নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সর্দারজী

সর্দারজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিশি রাতের কুহেলিকা

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

গত রাতের ক্লান্তিটা এখনও আছে। অনেক দিন পর আবার বন্ধুরা মিলে বসেছিলাম টিএসসি তে। রাত এগারটা অব্ধি আড্ডা শেষে যখন সবাই চিরচেনা ভঙ্গিতে বলছিলাম, দোস্ত আজ আর সম্ভব না, তাইলে বাড়ি ফিরতে পারবো না। তখন শেষ নেমেছিল আমাদের মিলন তত্ত্ব। আমি ধানমণ্ডির লেক পাড়ে থাকি। ছোট বাসা তবে নিরিবিলি। অবশ্য নিরিবিলিতে নিজেকে আবিস্কার করা যায় নতুন ভাবে।
নীলক্ষেতের মোড়ে রিকশার জন্য দাড়িয়েও যখন নিরাশ তখন খুব চা’র নিশা পেয়ে বসলো। আগের তুলনায় আজ একটু বেশিই নেওয়া হয়েছে মনে হয়। গত বছরও যখন সবে পড়াশুনা লাইফ শেষ করলাম তখনও কেউ ডাকলে কি খুশি হতাম! এখন এসব কমায়ে ফেলেছি। জীবনের দর্শনে নিচ্ছিদ্র ছবি আর খামখেয়ালি করে আর কতো দিন?

চার কাপে চাটা মন্দ হয়নি আজকে। দূরে কে যেন দাঁড়িয়ে? অষ্পস্ট, তবে চেনা চেনা খানিকটা। নেশাটা কি বেশিই ধরেছে নাকি আজকে। জেসি? হেই জেসি?
আরে হ্যাঁ জেসিই তো।
সুন্দর গড়নের একটা মেয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে।
জেসি তুমি তো অনেক চেন্জ হয়ে গেছো। আমি তো চিনে উঠতে পারছিলাম না। কি সব আলখেল্লা পরে আছো। এতো রাতে কই বের হলে? পার্টি ফার্টি আছে নাকি? যে সাজ তাতে তুমি এখানে দাঁড়ালে ছোকড়া গুলোকে মন থেকে কষ্টই দিবে।
-হ্যা ও রকমি। আপনার কি খবর? এখানে কি করছেন? জেসিকে খুব ফোর্মাল কথাবার্তায় মনে হচ্ছে।
-মামা আরেক কাপ চা তৈরি করো।
সেই গত বছরের এমনি এক হেমন্তের শীত আর গরমের মাখামাখিতে আমাদের শেষ দেখা হয়েছিল। জেসি আমার নিচের ক্লাসে পড়তো। কেমেস্ট্রিত। তবে প্রতিদিন আড্ডা দিতাম আমরা। ও আমাদের জুনিয়র হলেও আমাদের সাথে কীভাবে প্রথম মিশতে শুরু করলো সেটা এখন মনে নেই। তবে ওর প্রতি অনেকের টানটা বেশিই ছিল। অন্য মেয়েদের ভিড়ে তার ভেতর কি যেন একটা ছিল। আমি প্রথম থেকেই মেয়ে বিমুখী। বিশেষ করে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করা কঠিন ছিল।
সেই আমিই কেমন যেন জেসির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লাম। তবে এটাকে আমি নির্ঘাত সৌন্দর্যের প্রতি নেশা হিসাবে মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম। ও-ও কেন জানি আমার ঘেসা ছিল বেশি।
যাইহোক আমরা মাঝে মাঝে সার্কেলের বাইরেও কিছুটা গোপনে মল চত্বর ভিসি চত্বর, লেক আর নিরিবিলি চারুকলাতেও সময় কাটাতাম। ভালো লাগা জিনিস খেতাম, ঘুরতাম। কীভাবে যেন দুর্বল হচ্ছিলাম ওর প্রতি। তবুও কিছু বলা হতো না। এই তো ভালো আছি কী দরকার এক্সট্রা দায়িত্ব নেওয়ার। যদিও এগুলো মনকে বুঝানোর জন্য ছিল মাত্র।
শেষ বর্ষের সবে শুরু তখন। কেন জানি আড্ডাতে জেসিকে কম দেখা যেত এবং আস্তে আস্তে সেটা শূন্যে নেমে গেল। আমার সাথেও দেখা হতো না তেমন। আমি ওর কাছের কিছু বান্ধবীদের কাছেও খোঁজ নিযেছি। কিন্তু বুঝে উঠার মতো কিছু হয়নি। ভাবলাম হয়তো পড়াশুনায় ব্যস্ত অথবা নতুন বয় ফ্রেন্ড-ঠ্রেন্ড খুজে পেয়েছে।
আমিও পরিবেশ আর পড়ার চাপে ভুলেই গেলাম বন্ধু-আড্ডা আর প্রথম দিকের ছেলেমী।
আমার রেজাল্ট বের হয়েছিল ঐদিন। খুব খুশির কিছু ছিল না এটা আমার জন্য। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়, ছায়া-সুনিবিড় পরিবেশ আর হেয়ালী ছেড়ে যে অন্য কিছু করতে হবে এই চিন্তায় আর কল্পনার এলোমেলো ভাবনায় হাটছিলাম। হঠাৎ কেউ একজন আমাকে সঙ্গানে ফেরলো-
-কি অবস্থা মিঃ, খুব তো স্বপ্নের মাঝে চষে বেড়াচ্ছেন?
-জেসি! তুমি কোথায় হারিয়েছিলে এতো দিন? আর আজ হঠাৎ করে আমাকে পাইলে কীভাবে?

-আপনার ডিপার্টমেন্টে গেছিলাম। পেলাম না। তাই ভাবলাম ভাবুক মানুষ, হয়তো রাস্তায় কোন সুন্দরী খুঁজে নতুন জীবনের আশায় কল্পনায় ভাসছে।
-তুমি কিন্তু কেমন কেমন হয়ে গেছো আর কেমন যেন অস্বাভাবিক। কি হয়েছিল তোমার?
-আপনি আমাকে সাথে নিবেন দূর বহু দূর পথ পাড়ি দেবার জন্য?
পরিবেশ হঠাৎ কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। রাতের পাখির ডাকও শোনা যায় মাঝে মাঝে।
-কি বলছো এসব? পাগল ঠাগল হও নি তো?
-না আমি ঠিক আছি।
-তবুও তুমি আরও এক-দুই দিন সিরিয়াসলি ভাবো? তুমি সব সময় খামখেয়ালি কাজ করো।
সত্যি কথা বলতে আমারও খুব ইচ্ছা করছিল বলি, চলো এ জীবনে তুমি আর আমি এই দূর পথ পাড়ি দিব। কিন্তু ও তো হেয়ালি মেয়ে!
ও আর ঐদিন বেশি দূর আসে নি আমার সাথে। আমি আবার একা হয়ে গেলাম। পরবর্তীতে কতো খুঁজেছি ওকে, আর কখনও পাইনি ওকে।
আজকে ঘোর লাগা মধ্য রাতে যে হঠাতি ওর সাথে দেখা হতে পারে সেটা কল্পনায় করি নি আমি। তারপর? কি অবস্থা তোমার? বাচ্চা-কাচ্চা?
-সে তো চাইলেই পারতাম। কিন্তু তা তো এখনও হয়ে উঠে নি।
-শুনছিলাম বড় কি ফরেন মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে জব করেন, তবুও সময় নষ্ট করছেন কেন?
-তুমি কি আমাকে একদিন সময় দিবে জেসি?
একটা লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে কাকে যেন ঈশারা করলো।
-সেটা এখন হয়তো সম্ভব হবে না রুদ্র। আমি যে ভালো মেয়ে না।
কিছু কিছু দৃশ্য শেষ হতে চায় না, কিছু পথ হাঁটতে মন চায় না। কখনো কখনো চারপাশের অনেক কথা হয়তো কেউ বুঝে উঠতে পারে না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



শুরুটা সুন্দর ছিলো, শেষটা গড্ডালিকা

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৪৩

সর্দারজী বলেছেন: চেষ্টা করছি :প

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:০৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
চাঁদগাজী বলেছেন:



শুরুটা সুন্দর ছিলো, শেষটা গড্ডালিকা


সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.