![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাদামাটা একজন মানুষ। শখের বশে লেখালেখি শুরু করেছি। চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু লেখার। পছন্দ করি বই পড়তে।
ইসলামে মহা পবিত্র ও ইবাদতপূর্ণ মাস হচ্ছে "রমাদান "। আর এই রমাদান পবিত্র এবং মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো "লাইলাতুল কদর "। যে রাতকে আল্লাহ্ হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। আর এই রাত হচ্ছে রমাদান মাসেরই একটি রাত।
লাইলাতুল কদর এর অর্থ
লাইলাতুল কদর (আরবি: لیلة القدر) এর অর্থ "অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত" বা "পবিত্র রজনী"। লাইলাতুল অর্থ রাত। কদর অর্থ সম্মান, মর্যাদা বা সম্মানিত। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হল ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা ইত্যাদি। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো মহাসম্মানিত ভাগ্য রজনী।
কদর ভাগ্যরজনীও বটে
বিভিন্ন আলেমদের মতে এ রাতে পরবর্তী এক বছরের জন্য বান্দার হায়াৎ, মউত, রিজিক, ভাগ্য ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
"এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।" (সূরাঃ আদ দোখান, আয়াতঃ ৪)
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবা ও তাবেঈন থেকে এর বর্ণিত হয়েছে যে, এই রাতে আগামী বছরের জীবন-মরণ ও জীবিকার উপায়-উপকরণের ফায়সালা লাওহে মাহফূয থেকে অবতীর্ণ করে ফিরিশতাদেরকে সোপর্দ করা হয় (ইবনে কাসীর)। এই কারণে এই রাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয়।
লাইলাতুল কদরের শানে নুযুল
বিভিন্ন তাফসীরকারকদের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ একবার বনি ইসরায়েলের এক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। সেই মুজাহিদ এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনো অস্ত্র সংবরণ করে নি। সাহাবাগন একথা শুনে বিস্মিত হলে, তখন এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয়।এতে উম্মতের মুহাম্মদীর লাইলাতুল কদরের এক রাত্রিকে সে মুজাহিদের ১০০০ মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
ইবনে জারীর (রাহ) উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনি ইসরাইলের জনৈক ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি এবাদতে মশগুল থাকতো ও সকাল হতেই জিহাদের জন্য বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকতে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা সূরা কদর নাজিল করেছেন। আর এই লাইলাতুল কদর দ্বারাই উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
ইসলামে পবিত্র কদর রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। এই রাতকে আল্লাহ্ বিভিন্ন কারণে মহিমান্বিত হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এই রাতেই আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। যে কুরআন হচ্ছে মানবজাতির পথনির্দেশক। যে কুরআনের উপর ভিত্তি করেই আল্লাহ্ মানবজাতির বিচার ফায়সালা করবেন।
আল্লাহ্ বলেন,
‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ (সুরা কদর : ১)
সুতরাং পৃথিবীতে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কুরআনকে আল্লাহ্ এই পবিত্র কদরের রাতেই নাযিল করেছেন। যে কারণে এই রাত খুবই মর্যাদাপূর্ণ।
দ্বিতীয় যেকারণে এই রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশী তা হচ্ছে, এই রাত হাজার মাসের রাতের অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি এই রাতে যা আমল করবে, তা একাধারে হাজার মাস রাতের আমলের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর। আল্লাহ্ বলেন,
" আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।"(সুরা কদর : ২-৩)
তৃতীয় যে কারণে এই রাত মর্যাদাপূর্ণ তা হলো, এই রাতে অসংখ্য অগণিত মালাইকা ও তাদের সর্দার জিব্রাইল আঃ বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। আল্লাহ্ বলেন,
"এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাইল আঃ) অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।"(সূরাঃ কদর, আয়াতঃ ৪)
অন্য আয়াতে এসেছে,
"সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে।" (দুখান ৩)
অর্থাৎ এই রাতেই প্রতিবছরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আল্লাহ্ কতৃক অনুমোদিত হয়। যা মালাইকারা পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। তাফসীরের ইবনে কাসীরে এসেছে, এই রাতে আগামী বছরের জীবন-মরণ ও জীবিকার উপায়-উপকরণের ফায়সালা ইত্যাদি লাওহে মাহফূয থেকে অবতীর্ণ করে ফিরিশতাদেরকে সোপর্দ করা হয়। আর এইকারণে এই রাত সমগ্র বিশ্বজাহানের জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
লাইলাতুল কদরের রাত মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার কারণে, এই রাতের ফজিলত অন্যান্য যেকোনো রাতের চেয়ে সবচাইতে বেশী। এই রাতের ফজিলতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইবাদত। যে ব্যক্তি এইরাতে ঈমানের সহিত পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করতে পারবে, সে হাজার মাস রাত ইবাদত করার সমান নেকী অর্জন করবে। তাই এই রাতে বেশী বেশী ইবাদত বন্দেগী করার তাগিদ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাঃ।হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারী- ২০১৪)
উপর্যুক্ত হাদিস অনুসারে এই রাতে যারা ঈমানের সহিত ইবাদত বন্দেগী তথা সালাত, জিকির, দোয়া কালাম ইত্যাদিতে লিপ্ত থেকে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ্ অবশ্যই তাদের অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অন্যান্য সকল রাতের চাইতে বেশী।
এই রাতের আরেকটি ফজিলত হলো, এই রাতের পুরো সময়টায় হচ্ছে শান্তির। অর্থাৎ রাতের পুরো অংশতেই শান্তির পরশ বয়ে যায়। আল্লাহ্ বলেন,
"শান্তিময় সেই রাত, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।" (সূরাঃ কদর, আয়াতঃ ৫)
অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের পুরো রাত্রিতেই আল্লাহ্ শান্তি বিলিয়ে দিন। যা সকাল পর্যন্ত বিরাজ করে। যেহেতু এই রাত শান্তিময় সেহেতু এই রাতে ইবাদত করলে অবশ্যই তা আল্লাহ্র কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
অন্য যেকারণে এই রাতের ফজিলত বেশী তা হচ্ছে, এই রাত হচ্ছে বরকতময় একটি রাত। যে রাতের ইবাদতের সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি অন্যান্য যেকোনো রাতের চাইতেও বেশী। কেননা এই রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ্ বলেন,
"আমি একে (কুরআনকে) নাযিল করেছি। এক বরকতময় (কদরের) রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। "(সূরাঃ আদ দোখান: ৩)
উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে রাসূলুল্লাহ সাঃ এবং সাহাবীদের রাঃ থেকে প্রমাণিত যে, পবিত্র কদরের রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছিল। সুতরাং এই রাত হচ্ছে বরকতের একটি রাত। যে রাতের ইবাদতে বান্দা অসংখ্য অগণিত নেকী লাভ করতে পারে।
সুতরাং বিভিন্ন মর্যাদা, ফজিলত ও বরকতের কারণে লাইলাতুল কদর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত্রি। তাই প্রত্যেকের উচিত এই রাতে সামর্থ্য অনুযায়ী ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাওয়া।
লাইলাতুল কদর কবে
আমাদের উপমহাদেশে মনে করা হয় রমাদানের ২৭ তম রাত্রি হচ্ছে লাইলাতুল কদর। তবে এই তথ্যটি সম্পূর্ণ সুনিশ্চিত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ভাবে শুধুমাত্র ২৭ তারিখই লাইলাতুল কদর হিসাবে ঘোষণা করেন নি।
গুটিকয়েক হাদিসে সাহাবীদের বর্ণনায় রমাদানের ২৭ তম রাত্রিকে কদর বলা হলেও রাসূলুল্লাহ সাঃ কখনও বলেন নি যে, ২৭ রমাদানের রাত কদরের রাত। তবে অসংখ্য হাদিসে রমাদানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে তিনি লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন। একইসাথে রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে ২১ তম, ২৩তম রাত্রিতেও কদর পেয়েছেন বলে হাদিসে এসেছে।
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
"আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর।" (সহিহ বুখারী- ২০১৭, মুসলিম- ১১৬৯)।
উপর্যুক্ত হাদিসসহ আরও অসংখ্য হাদিসে এমনই তথ্য এসেছে যে, রমাদানের শেষ বিজোড় রাতে কদর তালাশ করার জন্য। এছাড়াও অন্য একটি হাদিসে লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে এসেছে,
নবী করীম সা: এরশাদ করেন, "আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে"। (বুখারি :৭০৯)
অতএব এটা সুস্পষ্ট যে, বান্দার মঙ্গলের জন্যই আল্লাহ্ কদরের রাতকে নির্দিষ্ট করে দেননি। যদি এমন হতো তাহলে আল্লাহ্র বান্দারা একদিনের ইবাদতের প্রতি বেশী মনোযোগী হয়ে বাকি দিনগুলিতে ইবাদতে অনীহা প্রকাশ করতো।
২৭ তম রাত্রি নির্দিষ্ট না হওয়ার কারণ
যির ইবনু হুবায়শ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে বললাম, আপনার ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে- সে কদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমাদান মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭ তম রজনী। অতঃপর তিনি দৃঢ় শপথ করে বললেন, তা ২৭ তম রজনী। আমি (যির) বললাম, হে আবুল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলেছেন? তিনি বললেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে-যে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উদয় হবে। কিন্তু তাতে আলোকরশ্নি থাকবে না। (সহিহ মুসলিম- ২৬৬৭
উপর্যুক্ত হাদিস থেকে সাহাবীদের বর্ণনায় রমাদানের ২৭ তম রাত্রিকে কদরের রাত বলা হলেও, তা বিভিন্ন আলামতের উপর নির্ভরশীল। যা অন্যান্য আরও হাদিস দ্বারা কদর রাতের বিভিন্ন আলামতের কথা এসেছে। শুধু তাইনয় প্রসিদ্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদও সুনির্দিষ্ট তারিখ প্রকাশের বিরোধী। এছাড়াও এই হাদিসে সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে প্রমাণিত নয় যে নির্দিষ্ট ২৭ তারিখই কদরের রাত। সুতরাং ২৭ তম রাত্রি কখনোই সুনির্দিষ্ট নয়। তবে আলামত মিলে গেলে ভিন্ন কথা।
এছাড়াও অন্য আরেকটি হাদিস থেকে সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে প্রমাণিত যে, তিনি ২১তম রমাদানের রাতে কদর পেয়েছেন।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রমাযানের) মাঝের দশকে ই’তিকাফ করেন। অতঃপর ২০ তম দিন অতিবাহিত হবার পর এবং ২১ তম দিনের সূচনাতে তিনি নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন এবং তাঁর সঙ্গে যারা ই’তিকাফ করেন, তারাও নিজ নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর একবার রমাযান মাসের মাঝের দশকে তিনি ই’তিকাফ করলেন- যে রাতে তাঁর ই’তিকাফ হতে ফিরে আসার কথা, সে রাতে (পুনরায়) ই’তিকাফ আরম্ভ করলেন ও লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি সাধারণত এ (মধ্যম) দশকে ই’তিকাফ করতাম। এরপর শেষ দশকেও ই’তিকাফ করা আমার কাছে সমীচীন মনে হল। অতএব যে ব্যক্তি আমার সাথে ই’তিকাফ করতে চায়, যেন নিজ ই’তিকাফের স্থানে অবস্থান করে। আমি এ (কদরের) রাত স্বপ্নে দেখেছিলাম, কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তা অনুসন্ধান কর। আমি স্বপ্নে নিজেকে পানি ও কাদার মধ্যে সাজ্দাহ্ করতে দেখেছি। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, ২১ তম রাতে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তিনি যখন ফজরের সলাত থেকে ফিরলেন, তখন আমি তাঁর মুখমণ্ডল কাদা ও পানিতে সিক্ত দেখলাম। (সহিহ মুসলিম- ২৬৫৯)
উপর্যুক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, বিভিন্ন আলামতের ভিত্তিতে রাসুলুল্লাহ সাঃ ২১তম রমাদানে কদরের রাত পেয়েছেন। অনুরূপ আরেকটি হাদিসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাকে কদরের রাত দেখানো হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্ন আরও দেখানো হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সাজদাহ করছি। রাবী বলেন, অতএব ২৩ তম রাতে বৃষ্টি হ’ল এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে (ফজরের) সলাত আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। রাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) বলতেন, তা ছিল ২৩ তম। (সহিহ মুসলিম- ২৬৬৫)
উপর্যুক্ত হাদিস থেকেও রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে সরাসরি প্রমাণিত যে, রমাদানের ২৩ তম রাতে তিনি কদর পেয়েছেন। সুতরাং কদর ভিন্ন ভিন্ন রাতে পাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, কদরের রাত সুনির্দিষ্ট নয়। যা অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
অতএব কেউ যদি ২৭তম রাত্রিকেই কদর ধরে ঐ একদিনই ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকে, তাহলে সে কখনোই সফলকাম হবেনা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাঃ সরাসরি ২৭তম রাতকে একমাত্র হিসাবে কদরের রাত ঘোষণা করেননি। বরং তিনি ও তাঁর সাহাবীদের রাঃ থেকে প্রমাণিত যে, রমাদানের শেষ বিজোড় রাতে কদর তালাশ করেছেন এবং বিভিন্ন তারিখে তা পেয়েছেনও। আর এটাই হচ্ছে সঠিক।
কদর রাতের আলামত
পবিত্র হাদিসে ২৭শে রমাদানকে লাইলাতুল কদরের রাত ঘোষণা দেওয়া হলেও অন্যান্য অসংখ্য হাদিস দ্বারা এই মতকে সঠিক বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়নি। কেননা অসংখ্য হাদিসে এসেছে কদরের রাত একটি নির্দিষ্ট তারিখে নয়। তবে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে এই রাতের আলামত সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য এসেছে। যা দিয়ে এই রাতকে চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমতঃ এই রাত হবে অবশ্যই রমাদানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রি।
দ্বিতীয়তঃ এই রাতের আবহাওয়া হবে নাতিশীতোষ্ণ। অর্থাৎ স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে বেশী গরম বা বেশী শীত ইত্যাদি থাকবে না। আবহাওয়া হবে খুবই আরামদায়ক।
তৃতীয়তঃ এই রাতে চারদিকে ফিনফিনে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। যা যেকোনো মানুষের অন্তরকে ঠান্ডা করে দিবে।
চতুর্থতঃ এই রাতের অন্ধকার অন্যান্য রাতের অন্ধকারের মতো গভীর হবেনা। অর্থাৎ এ রাতের অন্ধাকারের গভীরতা ও ব্যাপ্তি অন্যান্য রাতের তুলনায় কম হবে।
পঞ্চমতঃ এই রাতের ইবাদত বন্দেগী অন্যান্য যেকোনো দিনের চাইতে আনন্দদায়ক হবে। অর্থাৎ এই রাতে ইবাদত করে মানুষ অধিকতর তৃপ্তিবোধ করবে অন্যান্য রাতের চাইতে।
ষষ্ঠতঃ এই রাতে আকাশে হালকা মেঘ থাকতে পারে। সেইসাথে রাতে বৃষ্টি বর্ষণও হতে পারে।
সপ্তমতঃ এই রাত সম্পর্কে আল্লাহ্ তাঁর কোনো বান্দাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন।
অষ্টমতঃ ঐ রাতের শেষে সকলটা হবে খুবই নির্মল। সকালের প্রথম সূর্যরশ্মিটা হবে হালকা আলোর ঝিলিকছটা। সূর্যোদয়ের প্রথম দর্শনে সূর্যকে মনে হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
বিভিন্ন হাদিসে উপরোক্ত আলামত সমূহের কথা আসলেও, কদরের রাত হওয়ার জন্য তা নিঃশর্ত নয়। অর্থাৎ কদরের রাত হওয়ার জন্য উপরোক্ত আলামত থাকতেই হবে এমন নয়। উপর্যুক্ত আলামত গুলো সরাসরি প্রকাশ না পেলেও কদরের রাত অতিক্রম হয়ে যাবে। তাই কখনোই আলামতের দিকে তাকিয়ে কদর তালাশ করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদিস মতো রমাদানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে আমাদের অবশ্যই উচিত ইবাদত বন্দেগী করার।
মুমিনের করণীয়
প্রতিবছর শুধু একদিনই লাইলাতুল কদর আসে। তাও তা সুনির্দিষ্ট নয়। তাই প্রতিটি মুমিনেরই উচিত রাসূলুল্লাহর সাঃ বর্ণিত হাদিস অনুসারে কদরের রাতকে তালাশ করা। এইজন্য প্রথমেই যদি সম্ভব হয় ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে। যাতেকরে খুব সহজেই মসজিদে নিরিবিলিতে ইবাদত বন্দেগী করা যায়।
রাসূলুল্লাহ সাঃ সবসময়ই রমাদানের শেষ দশদিন নিজে ইতেকাফ করেছেন এবং অন্যান্যদেরও ইতেকাফের তাগিদ দিয়েছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যাতে লাইলাতুল কদর পেতে সহজ এবং সুবিধা হয়। সুতরাং আমরাও যারা লাইলাতুল কদর পেতে চায় তাদের উচিত হবে ইতেকাফ করা।
সময়ের বাস্তবতার কারণে ইতেকাফ করা সম্ভব না হলেও অবশ্যই রমাদানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোতে রাত জেগে ইবাদত করার চেষ্টা করতে হবে। একইসাথে কুরআন হাদিসের বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া দরুদ, জিকির আজকার, তসবি তাহলিল ইত্যাদি পাঠ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে, কদরের রাত হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রাত। এই রাতের মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহ্কে রাজি খুশি করানো। তাই রাতে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাওয়াই হচ্ছে মুমিনের প্রকৃত কাজ। তাই হাদিসে যে দোয়াটি বেশী এসেছে সেই দোয়া, যা মা আয়েশা সিদ্দিকা থেকে বর্ণিত হয়েছে তা বেশী বেশী করে পাঠ করা। দোয়াটি হলো, "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি’। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
একইসাথে বিভিন্ন নফল সালাতের পাশাপাশি বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করে আল্লাহ্র কাছে বিগত পাপের জন্য তওবা ও ক্ষমা চাওয়া। এবং বেশী বেশী সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পড়া। উত্তম হলো নফল সালাত ধীরে সুস্থে লম্বা লম্বা কেরাত দিয়ে পড়া এবং রুকু-সিজদাতেও তাড়াহুড়া না করা। সেইসাথে রমাদানের শেষ দশদিন অবশ্যই জামাতে সালাত আদায় করা।
রমাদান মাস হচ্ছে দান সদকা করার সবচেয়ে উত্তম সময়। তাই এই মাসে প্রতিদিনই কিছু না কিছু দান করা উচিত। লাইলাতুল কদরের পরিপূর্ণ ফজিলত পেতে রমাদানের শেষ বিজোড় রাতে বেশী বেশী দান করা উচিত।
পুরো রমাদানই হচ্ছে আল্লাহ্র রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস। তাই আমাদের উচিত বিজোড় রাত্রি গুলোতে বেশী বেশী পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা।
গুরুত্বপূর্ণ আমল
লাইলাতুল কদরের প্রধান মর্যাদা হচ্ছে, এই রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়া। আর কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য মহান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত বিরাজমান থাকবে। সুতরাং যে মুমিন নিজের জীবনকে আল্লাহ্র রাস্তায় প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাকে অবশ্যই কুরআনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
কুরআনের সাথে সম্পর্কহীন থেকে কোনো মুসলিম কখনোই প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। কুরআনের সাথে সম্পর্ক করার অর্থ হচ্ছে, কুরআন অনুযায়ী জীবনযাপন করা। কুরআনের আইনকানুন, বিধিবিধান ইত্যাদি মেনে চলা।
সুতরাং লাইলাতুল কদরে প্রতিটি মুসলিমের শপত করা উচিত যে, আজকের পর থেকে বাকি জিন্দেগী কুরআনের অনুসারে চলবো। এটাই হবে লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যদি কেউ নিয়ত করে এবং সেই অনুযায়ী চলতে পারে তাহলে তা হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ও সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।
এই রাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, বিগত দিনের বিভিন্ন পাপের জন্য আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাওয়া। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে খাঁটি অন্তরে তওবা করা। খাঁটি তওবা বা তওবাতুন নছুহার চারটি শর্ত রয়েছে।
ক) প্রথমেই নিয়ত করতে হবে পূর্বের সকল পাপ কাজ আজ এখন থেকেই ছেড়ে দিবো। এবং নতুন করে কোনো গুনাহ করবো না
খ) যে পাপ করেছি তার জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হতে হবে। এবং এটাই মনে করতে হবে যে আমি যা করেছি তা খুবই অন্যায়।
গ) আজ এই মুহূর্ত থেকে ঐ গুনাহ আর করবো না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।
ঘ) আল্লাহ্র হকের জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর, বান্দার কোনো হক নষ্ট করে থাকলে সে হক যথাসাধ্য আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। নতুবা যে বান্দার হক নষ্ট হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
ঙ) উপরোক্ত সব কাজ করার পর সর্বশেষে অন্তরকে নরম করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাইতে হবে। তবেই আল্লাহ্ চাইলে বান্দার তওবার কবুল করতে পারেন।
কদরের যা পরিহার করতে হবে
কদর রাতের তারিখ যদিও নির্দিষ্ট নয়। তবুও আমাদের উপমহাদেশে ২৭ তম রাতকে কদর ধরে বিভিন্ন মনগড়া কিছুু আমলের প্রচলন হয়েছে। আমাদের উচিত এইসব মনগড়া আমল থেকে দূরে থাকা। বিশেষ করে এই রাতের সালাতকে নির্দিষ্ট রাকাতে পড়া। যেমন আমাদের সমাজে ১২ রাকাত বা ২০ রাকাত নামাজের যে প্রচলন রয়েছে সেটা সম্পূর্ণ বিদআত।
কেননা এই রাত উপলক্ষে কোনো নির্দিষ্ট রাকাতের সালাত নেই। কদরের পুরো রাত জুড়েই চাইলে সালাতসহ যেকোনো জিকির আজকার করা যায়। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ে কদরের সালাতের নামে যেসব বিধান ও নির্দিষ্ট সূরা পাঠের যে নিয়ম-কানুন বর্ণিত রয়েছে তা শুদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে এইধরণের নিয়ম বা বিধানের কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং এসব মনগড়া পদ্ধতি বাদ দিয়ে সুন্নাহ ত্বরিকায় বিভিন্ন আমল-ইবাদত করা উচিত।
এই রাতকে কেন্দ্র করে অধিকাংশেরও বেশী মসজিদ মাজারের চারদিকে আলোকসজ্জা করা হয়। যা কখনোই ইসলামী সংস্কৃতি নয়। এইসব হিন্দুদের দীপাবলির অনুরূপ। সুতরাং এই রাত উপলক্ষে সকল প্রকার বেহুদা অনর্থক আলোকসজ্জা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তা অপচয়।
এই রাত উপলক্ষে অধিকাংশ মুসলমানের আকিদা হচ্ছে, বিভিন্ন মাজার কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করা। অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে এই রাত উপলক্ষে কবর জিয়ারতের কোনো আমল নেই। সুতরাং ভালো হলেও লাইলাতুল কদরে কবর জিয়ারত না করা উত্তম। কেননা এই রাত হচ্ছে ইবাদত বন্দেগীর রাত।
এছাড়াও উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান কদরের রাতে দল বেঁধে বিভিন্ন মসজিদে মাজারে গিয়ে ঘোরাঘুরি করে নানান উৎসবে মেতে উঠে। আমাদের সবাইকে একটি কথা গুরুত্বসহকারে মনে রাখতে হবে যে, মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর অহেতুক কোনো আয়োজনে লিপ্ত হওয়ার জন্য নাযিল হয়নি। তাই সকলের উচিত কদরের রাতের প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট ও ঘণ্টা কোরআন-সুন্নাহ বর্ণিত বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীতে ব্যয় করা।
কদর রাত রহস্যাবৃত কেন
বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কদরের কয়েকটি তারিখ বর্ণিত হলেও অধিকাংশ হাদিসের মূল সারমর্ম হচ্ছে কদরের রাত সুনির্দিষ্ট নয়। আর আল্লাহ্ নিজেই চেয়েছেন এই রাত সুনির্দিষ্ট না থেকে রহস্যময়ই থাক। তাই রাসূলুল্লাহ সাঃ কদরের রাত তালাশ করার তাগিদ দিয়েছেন। এই রাত রহস্যময় হওয়ার কয়েকটি কারণ বিজ্ঞ আলেমরা বর্ণনা করেছেন। তা হলোঃ
১) এমনিতেই মুসলমানদের মধ্যে দিনদিন ইবাদত বন্দেগী না করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। তার উপর কদরের রাত নির্দিষ্ট করা হলে অধিকাংশেরও বেশী মুসলমান ইবাদতে অলসতা করতো। এবং তারা নিয়মিত ইবাদত বন্দেগী ছেড়ে এক রাতের ইবাদত করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তো। যা এখনও দেখা যাচ্ছে।
২) কদরের রাত নির্দিষ্ট থাকলে এবং কোনো কারণে কোনো আবেদী বান্দা ঐ রাতে ইবাদত করতে অসমর্থ হলে সে নিরাশায় পতিত হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। ফলে তার আর সারাবছরের ইবাদতের প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে কিংবা ছেড়ে দিবে। আর এমনটা হলে সে আল্লাহ্র দৃষ্টিতে অপরাধীতে পরিনত হবে।
৩) কদরের রাত নির্দিষ্ট হলে মানুষ সারাবছর রাত জেগে তাহাজ্জুত গুজার করবে না। অথচ তাহাজ্জুতের মর্যাদা আল্লাহ্র কাছে অনেক বেশী। এছাড়াও রমাদানের ইবাদত বছরের অন্যান্য সময়ের ইবাদতের চাইতে অনেক বেশী নেকীপূর্ণ। তাই কদরের রাত নির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে সকলেই রাতজেগে সালাত আদায় করবে। যা তাদের আমলকে অধিকতর নেকীতে পূর্ণ করবে।
৪) যেহেতু এইরাতের আমলে নেকীর পরিমান বেশী, সেহেতু এই রাতের পাপের গুনাহও বেশী। যদি এই রাত নির্দিষ্ট হতো এবং যারা পাপী তাপী বান্দা, তারা যদি জেনেশুনে পাপে লিপ্ত হলে তাদের গুনাহের পরিমাণ বেড়ে যেতো। তাই কদরের রাত নির্দিষ্ট না হওয়ায় এর উপকারিতা বেশী।
এই রাতে সফলকাম কারা
আল্লাহ্ প্রতিবছর লাইলাতুল কদরের মতো একটি মহান। রেখেছেন, যাতে তাঁর পাপী বান্দারা তাদের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে পরিশুদ্ধ হতে পারে। সেইসাথে তাঁর খাস বান্দারা এই রাতে ইবাদত বন্দেগী করে তাদের মর্যাদা ও মর্তবা আরও উন্নতি করতে পারে।
সুতরাং এই রাতে তারাই প্রথমত সফল যারা অতীতের সকল পাপ থেকে সরে আসার তওবা করে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। সেইসাথে এই রাতে তারাই সফল যারা কুরআনের আলোকে নিজেদের জীবন সাজিয়েছে।
কদরের রাত সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কারণ এই রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং লাইলাতুল কদরে আল্লাহ্র সেইসব বান্দারা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন, যাদের সাথে কুরআনের সম্পর্ক বেশি হবে। অর্থাৎ যারাই নিজেদের জীবন কুরআনের আলোকে গড়বেন তারাই হবে সবচেয়ে সফল।
শয়তানের বিভিন্ন ফাঁদ ও প্রতারণায় এবং মানুষের ভিতরে জাগতিক লোভ লালসায় আমরা দিনদিন আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে পড়ছি। আজ আমাদের মুসলিম সমাজে শতকরা ১০জনও মুসল্লি মসজিদে নিয়মিত হয়না। সুদ ঘুষ দূর্নীতিসহ নানান অপরাধে অপরাধী আমরা। সুতরাং যারাই এইসব পাপ থেকে মুক্ত থেকে সত্যিকারভাবে আল্লাহ্কে এই রাতে ডাকতে পারবে তারাই পাবেন প্রকৃত সফলতা।
যদি কেউ সারাবছর অসৎ পথে চলে, সালাত এবং অন্যান্য বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে শুধু এই কদরের সারারাত জেগে সালাত আদায় করলেও তার ইবাদত পরিপূর্ণ হবে না। যদি তার নিয়ত না থাকে তওবা করে ভালো হওয়ার। তওবা করলে তবেই আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা এবং এর বিনিময় প্রদান করবেন।
শুধু এক রাতের ইবাদতে হাজার মাসের ইবাদত কখনোই হবে না যদি সারাবছর ইবাদত করা না হয়। আমাদের উপমহাদেশের ঐতিহ্য হলো সারাবছর সালাত কিয়াম নাই শুধু রমাদান এলেই এক মাস সালাত সাওম ব্যতিব্যস্ত। যা আল্লাহ্র একপ্রকার ধোঁকাবাজি।
সুতরাং এই রাতের পরিপূর্ণ বরকত পেতে হলে অবশ্যই পূর্ণ ঈমানের সহিত কুরআনের আলোকে জীবনযাপন করতে হবে। কুরআনের আলোকে জীবনযাপন করা ছাড়া কখনোই কেউ সফলতা অর্জন করতে পারবে না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে নফল সালাতের পাশাপাশি বেশী বেশী জিকির আজকার দোয়া দরুদ পড়া উচিত। বিশেষকরে কুরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়া সমূহ। যেমনঃ
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : 'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।'
অর্থ : '(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।' (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।'
অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।'
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।' (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
উচ্চারণ : 'সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।'
অর্থ : ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
উচ্চারণ : 'ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'
অর্থ : 'হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।'
অর্থ : 'হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, লাইলাতুল কদরের রাত প্রতিটি মুসলিমের জন্য খুবই মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত এই রাতে যথাসাধ্য ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহ্র কাছ থেকে অতীতের সকল গুনাহর ক্ষমা চেয়ে পরিপূর্ণ তওবা করা। একইসাথে শুধু ২৭শে রমাদানকে কদর মনে না করে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ অনুযায়ী রমাদানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতে কদর তালাশ করা। সেইসাথে এই রাত উপলক্ষে সকল প্রকার বিদআতী আমল পরিহার করা। শুধু এই রাত বা শুধু রমাদান মাস নয় আমাদের উচিত হবে আজকের পর থেকে বাকি জিন্দেগী যাতে ঈমান আমলে সালাত কিয়ামে রত থেকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারি সেই ওয়াদা করা। ইনশা আল্লাহ্ তাহলেই আমরা সফল হবো।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২০ এপ্রিল, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
[email protected]
২১ শে এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৪
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: কিছু কিছু বর্তমানের জন্য অকল্পনীয় হলেও তা একসময়ের জন্য বাস্তব
একইভাবে কিছু কিছু বিষয় বর্তমানের জন্য অবাস্তব হলেও হয়তো ভবিষ্যতের জন্য তা বাস্তব।
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:০০
সোনাগাজী বলেছেন:
এখানে তো কিছু কিছু বলতে কিছু নেই, আছে ৮৪ বছরের যুদ্ধ; কোথায় এই যুদ্ধ হলো, কখন হলো? আপনি পোষ্ট দিয়েছেন, আপনার জানার কথা! আপনি জানেন কিনা?
২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:৩১
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: এগুলো বনি ইসরাইলের কাহিনী।
৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:৫১
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার জানা মতে, বনি ইসরায়েল কোন যুদ্ধে ৮৪ বছর ছিলো কিনা?
২২ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৫৪
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: যুক্তি দিয়ে আজ পর্যন্ত কখনোই ধর্মে যাচাই করা যায়নি। সুতরাং এ বিষয়ে মন্তব্য করার সবার জ্ঞানের ব্যাপার নয়। আপনি জ্ঞানী বলেই ধর্ম নিয়ে বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা রাখেন। অতএব এই ক্ষেত্রে আমি শিশু!
৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:০৯
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন:
লাইলাতুল কদর শুধুমাত্র রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত
সূরাঃ ৯৭ কদর এর অনুবাদ-
১। নিশ্চয়ই আমরা কোরআন নাযিল করেছি কদরের রাত্রিতে।
২। তুমি কি জান কদরের রাত্রি কি?
৩। কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
৪। সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রুহ নাযিল হয় প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে।
৫। শান্তিই শান্তি সে রাত প্রভাত উদয় হওয়া পর্যন্ত।
সহিহ মুসলিম, ১৬৫৭ নং হাদিসের (সাতাশ তারিখের রাত কদরের রাত হওয়ার প্রমাণ)অনুবাদ-
১৬৫৭। হযরত (ইবনে হুবাইশ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনে কাবকে বলতে শুনেছি। তাঁকে বলা হলো যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে নামাজ পড়বে সে কদরের রাত পাবে। এ কথা শুনে উবাই ইবনে কাব বললেন, যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই সেই মহান আল্লাহর শপথ! নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। একথা বলে তিনি কসম করেন কিন্তু ইনশাআল্লাহ বললেন না। এরপর তিনি আবার বললেন, আল্লাহর কসম! কোন রাতটি কদরের রাত তাও আমি জানি। সেটি হলো এ রাত যে রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে নামাজ পড়তে আদেশ করেছেন। সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাতটিই সে রাত। আর ঐ রাতের লক্ষণ হলো, সে রাত শেষে সকালে যে সূর্য উদিত হবে তা’ উজ্জল হবে কিন্তু সে সময় তার কোন আলোক রস্মি থাকবে না।
* হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) আল্লাহর কসম করে বললেন রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর।
সহিহ মুসলিম, ১৭৩৬ নং হাদিসের (ফাজায়েলে কোরআন) অনুবাদ-
১৭৩৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) উবাই ইবনে কাবকে (রা.) লক্ষ্য করে বললেন, মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাকে তোমার সামনে কোরআন শরীফ সুস্পষ্ট করতে আদেশ করেছেন। উবাই ইবনে কাব (রা.) বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ তা’য়ালা কি আপনার নিকট আমার নাম উল্লেখ করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তা’আলা আমার নিক তোমার নাম উল্লেখ করেছেন।বর্ণনাকারী আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন একথা শুনে উবাই ইবনে কাব (রা.) ক্রন্দন আরম্ভ করলেন।
* আল্লাহর আদেশে মহানবি (সা.) হযরত উবাই ইবনে কাবের নিকট কোরআন শরীফ স্পষ্ট করেছেন। সুতরাং তিনিই ভালো জানেন কোরআনে বর্ণিত লাইলাতুল কদরের রাতটি ঠিক কবে। যেহেতু তিনি আল্লাহর কসম করে বলেছেন, রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর সেহেতু রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত ছাড়া অন্য কোন রাতকে লাইলাতুল কদর সাব্যস্ত করা যায় না। এখন প্রশ্ন অন্য রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা হাদিসের তবে কি হবে? সহজ হিসাব হলো হযরত ইবাই ইবনে কাবের (রা.) হাদিসের কারণে সে সকল হাদিস মানসুখ সাব্যস্ত হবে।
সহিহ তিরমিযী, ৩৭৪৮ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-
৩৭৪৮। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা চার ব্যক্তির নিকট থেকে কোরআন শিক্ষা কর, ইবনে মাসউদ, উবাই ইবনে কাব, মুয়াজ ইবনে জাবাল ও হোযাইফার স্বাধীন দাস সালেম থেকে।
* রাসূল (সা.) নিযুক্ত কোরআনের শিক্ষক হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) যখন আল্লাহর নামে কসম করে বলেছেন, রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর, তখন এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।
সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের মধ্যে আমির।কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিরোধ দেখাদিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট। ওটা উত্তম এবং পরিনামে ভাল।
মেশকাত ২২৪ নং হাদিসের (ইলম অধ্যায়) অনুবাদ-
হযরত আওফ ইবনে মালেক আশজায়ী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্বয়ং আমির অথবা আমীরের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা কোন অহংকারী ব্যতীত অপর কেউ ওয়াজ করতে পারে না।
* মুসলিমদের সবচেয়ে বেশী অনুসরনীয় হলেন ১। আল্লাহ ২। রাসূল (সা.) ৩। আমির ৪।আমীরের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি
সহিহ বোখারী ১৮৭০ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৭০। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানের সাথে এবং ছাওয়াবের আশায় (নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ইবনে শেহাব বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং হকুমও এ অবস্থায়ই রয়ে গেল। তারপর আবু বকর (রা.) এর সম্পূর্ণ খেলাফত আমল এবং ওমরের (রা.) খেলাফত আমলের প্রথম ভাগ এ অবস্থায়ই কেটে গেল। (এ সময়) সকলেই একা একা তারাবীহ পড়ত।ইবনে শিহাব ওরওয়াহ ইবনে জোবায়ের থেকে বর্ণনা করেছেন,আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল কারী বলেছেন, আমি রমযানের এক রাতে ওমর ইবনে খাত্তাবের সাথে মসজিদের দিকে বের হলাম। ;দেখলাম,বিভিন্ন অবস্থায় বহুলোক একা একা নামায পড়ছে।তখন হজরত ওমর (রা.) বললেন,আমার মনেহয় এদের সকলকে একজন কারীর সাথে জামাতভুক্ত করে দিলে সর্বাপেক্ষা ভাল হবে।অতঃপর তিনি তাই করার মনস্থ করলেন এবং তাদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.) এর পিছনে জামাতভুক্ত করে দিলেন। এরপর আমি দ্বিতীয় রাতে আবার তাঁর সাথে নামাজে বের হলাম। দেখলাম, লোকেরা তাদের ইমামের সাথে নামাজ পড়ছে। ওমর (রা.) বললেন এটি একটি উত্তম বিদয়াত। রাতের যে অংশে লোকেরা নিদ্রা যায়, তা যে অংশে তারা ইবাদত করে তদপেক্ষা উত্তম।অর্থাৎ রাতের প্রথমভাগ অপেক্ষা শেষ ভাগের নামায অধিক উত্তম। এটিই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন।
* আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রা.)পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.)। তিনি আল্লাহর কসম করে, রাসূলের (সা.) আদেশের কথা বলে রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর হওয়া বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। সুতরাং রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত ছাড়া অন্য রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা সংক্রান্ত হাদিস সমূহ মানসুখ সাব্যস্ত হবে।
সূরাঃ ৬ আনআম, আয়াত নং ১৫৩ এর অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।
* কোরআন বিভিন্ন পথ অনুসরন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং বিভিন্ন রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা সংক্রান্ত হাদিস সমূহ আয়াত অনুযায়ী মানসুখ সাব্যস্ত করা মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামূলক।সুতরাং অভিন্ন পথ দেখানো রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর সাব্যস্ত হওয়া সংক্রান্ত হাদিস খানা কার্যকরি সাব্যস্ত হয়ে এবিষয়ে বিভিন্ন পথ দেখানো হাদিস সমূহ মানসুখ সাব্যস্ত হবে।
সহিহ মুসলিম, ৬৬৯ নং হাদিসের (কিতাবুল হায়েয) অনুবাদ-
৬৬৯। হযরত আবুল আলা ইবনে শিখখীর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কোন কোন হাদিস একটি আরেকটিকে মানসুখ বা রহিত করে, যেমন কোরআনের কোন কোন আয়াত কোন কোন আয়াতকে মানসুখ বা রহিত করে।
* একটি হাদিস আরেকটি হাদিসকে মানসুখ করে সূত্রে রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর সাব্যস্ত হওয়া সংক্রান্ত হাদিস পরিপন্থি সকল হাদিসকে এ হাদিস মানসুখ করবে। কারণ এ হাদিসের রাবী আমিরের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি।
সহিহ মুসলিম, ১৬৫৮ নং হাদিসের (সাতাশ তারিখের রাত কদরের রাত হওয়ার প্রমাণ) অনুবাদ-
১৬৫৮। হযরত যির ইবনে হুবাইশ উবাই ইবনে কা’ব থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি উবাই ইবনে কা’ব (রা.) ‘লাইলাতুল কদর’ রাত সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাতটি সম্পর্কে জানি এবং এ ব্যপারে আমি সর্বাপেক্ষা বেশী জানি। যে রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে নামাজ পড়তে আদেশ করেছেন সেটিই অর্থাৎ সাতাশ তারিখের রাতই কদরের রাত।
সহিহ বোখারী ১৮৮১ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৮১। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তোমরা ২৪ তম রাতে (লাইলাতুল কদর) তালাশ কর।
সহিহ বোখারী ১৮৮০ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৮০। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন,তোমরা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনে তালাশ কর। লাইলাতুল কদর এসব রাতে আছে। যখন নয়, সাত কিংবা পাঁচ রাত বাকী থেকে যায়।
সহিহ বোখারী ১৮৭৬ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৭৬। নবি করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা লাইলাতুর কদর রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে তালাশ কর।
সহিহ বোখারী ১৮৮৩ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৮৩। হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (সা.) আমাদেরকে শবে কদর সম্বন্ধে জানাতে বেরিয়ে আসলেন। এমন সময় দু’জন মুসলিম কলহে লিপ্ত হলো। তখন তিনি বললেন,আমি বের হয়েছিলাম তোমাদেরকে শবে কদর সমন্ধে খবর দেওয়ার জন্য; কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের কল্যাণ নিহিত ছিল। অতএব তোমরা শবে ক্বদর নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তালাশ কর।
সহিহ বোখারী ১৮৭৪ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৭৪। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিমের (সা.) কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নযোগে শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি তোমাদের স্বপ্ন শেষ সাত রাতে সমাঞ্জস্যশীল হয়ে গেছে। তাই যে ব্যক্তি তা’ খোঁজ করতে চায় সে যেন শেষ সাত রাতেই তা’ তালাশ করে।
সহিহ বোখারী ১৮৭৯ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-
১৮৭৯। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফে বসতেন এবং বলতেন, তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশ দিনে তালাশ খোঁজ কর।
* যাঁদের থেকে শবে কদর সংক্রান্ত হাদিস বর্ণিত তাঁরা হলেন ১। হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) ২। হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) ৩। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) ৪। হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) ৫। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ৬। হযরত আয়েশা (রা.)।
# উপরোক্ত ছয় জন রাবীর মধ্যে হযরত উবাই ইবনে কাব-
১। রাসূল (সা.) নিযুক্তস কোরআনের শিক্ষক ২। আল্লাহর আদেশে আল্লাহ তাঁর নিকট কোরআন স্পষ্ট করেছেন ৩। তিনি আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর (রা.) এর পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি ৪। তাঁর বর্ণিত হাদিস কোরআনের সাথে গরমিল নয়। আর যেহেতু আল্লাহ এক রাতের কথা বলেছেন সেহেতু এক রাত সাব্যস্ত করণে হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণিত হাদিস গৃহিত হয়ে এর পরিপন্থি অপর সকল হাদিস মানসুখ সাব্যস্ত হবে। সুতরাং লাইলাতুল কদর শুধুমাত্র রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত সাব্যস্ত হবে। হাদিস সমূহের বক্তব্য অনুযায়ীও এটা স্পষ্ট যে রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত সংক্রান্ত হাদিস এ সংক্রান্ত সর্বশেষ হাদিস। আর মানসুখের নিয়মও হলো পরের হাদিস আগের হাদিসকে মানসুখ করে। সুতরাং মানসুখ হাদিস দিয়ে রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাতের গুরুত্ব কমানো অর্থহীন। যারা সব কিছুতে বিদয়াত দেখতে পায় তারা শুধুমাত্র রমজানের সাতাশ তারিখ সকালের পূর্বের রাত কে লাইলাতুল কদর নির্ধারণ করাকে বিদয়াত বলে, অথচ এটাই সুন্নাহ, বরং এ রাত ছাড়া অন্য রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা বিদয়াত।
২২ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:০৯
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: আপনার সাথে যুক্তিতর্কে একমত
তবে আপনি যেভাবে প্রমাণ করে দিলেন ২৭ তারিখেই কদর, একইভাবে তৎকালীন সকল সাহাবাগন তাবেয়ীগণও নিশ্চয়ই ২৭ তারিখকেই কদর ধরে পালন করে আসছিল? আপনার যে যুক্তি তা আমি খন্ডন করছি না। তবে এটাই যদি সত্য হতো, তাহলে তার চর্চা ১৪০০ বছর ধরেই হয়ে আসতো। যখন বড় বড় মুহাদ্দিসগণ হাদিস সংকলন শুরু করেন, তখন কেন স্পষ্ট হলো না শুধু ২৭ তারিখ ই কদর। বাকি হাদিস মানসুক! ২৭ তারিখে হাদীসে গুটিকয়েক। আর অন্যান্য হাদিস যেখানে তারিখে উল্লেখ নেই, সেগুলো অসংখ্য!
২১ ২৩ তারিখও রাসূলুল্লাহ সাঃ কদর পেয়েছেন বলে হাদিসে এসেছে। তাহলে তা কীভাবে সম্ভব?
যাইহোক আমাদের ২৭ তারিখই কদর পালন করতেই হবে তা এমন ফরজ ওয়াজিব নয়। সুতরাং আপনি ২৭ তারিখ পালন করলে কেউ তো বাঁধা দিবে না। তাছাড়া যেহেতু আপনি এই জীবনে অসংখ্য কদর নিশ্চিত ভাবেই পেয়ে গেছেন, সেহেতু আপনি অনেক ভাগ্যবান।
তবে দূর্ভাগা আমাদের উপমহাদেশের মুসলমানগণ যারা নিশ্চিত ভাবে ২৭ তারিখ কদর পালন করার পরও তাদের দুঃখ দূর্দশার শেষ নেই! আমাদের দিনদিন পাপের বোঝা ভারিই হচ্ছে! আজ চারিদিকে সব অরাজকতা!
তার কারণ যারাই অরাজকতা করছে, তারা তো জানে ২৭ তারিখ নিশ্চিত ভাবেই সব মাফ! সুতরাং কোনো টেনশন নেই দুনিয়ায় যত ইচ্ছা পাপ করো আর ২৭ তারিখ সাফ করো!!
ধন্যবাদ,
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তাই চুপ থাকাই ভালো।
২২ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১০
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: যারা জ্ঞানী তাদের পরিচয় তাদের জ্ঞান তারা প্রকাশ করে না।
৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ২:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি ভাগ্যবান
আলনার কাছে কেউ
সূত্র খোজে নাই। কপি
পেষ্ট ও বলে নাই।
যত দোষ নন্দ ঘোষ।
২২ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১৬
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: শ্রদ্ধাভাজন
কেউ না বললেও আপনি তো বলে দিয়েছেন!!!
আপনি ভালো করেই জানেন যে, যে বিষয় নির্দিষ্ট যেসব বিষয়ে নতুন করে কিছু করার নেই। এইজাতীয় বিষয় নিয়ে শুধু সম্পাদনা করা যায়। একেবারেই ইউনিক কিছু করা সম্ভব নয়। যেহেতু এটা ধর্মীয় বিষয় সেহেতু এখানে আমি কেন যেকোনো মুফতিও নতুন কিছু সংযোগ করতে পারবে না। পুরোনো বিষয়কেই শুধুমাত্র ঢেলে সাজিয়ে নতুন করা ছাড়া।
আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, আমি সরাসরি কি কপি পেষ্ট করেছি?
৭| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৫:৫৬
সাসুম বলেছেন: তথ্যসূত্র ইন্টারনেট মানে কি??? দুনিয়ার যাতা যেখান থেকে পান সেখান থেকে কপি পেস্ট করে ব্লগের প্রথম পাতা ভরাইতেছেন??? প্রতিটা লাইন কই থেকে কপি করেছেন তার সূত্র উল্লেখ করেন।
এই অখাদ্য আমাদের কে কেন পড়াইতেছেন? আপনার কোন পাকা ধানে মই দিছিলাম আমরা?? এখান থেকে একটু, ওখান থেকে আরেকটু কপি করে এই যে আবর্জনা প্রসব করছেন এ থেকে আমাদের মুক্তি দিন।
ব্লগের প্রথম পাতায় কপি পেস্ট পরিবেশনার জন্য এই পবিত্র রমজান মাসে আল্লার দরবারে আপনার শাস্তি কামনা করলাম।
২২ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৫২
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: সুহৃদ
আপনার মাথা ব্যাথা কোথায় এবং কী কারণে তা আমি প্রকাশ করবো না।
একটা বিষয় আমাদের বুঝতে হবে, ধর্মীয় বিষয় গুলো সবসময়ই ফিক্সড। আমি চাইলেই ধর্মের কোনো বিষয় নিয়ে নিজের মতো করে যাতা বলতে বা নিজের নতুন কোনো মতামত দিতে পারি না।
সুতরাং ধর্মীয় বিষয়গুলো শুধু সম্পাদনা করা যায়। একেবারেই ইউনিক কিছু করা সম্ভব নয়। যেহেতু এটা ধর্মীয় বিষয় সেহেতু এখানে আমি কেন যেকোনো মুফতিও নতুন কিছু সংযোগ করতে পারবে না। পুরোনো বিষয়কেই শুধুমাত্র ঢেলে সাজিয়ে গঠনমূলক করা ছাড়া।
অতএব আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, আমি সরাসরি কী কপি পেষ্ট করেছি? যদি বলতেন তাহলে উপকৃত হতাম।
ধন্যবাদ,
আপনার জন্য শুভকামনা।
৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৩১
আরইউ বলেছেন: আপনার তথ্যসূত্র কুরআন হাদিস না হয়ে "ইন্টারনেট" হলো কেন? ইন্টারনেট ইহুদী নাসারাদের আবিষ্কার, ষড়যন্ত্র। এর সূত্র কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
২২ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৪৬
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: চমৎকার কৌশলে সুকৌশলী প্রশ্নবানে বিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছেন!!
আপনি ভালো করেই জানেন এবং বুঝেন যে ইসলামী যেকোনো লেখার সূত্র কুরআন এবং হাদিস।
আর এখানে যে তথ্যসূত্রের কথা বলা হচ্ছে, তা হচ্ছে কুরআন হাদিসের যেসব রেফারেন্স আনা হয়েছে তা ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র! এটাই হচ্ছে তথ্যসূত্রের মূলসূত্র!!
৯| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৫৫
নিমো বলেছেন: লেখক বলেছেন: তা ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র!
সেটা কোন সুনির্দিষ্ট ইউআরএল থেকে নিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। লেখক আপনি নিজেও হতে পারেন কিংবা অন্য কেউ লেখক হলে তার প্রা্প্য প্রশংসাটুকু তিনি পাবেন। এটা নিয়ে এত প্যাচাঁল কেন ? নাকি ধর্মেট নামে লেখা চুরি করলে আলাদা ধরণের সওয়াব-নেকি হাসিল হয়।
১০| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১১:৫৩
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ২১ ও ২৩ তারিখের দাবীর ক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও ২৭ তারিখের দাবীর ক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ নেই।
১১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:২২
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: শ্রদ্ধেয়
যেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেই বিযয়টি নিয়ে রহস্য রেখেছেন এবং যিনি ২৭ তারিখকে প্রমোট করছেন তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। সুতরাং আমি আর আপনি কেন এটার ঠিকাদারি নিব?
অসংখ্য হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে এর তারিখ কোনোভাবেই ফিক্সড নয়। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আমল থেকেও এটা স্পষ্ট যে তিনি শেষ দশদিন অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন।
সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাঃ যেখানে দশদিন কষ্ট করে গেছেন, সেখানে আমি আর আপনি কেন নিজেদের এতো সুখ দিব?
আর তারিখ ই যদি ফিক্সড হয়ে যায় তাহলে তা এখন পর্যন্তই ফিক্সড থাকতো। এটা নিয়ে বিতর্ক হতো না।
যাইহোক ভাই আপনি ২৭ তারিখ ধুমসে ইবাদত বন্দেগী করেন। ইনশা আল্লাহ্ আপনার দোয়া কবুল হবে।। ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ খাইরান
১২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৫৪
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: তিনি উচ্চবাচ্য করলেন না কোন খানে? তিনি তো কসম করেই বললেন ২৭ তারিখ সকালের পূর্বের রাত লাইলাতুল কদর। আসলে মুসলিমদের মতভেদ করতে না পারলে পেটের ভাত হজম হয় না, সেজন্যই তারা সুস্পষ্ট জিনিসকে অস্পষ্ট দেখতে পায়।
২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:৫১
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. বলেছেন: যির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে আমি বললাম, হে আবুল মুনযির! এই যে সাতাশের রাত লাইলাতুল কাদর আপনি সেটা কি করে জানতে পারলেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, এই রাত্রের পরবর্তী সকালে সূর্য উদিত হয় ক্ষীণ আলো নিয়ে দীপ্তিহীন অবস্থায়। আমরা সেটাকে গুনে এবং স্মরণ করে রেখেছি। আল্লাহ তা’আলার শপথ! ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-ও জানেন যে, সেটা হচ্ছে রমযানের রাত্র এবং সাতাশেরই রাত্র। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি তা জানাতে পছন্দ করেননি, তোমরা যদি পরে এটার উপর নির্ভর করে বসে থাক।
-সহীহ্, সহীহ আবূ দাঊদ (১২৪৭), মুসলিম অনুরূপ
ফুটনোটঃ
আবূ ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৭৯৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
যির ইবনু হুবাইশ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনু কাব (রাঃ)-কে বললাম, হে আবুল মুনযির! আমাকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলুন। কেননা আমাদের সাথী (ইবনু মাসউদ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘কেউ সারা বছর ক্বিয়ামুল লাইল করলে সে তা পেয়ে যাবে। এ কথা শুনে উবাই বললেন, আল্লাহ আবূ ‘আবদুর রহমানের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহর শপথ! তিনি তো জানেন, ক্বদর রাত রমযান মাসেই রয়েছে। [১৩৭৮]
বর্ণনাকারী মুসাদ্দাদ আরো বলেন, তিনি (ইবনু মাসউদ) এজন্যই তা প্রকাশে অপছন্দ করেছেন, যেন লোকেরা কোন নির্দ্দিষ্ট একটি রাতের উপর নির্ভর না করে। অতঃপর উভয় বর্ণনাকারীর বর্ণনা একই রকম। আল্লাহর শপথ! তা হচ্ছে রমাযানের সাতাশ তারিখ। আমি বললাম, হে আবুল মুনযির! আপনি তা কিভাবে জানলেন? তিনি বললেন, আমাদের নিকট রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনাকৃত নিদর্শন দ্বারা। ‘আসিম (রাঃ) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি নিদর্শন? তিনি বললেন, ঐ রাতের ভোরের সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত নিস্প্রভ থাকবে, যেন একটি থালার মত।
হাসান সহীহঃ মুসলিম।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩৭৮
হাদিসের মান: হাসান সহিহ
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
১৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:১৫
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: আগামী পরশু রাতে শব ই কদর। অনেকের কাজে লাগবে। ♥️
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৪৪
সোনাগাজী বলেছেন:
১ মুজাহিদ ১০০০ মাস অস্ত্র সংবরণ করেনি, জ্বিহাদ করেছে? ১০০০ মাসে ৮৪ বছর, কোথায় সেই যুদ্ধ হয়েছে, কখন হয়েছে?