নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহনা (৫ম পর্ব)

০১ লা মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪

নারী দিবস উপলক্ষে অফিসে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, অফিস থেকে কিছুটা দূরে তাদের নিজস্ব প্রোপার্টিতে লাইট ফ্লাওয়ার ক্যান্ডেল ডিনার এবং ওমেন্স'ডের বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সেলিব্রেট করার জন্য। সেলফি তোলার জন্য জায়গায় জায়গায় নানা রকম সেলফি প্লাকার্ড সাজানো হয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি, সফট ড্রিংকস, বোরহানি, কফি।

অফিস ওয়ার্কের পরে মেয়েরা জয়েন করবে সেই অনুষ্ঠানে। অহনা কাজের ফাঁকে বার কয়েক দেখল হাতে একটা স্টিলের লাঠি কিভাবে যেন পায়ের আঙ্গুলের সাথে এডজাস্ট করা অবস্থায় হালকা খুঁড়িয়ে ওলি দূর থেকে ঘুরঘুর করে ওকে দেখছে, সবাইকে বলছে সিঁড়ি থেকে পরে ফ্রাকচার হয়েছে পায়ে।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে আসলে ব্যথা পেয়েছে‌ কিংবা এডমিন স্যার তাকে এখন পর্যন্ত কিছু বলেছে। সকাল পেরিয়ে লাঞ্চ আওয়ার চলে এসেছে। এখনো তাকে কিছু বলল না স্যার!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজের ফাঁকে কফির মগে চুমুক দেয় অহনা। এই সময় অন্য ডিপার্টমেন্টের সেলিনা আপু আসে, দূর থেকে হাসি দেয় অহনার দিকে তাকিয়ে। অহনা পাল্টা হাসি দিতেই কাছে এসে বলে
-কি হইছে অহনা হাত ধরে নাকি টানাটানি হয়েছে তোমার সাথে ওলি ভাইয়ের সাথে? তো গায়ে শক্তি ছিল না তোমার? একটা লাথি দিয়া ফেলে দিতা আমি হইলে তো ওইখানেই জিন্দা পুতে আসতাম। খাচ্চর একটা অফিসে মেয়েদের সাথে লুচ্চামি করে। তোমাদের স্যারের কাছে বলছো স্যার কি বলল?
-স্যার বলল দেখবে
-তাইলে হইছে, উনি আর দেখছে! যেদিকে উনার লাভ উনি সেই দিকেই শুধু কথা বলে, উনার তো পারসোনালিটি বলতে কিছু নাই, দেখবা কিছুই হবে না। তুমি তার থেকে এইচ আর হেড স্যারের কাছে গিয়ে বিচার দাও।
-আরে না আপু, এইচ আর এর হেড স্যারের কাছে গেলে ব্যাপারটা অন্যরকম হবে, সে বলবে আপনার ডিপার্টমেন্টের স্যারের কাছে না বলে এখানে কেন আসছেন। পাশ থেকে বলে ওঠে রুনু আপা।
অহনা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, ইতিমধ্যে পুরা বিল্ডিং এ ছড়িয়ে গিয়েছে ঘটনাটা। মনে মনে চাকরি ছাড়ার ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু বাসায় নানারকম বিয়ের প্রস্তাব, আত্মীয়-স্বজন অথবা বাইরের মানুষজনের দেখতে আসা, মনে হতেই শিউড়ে ওঠে। মেয়েরা বোধ হয় কোথাও শান্তি পায় না, আজ নারী দিবস।। নারীদের কে নিয়ে এত অত্যাচার এত অপমান এত এত জঘন্য ঘটনা ঘটে এই নারী দিবস করে নারীদের কি এমন উপকার হয়।

কাজ করতে করতে লাঞ্চ আওয়ার হয়ে যায়, এখনো অহনার দুইটা ফাইল বাকি আছে সফটওয়্যারে এন্ট্রি করতে হবে কিছু ইম্পরট্যান্ট ডাটা, তারপর হার্ড কপি গুলো ফাইলিং করে স্টোরেজ করতে হবে।
ফিমেল এমপ্লয়ীদের এর কাছে একটু ফোন দিয়েও খোঁজ নিতে হবে সবাই নারী দিবসের গিফট গুলো ঠিকঠাক পেয়েছে কিনা। কথাটা মনে হতেই ল্যান্ডফোন নিয়ে বসে ও, সফটওয়্যার থেকে ফোনবুক দেখে দেখে একজন একজন করে নারী এমপ্লয়ীদেকে ফোন করতে থাকে, প্রথমেই শিমু আপাকে ডায়াল করে, একবার রিং হতেই ফোন ধরে ফেলে শিমু আপু, মিষ্টি করে সুর করে বলে
-হ্যালো অহনা, হ্যাপি ওমেন্স ডে, কি খবর তোমার? ভালো আছো?
-হ্যাপি ওমেন্স ডে আপু এইতো ভালো আছি আচ্ছা আপু ওমেন্স ডের গিফট গুলো কি ঠিকঠাক পেয়েছ?
-পেয়েছি আপু, তোমার খবর বলতো? কি হয়েছে ওলি ভাইয়ের সাথে?
-তুমি কার কাছে শুনেছ?
-এইতো আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা পিয়ন বলল
-আমি শুধু রুনু আপুকে আর সেলিনা আপুকে বলেছি আর আমাদের এডমিন স্যার শুনেছে আজ সকালে এর ভিতরে পিয়ন পর্যন্ত ছড়িয়ে গেল কথাটা!?
-ছড়াবে না? এমন ঘটনা, তবে ওলি ভাই তো এরকম না, আট বছর ধরে একসাথে চাকরি করি কখনো তো এরকম হয় নাই অহনা।
-কখনো হয় নাই সেটা তোমাদের ভাগ্য ভালো আমার ভাগ্য খারাপ আমার সাথে হয়েছে আপু।
-আসলে কার মনে যে কি চেহারা দেখলে তো বুঝা যায় না। যাইহোক অনুষ্ঠানে তো থাকছো নাকি বাড়ি চলে যাবা?
-অনুষ্ঠানে থাকবো আপু
-ঠিক আছে দেখা হবে তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।
ফোন রেখে বিষন্ন হয় অহনা, সেই সকাল আটটার সময় স্যারকে এসে বলেছে এর ভিতরে ওলি ভাই এমনভাবে ঘুরঘুর করছে যেন সে এই অফিসের মালিক। কালকের ঘটনার পর তার সাহস আরো যেন বেড়ে গিয়েছে,
ফোন বেজে ওঠে অহনার, একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের রাজিয়া আপা কল দিয়েছে, কল ধরতেই ওপাশ থেকে রাজিয়া আপা বলে
-অহনা ফোন করেছিলেন আপনি?
-জি ম্যাডাম ওই ওমেন্স ডের গিফটগুলো পেয়েছেন কিনা জানার জন্য।
-গিফট গুলো পেয়েছি, আপনার কি খবর? ওলি নাকি কি করছে? অহনা আপনাকে একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না, আপনার পাজামাগুলা তো সব গিরালির উপরে উঠে থাকে অফিসে তো এত ফ্যাশন করা যাবে না, ওরা তো পুরুষ মানুষ ওদের আর দোষ কি বলেন ওদের তো চোখ যাবেই, তাছাড়া অফিসে তো আরো সুন্দরী মেয়ে আছে তাদের বেলায় তো কিছু হয় না, আমাদের একাউন্টসের আলভী আছে সুমা আছে কই ওদের সাথে তো এরকম করতে সাহস পায়নি, আপনার সাথে সাহস পেল কি করে? এটা কার দুর্বলতা বলেন? আপনার দুর্বলতা? আপনি নিজেকে ঠিক করেন আগে, কথাগুলো এক টানে বলে ফোনটা রেখে দিলো রাজিয়া আপা।

তিক্ত মন নিয়ে বসে থাকে অহনা, আবারো ওর ল্যান্ড ফোন বাজছে, ফোন করেছে আরেফিন স্যার, আর্জেন্ট তার রুমে ডাকলেন,‌সাথে সাথে সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অহনা কিছুক্ষণ, ভেতরে তার গেস্ট আছে, কাঁচের দেয়াল থেকে অহনাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাতের ইশারের ভিতরে যেতে বললেন, ভেতরে ঢুকতেই আরেফিন স্যার নাটকীয় ভাবে উঠে দাঁড়ালেন, তার গেস্টের জন্য রাখা সোফায় বসলেন, আবার উঠে দাঁড়ালেন, আবার বসলেন, অহনার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালেন? প্রবলেমটা কি অহনা ধরতে পারল না,
এবার কথা বলে উঠলেন
-কি? ধরতে পারছ না তো? ভালো করে দেখো? আমার রুমে ঘুরে ঘুরে প্রত্যেকটা অ্যাঙ্গেল থেকে আমাকে দেখো?
-স্যার কোন কি ভুল হয়েছে?
-যা বলেছি করো তো দেখো আমাকে? অহনা ধীরে ধীরে রুমটা ঘুরে সব সাইট থেকে তাকে দেখলো, শুনেছে আরিফিন স্যার মালিকদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, সূর্যের থেকে যেমন বালির তাপ বেশি হয়, তেমনি ওনার তাপ ও অফিসে অনেক বেশি, উনার চরিত্র নিয়ে ও নানারকম গুঞ্জন আছে। গভীরভাবে লক্ষ্য করেও অহনার চোখে কিছু পড়ল না,‌বললো
-বুঝতে পারছি না স্যার
-বুঝতে পারছ না তো? তাহলে তো তোমার রুচি নাই? কোন অ্যাঙ্গেল থেকে এই সোফাটাকে আমার রুমে মানায় বলতো? আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাসে অহনার মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, এমন সময় কোথা থেকে ঝড়ের মতন ভিতরে এসে দাঁড়ায় ইশান, আরিফিন স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে
-স্যার অফিস ফার্নিচার বা যে কোন ইন্টেরিয়র ডিজাইন যেকোনো ব্যাপার আপনি আমার সাথে শেয়ার করবেন অহনা ম্যাডাম এ সম্পর্কে কিছু জানেনা, তারপর অহনার দিকে ঘুরে বলল ম্যাডাম আপনি আপনার টেবিলে যান আমি স্যারের সাথে কথা বলছি।
অহনা রুম থেকে বের হয়ে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসে; ওর ডেস্কে বসার কয়েক মিনিট পরেই ঝড়ের গতিতে ঈশান আসে, ধমক দিয়ে চোখ লাল করে বলে
-অহনা ম্যাডাম আপনি এরপর থেকে যেখানেই যান; যে কারো সাথে কথা বলেন সাথে রুনু আপাকে রাখবেন; আর এই স্যারের রুমে ডাকলেও যাবেন না অথবা ওলির সাথে একদম কথা বলবেন না। মনে থাকে যেন, শেষ কথাটা এমন চিৎকার করে বলে যে অমন অতর্কিত চিৎকারে অহনার হাতে থাকা পানির গ্লাস ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায়, দ্রুত সেটি তুলতে গেলে রিভলভিং চেয়ার সহ একদম উল্টে পড়ে অহনা। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রুনু আপা ওকে ধরতে এলে অহনা কোনরকম নিজেকে সামলে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়, এতটুকু মন এত ধকল কি আর সয়! ওয়াশরুমের কল ছেড়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করে অবশেষে। (চলবে)

প্রথম পর্বের লিঙ্ক

২য় পর্বের লিঙ্ক

৩য় পর্বের লিঙ্ক

৪র্থ পর্বের লিঙ্ক

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শেষ করে উধাও হবেন। তবে শুক্র-শনি-বৃ্‌হ না লেখা উচিত। মানুষ কম ঢু মারে।

০১ লা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

সামিয়া বলেছেন: আচ্ছা

২| ০১ লা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

অপু তানভীর বলেছেন: আরো কয়টি পর্ব আসবে?

প্রথম পর্ব পড়েই স্টপ করে রেখেছি । গল্প শেষ হলে তারপর পড়া শুরু করব।

০১ লা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২০

সামিয়া বলেছেন: আমি তো প্রথম পর্বটা লিখে ভেবেছিলাম দ্বিতীয় পর্বে শেষ করবো, কিন্তু বড় হচ্ছে লেখাটা আমিও বুঝতে পারছি,আর অল্প কয়েকটা পর্বের ভেতর শেষ হয়ে যাবে আশা করি।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১৯

ডার্ক ম্যান বলেছেন: ইহা কি উপন্যাস হবে? বই আকারে বের হবে,?

০১ লা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২০

সামিয়া বলেছেন: অত বড় মনে হয় হবে না,

৪| ০১ লা মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২৭

শায়মা বলেছেন: এত শয়তানী মেয়েদের জব করায়! X((

এই সব নিয়েই হাজার মেয়েরা মুখ বুজে কাজ করে যাচ্ছে .....

০১ লা মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩১

সামিয়া বলেছেন: হুম আপু,কত নির্যাতন যে মেয়েদের সহ্য করতে হয় বড় বড় কর্পোরেট অফিস গুলায়, বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না।

৫| ০১ লা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৯

নকল কাক বলেছেন: "বড় বড় কর্পোরেট অফিস"

০১ লা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯

সামিয়া বলেছেন: বড় বড় কর্পোরেট অফিস বলতে সাধারণত আধুনিক, সুসজ্জিত, এবং বহুতল ভবনকে বোঝায়, যেখানে বড় বড় কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসব অফিসে অনেক কর্মচারী কাজ করেন, এবং সাধারণত আলাদা আলাদা মানবসম্পদ (HR), বিপণন (Marketing), হিসাবরক্ষণ (Finance), তথ্যপ্রযুক্তি (IT)etc ডিপার্টমেন্ট থাকে।


৬| ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৫৯

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ সামিয়া, সবগুলি পর্ব পড়লাম; বাকিগুলির জন্য অপেক্ষা করছি। ঝরঝরে লেখা, পড়তে ভালোই লাগে। সম্পূর্ণটা পড়ে তারপর নাহয় বলা যাবে কিছু।

দেশের কাজের জায়গাগুলির বর্ণনা পড়লে একটু অস্বস্তি হয়। কতকিছু কম্প্রোমাইজ করে যে কাজ করতে হয় (ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে, ছেলে-মেয়ে উভয়কেই)! সবচেয়ে বেশি কম্প্রোমাইজ করতে হয় বোধহয় 'আত্মসম্মানবোধ'। তারপরও আশাকরি হয়তো আগের চেয়ে এখন আরো ভালো হয়েছে কাজের জায়গার পরিবেশ।

মেরুদন্ড শক্ত হলে আর কাজের জায়গার পরিবেশ একটু ভিন্ন হলে দেশে কাজ করা বেশ কঠিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.