![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবশেষে অরণ্যর আর অধরার অধীর অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। অফিস থেকে ছুটি না পাওয়া সত্ত্বেও শুধু শুক্র আর শনিবার দুই দিনের জন্য অরণ্য বেরিয়ে পড়লো অধরার উদ্দেশ্যে। রাত ১০ টায় বাস ছাড়ল ঢাকা থেকে। পাশের এক ভ্রমণ প্রিয় সহযাত্রীর সাথে গল্পে-ঘুমে সকাল সকাল পৌঁছে গেল পঞ্চগড় সকাল ৭ টা।
সেখান থেকে আর একটি লোকাল বাসে করে ১:৩০ ঘণ্টায় বাংলাবান্ধা। এবার কিছুটা নার্ভাস লাগছে অরণ্যর। অধরাকে দেখতে পাবে, স্পর্শ করতে পারবে, কাছে গিয়ে, পাশে বসে অনুভব করতে পারবে এইসব আবোল-তাবোল ভাবনা আর কল্পনায়।
কোন রকম ঝামেলায় না গিয়ে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস যে যা চায়, বাধ্য ছেলের মত দিয়ে বাংলাবান্ধার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দুরুদুর বুকে পা রাখলো অরাধ্য অধরার ভূখণ্ডে। সেখানেও ইমিগ্রেশন শেষ করে একটু এদিক ওদিক তাকাতেই সামনে দেখতে পেল বেশ গোছানো কেউ যেন অপেক্ষা করছে কারো জন্য? অরণ্য সামনের দিকে এগোতেই মেয়েটি এগিয়ে এলো!
তুমি-ই অরণ্য?
হ্যাঁ আমি অরণ্য! আপনি?
আমি মাধবী, অধরার বন্ধু।
ওহ আচ্ছা, কিন্তু অধরা?
ও ওর বাসার বিশেষ কাজে আঁটকে গেছে, তোমাকে মেসেজ দিয়েছে কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকাতে তুমি সেটা পাওনি, তাই আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে নিয়ে যেতে শিলিগুড়ি পর্যন্ত। ও দুপুর নাগাদ ফ্রি হয়ে চলে আসবে। ততক্ষণ তুমি যেন বোর না হও, তাই আমাকে পাঠিয়েছে। আমি তোমাদের সব জানি, অনেক আগে থেকেই। সেই যে তুমি তেতুলিয়ার চা বাগানে এসেছিলে বেড়াতে, তখন আমিও ছিলাম সেই ক্যাম্পিং এ।
ওহ আচ্ছা, বিষণ্ণ-মনমরা-আহত-মর্মাহত অরণ্য ক্ষীণ জবাব দিল।
তোমার মন খারাপ হল বুঝতে পারছি, কিন্তু অধরারও কিছু করার ছিলনা, তবে চলে আসবে কিছু পরেই চল আমরা যাই, শিলিগুড়ি পর্যন্ত। এরপর অধরা এলে আমরা এক সাথে মিরিক যাবো আজ। তোমার তো সময় কম, তাই মিরিকটাকেই বেছে নেয়া।
সারাদিন মেঘ-পাহাড়-লেক আর সবুজ অরণ্যর মাঝে হারিয়ে গিয়ে সন্ধা নাগাদ শিলিগুড়ি ফিরে আসবো আমরা। চল যাই... কথা বলতে বলতে অরণ্য আর মাধবী হেটে হেটেই চলে এসেছিল বর্ডার থেকে ফুলবাড়ি পর্যন্ত। ফুলবাড়ি পৌঁছেই দাড়িয়ে থাকা একটি লোকাল বাসে চড়ে বসলো মাধবী, অরণ্যকে নিয়ে।
অধরা নেই, মনও মনে ছিলোনা অরণ্যর এতক্ষণ। তবে বাসে জানালার পাশে একটি ছিট পাওয়াতে যেন কিছুটা সম্বিত ফিরে পেল। পাশের ছিটে মাধবীকে এই প্রথম সে অনুভব করলো। এতক্ষণ নিজের মাঝে নিজেই ছিলোনা যেন!
আচ্ছা এখান থেকে শিলিগুড়ি কতক্ষণ লাগবে?
শিলিগুড়ি? আরে এই ফুলবাড়িই তো শিলিগুড়ির মধ্যে! মাত্র ১০-১৫ মিনিট পরেই আমাদের শিলিগুড়ি ষ্টেশনের কাছের মূল জংশনে পৌঁছে যাবো।
ওহ এতো কাছে?
হুম এতোই কাছে! তুমি বুঝতে পারছোনা তাই!
মানে কি, আমি কিভাবে বুঝবো? আমি কি আগে এসেছি কখনো এই পথে?
হুম সেটাও ঠিক। আচ্ছা আমি তোমাকে তুমি করে বলছি আর তুমি আমাকে কেন কোন সম্বোধন করছো না? আমাকেও তুমি করে বলবে কিন্তু! ঠিক আছে? আমাদের এখানে একটু ছোট-বড় সবাইকে তুমি করেই বলি। আপনি চলেনা আমাদের এখানে! বুঝলে?
হুম বুঝলাম।
এরই মাঝে কন্টাক্টর এলো টিকেট কাটতে, অরণ্য টাকা বের করতেই মাধবী চোখ রাঙালো! কপট বকা দিল ইশারায়। যার মানে অরণ্য বুঝে গেল, তাই আর টাকা দিতে চাইলোনা। মাধবী-ই টাকা দিল। ১০+১০=২০ রুপী। অরণ্য অবাক হল খুব। মাধবীকে জিজ্ঞাস করলো...
মাত্র ২০ রুপী ভাড়া? তাও দুইজনের!
হুম, ১০ রুপী জন প্রতি,ফুলবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি। কথা বলতে বলতে এসেছে ওরা,
চল এসেছি জংশন। অরন্যকে মাধবী, ওরা নেমে পড়লো।
বেশ আগে থেকেই দুই এক ফোটা বৃষ্টি পড়ছিল, কিন্তু শিলিগুড়িতে নামতেই যেন সেটা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে রূপনিল!
দৌড়ে এক দোকানের নিচে চলে গেল ওরা।
ওদেরকে দেখেই ছুটে এলো কয়েকজন প্যাকেজে দার্জিলিং যাবে কিনা জানতে। ওরা যাবেনা জানিয়ে দিল। কিন্তু দালালরাও নাছোড় বান্দা, কোথায় যাবে জানতে চাইলো? মাধবী চুপচাপ ছিল, কিন্তু ওই সংস্কৃতির সাথে অপক্ক অরণ্য বলে বসলো ওরা মিরিক যাবে! এইবার আর যাবে কোথায়, দালালরা আরও চেপে ধরতে চাইলো ওদেরকে। বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে। মিরিক-দার্জিলিং ২০০০ টাকার প্যাকেজ। থাকা-খাওয়া-সাইট সিয়িং সাথে শেয়ার জীপে যাওয়া-আসা! ভালো রুম, ডাবল বেড ইত্যাদি ইতাদি।
এসব শুনে মাধবীর মাথা গরম হয়ে গেল। অরণ্যর হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো রাস্তাতে, বৃষ্টির মধ্যেই! চল সামনে যাই। এখানে থাকলে ওদের হাত থেকে রেহাই পাবেনা কিছুতেই।
ওরা সামনের দিকে হাটতে লাগলো। এই কয়েক সেকেন্ড বা এক মিনিটের মত হবে হয়তো। এতটুকু যেতেই ওরা বাস স্ট্যান্ড আর শেয়ার জীপের বহর দেখতে পেলো। মাধবী অরণ্যকে জিজ্ঞাসা করলো, বাসে যাবে না জীপে যাবে? মিরিক পর্যন্ত?
জীপ হলে ভালো হয়, তবে বাসেও যেতে আপত্তি নেই তার, কিন্তু অধরা?
অধরা আসবে কিছুক্ষণ পরে, ততক্ষণে আমারা যাই, তুমি মিরিক দেখতে থাকো, অধরা চলে আসবে। এই বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থেকে ভিজতে হবেনা, আর বৃষ্টি না হলে নাহয় শিলিগুড়িটাই তোমাকে ঘুরে ঘুরে দেখাতাম অধরা না আসা পর্যন্ত। কিন্তু এখন তো এই রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই, তাই চল মিরিকের দিকে চলে যাই, আমি অধরাকে মেসেজ করে দিচ্ছি।
শিলিগুড়ি থেকে মিরিক কতক্ষণ লাগে?
এই ধর দেড় ঘণ্টা খুব বেশী লাগলে।
ওহ এতো কাছে? তাহলে চল। ওরা একটি শেয়ার জীপের পিছনের ছিটে উঠে বসলো। সামনে জায়গা নেই তাই।
জীপের মাঝখানে অরণ্য, ওর পাশে মাধবী, বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, ডানে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া টয় ট্রেনের লাইন, যেটা জলপাইগুড়ি দিয়ে চলে গেছে দার্জিলিং পর্যন্ত অজস্র পাহাড় পেরিয়ে। পিচ ঢালা মিহি রাস্তায় ১০ মিনিট যেতে না যেতেই বড় বড় পাইন বনের মধ্যে ঢুকে গেল ওরা। বেশ ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেল চারপাশ। একটু পরেই পাইনের অন্ধকার শেষ হতেই রাস্তার দুইপাশ জুড়ে চা-বাগানের সবুজ সমুদ্র শুরু হল। সেই সাথে অরণ্যর মনটাও ধীরে ধীরে সতেজ হতে থাকলো। ঠিক যেমনটি সপ্নে দেখেছিল এখানে আসার আগে, অনেকটা তেমন করেই।
সবুজ চা বাগানের মাঝে ঝমঝমে বৃষ্টি, রঙিন ছাতা মাথায় বর্ণিল অধরা আর অরণ্যর খালি পায়ে হেটে চলা! ছাতা থাকা সত্ত্বেও ওদের ভিজিয়ে দেয়া বৃষ্টির ছাঁট, আমলকী গাছের তলায় হেলান দিয়ে গুনগুন করা, হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এঁকে অন্যকে অনুভব করা। সবই প্রায় মিলে গিয়েছিল শুধু অধরার জায়গায় এখানে মাধবী! আর হাতে হাত রেখে হেটে চলার পরিবর্তিতে জীপে করে মিরিক যাওয়া। চা বাগানের দিকে তাকিয়ে থেকে এমন ভাবনায় বিভোর অরণ্যর চেতনা ফিরলো, জীপের হঠাৎ করে ব্রেক করে থেকে যাওয়া।
পিছনের ছিটের একজন আগেই নেমে যাওয়াতেঅরণ্য জানালার পাশে বসেছিল। এবার আবার দুজন উঠলো। একদম গা ঘেসাঘেসি করে বসেছে সবাই। অরণ্যর পাশে আর একটি মেয়ে বসলো শুকনা নামক জায়গা থেকে। মেয়েটি ওঠার পর থেকেই কেমন যেন একটা লাগছে অরণ্যর! একটা অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে, ওর গা ঘেঁসে বসে আছে অথচ কোন অসস্থি হচ্ছেনা কেন! অথচ মেয়েটির দিকে তাকানোও যাচ্ছেনা, কিভাবে তাকাবে, কি ভাববে! তবুও একটু চেষ্টা করে জানার কাঁচে চোখ রেখে দেখতে চেষ্টা করলো অরণ্য।
মাথায় বেশ ঢঙ্গি একটা হ্যাট, রঙিন ফতুয়া আর তার রেশমি কোমল খোলা চুল!
বাতাসে মাঝে মাঝেই যা ছুঁয়ে যাচ্ছে অরণ্যকে! যে চুলের ছোঁয়ায় একটা অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে অরণ্যর! মনে হচ্ছে এই স্পর্শ আর সুখ ওর অনেক অনেক দিনের চেনা, উহ আর তার গায়ের যে গন্ধটা বাতাসের ঝাঁপটায় নাকে এসে লাগছিল, যেন হারিয়ে যাচ্ছিল অরণ্য! কোন এক অনেক চেনা আপন গন্ধে মাতাল হয়ে! বাইরে বৃষ্টি, হালকা বাতাস, সবুজ চা বাগানে আনন্দের নৃত্য, মাঝে-মাঝে ঘন জঙ্গল, গাড় অন্ধকার, রোদের লুকোচুরি, ভিতরে পাশের ছিটে গা ছুঁয়ে বসা কোন সুন্দরী, তার চুলের নরম স্পর্শ, গায়ের মাতাল করা গন্ধ! ওপাশে মাধবী, আর অধরার জন্য অপেক্ষা! যেন অপার্থিব কিছু ঘটে চলেছে অরণ্যর জীবনে।
একটু পরে জীপ পাহাড়ের আঙিনার শুরুতে ঢেউ খেলে যাওয়া রাস্তায় উঠতেই একটা বিদ্যুৎ স্পর্শ যেন অনুভুত হল অরণ্যর বাম হাতে! পাশে বসা সেই স্নিগ্ধ রুপের, খোলা চুলের ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে যাওয়া পরিচিত শিহরণ আর গায়ের চেনা গন্ধে মাতাল করা মেয়েটি হাত রাখলো অরণ্যর হাতে! বিস্ময়ে মুখ ঘোরালো অরণ্য মেয়েটির দিকে। হাত তো অবশ হয়ে গেছে, মেয়েটিকে দেখে! মাথার হ্যাট খুলে, মুখের চুল সরিয়ে আর চোখের সানগ্লাস খুলে তাকালো অরণ্যর দিকে! আরে এযে অধরা!!
তুমি!এখানে?
হ্যাঁ, আমি, আমি-ই! তোমাকে চমকে দেব বলে মাধবীকে দিয়ে এমনটা করিয়েছি! উহ তোমরা মেয়েরা এতো এতো ক্লাইমেক্স করতে পারোনা! ভাবতেই পারিনি।
এরপর ওরা পাহাড় ডিঙিয়ে, মেঘে ভেসে, বৃষ্টিতে ভিজে, কুয়াশা জড়িয়ে, সবুজে মিশে মিশে গিয়ে পৌঁছালো মিরিক লেকের একেবারে পা ঘেঁসে। তিনজন মিলে লেকের পাশ ধরে হেটে-হেটে, গল্পে-কথায় আর হাসি-আনন্দে মেতে উঠলো। অরণ্য আর অধরার এতো এতো দিনের অসহ্য অপেক্ষার অবসান হল তবে। কিন্তু এই আনন্দ খুব বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি অরণ্য বা অধরার কারো কাছেই! কারণ অধরাকে চলে যেতে হবে দুপুরের পরেই।
তাই ওরা মন খাপার করে না থেকে পাহাড় চড়তে শুরু করলো। মিরিকের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত সুইস কটেজ আর হ্যালিপ্যাড দেখবে বলে। যেখান থেকে আবার নেপালের গ্রাম, কারশিয়াং, দার্জিলিং এর ঘরবাড়ি, এবং আকাশ পরিস্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যায়! তাই ওরা আর দেরি না করে উঠতে লাগলো সেই পাহাড় চুড়ায়......
০৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান, আর আসবে এই ধারাবাহিকের গল্প।
২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০
মাদিহা মৌ বলেছেন: ভেবেছিলাম গল্প পড়ছি। ভালো লাগল্য।
১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২৯
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ, আরো আসবে এই ধারাবাহিকের গল্প....
৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:০৩
কালনী নদী বলেছেন: প্রাকৃতিক সোন্দর্যে ভরপুর। সুন্দর লেখা সাথে ইদ মোবারক। মতান্তরে ঈদ।
১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২৯
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০৭
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: যত পড়ছি ততই ভালো লাগছে। ধন্যবাদ
ভালো থাকুন নিরন্তর।
১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৩০
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮
বিজন রয় বলেছেন: অন্যরকম উপস্থাপনা।
++++