নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহনা (ষষ্ঠ পর্ব)

০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০৫

ছবিঃনেট

ওয়াশরুমের কলের পানি পড়ার শব্দে চাপা পড়ে অহনার কান্নার আওয়াজ। এত অপমান কেনো তার জীবনে! এত অন্যায়ই বা কেন হতে হবে ওর সাথে, চোখ-মুখ ধুয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে নিজেকে মনেহয় অফিসের লন ঝাড়ু দেওয়া মহিলাটাও তার থেকে এখানে সম্মানীয়। চোখের জল ফেলতে ফেলতে মনে মনে অন্য দিনগুলোর মতন চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলেও বাসার পরিবেশ পরিস্থিতির কথা মনে হতেই আবার ডিসিশন চেঞ্জ করে অন্য সব দিন গুলোর মত।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসার পর দেখে রুনু আপা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে, অহনার ফোলা ফোলা লাল কান্না ভেজা চোখ বিমর্ষ চেহারা দেখে এই প্রথম তার মায়াই লাগে এইরকম বোকা সোকা অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটার জন্য, খানিকটা কোমল গলায় সে বলে
— ঈশান ভাই বলল তোমাকে নিয়ে একটু বেসমেন্টে যেতে
- ওখানে কেন আপু? আমি ওখানে আর যাচ্ছি না। অচেনা আতংক চেহারায় ফুটে উঠে ক্ষনিক সময়ের জন্য।
-না মানে বেসমেন্টের যে দরজাটা আমরা ইউজ করি ওটা লক হলেও, আরো ২টা ওয়ে আছে বের হবার, সেটা দেখাবার জন্য যেতে বলেছে। লাঞ্চের পরে গেলেও হবে, লাঞ্চ টাইম তো হয়েই গিয়েছে চলো আগে লাঞ্চ করে নিই।

তারপর লাঞ্চ শেষে বেসমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে অহনা দেখায় রুনুকে
-এই যে আপু এইখানে ওলি ভাই আমার সাথে সিনক্রিয়েট করেছে, এইখানে সিসি ক্যামেরাও আছে আমার কথা বিশ্বাস না হলে স্যাররা কিন্তু সিসি ক্যামেরায় চেক করেও দেখতে পারতো, রুনু কিছু বলতে যাবে এর মধ্যেই ঈশান আসে, দ্রুত পায়ে হেঁটে ওদের পেছনে ফেলে সামনে হাঁটে, প্রতিদিন ৯টা ৫টা ঈশানের এই দৃশ্যপট, সারাক্ষণ এই কাজ! ওই কাজ! সেই কাজ! কি এত কাজ তার! এত তাড়াহুড়া তার এত ব্যস্ততা!
ইশান একজন দীর্ঘকায়, সুগঠিত দেহের অধিকারী, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, চোখদুটি গভীর, তীক্ষ্ণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত, চওড়া কাঁধ, শক্তপোক্ত বাহু উচ্চতা প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি।
ঈশান ওদেরকে করিডোর গুলো ঘুরে দেখায়, এখানে বেশ কয়েকটি করিডোর আছে, একটা করিডোর দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের কিচেনে ওঠা যায়, আরেকটা চলে গিয়েছে গাড়ি পার্কিং এরিয়ায়, অহনা আশ্চর্য হয়, লোকেশন অনুযায়ী ওদের মাথার উপড়ে একটা আর্টিফিশিয়াল ঝর্না আর একটা দীর্ঘ ছড়ানো চৌবাচ্চা আছে, কিন্তু কে বলবে!! নীচ থেকে কিচ্ছু বোঝা যায় না। ঈশান জানালো এক্সিক ডোরে দুজন সিকিউরিটি সব সময় থাকে, ইন্টার কমে ইমার্জেন্সি বাটনে যোগাযোগ করে দরজা খুলে দিতে বললেই হবে। একদম সহজ।

রুনু আপা ভালো করে দেখছেন, খুব মনোযোগী শ্রোতা হয়ে শুনছেন তার কথা; ঈশানের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছেন, খানিকটা পেছনে চুপচাপ অহনা, তার বিষন্ন চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড এক মায়া ছড়িয়ে যায় সমস্ত পাজড় জুড়ে ঈশানের।

- ভাইয়া কি আবার আয়ারল্যান্ড ফিরে যাবেন? খনখনে গলায় বলে রুনু আপা, সে যখন বেশি স্মার্টলি কথা বলতে চায় তখন তার গলা শোনা যায় শাকচুন্নিদের মতন ভাবতেই হাসি পায় অহনার,
ঈশান যে দেশের বাইরে থাকতো সেটাই জানতো না অহনা, এই অফিসে ও এখনো বলতে গেলে নতুন কেবল ৭ মাস হয়েছে কাজেই অনেক কিছু ও এখনো জানে না,
- আশরাফ স্যার তো সব সময় আমাকে বলে আমার যেহেতু কোন ছেলে মেয়ে নাই আমার ভাতিজা ঈশানই সব কিছু দেখবে, আরেকটু পুরাতন হোক সব দায় দায়িত্ব ওর হাতে তুলে দেব।
- আমাকেও ওসব বলে চাচা, কিন্তু এই ঝামেলা মাথায় নিয়ে ইচ্ছে করে না
- না নিয়েও তো পারছেন না,
- হ্যাঁ তা ও ঠিক, দেখি কি করা যায়, আনমনে বলে ঈশান। আর অহনা আপনি বেসমেন্টে একা কখনোই আসবেন না। আবারো সাবধান করে দিয়ে যেমন দ্রুত এসেছিল তেমনি দ্রুত তার কাজে ফিরে যায় ঈশান।

সন্ধ্যায় নারী দিবস অনুষ্ঠান জমে উঠেছে, লাইটিং, ফুল, ক্যান্ডেল ডিনার গ্ল্যামার, মঞ্চে একে একে দেশের আলোকিত নারীরা বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের কথা হচ্ছে তারা পেরেছে এমনকি এখানে উপস্থিত যে সকল নারীরা আছে তারা সকলে পেরেছে বলেই আজকে এই জায়গায় উপস্থিত। অহনার কাছে কথাগুলো অযৌক্তিক লাগে এখানে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকাটা কে তারা জীবনের একটা সাফল্য হিসেবে ইন্টারপ্রিটেশন করছেন!?

ওলির সাথে অহনার ঘটনার প্রায় পনেরো দিন চলে গেল, এখনো এটা নিয়ে কিছু হয়নি, ওলি দিব্যি অফিসে আসছে যাচ্ছে তার কিছুই হচ্ছে না, গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এবার নাকি তার প্রমোশনও হবে, অহনা নাক চোখ বন্ধ করে রোজ অফিসে কাজ করে, কারো সাথে কাজ ছাড়া কথা বলেই না,
একদিন আয়েশা আপা মিষ্টি করে হেসে নিচু স্বরে ওকে বললেন,
-বিয়ে করছো না কেন তুমি? বয়ফ্রেন্ড আছে?
-বয়ফ্রেন্ড নাই আপু অহনা জবাব দিলো
-তাহলে
- আপু আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তা তো না, কেবল বিবিএ শেষ হলো, এমবিএতে এখনো এডমিশনই নেইনি, এই মাসে নেব নেব ভাবছি। বাসা থেকে তো বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে, দেখুক আমার তো না নেই।
-বিয়ে কর বিয়ে কর বিয়ে করলেই দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে,
- বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে মানে? এখন কিছু ঠিক নাই?
- না ঐ যে ওলি ভাই হাত টাত ধরেছিল ওসব আর হবে না, বলেই হিহিহি করে হাসতে থাকে, হাসি আর থামেই না, এত কুৎসিত হাসি অহনা যেন আর কক্ষনো দেখিনি হতাশ চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ও, হাসতে হাসতেই বলে
-না মানে আমাকে সে বলেছে, তোমাকে সে অনেক পছন্দ করে,ছেলে খারাপ না কিন্তু, ধবধবে ফর্সা দেখতে তো ফরেনারদের মত লাগে, আমি হলে কিন্তু রাজি হয়ে যেতাম, আয়েশার চিকন ঠোঁটে পার্পল কালারের লিপস্টিকের দিকে তাকিয়ে অহনার ইচ্ছে করলো কষে একটা থাপ্পড় মারতে; যেভাবে ওলিকে মেরেছিল।
- তুমি বললে বাসায় উনার বাবা মাকে পাঠাবে, এ্যাই অহনা কথা বলছো না কেন? অমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কি ভাবছো বলোতো
- কিছু না আপু, নিজেকে কন্ট্রোল করে ও
-আমি হলে রাজি হয়ে যেতাম
-তাহলে রাজি হয়ে যাও
-তোমার কাজী ভাইয়ের কি হবে, আজকেও আসার সময় তোমার কাজি ভাই আমার গালে কপালে চুমু দিয়ে আদর করে দিল। এক মুহূর্ত আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না এত ভালবাসে! আমার মত এত সুন্দরী মেয়ে কিছুতেই হারাতে চায়না, এখন এইরকম জামাই ছেড়ে বিয়ে করবো কি করে বলো!?
-আপনি সুন্দরী! আপনার চিকন ঠোঁটে এই যে পার্পল কালারের লিপিস্টিক দিয়ে রাখছেন আপনাকে দেখতে বিচ্ছিরি লাগছে আপনার কথা গুলোর মতন,
-কি বললা তুমি? আমাকে অপমান করো তুমি? আমাকে? এই আয়েশাকে??
চিৎকার করছে সে তার গলা ফাটিয়ে, অহনার মাথায়ও জিদ চেপে বসলো, ও সেখান থেকে সরে আসতে আসতে আয়েশার হাত থেকে একটা হার্ডকপির পৃষ্ঠা যেটা দিয়ে কাজ করছিল টান দিয়ে হিজিবিজি করে ছিড়ে ফেলে দিলো,
-হায় হায় করে বিলাপ করে উঠলো আয়েশা, এটা কি করলা তুমি এটা কি করলা??আমি এখন কাজ করবো কি দিয়ে, এই ডাটা গুলো আবার রোজী আপার কাছে থেকে কিভাবে আমি জোগাড় করব! কত কষ্ট করে আমি এটা জোগাড় করেছি, বেয়াদব মেয়ে কোথাকার চাল চলনেই তো বোঝা যায় এগুলা কোন পরিবারের মেয়ে, ওলির মতো ভদ্র ছেলের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়।

উনার চিৎকার কে পিছনে ফেলে অহনা দ্রুত চলে আসে নিজের ডেস্কে, রাগে থরথর করে কাঁপছে ও; হাঁপাতে থাকে দুঃখে কষ্টে অপমানে।
তারপরের দিন অহনা অফিসে এসে শুনে আয়েশার চাকরি চলে গিয়েছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো হয়েছে লেখা।

০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:১৫

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:০৭

জনারণ্যে একজন বলেছেন: অহনা চরিত্রটাকে একটু ন্যাকা মনে হচ্ছে। একটু না, বেশ ন্যাকা।

এবং এই ন্যাকা মেয়েটা, আশেপাশের অন্য সব মেয়েদের নেগেটিভলি ডিফাইন করছে, একটু এলার্মিং এটা। এনিওয়েজ, গল্প তো গল্পই। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছুই নেই।

@ সামিয়া, গল্প কিন্তু একটু স্লো হয়ে গেছে। ঠিক বুঝতে পারছিনা আপনার গল্পের এই ন্যাকা চরিত্রের মেয়েটা আর কতদিন কান্না-কাটি করে দিন পার করে গল্প শেষ করে দেবে।

০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:১৭

সামিয়া বলেছেন: চরিত্রটি ন্যাকা লাগলে আমার ব্যর্থতা। এই পর্বে শেষ করার ইচ্ছা ছিল চেষ্টা ও করেছিলাম হলো না। আগামী পর্বে শেষ করবোই প্রমিজ।

৩| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

নিমো বলেছেন: @ জনারণ্যে একজন, আপনি বোধহয় বহুবছর দেশে নেই। এদেশে চাকুরির যে ভয়ানক পরিবেশ আর রাজনীতি, তাতে আত্মহত্যাকেও আপনার স্বাবাবিক মনে হতে পারে।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.