নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধরার জন্য...... (নো ম্যান্স ল্যান্ড-সিক্যুয়াল!)

১২ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১২


অধরার সাথে অরণ্যর দেখা হয়েছিল অরণ্যরা তেতুলিয়া বেড়াতে গেলে। বাংলাদেশ আর ভারতের তারকাটা ঘেরা “নো ম্যান্স ল্যান্ড” এ! যেটা আসলে “সীমান্তে নয়, হয়েছে হৃদয়ের তারকাটা!” দুজনের মধ্যে তৈরি হওয়া এক অদ্ভুত ভালোবাসা, পাগল প্রেম আর অবাধ্য আবেগ!

এরপর ঢাকায় অধরার সাথে দেখা করার জন্য অরন্য আর ওর বন্ধুদের ভিসার জন্য কতনা চেষ্টা প্রচেষ্টা, অপমান,অবমাননা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা আর যন্ত্রণা সইতে হয়েছে সে জানে শুধু অরন্য আর ওর বন্ধুরা। আর জানে বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপে ভিসার জন্য উপায় খুঁজে বেড়ানোর হাজার আর লাখো ভ্রমণ প্রেমী বন্ধুরা! একবার তো পাসপোর্ট জমা দিতে গিয়ে কোন কারণ ছাড়া জমা না রাখার কারণে পুলিশ পর্যন্ত ডাকতে হয়েছে দূতাবাসকে! সে আর এক ইতিহাস, এখানে থাক।

অরন্য আর অধরার মত আরও হাজার হাজার মানুষ ভারতীয় ভিসার জন্য দিনের পর দিন হয়রানির স্বীকার হয়ে অবশেষে একটি গ্রুপ গন-মেইল কর্মসূচি হাতে নেই। ওদের মেইলে যেতে থাকে হাজার হাজার মেইল একই সাথে! একই ইস্যু নিয়ে! যার প্রভাব পরে জাতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সহ বিবিসির মত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে পর্যন্ত! বিস্তার ঘটে ভারতীয় গণমাধ্যম হয়ে দিল্লীতে গিয়ে পৌছায়।

ফলাফল স্বরূপ ভারতীয় কর্মকর্তাগন নতুন হাইকমিশনার আর আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ভ্রমণ ভিসা সহজে পেতে বিশেষ ভিসা ক্যাম্পিং এর আয়োজন করে। যেখানে লাগবেনা কোন ই-টোকেন, কোন দালাল বা নিতে হবেনা কোন সহয়তার আশ্রয়!

ঠিক তাই করে অরন্য। পাসপোর্ট এর ফর্ম পূরণ করে, কাগজ পত্র রেডি করে, ঠিকঠাক ভাবে ছবি জমা লাগায় ফর্ম এর সাথে। সবকিছু ঠিক আছে তবুও নার্ভাস লাগে বলে বার বার করে সবাইকে দেখাতে লাগলো যে সব ঠিকঠাক আছে কিনা? অথচ অন্যান্য সময় ওর কাছ থেকেই সবাই দেখে ও যেনে নেয়। সেই ওকেই মানসিক দুর্বলতার কারণে এর-ওর কাছে যেতে হচ্ছে সব ঠিক থাকা সত্তেও!

জমা দিতে গেল নির্ধারিত তারিখে, যেদিন ঈদ ভিসার বিশেষ ক্যাম্পিং শুরু হয়েছে সেদিন। গিয়ে দেখে বিশাল লাইন পুরো এলাকা জুড়েই যেন ভারতীয় ভিসার জন্য মানুষের হাহাকার! শুধু মানুষ আর মানুষ! লাইন ভারতীয় হাইকমিশন ছাড়িয়ে রাস্তা ও পুরো এলাকা সয়লাব করে ফেলেছে।

অরন্যও লাইনে দাঁড়ালো। কিন্তু মনের মধ্যে উসখুস কিভাবে একটু আগে আর সামনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো যায় সেই ভাবনায়! একটু এদিক ওদিক করলেই কিছুটা সামনে গিয়ে দাড়াতে পারবে সেটা অরন্য জানে। কিন্তু অনেক অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরা পই-পই করে বলে দিয়েছে এবার যেন আর কোন ঝামেলা না করে। চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে ভদ্র ভাবে নিজের সিরিয়াল অনুসারে যেন ঢোকে আর জমা দেয় পাসপোর্ট।

তাই এবার অরন্য চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে উত্তপ্ত উনুনের নিচে। রোদে, ধুলায়, বালুতে, গরমে, ঘামে, মানুষের চাপে একাকার হয়ে যায় ঘামে ভিজে, ধুলা মেখে, ধোঁয়া খেয়ে আর রোদে পুড়ে! তবুও হয়না ধৈর্য হারা, শুধু অধরার জন্য...! অধরার সাথে দেখা করবে, নো ম্যান্স ল্যান্ডের বাঁধা পেরোবে, ছুঁয়ে দেবে আলতো করে, ওর কোমলতাকে! শিহরিত হবে এক অদ্ভুত, অজানা আর অসীম আনন্দে।

এভাবে ধীরে-ধীরে পিঁপড়ার মত ক্ষিপ্র গতিতে! এগোতে-এগোতে দুপুর ১২:৩০ মিনিটে হাইকমিশনের মূল গেটে প্রবেশ করে অরন্য। মনে মনে বলে বাবা বাঁচলাম! কিন্তু একি হায়, ভিতরে যে মানুষে মানুষে গিজগিজ করছে! বাইরে যারা দাড়িয়ে আছে তাদের চেয়ে অন্তত দিগুন মানুষ আছে এই হাইকমিশনের ভিতরেই! কিভাবে এতো এতো মানুষের পাসপোর্ট জমা রাখবে দুপুর দুইটার মধ্যে? এতো অসম্ভব! তাহলে কি ফিরে যেতে হবে আজকের এতো এতো কষ্ট সহ্য করেও?

কিন্তু আশার আলো হয়ে এলেন, নতুন হাই কমিশনার নিজে। সবকিছু দেখে শুনে, ঘোষণা দিলেন আজ অন্তত চারটা পর্যন্ত পাসপোর্ট জমা নেয়া হবে আর দুপুর একটা পর্যন্ত যাদেরকে ঢুকতে দেয়া হবে তারা সবাই জমা দিতে পারবে অন্তত। সুতরাং আবারও শুরু হল অপেক্ষা আর অপেক্ষা! এবার বাসের খাঁচার মত করে! একটা লাইনকেই তিন বার পেঁচানো হয়েছে সাপের মত করে! যে লাইন শেষ করে হাইকমিশনের মূল ফটকে ঢুকতে ঢুকতে বিকেল চারটা পেরিয়ে গেছে! এদিকে ক্ষুধা, পানির পিপাসা, পেটে ব্যাথা আর মাথা ধরা নিয়ে অরণ্যর নাজেহাল অবস্থা। তবুও সব সইছে সে, “শুধুই অধরার জন্য!”......

মূল ফটকে ঢুকতেই ভয়ে হিম হয়ে গেল অরন্য! কারণ একেবারে সামনেই চেয়ারে বসে আছে চারমাস আগে ঝামেলা করা আর বিতণ্ডায় জড়িয়ে পুলিশী ঝামেলায় জড়ানো সেই কর্মকর্তা! নার্ভাস হয়ে পড়লো অরন্য ভীষণ ভাবে, যদি ওকে দেখেই চিনে ফেলে সেই ভয়ে! আবার যদি আঁটকে দেয় ওর পাসপোর্ট! তবে কি হবে অধরার আর অধরার কাছে যাবার এতো এতো অপেক্ষার?

কিন্তু নাহ অরন্য খুব সঙ্গোপনে এড়িয়ে গেল তাকে। অন্য আর একজনের কাছ থেকে কাগজপত্র চেক করে চেয়ারে গিয়ে বসলো দুরুদুরু বুকে! মনে এখনো শঙ্কা, জমা নেবেতো ওর পাসপোর্ট? আগের বারের ঝামেলার কারণে ওর পাসপোর্ট আবার ব্লক করে রাখেনি তো ওরা? কারণ অরণ্যকে তখন জিজ্ঞাসা করেছিল, “আর ভারত যাবেন না?” অরণ্য তখন জেদের বসে বলে এসেছিল যে আর যাবেনা! যদি তেমন কিছু করে থাকে, ওর পাসপোর্ট এর কোন তথ্য যদি এমন করে থাকে যেন জমা না রাখে তবে কি হবে? যা হয় হবে, কি আর করার? নিজেকে নিজেই প্রবোধ দেয় অরণ্য!

এক সময় ডাক আসে, কাঁপা কাঁপা হাতে জমাও দেয় সে তার পাসপোর্ট আর কাগজ পত্র! কোন ঝামেলা ছাড়াই! উহ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল এ যাত্রা। জমা তো অন্তত রেখেছে, ভিসা না দিলে কিইবা করার আছে। ডেলিভারি রিসিট হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো হাইকমিশন থেকে। মনে প্রানে খুশির জোয়ার, জমা রাখা মোবাইল নিয়েই ছবি তুলল ডেলিভারি রিসিটের, আর ইনবক্স করলো অধরাকে! অধরাও এতোক্ষণ অধীর অপেক্ষায় ছিল সেই ওপারে! শিলিগুড়িতে! অরণ্যর পাসপোর্ট জমা দেবার খবর শোনার অপেক্ষায়!

কোন মতে বাসায় ফিরে, ফ্রেস হয়ে একটু খেয়েই দিল ঘুম। সারাদিনের ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে পড়েছে অরণ্য। এক ঘুমে রাত ১০ টা। উঠেই শুরু হল অধরার সাথে পরিকল্পনা... কি করবে, কবে যাবে, কিভাবে যাবে, কোথায় কোথায় ঘুরবে, কি কি দেখবে, আর কিভাবে সময় কাটাবে একে অন্যের সাথে? কিন্তু অরণ্য নিজেই বাঁধা দিল কোন পরিকল্পনা করতে, কল্পনার রঙিন মেঘে ভেসে না বেড়াতে, রংধনু রঙের কোন স্বপ্ন না দেখতে! পাছে আবার ভিসা না পায়, তখন কষ্ট হবে খুব খুব! সেই কারণে এবার আর কোন আগাম পরিকল্পনা নয়। আগে ভিসা পাবে তারপর সব পরিকল্পনা করা যাবে।

অবশেষে চলে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। পাসপোর্ট ডেলিভারির দিন! অরণ্য মনে-প্রানে এক অন্যরকম আনন্দ-বিষাদ, আশা-নিরাশা, কল্পনা-হতাশার মিশ্র অনুভূতি! যদি ভিসা পায় তবে কি হবে আর যদি ভিসা না দেয় তবে কি হবে সেইসব হিসেবহীন হিসেব কষে চলেছে অবিরত! এই হিসেব কষতে কষতে চলে এলো ভিসা ক্যাম্পে। লাইনে দাঁড়ালো ঠিক আগের মতই! যদিও ভিড় এবার কিছুটা কম।

মোটামুটি সবাই ভিসা পাচ্ছে, কেউ ছয়মাস আবার কেউ এক বছর। অরণ্য এক বছরের ভিসা চেয়েছে। ঢুকবে বাংলাবান্ধা সীমান্তের ওপারের ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে। দেবে তো ওকে? পাবে কি ভিসা? ভাবতে ভাবতে সেই দুরাশায় কাছাকাছি পৌঁছে গেল। এবার নতুন চিত্র, সবাই পাসপোর্ট পাচ্ছেনা! কারণ এতো এতো চাপ ছিল যে সবার পাসপোর্ট সময়মত ডেলিভারি দিতে পারছেনা। অনেককেই ফিরিয়ে দিচ্ছে আগামী কর্ম দিবসে আসার জন্য! তার মানে অরণ্যর খেত্রেও যদি এমন ঘটে! তবে আরও দুই দিনের দুঃসহ যন্ত্রণা, নির্ঘুম রাত আর সীমাহীন দুশ্চিন্তায় কাঁটাতে হবে?

এই ভাবনাটা কেন যেন অরণ্যকে আঁকড়ে ধরলো! আর ঠিক ঠিক তাই-ই ঘটলো। অরণ্যর রিসিট দেখে পাসপোর্ট খুঁজে না পেয়ে ওকে আবারও পরের শনিবার ফের আসতে বলল! ভেঙ্গে না পড়লেও অনেকটা দমে গেল অরণ্য! তবে মনে মনে সান্ত্বনা খুজলো এই ভেবে যে যাক এখনো তবে সুযোগ আছে, পুরোপুরি ফিরিয়ে তো দেয়নি অন্তত! তাই ফের শনিবারের আশায় চলে গেল অরণ্য!

বৃহস্পতিবার কাটলো বেশ ভালোভাবে, শুক্রবারও। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা আর কিছুতেই যেন রাত হতে চায়না, রাত হল মনে হয় কয়েক যুগ পরে! রাত তো হোল কোন মতে, কিন্তু সময় যেন আর সরেনা! অদ্ভুত এক-একটা মুহূর্ত কাটছে, এক-একটা সেকেন্ড যেন, এক একটা মহাকাল সমান! মাথায় শুধু আবোল-তাবোল চিন্তা ভাবনা। ভিসা পাবে কি পাবেনা এই নিয়ে যত রকম দুশ্চিন্তা করা যায় করছে অরণ্য! দেখা কি হবে অধরার সাথে? পারবে কি দেখতে ছুঁয়ে? পাবে কি কোমল স্পর্শ?

কত আল্পনা আর কল্পনা অধরা আর অরণ্যর ভাবনার রাজ্য জুড়ে। ভিসা পেলে ওরা একসাথে ঘুরবে দার্জিলিং এর চা বাগানে, মেঘ ছোবে কালিম্পং এর, পাহাড়ের পিঠে হেলান দিয়ে বৃষ্টি দেখবে লাভার কোন কটেজে বসে, স্তরে স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রঙ বেরঙের পাহাড় দেখবে রিশপের চুড়ায় উঠে! বরফে বরফে আচ্ছাদিত পৃথিবীর অন্যতমসব পাহাড় চুড়া দেখে মুগ্ধ হবে, সান্দাকুফু থেকে, আরও দেখবে রডেনড্রন এর সমাহার, পাইনের আচ্ছাদিত সবুজ বনে সাদা বরফের বিছানা, টুমলিং এর টুং টাং! তিস্তায় রাফটিং, হারাবে ডুয়ারসের গহীন অরন্যে, আবেগে ভাসবে স্বর্গছেড়া চা বাগানে, টাইগার হিলের বর্ণিল আকাশে আর দার্জিলিং এর নীল আকাশে......

আর সমরেশের জীবনকে বদলে দেয় সাতকাহনে, জীবনকে গড়তে সেখার উত্তরাধিকারে, ভালোবাসায় পাগল করা কালবেলায়, কল্পনা আর বাস্তবতার বিস্তর ব্যাবধান শেখানো কালপুরুষে, পাহাড়ের টানে সব ভুলে যাওয়া গর্ভধারিণীকে, লেখা ও কোন লেখকে ভালোবেসে ফেলা সুনীলের শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির সমতলে........

অবশেষে অধীর অপেক্ষা আর অসীম আবেগের ভিসা পেলো অরণ্য! ছুটে যাবে এবার অধরার কাছে, খুব অল্প খরচে বাংলাবান্ধা হয়ে ওপারের ফুলবাড়ি হয়ে। বাসে করে কারণ এখানে অরণ্যর প্রিয় ট্রেন নেই! যাও আছে সে বাসের চেয়ে বেশী খরচের আর সময় সাপেক্ষও বটে। তাই তো বাসে করে যাবে, ঠিক সেখানে যেখানে ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তেতুলিয়ার চা বাগানের তারকাটা ঘেরা “নো ম্যান্স ল্যান্ডে!”

এরপর কি হবে, অরণ্য আর অধরার?

অপেক্ষায় থাকতে হবে, অরণ্যর অধরার কাছ থেকে ঘুরে আসার.........!!!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো। আগেরটাও পড়েছিলাম। আবার আসুক। +

১২ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

সজল জাহিদ বলেছেন: জি অনেক ধন্যবাদ। দেখাজাক এরপর কি হয়.........?? @নিদাঘ!

২| ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:০০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার!

১৩ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:২১

সমর দাশ বলেছেন: ভালো হয়েছে

১৩ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৫৬

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.