নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা বাঁচবো কিভাবে...?

০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪

আমরা বাঁচবো কিভাবে?

রমজানের আগের দিন রাকিব সাহেব বাজার থেকে ফিরে সহধর্মিণী রেবাকে শুধু এটুকুই বললেন! বাকি যা বোঝার রাকিব সাহেবের সহধর্মিণী বুঝে নিয়েছেন। মুখে কিছু না বলে রাকিব সাহেবের হাতে দিলেন বানিয়ে রাখা ও বরফ দিয়ে রাখা ঠাণ্ডা লেবুর শরবৎ।

তবে আজ নাহয় ডিম আর আলু দিয়েই আলুরডাল রান্না করি? রাকিব সাহেবের উদ্দেশ্যে রেবার প্রশ্ন।

হ্যাঁ তাই কর, আর কি-ই বা করার আছে! বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস!

ঘটনা হল গতকাল রাকিব সাহেবের অফিস থেকে ফিরতে দেরী হবে জেনে রেবা নিজেই বাজারে গিয়েছিল মাছ কিনতে। কিন্তু মাছ কিনতে গিয়ে অনেকটা অপদস্ত হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে! যে মাছ গত সপ্তাহেও ২৫০ টাকা কেজি ছিল তাই গতকালে ৪০০ নিচে বিক্রি করবেনা বলে দোকানি সাফ-সাফ জানিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে!

সেই লজ্জায়, অপমানে আর অপদস্ততার স্বীকার হয়ে মুখে আঁচল গুঁজে চুপচাপ বাসায় চলে এসেছিল, আর রাতে ভাত খেতে বসে মাছ না পেয়ে রাকিব সাহেব অবাক হয়েছিল খুব খুব! কারণ খেতে বসার আগেও জানতোনা যে মাছ রান্না হয়নি। শেষমেশ সেই ফ্রিজে থাকা মুরগীর মাংস!

রেবা বাজারে মাছের দাম ও দোকানির বর্ণনা দেয়াতে রাকিব সাহেব মুখ বাকালো বেশ খানিকটা। স্ত্রীর প্রতি তাচ্ছিল্য মেশানো! মাছ কিনতে পারেনি বলে। এমনকি এই অভিযোগ ও করলো যে বিভিন্ন রকমের মাছ কিনতে পারনি বেশ, শুধু এক রকমের মাছই নাহয় কিনতে? কিন্তু সেই সাহসও রেবা দেখাতে পারেনি, পাছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক-অনেক বেশী দামে মাছ কিনে রাকিবের কথা শুনতে হয়!

তাই পরদিন অফিস শেষে বীর পুরুষ বেসে বাজারে ঢুকলেন রাকিব। মাছের বাজারে গিয়ে জ্যান্ত রুই-কাতলের লেজের পানির ঝাপটায় তার নিজেরই ছিটকে পড়ার জোগাড়! মাছের দাম আর দোকানিদের ব্যাবহার দেখে!

যে চিংড়ী মাছ ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি তাই আজ ৭০০ নিচে হবেনা!

যে রুই মাছ ২৫০-২৮০ টাকা কেজিতে কেনা যেত, সেটাই আজ ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি!

যে সিং মাছ ৬০০ টাকা কেজি ছিল, সেটা আজ ৭৫০ টাকা!

পাবদা মাছ ৮০০ টাকা একদাম!

পোয়া মাছ ৫০০ টাকা!

পুঁটির দাম ৫৫০ টাকা!!

রাকিব সাহেব কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছেনা, মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো! পকেট, সামনের দিলগুলো আর অন্যান্য অবস্থা বিবেচনা করে মাথা ঘুরে প্রায় পড়ে যাবে মাছের বাজারেই!

কি করবে এখন, কিভাবে কিনবে মাছ, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে! অথচ কাল রেবাকে কত কথাই না শুনিয়েছে শব্দে-বাক্যে আর অভিব্যাক্তিতে! আজ রেবা নিশ্চিত সেসবের চরম প্রতিশোধ নেবে শুধু বাঁকা ঠোঁটের তাচ্ছিল্যপূর্ণ বিষাক্ত হাসিতে! যে হাসি হৃদয়ে ক্ষতর তৈরি করে, মনের জানালার কপাটে ঝড়ো হাওয়া বইয়ে দেয় আর নিজেকে নিজের কাছেই মিইয়ে দেয়!

হাঁয় অথচ একদিন এমন ছিল... রাকিব সাহেব ফিরে যায় তার কিশোর-যুবকের সোনালি দিনগুলোয়......

যেদিন বাসায় শুধু মাছ রান্না হত নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পেত! কেউ জানেনা তারপরও বন্ধুদের কাছে মাথা নেতিয়ে রাখতো পাছে ওরা মুখে মাছের গন্ধ পেয়ে দূরে সরে গিয়ে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে! যখন মাছকে ধরা হত গরীবের আমিষ! আর একমাত্র মাংসই ছিল একটু অবস্থাসম্পন্ন মানুষের আভিজাত্যের অন্যতম প্রতীক!

যেদিন বাসায় মাংস রান্না হত সেদিন গর্বে বুক ফুলিয়ে বেড়াতো রাকিব, মনে অন্যরকম খুশির জোয়ার খেলা করতো, আনন্দের ঢেউ আছাড় খেত হৃদয়ের বালুকা বেলায়, যেন উড়ে বেড়াতো গাছে গাছে, ডালে ডালে আর পাতায়-পাতায়! আর মাছ? মাছ তো তখন কিনতে হতোনা, খালে-বিলে বা পুকুরে কিছু একটা পেতে রাখলেই হত! জোয়ারের শুরুতে কিছু একটা রেখে আসতো কোন জলাশয়ে, জোয়ারের মাঝামাঝিতে গিয়ে সেই পাত্র সন্তর্পণে তুললেই দেখা মিলতো বেশ কয়েক রকম মাছের! যা দিয়ে যেন কোন পরিবারের এক বেলা অনায়াসে হয়ে যেত! তাই মাছ ছিল তাচ্ছিল্যের, অবহেলার আর অনেকটা অবজ্ঞার!

আর আজ সবাই সেই মাছের কাঙাল! আজকাল সেই অবহেলার-অবজ্ঞার আর অবমাননার মাছ-ই হয়েছে আবেগ-আভিজাত্য আর ঘরে-ঘরে অন্যতম আনন্দের প্রতীক! সব ঘরে যদিও না, ফার্মের মুরগীর মত ছেলে-মেয়ে ও তাদের রেডিমেড খাবার দিতে চাওয়া মা-বাবার কথা যদিও আলাদা। কিন্তু সাধারণ, স্বাভাবিক আর ছেলে-মেয়েকে সত্যিকারের স্নেহ-ভালোবাসা, সমাজ ও বাস্তবতা, সহজ ও স্বাভাবিকতায় গড়ে তোলা মা-বাবার কথা বলা হচ্ছে মুলত, সেসব ঘরে আজকাল মাংস নয় বরং মাছ রান্না হলেই উৎসব আর আনন্দের মাত্রাটা বেড়ে যায় অনেক অনেকখানি।

হাঁয় সেইসব অবহেলার দিনগুলোই আজ সোনালি-রূপালী হয়ে উঠলো রাকিবের সামনে। কি দিন ছিল আর কি দিন এলো। তবে কি সারা রমজান মাস সেই ফার্মের মুরগীর মাংস আর গরুর ঝোল খেতে হবে? তাতে যে সারাদিন তৃষ্ণা বাড়ে, যেটা মাছে হয়না। অথচ ভেবেছিল বিভিন্ন রকমের মাছ খাবে পুরো রমজান জুড়ে! এক-একদিন, এক-এক রকম মাছ দিয়ে আরাম করে ভাত খাবে তারাবির নামাজ শেষে!

যাই হোক নিজের এসব ক্ষীণ বিলাসী ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ফোন এলো একটি দুঃসহ খবর নিয়ে! রাকিব সাহেবের এক কাঁছের আত্মীয় পুলিশের বড় কর্মকর্তা, তার মেয়েকে কলেজে যাবার সময় সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে জনসম্মুখে!! যা নিয়ে সারা দেশের সবাই বাঁকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে! যেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েও পরিবারের নিরাপত্তা নেই সেখানে রাকিবের মত সাধারণ মানুষ তো কোন রকম গণনার বাইরে! মনে-মনে ভাবলো মানুষের বুকের পাটা কতবড় হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মেয়েকে রাস্তায় সবার সামনে এসে হত্যা করে যেতে পারে! কতটা পাষাণ আর পাশবিক হলে এমন কাজ করতে পারে, ভেবে-ভেব রক্ত হিম হয়ে আসে।

রেবার সাথে আলাপের ফাঁকে বলল, হায়রে আজকে যদি পুরনো শত্রুদের সাথে-সাথে বর্তমানের এইসব সন্ত্রাসীদেরও ধরে-ধরে সঠিক, সময়োপযোগী আর জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বিচার যদি দ্রুত করতো তাহলে আর যাই হোক এতো বেপারয়া, বিশ্রী আর বিশৃঙ্খল অবস্থার তৈরি হতোনা, হতে পারতোনা এই দেশে! সেই বিশ্বাস রাকিবের মনে-প্রানে। শুধু এক ধরনের বিচার করলেই তো হবেনা, সঠিক ও সময়উপযোগী বিচার ব্যবস্থার ব্যস্থাও তো করতে হবে! তাই দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের অজান্তেই রেবাকে জিজ্ঞাসা করলো...

“আমরা বাঁচবো কিভাবে?”

সে রাতে আর ঘুম হলনা রাকিব সাহেবের। মনে নানা রকম ভাবনা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমোতে গেল মাঝ রাতে। কিন্তু ঘুম আর আসেনা। এপাশ-ওপাশ করতে-করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু ধরফড় করে উঠে বসলো রাকিব সাহেব, ঘেমে-নেয়ে একাকার! কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলো রেবা? কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছ? রাকিব সাহেব সাধারণত স্বপ্ন তেমন একটা দেখেনা, এক ঘুমেই রাত কেটে যায় তার। সব খারাপের মধ্যেও এই একটাই তার সান্ত্বনা আর আরামের ব্যাপার যে আর যাই হোক না কেন ঘুমটা ভালো হয় খুব। কিন্তু আজ ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা দিল......

সে দেখলো...... তার সন্তানেরা আজকাল আর লেখাপড়া করেনা তেমন একটা! স্কুল-কলেজে যায় ঠিক-ই, কিন্ত লেখাপড়া বলতে যা বোঝায় সেটা আর করতে দেখেনা, টেবিলে কেউ বসেনা, অংক খাতায় কাটাকুটি করেনা, ইংরেজির ডিকশনারি নিয়ে শব্দের অর্থ খোঁজেনা! গল্প-কবিতা বা উপন্যাসের বইয়ের জন্য বায়না ধরেনা! বন্ধুদেরকে চিঠি লেখেনা, তাদের মত পোস্ট অফিসে গিয়ে প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবীর চিঠি এসেছে কিনা খোঁজ নেয়না! বিকেল হলে বাইরে মাঠে খেলতে যাবার জন্য অবাধ্য হয়না, গাঁয়ে কাঁদা লাগিয়ে এসে মায়ের হাতের মার খায়না, বকুনি শোনেনা! সন্ধায় বাসায় ফিজিক্স পড়াতে শিক্ষক আসেনা, আম-কাঁঠাল-লিচুর ভাগ নিয়ে ভাই-বোনেরা ঝগড়া করেনা, সেহেরী খেতে ওঠার জন্য মায়ের কাছে জেদ করেনা, বন্ধুর জন্মদিনে উপহার দেবে বলে বাবার পকেট থেকে ৫০-১০০ টাকা চুরি করেনা, বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাবে বলে বিকেল থেকে মায়ের বাধ্য ছেলে হয়ে ওঠেনা, ভালোবাসার মানুষের গোপন চিঠিগুলো এখন আর বই-খাতার ফাঁকে-ফাঁকে সুখ ছড়ায়না! বিকেলের শেষ আলোতে ভালোলাগার মানুষের সাথে গাছের আড়ালে দৃষ্টি বিনিময় হয়না, ঈদের ছুটিতে কতদিন দেখা হবেনা সেই অসীম কষ্ট কাউকে ছুঁয়ে যায়না! ঈদের নতুন পোশাক নিয়ে কোন রঙিন স্বপ্ন বোনেনা, কার কাছ থেকে কত পরবি পাবে সেই হিসেব মেলায়না!

অথচ সেইসব ছেলে-মেয়েরাই লোক দেখানো ভালো ফলাফল করে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে, কিন্তু কোন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলোনা! অথচ রাকিবদের সময়কার প্রায় সবাই শুধু ১ম বা ২য় বিভাগ পেয়েই সকল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে! আজ অনেকেই অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের বিশাল দায়িত্ব পালন করছে। আর এখনকার ছেলে-মেয়েরা গটগট করে ইংরেজি বলে ঠিক-ই কিন্তু লিখতে গেলেই কলম ভাঙে! Allocation এর জায়গায় লেখে Allowance! ইংরেজির শিক্ষক হয়েও একটি সঠিক ও শুদ্ধ ইংরেজি বাক্য লিখতে পারেনা!!

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কি আর কেমন হওয়া উচিৎ সেসব জানেনা, মানেনা বা বোধে আসেনা!! তাই আবারো রাকিব সাহেব রেবার সাথে এই অদ্ভুত, আবোল-তাবোল বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্নের শেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে... আচ্ছা কখনো যদি সত্যি-ই এমন হয় তবে......

“আমরা বাঁচবো কিভাবে?”

এই স্বপ্ন দেখার পর থেকে রাকিব সাহেবের একমাত্র আনন্দ আর সুখ নিশ্চিত আরামের ঘুমটুকুও মিলিয়ে গেল দুচোখ দিয়ে! আজকাল আর আগেরমত ঘুম হয়না রাকিব সাহেবের। দিন-দিন ভেঙে পড়েছে সুঠাম শরীরটা! দুশ্চিন্তায়-দুর্ভাবনায় আর ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখার আশঙ্কায় আজকাল ঘুমোতে যেতেই ভঁয় পায় রাকিব সাহেব!

অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেবা ঘুমোতে পাঠাল রাকিব সাহেবকে। কিন্তু রাকিবের মনে দারুণ ভঁয় ঢুকেছে আবারো যদি কোন দুস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়! আর যদি ঘুম না আসে! সে যে কি যন্ত্রণার কিভাবে বোঝায় আর কাকে বোঝায়? তবুও ঘুমোতে গেল দুঃস্বপ্ন দেখার আশঙ্কা নিয়ে!

আবারো এপাশ-ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু কিছু সময় বাদেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো রাকিব সাহেব! রেবা-ছেলে-মেয়ে ছোট ভাই আর যারা বাসায় ছিল সবাই ছুটে এলো রাকিব সাহেবের শোবার ঘরে। রাকিব সাহেব ছেলে আর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে! কেউ কোন ভাবেই থামাতে পারছেনা। কাউকে কিছু বলছেওনা, সেই সুযোগই পাচ্ছেনা রাকিব সাহেব! কারণ কোন ভাবেই কান্না থামাতে পারছেনা সে! বুকের মাঝে দুই ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে শক্ত করে! কিন্তু এক সময় থামলো আর বাস্তবতায় ফিরে এসে বেশ বড় দুই ছেলে-মেয়েকে অজস্র চুমুতে-চুমুতে ভরিয়ে তুলল ওরা বেঁচে আছে দেখে! এরপর আবার ডুকরে উঠে বলতে লাগলো......

“আমরা বাঁচবো কিভাবে?”

সবার চোখেমুখে জিজ্ঞাসা কেন, কি হয়েছে? রাকিব সাহেব কান্নার রেশ মেশানো কণ্ঠে বলতে লাগলেন...

স্বপ্নে দেখেছেন মেয়ে বড় হয়েছে, তার বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা হবে। সেই অসীম আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সবাই হাসপাতলে জড় হয়েছে। কিন্তু তরুন ডাক্তার তার কোন পাবলিক পরীক্ষায় ঠিকমত পাশ না করে আর মেডিকেলের সত্যিকারের ভর্তি যুদ্ধে জয়ী না হয়েই আজ ডাক্তার হয়েছে! এমনকি সে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে সেখানেও সঠিক পড়াশুনা করেনি বা করানো হয়নি! যে কারণে সে জানেইনা যে সিজারের রুগির ঠিক কোন জায়গায় কাটতে হয়!

আর তার সহকারী যারা ছিল, তারা আরও অজ্ঞ কোন রকমে টাকা দিয়ে নার্সিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, কোন ট্রেনিং বা প্রাথমিক শিক্ষা তাদের নেই বা দেয়াও হয়নি কখনো! তার তার ফলাফল স্বরূপ মেয়ের মৃত মুখ দেখতে হচ্ছে! সেইসাথে সাধের-স্বপ্নের আর আদরের নাতিও ভূমিষ্ঠ হবার আগেই পরপারে চলে গেছে!! এই দুঃখ রাকিব সাহেব রাখবে কোথায়?

রাকিব সাহেব আরও স্বপ্ন দেখেছে, আসলে স্বপ্ন নয়, দুঃস্বপ্ন! ছেলে বড় হয়েছে, ভালো চাকুরী করে, ভালো স্যালারি পায়। তাই নিজের একটি ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী! খুব ভালো কথা। ফ্ল্যাট কিনেছে রাকিব সাহেবের ছেলে। ধুমধাম করে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছে। নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছে কয়েকদিন হল, কিন্তু সামান্য ঘূর্ণি ঝড়েই সেই ফ্ল্যাট গুড়িয়ে গেছে!!

স্পটে গিয়ে দেখা গেল, বিল্ডিং এর পিলারে রডের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে বাঁশ!! আর ঢালাইয়ে পাথর ও সিমেন্ট এর পরিবর্তে দেয়া হয়েছে শুধু মাত্র খোয়া আর বালু!! আর শুধু সেই ফ্ল্যাট বা বিল্ডিং নয় মাটির তলায় চাপা পড়েছে রাকিব সাহেবের সকল স্বপ্নই! ছেলের পুরো পরিবার!! এই কথা শেষ করেই রাকিব সাহেব আবারো কেঁদে উঠলো হু-হু করে, দুই ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে! আর বলল......

এভাবে স্বপ্ন দেখলে আর কখনো যদি সত্যি-ই এমন অযোগ্য ডাক্তার-নীতিহীন প্রকৌশলী-দুর্নীতিবাজ সহকারী-ভ্যাজালে ভ্যাজলে পরিপূর্ণ অসাধু ব্যবসায়ি-লাগামহীন সন্ত্রাস আর অসুস্থ মুনাফায় সবাই মেতে ওঠে, কেউ যদি এসবের প্রতিকার নাকরে, কেউ যদি সত্যিকারের দেশপ্রেম আর সমাজের স্বার্থে ঠিক কাজটা না করে তবে...... তবে......

“আমরা বাঁচবো কিভাবে?”

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২১

অদৃশ্য বলেছেন:



সমসাময়িক দুর্ভোগ নিয়ে খুবই সুন্দর একটি লিখা... আমরা বাঁচবো কিভাবে ?... আমরা বাঁচবো... বিবেক হীনতার মধ্য দিয়ে, অনৈতিকতার মধ্য দিয়ে... প্রতিহিংসা মধ্য দিয়ে... দুর্ণীতির মধ্য দিয়ে... সব শেষে মেরুদন্ডহীন একটি জাতি হিসেবে আমরা ঠিকই বেঁচে থাকবো বা আমাদের বেঁচে থাকার ব্যাবস্থা হবে...

আমাদের গুরুজনেরা বাঙালিদের মাথা উঁচু করে বাচঁবার জন্য ভালো কিছুই রেখে যাচ্ছেননা... যা কিনা খুবই আফসোসের...
শুভকামনা...

০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৫

সজল জাহিদ বলেছেন: জি ঠিক বলেছেন, একেবারে হৃদয়ের কথাটা বলেছেন, যেটা সরাসরি বলতে পারিনি নিরাপত্তার খাতিরে ভঁয়ে, গল্পের মাধ্যমে বলতে হল! ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮

টোকাই রাজা বলেছেন: আমরা বাঁচবো কিভাবে ?... আমরা বাঁচবো...
দারুন একটা পোস্ট অথচ কারো চোখে পড়ল না! আসলেই আমরা................ X(

০৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, ব্যাপার না ভাই। আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রশ্নটা যতবার ঘুরে আসছিল, আরও যেন শক্তিশালি হয়ে আঘাত করছিল। চমৎকার লিখেছেন।

অনুসরণে নিলাম।

০৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮

সজল জাহিদ বলেছেন: জি নিশ্চয়ই, আনন্দের সাথে। ধন্যবাদ অনেক অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.