেন থমকে গেল সে......

হাঁয় হাঁয় এমন রঙ-রূপ-চুল-ভ্রু-চোখ-নাক-কপাল-থুঁতনি আর ঝকঝকে হাত-পা সে এই জন্মে আগে কোনদিন দেখেনি! ইস শাড়ি পরে যেন আরও অপ্সরীর মত লাগছে! মনে পরে গেল সেই অনেক অনেক প্রচলিত বাক্য

“এমনই চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো...!” হাঁয় তার ঝলমলে রূপ আর ঝকঝকে দাতের রিনিঝিনি হাসি যেন, সূর্যের আলোকে ম্লান করে দিনেই ভরা পূর্ণিমার ফুটফুটে জ্যোৎস্না হয়ে ফুটলো! পুরো সিঁড়ি ঘর জুড়ে। সেই রূপের বর্ণনা দেবার সাধ্য বা স্বাধ কোনটাই তার নেই। দিতেও চায়না সে। শুধু ভাবতে চায় আর চায় চোখ বুজে উপভোগ করতে। তার আর চিনির দরকার নেই আজ থেকে। চিনি ছাড়াই সে চা খাবে আজ থেকে, আগের চেয়েও বেশী বেশী করে করবে উপভোগ। যদি তার মুখ ভাসে চোখের পাতায়। চিনির চেয়েও বেশী মিষ্টি যে সে, তার রূপ, রঙ আর সম্মোহন। যেন মধুর চেয়েও মোহময়!

ইচ্ছে করে সিঁড়ি ঘরে ওঠা-নামার বাহানা করছে বারে, বারে। দুই সিঁড়ি ওঠে তো তিন সিঁড়ি নামে! ব্যাগটাকে আজ টেনে তুলতে যেন শরীর বেঁয়ে ঘাম ছাড়ছে! আসলে কিছুইনা। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেঁয়ে যে উঠছে ওই অপ্সরি! তাই সে আরও ধীরে ধীরে! চার তলা উঠতে না উঠতেই জেনে গেল যে এরা এই ফ্ল্যাটে নতুন এসেছে! হাঁয়, হাঁয় কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে!

বাকি সিঁড়ি গুলো উঠছে আর মনে মনে বলছে আর চিনি লাগবেনা গো! আর চিনি লাগবেনা! আমি মধু পেয়ে গেছি! এতো মধুময়তা থাকলে আর কি চায়ে চিনি লাগে? লাগেনা!

উপরে গিয়ে চায়ের ফরমায়েস দিলো। খানিক পরেই চা চলে এলো। এবার চোখ বন্ধ করে একবার সেই সিঁড়িতে উঠতে উঠতে দেখে আসা মধুরূপ মনে করে, চোখে ভাষায় আর একবার করে চায়ের কাঁপে চুমুক দেয়! এভাবে কখন যে চা শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি! সে নিজে নিজেই ভীষণ অবাক হল, একবারও চিনির কথা মনে পড়লোনা! কি অদ্ভুত! চা শেষ হয়ে গেল!

এরপর মনে মনে বলল...... আহা মধু যেন তোমার মুখ, এতো মধু মাখা মুখ!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.