নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বারুদ জাত

সকিনা

সকিনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহম আলি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫

সামনের ঐ গ্যারেজটা মকবুল মিয়ার। গ্যারেজের বাঁদিক দিয়ে লম্বা কাচারাস্তা। রাস্তার কিনার ঘেঁষে বিস্তীর্ণ নদী। নদীর পাড়েপাড়ে মেহগনি গাছ। গাছগুলো বেশ বড়সড়। বেশ পুরোনোও। এই রাস্তাটা ধরে মিনিট সাতেক হাঁটলেই সামনে পরবে চা-স্টল। শুধুই চা-স্টল এ কথা বলা যাবেনা। সকালে অবশ্য একটুআধটু পুড়িসিঙ্গারাও বানায় মকবুল মিয়া। ক্রেতাদের ভীড়, দোকানের আকার আকৃতি অনুযায়ী অনেকটাই কম। কম হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। বাজারের মূল তবকা থেকে বেড়িয়ে অনেকটা ভেতরে গিয়ে কার রুচি হয় দু'একটা সিঙ্গারা খাওয়ার। শ'তে চারজনের। নাহয় তারচে কিছু বেশিসংখ্যক লোকেরই হবে।
সে লোকদের মাঝে রহম আলীর নামটা থাকা আশ্চর্যের কিছুনা। আর দশটা মানুষ থেকে এই লোকটা একদমই ব্যতিক্রম। মকবুল মিয়াও তো ব্যতিক্রমধর্মী লোক-ই। রাস্তা ঘাটে নানান মানুষ নানান কথা বলে। আর না বলবেনই বা কিভাবে। স্বনামধন্য গ্যারেজের মালিকের কী-ই বা প্রয়োজন আছে চা-স্টল নিয়ে বসে থাকার। গ্যারেজের এককোণে পুরোনো একটা চেয়ারে বসে থেকে, রাতে তিন-চার হাজার টাকা গুনে নিয়ে আসাটাই হয়তো ভালো মানাতো তাকে। আর তিনি থাকেন চায়ের কাপ ধুঁয়ামুছা নিয়ে।
আমার কাছে অবশ্য বিষয়টা খারাপ লাগেনা। মকবুল মিয়ার দোকানের ভাজাপোড়া গুলো যেকারো মন কাড়বে। রহম আলীর মন গলেছে সে কবেই, আমারও একই অবস্থা।
আমার পছন্দ সই নদীর পাড়ের এই দোকানটা রহম আলীর কাছেও এত পছন্দের কেন তা জানার জন্য খুব ইচ্ছে হলো। কয়েকবার জিঙ্গেস করার চেষ্টাও করলাম, কিন্তু পারলাম না।
আমার ইতস্ততভাব দেখে রহম জিজ্ঞেস করলো,
- কিছু বলবেন নাকি?
- নাহ্
- তাহলে সংশয় দেখছি যে।
ছয়টা সিঙ্গারা দু'প্লেটে করে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে মকবুল মিয়া বললো,
- বেডা মাইনসের সামনে মাইয়া মানুষ ইসসত অইবো না তো কী অইবো? নাগো বেডি, এইডা ভালা গুণ। আমরা গেরামের ছেইরেনের অবস্থা চোক্ক দেওয়ার মতোনা। বেডাইন-ছেড়াইন সবার সাথে গরগরাইয়া কতা কয়। মুরব্বিটুরব্বি মানেনা।

মকবুল মিয়া ফোঁকলা দাঁতে সজোড়ে হেঁসে দিয়ে আমাকে ভালো ভাবে দেখেনেয়। হিজাবে আবৃত দেখে ভ্রু কুঁচকে এও বলে,
- তুমি দেহাজা আগিলা বেইট্টেনের মতো। চোখটাও দেহা যায়না। এইবা ঢাইক্কে রাহনও ভালা। আল্লাহ তোমারে বাচাউক।
-
মকবুল মিয়ার আঞ্চলিক কথা শুনে আমিও যেন গ্রামচরিঞ্চু হয়ে পরি। অজপাড়াগাঁয়ের ষাটোর্ধ বৃদ্ধার ভাষাভাব আমাকে আকৃষ্ট করেছে।
মনেমনে চিন্তা করতে লাগলাম, না জানি এই মকবুল মিয়া কত পার্বতীর কোমল হৃদয় এ হাসিতে ছিদ্রে ছেছড়ে দিয়েছে।
তখন বিকেল প্রায় ঘনিয়ে। পাখিগুলো সাবলীল ভাবে কিচিরমিচিরে বাড়ি ফিরছে। দোকানের পাশের নদীটা বিনয়ে বহমান। সেই বহমান নদীর দিকে রহম আলী আপাতদৃষ্টিতে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে, নিচু গলায় বলতে লাগলো,
- আমি না আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। কত বৃষ্টি বাদলের ঘুম মোক্ষম রাত আমি না ঘুমিয়ে আপনাকে ভেবে কাটাই, তা আপনি জানেন না।
সারা সপ্তাহর প্রতিটা সময়ই বিচলিত হই। সেই বিচলিত ভাব কেটে যায় যেদিন আপনি আমার সাথে কোন রেস্তোরাঁ বা হোটেলে খেতে আসেন। আপনি হয়তো আমার কথা শুনে মনেমনে হাসবেন। কিন্তু আমি আমার ভালবাসার নিখাদতা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে পারি, আপনার পেছনে খরচ করা প্রতিটা টাকাই আমার জন্য সোয়াবের কারণ হবে। আর.. র..।
রহম আলী আরো কতকিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারলোনা। নিমিষেই চাঁদিম চেহারাটা মিছে আবেগের দুর্যোগ ছায়ায় ঝাপসা তামাটে হয়ে গেলো।
আমি এক দৃষ্টিতে রহম আলীর হ্যান্ডসাম বোকাসোকা চেহারাটায় তাকিয়ে রইলাম। বয়সের সাময়িকী মিছে আবেগের ঠ্যালায় পরিবারের ভবিষ্যৎ-স্বামী ছেলেগুলো 'নারী' শব্দটার মারপ্যেঁচে কত ভাবেই না বন্দি। ভালবাসার নাম বিকিয়ে সেই নারীর পেছনে না জানি কত টাকা খরচ করে রহম আলীরা।
মূহুর্তেই মনে পড়ে গেলো আমার স্কুল পড়ুয়া বান্ধবী ইফরানার কথা।
ওর কাছ থেকে শুনা "আমার বফ আমাকে i phone কিনে দিছে, থ্রি পিছ কিনে দিছে। গতকাল এই খেয়েছি সেইখেয়েছি। এত টাকা দিছে হেত টাকা দিছে" সব কথাই আমার বিশ্বাস করতে হলো। চিন্তার বস্তা বন্ধ করে, আমি ব্যাগের ভেতর থেকে খাবার বিল তিনশো টাকা টেবিলে রেখে হুর হুর করে বেরিয়ে যাই। যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম,
এক মানব জমিন রইলো পরি, চাষ করিলে ফলতো সোনা। পুরুষ! তুমি তো কৃষি কাজ জানোনা।

গল্প-রহম আলী
লেখা- আয়েশা তাশফি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.