নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্টো পথিক

সয়ূজ

আমি কী তাই যা আমি হতে চেয়েছি? আমি কী তাই যা আমি হতে পেরেছি?

সয়ূজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্রাট হুমায়ুনের খিচুড়ি

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:২৮

- খিচুড়ি ছিল সম্রাট হুমায়ুনের অন্যতম প্রিয় খাবার।
- আপনি শিওর?
- আলবাত্।
আমার সামনে বসে থাকা স্যুট-টাইয়ের বাঁধনে হাসফাঁস করা ব্যক্তিটি একজন ব্যাংকার। কিছুক্ষণ আগেও হারামজাদাকে দেখেছি কাটা-চামচ দিয়ে বিরিয়ানি খেতে। খাসির ইয়াব্বড় মাংসের পিসটি হাড় থেকে ঠিকমত খুবলাতে না পেরে ওটা আধাখাওয়া-ই রেখে দিয়েছে।
আর আলু-তে তো চামচ-ই লাগায়নি।
শালা, চামার্। বিরিয়ানির অপমান দেখলে আমার গা জ্বলে।
- আপনি এতটা শিওর হচ্ছেন কি ভাবে? আমি যদ্দূর জানি এসব খিচুড়ি-মিচুড়ি ছিল সৈনিকদের খাবার। বাদশাহ্ এসব খাবেন...
- "তোমার জানা আমি পায়ুপথে..."
ভদ্রসমাজে সবকিছু বলা যায়না। তাই মেজাজ ঢেকে হাসিমুখেই বললাম, "মিচুড়ির কথা জানিনা। তবে খিচুড়ি হুমায়ুনের খুব প্রিয় ছিল। উনি বিশাল একটা সময় যাযাবর জীবন কাটিয়েছিলেন তা জানেন নিশ্চয়-ই। ইরানী খাবারের প্রতি তার ঝোঁক আগে থেকেই ছিল। তাই খিচুড়ি তার প্রিয় হলে দোষের কী?
আর মোঘল সৈনিকদের সাধারণত খিচুড়ি দেয়া হতোনা। তাদের দেয়া হতো রুটি। তাছাড়া যুদ্ধের সময় বিরিয়ানি আর হালিম চলতো; খিচুড়ি না।"
ভদ্রলোক ফোন ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে। বোধহয় খিচুড়ির মজা পেয়েছেন।
- আপনি রেসিপি জানেন?
- কিসের?
- মোঘলাই খিচুড়ি?
নিজের ফাঁদে পড়ে গেছি। বন্ধুর সাথে দাওয়াতে এসে এই ব্যাংকার ভদ্রলোকের সাথে পরিচয়। এ কথা সে কথা থেকেই খিচুড়িতে এসে-ই ফেঁসে গেলাম।
চারপাশের সবার চোখ-ই দেখি কৌতুহলি। বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ে পিছিয়ে যাবার মানেই হয়না।
"শুনবেন?" বলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি সবাই আগ্রহী।
- চাল আর ডালের পরিমাণ হতে হবে সমান। আর পুরো রান্না হতে হবে ঘি-য়ে। খাঁটি ঘি। গরম মশলা যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে। কারণ, মশলার গন্ধে ঘি এর আসল স্বাদ আসবেনা।
পেঁয়াজ ঘি এ ভেজে দু ভাগ করে তুলে রাখতে হবে। আদ্ধেকটা রান্নার জন্য আর বাকিটা রান্না শেষে খিচুড়ির ওপর দেবার জন্য।
ঐ পেঁয়াজ ভাজা ঘি তেই এবার চাল আর ডাল ভাজতে হবে। আদা-রসুন বাটা, হালকা চিনি, হলুদ, কাঁচা-মরিচ, মেথি বাটা, কিসমিস, বাদাম দিয়ে হালকা আঁচে রান্না শুরু। পানির পরিমাণ হবে চাল-ডালের মিলিত পরিমাণের দ্বিগুণ। আর পানি আগে থেকেই তেজপাতা আর জিরা দিয়ে টগবগ করে ফুটিয়ে রাখতে হবে।
মজার একটা ব্যাপার হলো; পাতিলের তলায় কিছুটা খিচুড়ি যদি লেগে না যায়, তাহলে বুঝবেন এটা খিচুড়ি-ই হয়নি।
- ভাইজান, আলু? আলু দেয়া যাবেনা?
এই হলো বাঙ্গালির দোষ। আলু ছাড়া চলবেই না। মুখে বিরক্তির ভাব এনে বললাম- ভাই, পর্তুগিজরা সতেরোশ শতকের দিকে ভারতে আলু আমদানি করে। তার আগে আলু কি আমরা জানতাম-ই না। সম্রাট হুমায়ুন জানবে কিভাবে?
উপস্থিত জনতা দেখি বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়ে যুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছে।
- খিচুড়ির সাথে আর কিছু থাকবেনা?
লোকগুলোর ওপর হঠাৎ মায়া লাগা শুরু হলো। এরা খিচুড়িতে মজে গেছে।
- ভাই, উনাদের হাজারটা পদ থাকতো। মাংস আর কাবাবের ছড়াছড়ি সাথে নানা ধরণের চাটনি। তবে, সম্রাটের পছন্দ ছিল বনমোরগ আর ময়ূর। কিসমিসের রসে সারারাত ভিজিয়ে রেখে খাবার আগে ঘি- য়ে ভাজা হতো। অমৃত!!!
কারো মুখে-ই রা নেই। ঘরের এককোণে বন্ধুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে পড়লাম। বন্ধুর পাশে দাঁড়াতেই সে ফিসফিসিয়ে বললো, "হুমায়ুনের হেঁশেলে কি লবণ নিষিদ্ধ ছিল? খিচুড়িতে তো লবণ দেয়া হলোনা?"
চমকে উঠতেই হলো। থাক্, এ যাত্রাটা না হয় লবণের ওপরেই গেল!!!




মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৫৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: রেসিপিতো ভালোই দিলেন।
লবন মেশালে খারাপ লাগবে না আশাকরি। আপনার রেসিপি ট্রাই করবো একদিন। ;)

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৩

সয়ূজ বলেছেন: মজা হলে ক্রেডিট আমার আর খারাপ হলে সব দোষ রাঁধুনির।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৫

ইনাম আহমদ বলেছেন: উমমম, কুব ট্যাশ

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৩

সয়ূজ বলেছেন: কুব কুব

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

করুণাধারা বলেছেন: খাউক্কা খাউক্কা.......

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪

সয়ূজ বলেছেন: খাওয়াটাই জীবন

৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: এই পোষ্ট পড়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে খিচুড়ি খাবো।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৫

সয়ূজ বলেছেন: ভাগ তো পাবোনা! তাই হিংসা আর হিংসা!!!

৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৭

আমি মুক্তা বলেছেন: মাঝে মাঝেই এই সহজ রান্না আমার করতে হয়, মনে হয় রান্নার জগতে মুখরোচক এবং সবচেয়ে সহজ রেসিপি, স্বল্প সময়ে রান্নার এটাই সবচেয়ে ভালো রেসিপি।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৯

সয়ূজ বলেছেন: একদম

৬| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৫২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হা হা হা। দুর্দান্ত। আমার নিজের এক ঘটনা মনে পইড়া গেলো। নিজের থেইকা বানানো ১৩০০ শতাব্দীর ইরানিয়ান বিরিয়ানির রেসিপি ফ্রেন্ড সার্কেলে ভাইরাল কইরা দিসিলাম। কয়েকজন বানাইয়া ফোন দেয়া আরম্ভ করাতে ফোন বন্ধ কইরা বইসা ছিলাম। ফেবুতে গাইলাইয়া হুতাইয়া ফালাইসিলো আমারে।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৯

সয়ূজ বলেছেন: হা হা হা.

৭| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:১৭

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো লেগেছে

২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৮

সয়ূজ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.