নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোমল (স্মার্ট) ফোন, হোয়াটস অ্যাপ আর সে............

১০ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১৭


অফিসে এসে পৌঁছানোর পরে সে সাধারণত আর বাইরে বের হয়না, একান্ত কাজ না থাকলে। ইচ্ছাই করেনা তার, তাও বেশ আগে দুই-একবার একটু-আধটু বের হতো হাঁটাহাঁটি বা টানা বসে থাকার একঘেয়েমি দূর করতে, কিন্তু এই লেখালেখির নেশা পেয়ে বসার পর থেকে তো একদমই না!

কিন্তু আজ অফিসে এসে ব্যাগটা রেখেই একটু বাগানে যেতে ইচ্ছে হল! কেন? একটা সেলফি তোলার খায়েস জেগেছে মনের কোনে! সেকি কেন, হঠাৎ? ছবিতো তার কম নেই মাশাল্লাহ! হাজার দশেক তো হবেই! তো এই সকালে আচমকা কি হল?

আসলে হয়েছে কি, একটা কোমল মুঠোফোন উপহার হিসেবে পেয়েছে সে বেশ কয়েকদিন আগেই। কিন্তু কুকুরের পেটে যেমন ঘি সয় না তেমনি তারও তাই হল। যে গত ৮ বছর ধরে নোকিয়া ১৬৫০ একটা ইটের মত টেকসই আর দুর্দান্ত সেবা মানের ফোন ব্যাবহার করেছে, তাও নিজের পয়সায় কিনে নয়, পূর্বের অফিস দিয়েছিল, অফিসিয়াল ব্যাবহারের জন্য, চলে আসার সময় দোয়া-স্নেহ বা ভালোবাসা দেখাতে আর ফেরত নেয়নি! তাই ওটা দিয়েই চালিয়ে দিচ্ছিলো বেশ আনন্দেই। অনেক আবেগ জন্মে ছিল ওটার প্রতি, যাই হোক, কিন্তু এই কোমল ফোনের ব্যাবহার কিছুতেই রপ্ত করতে পারছিলোনা সে!

অবশেষে একটু-একটু করে শিখতে-শিখতে হুট করে কোত্থেকে সামনে এসে গেল হোয়াটস অ্যাপ নামের এক আজব কিছু? একটু কৌতুহলি হয়ে সেটায় বিচরণ করতে গিয়েই দেখে আরে এদিয়ে দেখছি মেসেজ দেয়া-নেয়া বা কথা বলা যায়! আবার নিজের দুই-একটি কথা বা ছবিও দেয়া যায়! কি অবস্থা? তো তাকে একটু পেয়ে বসলো, কিছু সময় কাটিয়ে ওটাতে নিজের নামও অন্যান্য ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা লিখে নিবন্ধন করলো সে! এখন ছবি দিতে হবে, তার এতো-এতো ছবি অথচ কোনটাই কেন যেন মনে ধরছেনা! তবুও সেট করলো একটা, কিন্তু মনের ভিতর খটখট! ঠিক খুশী বা তৃপ্ত হতে পারছিলো না বলে!

তাই আজ অফিসে এসেই বেশ প্রিয়, অনেক খুঁজে খুঁজে বের করা বেগুনী রঙের ক্যাপ পরে চলে গেলো সে, সবুজ গাছ ও ঘাস আচ্ছাদিত রঙ-বেরঙ এর ফুলের বাগানে সেলফি তুলতে! আর তুলেও ফেললো বিভিন্ন ঢংয়ে একেবেকে, বেশ কয়েকটা! দিয়ে দিলো সেই ছবি হোয়াটস অ্যাপের প্রোফাইল ফটোতে বেশ নিজের মনপুত একটা! এবার একটু সুখ-সুখ অনুভূতি আর আত্ন-তৃপ্তির আনন্দ! এই হল তার অবস্থা!

আরও যে পরিবর্তন গুলো লখ্যণীয় তা হল এই রকমঃ

এক) আগে বাসায় গিয়ে ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলতো, ওর সাথে টিভির রিমোট নিয়ে মারামারি করতো আর এখন? ফোন নিয়ে শুয়ে বা বসে থাকে, ওকে সময় দেয়াটা অনেক কমে গেছে! আর হয়না একসাথে টিভি দেখা বা বাপ-বেটার মারামারি!

দুই) আগে সন্ধার চায়ের সাথে চলতো বউয়ের সাথে ঝগড়া বা খুনসুটি সাথে একটু-আধটু ভালোবাসা-বাসি! আর এখন বৌ তার মত আর সে কানে হেডফোন দিয়ে নিজের মত! নেই সেই সময় বা আবেগ!

তিন) আগে রাতের খাবার সবাই একই সাথে খেতো, মা-বাবা, তারা দুজন আর তাদের ছানা। আর এখন? ছানাকে ওর মত আগে-আগে, মা-বাবা তাদের নামাজের পরে, বউ একে-ওকে খাওয়ানোর ফাকে টুকটাক করে, আর সে? তখন, যখন আর কোমল ফোনের আকর্ষণ থাকেনা? সেই সময়ে...! আরও কত কি যে পরিবর্তন এসেছে, আসছে আরও আসবে কে জানে?

এরপর হয়তো দেখাই হবেনা একে অন্যের সাথে, একই বাসায় থেকে, খাওয়া হবেনা সবার সাথে, কথা বা ঝগড়া বা খুনসুটি হবেনা মা-বাবা বা বউয়ের সাথে! যে চলবে তার মত আর জীবন চলবে প্রযুক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার মত! হায়রে কি হবে তখন? ভেবে ভেবে হিম হয়ে যায় সে, আতঙ্কে চিৎকার করতে মন চায়, ভয়ে শিউরে ওঠে!

সে এ জীবন চায়না, সে কোমল ফোন চায়না, সে হোয়াটস অ্যাপ চায়না, সে ফেসবুক চায়না বা চাইলেও এই দিন-রাত, সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত্রি, ক্ষণে-ক্ষণে, ছুটির দিনে, একান্ত অবসরে এইসব সে চায়না!

সে চায় সেই সুস্থ-স্বাভাবিক আর পুরনো জীবন, পুরোনো মানুষ, পুরোনো আবেগ আর পুরোনো কিন্তু নিখাদ ভালোবাসা আর আত্ন-সুখের সেই ভাবনা-কল্পনা আর আবেগে ভেবে-ভেবে, ভেসে যাওয়া সেই দিন গুলো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: সঠিক বাস্তবতা। আমারই হয়েছে একই অবস্থা । চেম্বারে রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে ব্লগে উত্তর লেখা বাসায় মেয়ে বলে বাবা অংকটা বুঝছি না। আমি বলি চেটিং এ ব্যস্ত আছি মায়ের কাছে যাও মেয়ে বলে মা রান্নায় ব্যস্ত আমি বলি ডিস্টার্ব করো না । ছেলে বলে বাবা তবলার ত্রিতাল এর ঠেকা আসছে না একটু দেখিয়ে দাও, আমি বলি পরে হবে । স্ত্রী বলে খেতে আসো আমি বলি এখন খাবো না অথচ ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে । এত সুন্দর সংসার এত সুন্দর ছেলে মেয়ে স্ত্রী যাদের মায়ায় ছায়ায় কেটে যাচ্ছে দিন অথচ ফেসবুকে ব্লগে সময় দিতে গিয়ে কেমন যেন আলগা হয়ে যাচ্ছে বাঁধন।। কি করি বলুন তো.... ?

১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

সজল জাহিদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন, এই জন্য আমি আমার বাসায় কোন নেটের ব্যাবস্থা রাখিনি আর মোবাইলে কখনো নেট ব্যাবহার করিনা, আর কোন ছুটির সময়ে, আমাকে কেউ কখনো ফেসবুক বা নেটে পায়না!! যদিও এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়, ব্যাকডেটেড বলে, বাট আমি আমার মতই আছে! এই বেশ ভালো আছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১৬

শরাফত বলেছেন: সবই বাবা আধুনিকতার কল্যাণ ।

আল্লাহই জানে পরবর্তি প্রজন্মের কি অবস্থা হবে, কোনো পারিবারিক বাঁধন থাকবে কি?
নাকি পশ্চিমা সংস্কৃতির মত আমরাও পরিবারকে ভুলে যাবো ? :|

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫

সজল জাহিদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.