![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অফিসের অন্য দিন গুলোর মতন কর্মব্যস্ত দিনে হঠাৎ অফিসের মালিক ম্যানেজিং ডিরেক্টর বস অসুস্থ হয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি তাই আপাতত কোম্পানির দায়িত্ব তাঁর ছেলে সামলাবে এইরকম মেইল আসলো সবার কাছে।
বছরের পর বছর ধরে অফিসের সকল কর্মচারী যার ছায়ায় সুখে দুঃখে নিরাপদে ছিল, হঠাৎ তাঁর অনুপস্থিতি পুরো অফিসে এক ধরনের অস্বস্তি ছড়িয়ে দিল তাই।
এই নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার পর পরের দিন নতুন বস এলো অফিসে অর্থাৎ মালিকের ছেলে, তিনি অফিসে এসেই প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিল কিছু কর্মীকে ছাঁটাই করবেন। অযথা এতগুলো টাকা বেতন দিয়ে এত কর্মচারী রাখার কোন মানে হয় না অফিসে।
বেতনেই তো লক্ষ লক্ষ টাকা লস করে দিচ্ছে কোম্পানি, ছাঁটাইয়ের খবর শুনে কম বেশি সবার বুকের ভেতর ধক করে উঠল, ৫-১০ কেউ কেউ ১৫-২০ বছর এই কোম্পানিতে কাটানোর পর এখন যদি চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়, এই বয়সে গিয়ে কোথায় আবার ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি নেবে, লজ্জার ও তো ব্যাপার; সংসারই বা চলবে কিভাবে! প্রায় প্রত্যেকে এই চিন্তায় অস্থির হয়ে রইল ভেতরে ভেতরে।
তারপর সেই বিধ্বংসী তালিকা প্রকাশিত হলো, তালিকায় প্রথমেই নাম উঠে এলো বৃদ্ধ আমান সাহেবের, যিনি এই কোম্পানির প্রথম দিকের কর্মচারী। তাঁর বয়স হয়েছে, কাজের গতি কমেছে ঠিকই, কিন্তু এত বছর ধরে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন, খবরটা শুনে তাঁর চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে উঠলো।
সে যাবার সময় মালিকের ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আপনি যদি বিশ্বাস করেন আমাকে এই কোম্পানিতে আর প্রয়োজন নেই তবে আমি আপনাকে এটা কখনোই বিশ্বাস করাতে পারবো না; আমি এবং এই কোম্পানি একজন মানুষ আরেকটি কর্মস্থল দুই ক্ষেত্রই কতটা কষ্টে থাকবে এই হঠাৎ বিচ্ছেদে।
সপ্তাহটা যেন ভারি হয়ে গেল। অফিসের বাকি কর্মচারীদের মাঝে যেন আর আগের সেই উৎসাহ উদ্দীপনা নেই কাজ কর্মের। পরের আরো পনেরো দিন একই রকম কাটলো,
তারপর একদিন সকালে অফিসের গেট পর্যন্ত পৌঁছে সবাই অবাক হয়ে গেলো।
গাড়ি থেকে নামছেন অফিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অর্থাৎ পুরনো বস, হুইলচেয়ারে, তার পাশে দাঁড়ানো তার ছেলে। ছেলে কিছুটা গম্ভীর চুপচাপ মলিন।
অফিসের সবাই হতবিহব্বল হয়ে চেয়ে দেখলো আমান সাহেব সহ সকল ছাটাই করা কর্মীরা অফিসে একে একে ঢুকছে, আমন সাহেবকে দেখে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ছেলে নিজে এসে আমান সাহেবের হাত ধরে অফিসের ভিতরে নিয়ে গেলেন, অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চাইলেন। বৃদ্ধ আমান সাহেবের চোখ ছল ছল করে উঠলো।
ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে হুইল চেয়ারে ভেতরে আনার পর সকল ছাটাইকৃত কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে প্রথমেই বললেন,
- যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমার কোনো কর্মীকে দরকার নেই বলা যাবে না। আপনারা সবাই আমার পরিবার। পরিবারকে ছাঁটাই করা যায় না। আমার ছেলে আপনাদের ছাটাই করে যে অপরাধ করেছে তার জন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিন।
কথাগুলো শুনে সকল কর্মচারীর চোখে জল চলে এলো বুক হালকা হয়ে গেল সবার।
ছেলে নিচু গলায় বাবাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলে তিনি তাকে হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন
- কোম্পানি শুধু লাভ ক্ষতির হিসাব করলে হয় না, প্রত্যেকটা মানুষ আমার জীবনের অংশ বলে মনে করি। আজ আমি অসুস্থ, কাল তুমিও হবে। তখন পাশে দাঁড়াবে কারা? এই মানুষগুলোই।
সবাই একযোগে করতালি দিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্যারকে ঘিরে তার শরীর স্বাস্থ্যের খবর নেওয়ার ব্যস্ত হয়ে গেল।
কুশলাদি বিনিময়ের একফাঁকে তিনি সবার অগোচরেই চোখের জল মুছলেন। এরাই তো তাঁর আপনজন! এরাই তাঁকে কোথা থেকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে। কোম্পানির শুরুতে চাদর পেতে এই আমান সাহেবের সঙ্গেই বসে দুপুরের ভাত খেতেন তিনি।
আজ সেই মানুষগুলো পাশে আছে তবে প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে, চাদরের পরিবর্তে এখন রাজকীয় ডাইনিং টেবিল। আসন পাল্টেছে, পরিবেশ পাল্টেছে, কিন্তু মনুষ্যত্বের বন্ধন কখনো পাল্টায় না। (সমাপ্ত)
২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো।
৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৮
বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা .... সব কোম্পানি যদি এমন হতো, তো কতইনা ভালো হতো।
অফিসের মালিক ম্যানেজিং ডিরেক্টর বস এভাবে বলাটা কেমন যেন লাগল।
কোন কিছু লেখার সময় তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়।
আপনি কবিতায় অনেক ভালো। আবার বললাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪
সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: ভালো লাগলো