নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ মরে গেলে পঁচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে যে বর্বরোচিত হামলা এবং আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তাকে নূরুল কবীর কেবল ভাঙচুর নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত 'পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

যখন সাংবাদিকরা ভেতরে কাজ করছিলেন, তখন গেটে তালা দিয়ে আগুন দেওয়া এবং দমকল বাহিনীকে বাধা দেওয়ার মতো মধ্যযুগীয় নৃশংসতা প্রমাণ করে যে, এটি কোনো সাধারণ জনরোষ ছিল না। নূরুল কবীর অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে আঙুল তুলেছেন সরকারের নির্লিপ্ততার দিকে। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সময় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলেও প্রায় আড়াই ঘণ্টা তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি, যা রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে থাকা কোনো অংশের পরোক্ষ মদদ বা চরম ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করে। সম্পাদকীয় নীতির ভিন্নতাকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলা কোনোভাবেই একটি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক সমাজের লক্ষণ হতে পারে না।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলামের স্বীকারোক্তি আমাদের আরও বেশি ভাবিয়ে তোলে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এই হামলাকারীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পবিত্র স্লোগান এবং শহীদের রক্তকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, যে বিপ্লব হয়েছিল স্বৈরাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে, সেই বিপ্লবের নাম ব্যবহার করেই এখন এক ধরনের 'সামাজিক সম্মতি' তৈরির চেষ্টা চলছে। নাহিদ ইসলাম স্বীকার করেছেন যে, সরকারের ভেতরের একটি অংশ, রাজনৈতিক ব্যাকআপ এবং দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত বিদ্বেষ—এই তিনের সংমিশ্রণ না থাকলে এমন দুঃসাহস দেখানো সম্ভব ছিল না।

আগে যে মব ভায়োলেন্সকে বিপ্লব পরবর্তী অস্থিরতা বলে মনে করা হতো, এখন তা পরিকল্পিত অপরাধে রূপ নিয়েছে। যখন সাংবাদিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে 'সুশীল' তকমা দিয়ে আক্রমণ করা হয় এবং সাধারণ মানুষের আবেগ ব্যবহার করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়, তখন বুঝতে হবে গণতন্ত্রের যাত্রাপথ রুদ্ধ করার চক্রান্ত চলছে। বিপ্লব পরবর্তী যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা আমরা করেছিলাম, গণমাধ্যমের ওপর এই নগ্ন হামলা সেই পথ থেকে বিচ্যুতিকেই নির্দেশ করছে।

নূরুল কবীর তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে সতর্ক করেছেন যে, পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজ যদি এমন বর্বরতা সহ্য করে নেয়, তবে কেবল নির্দিষ্ট কিছু সংবাদ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হবে না, বরং গোটা সমাজের উন্নতির পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাঁর মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা কেবল সাংবাদিকদের দায়িত্ব নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। তিনি লক্ষ্য করেছেন, হামলাকারীদের মধ্যে ধর্মীয় স্লোগান ও পোশাকের আড়ালে এমন কিছু শক্তি সক্রিয় ছিল যারা মূলত একটি চরমপন্থী ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে চায়।

অন্যদিকে, নাহিদ ইসলাম অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে জানিয়েছেন যে, হামলার রাতে যখন সাংবাদিকরা জীবনমরণ সংকটে ছিলেন, তখন তাদের রক্ষায় রাজপথে পর্যাপ্ত মানুষের উপস্থিতি না থাকাটা এক বিশাল নৈতিক পরাজয়। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, একটি দায়িত্বহীন সরকারের বিদায়ের পর যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এক নতুন ধরনের 'মবোক্রেসি' বা উগ্রবাদের জন্ম হচ্ছে, যা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত চেতনার পরিপন্থী।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:০৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: বেশ ভালো লেখা। তবে শিরোনামটা খুব বেশি উপযুক্ত মনে হয়নি বলে মনে করি। নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম যা বলেছেন, তা মোটামুটি আমাদের সবারই জানা। হাঁড়ির খবর খুব বেশি না জেনেও একই কথাগুলো আমি দুদিন আগে আমার "মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?" পোস্টে লিখেছি।

আপনি কোথাও একটি মন্তব্যে লিখেছেন যে ইউনূস দম দেওয়া পুতুলের মতো কথা বলছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.