নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
অনেকক্ষণ যাবত মোবাইলের ভাইভারে রিং হচ্ছে । বালিশের নিচে থাকায় খুব একটা শব্দ হচ্ছে না । ঘড়িতে কাটায় কাটায় রাত তিনটা । শহিদ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । এই ফোন কলটার আশায় জাগতে জাগতে এক সময় ঘুমিয়ে পরেছে । আরো কিছুক্ষণ রিং হবার পর তা বন্ধ হয়ে গেল । ঠিক পাঁচ মিনিট বিরতির পর আবারও ফোনটা বেজে উঠল । আবার আর ভাইভার কল নয় । মোবাইলে রিং হচ্ছে । এবার একটা রিং হবার সাথে সাথে শহিদের ঘুম ছুটে যায় । তারা হুড়ো করে বালিশ সরিয়ে ফোনটা তুলে নিয়ে । নম্বরটা দেখতে চেষ্টা করে । চোখে ঘুম থাকায় পরিষ্কার দেখতে পায় না । রিসিভ বাটনে চাপ দিয়ে কানের কাছে ফোনটা নিয়ে - খুব মোলায়েম ভাবে বললো,আস সালামু আলাইকুম । সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে, ‘ওলাই কুম আস সালাম ভ্রাতা । কেমন আছেন আপনি ?
জহির ভাই ? শহিদ বেশ উত্তেজিত ।
জি , জহির বলছি । কেমন আছেন ?
আমি ভাল আছি জহির ভাই । আপনি কেমন ? শহীদ উত্তেজনা চেপে রাখতে পারে না ।
আল-হাম দুল্লিলাহ আমি বেশ ভাল আছি । কামাল আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না । ভাইভারে বেশ কয়েকবার কল করেছে । আপনি ফোন ধরছেন না । আপনার ওখানে ৩টা বাজে তাই না ?
শহীদ তাড়াহুড়ো করে মোবাইলে ঘড়ি দেখে । তারপর বলে ।
জি ভাই , ৩টা বেজে ১৫ মিনিট । উঠে পড়ুন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ুন । তার পূর্বে কামাল ভাইকে একটা ফোন দিন । তিনি আপনার জন্য শুভ সংবাদ নিয়ে অপেক্ষা করছে । আল্লাহ্ আপনার ইচ্ছে পূরণ করবে ।
আমি এখুনি ফোন দিচ্ছি ভাইয়া । ভাইয়া আপনি এখন কোথায় ?
আমি মালয়েশিয়া থেকে চলে যাচ্ছি আমার গন্তব্যে । আল্লাহ্ চাহেন তো আগামীকাল সন্ধ্যায় পৌঁছে যাবো । আপনার সঙ্গে আর হয়তো কথা না ও হতে পারে । আগামী কাল কিংবা পরশুদিন আল্লাহর সঙ্গে দেখা হবে ভাই ।
তারমানে কি আপনার লক্ষ্য ঠিক হয়ে গেছে ভাই ?
হ্যাঁ ।
কোথায় ? কখন ?
সিরিয়ায় । আগামীকাল বিকালে পৌঁছে যাবো । রাতে কিংবা তার পরের দিন কোন এক সময় আল্লাহর সঙ্গে দেখা হবে ।
মাশাল্লা, আপনি কতো ভাগ্যবান ভাই । শহীদ এর শরীর তরতর করে কাঁপছে । কেমন একটা ভয় আর উত্তেজনা ওকে গ্রাস করে । হঠাত করে ঠোট আর গলা শুকিয়ে আসে । নিজের ভেতরের উত্তেজনা কিছুতেই চেপে রাখতে পারছে না । আল্লাহ্ সঙ্গে দেখা করার অর্থ হচ্ছে জহির ভাই আগামীকাল কিংবা পরশু শহীদ হয়ে যাবেন । কোন আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে । জহির ভাইয়ের চেহারাটা শহীদ চোখে ভেসে উঠে । বেশ হাসি খুশি আর শান্ত চেহারার অধিকারী জহির ভাই । ছোট বড় সবাইকে বেশ সন্মান করে কথা বলেন । ছোটদের ও আপনি ছাড়া সন্মধন করেন না । মাস দুয়েক হল একটা মেয়ে হয়েছে । বউ বাচ্চা জহির ভাইয়ের বাবা, মায়ের সঙ্গে উত্তরাতে থাকে । শহীদ যেন হঠাত ঘোরের মধ্যে চলে যায় ।
কি হল, শহীদ ভাই ? আমার কথা শুনছেন তো ?
জি ভাই । কিন্তু ভাই আপনি তো সন্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে শহীদ হতে চেয়েছিলেন ।
সব আল্লাহ্ র হুকুম, ভাই । তিনি যেভাবে চাইবে সেভাবেই সব হবে ।
সিরিয়ার কোথায় আমি কি জানতে পারি ?
না ভাই । অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন । আমিও জানি না । সিরিয়ায় পৌঁছাবার পর জানতে পারবো ।
শহীদ ও জানে আত্মঘাতী হামলার ব্যাপার যোদ্ধার আগে ভাগে কিছু জানে না । বড় জোর এক কি দুই ঘণ্টা পূর্বে প্রস্তুত হতে বলা হয় ।
ভাই, ভাবি কি জানে ?
না ওনাকে বলিনি ।
আপনি আমার ছোট্র একটা কাজ করবেন ভাই ?
অবশ্যই ভাই , আপনি হুকুম করুণ ।
পরশুদিন পর্যন্ত আমার কোন ফোন না পেলে আমার শহীদ হবার খবরটি আমার বাসায় পৌছে দেবেন।
দিবো ভাই , দিবো । বলে শহীদ কান্নায় ভেঙ্গে পরে ।
ছি : কাঁদছেন কেন । আমি আল্লাহ্ সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি ভাই । কাঁদতে নেই । আমার জন্য দোয়া করুণ, যেন আল্লাহ আমাকে কবুল করেন ।
নিশ্চয় ভাই , নিশ্চয় । শহীদ আর কথা বলতে পারে না । চোখের পানি কিছুতেই থামতে চায় না ।
এভাবে ভেঙ্গে পরলে তো চলবে না । আপনিও ভাগ্যবান । নিশ্চয় আপনার সঙ্গেও আল্লাহ্ দেখা হবে এবং তা খুব শিগ্রহই । নাকি আসবেন না ?
না, ভাই না । আমরা আসছি ।
কতজন আপনারা ?
তিনজন ।
মাশাল্লা । কামাল ভাইকে ফোন দিন । উনি হয়তো চিন্তিত হয়ে পরেছেন ।
ঠিক সে সময় ভাইভারে রিং আসে ।
কমাল ভাই ফোন করেছে, ভাই । আমি রাখি তা হলে । জিহাদ জিন্দাবাদ ।
ঠিক আছে । আল্লাহ হা-ফেজ
আল্লাহ হা-ফেজ, জিহাদ জিন্দাবাদ বলে শহীদ লাইন কেটে দেয় ।
( ২ )
আস সালামু আলাইকুম কামাল ভাই কেমন আছেন ?
ওলাই কুম আস সালাম শহীদ তোমার খবর কি ? সেই কখন থেকে ফোন করছি । রিং হচ্ছে, রিং হচ্ছে কিন্তু তুমি ধরছ না । কামালের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি ।
আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ভা্ই । শহীদ কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললো ।
ওকে সমস্যা নেই । তোমাদের জন্য শুভ সংবাদ আছে ।
আলহামদুল্লিলাহ্ ভাই বলেন ?
তোমাদের দোয়া আল্লাহ্ কবুল করেছেন । তোমার ছোটন আর রাসেলের ভিসা হয়ে গেছে । আগামী সপ্তাহের মধ্যে রওনা হতে পারবে তো ?
জি ভাই পারবো ।
বেশ , মানিক ভাই থাকেন সাভারে আগামীকাল তার সঙ্গে মগবাজার বড় মসজিদে দেখা করে তোমাদের পাসপোর্ট আর কাগজ পত্র নিয়ে নিবা । আগামী সপ্তাহ রওনা হয়ে যাও । আমি কুয়ালালামপুরে তোমাদের রিসিভ করবো ।
সত্যি কামাল ভাই সব হয়ে গেছে ?
কেন তুমি প্রস্তুত না বুঝি ?
আপনাদের দোয়া আর আল্লাহ্ র রহমতে একশ ভাগ প্রস্তত ভাই । ইনশা আল্লাহ আমরা আসছি ।
সাবধানে থেকো । দেখ, কেউ যেন আবার জানতে না পারে । তাহলে কিন্তু সব ওলট পালট হয়ে যাবে ।
কাক পক্ষীও জানতে পারবে না ভাই ।
গুড । কামালের কণ্ঠে স্পষ্ট সন্তুষ্টি ।
তবে ভাই, আমার একটা কথা আছে ।
কি ? বলে ফেল । আমার অনেক কাজ । জহির ভাই রওনা হয়ে গেছে, শুনেছ নিশ্চয় ?
জি ভাই । একটু আগে জহির ভাই এর সঙ্গে কথা হল ।
বেশ ভাল । দেখেছো আল্লাহ জহির ভাই এর ডাক কবুল করছেন । এর চেয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছাবার আর কোন সহজ রাস্তা নেই । বলো আছে ?
না,ভাই ।
তোমার কি কথা বলে ফেল । কামালের কথা শুনার পর শহীদ নিজের কথাটা বলার সাহস পায় না । আমতা আমতা করতে থাকে ।
কি হলো বলছো না কেন ?
না, মানে ভাই , আমি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হতে চাই ।
আমি বুকে বোমা বেধে শহীদ হতে পারবো না ।
ওপর প্রান্ত থেকে কামাল কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । তারপর ফুস করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন । সে দেখা যাবে । জিহাদিদের ভয় পেলে চলে না ভাই ।
আমি ভয় পাচ্ছি না কামাল ভাই ।
ঠিক আজে আগে আসো তারপর দেখা যাবে ।
না, ভাই আমাকে আপনি কথা দিন আমাকে সন্মুখ যুদ্ধের ময়দানে পাঠাবেন । তা না হলে আমি আসবো না ।
দেখ শহীদ তুমি একজন পরীক্ষিত জিহাদি ভাই । বাংলাদেশে বসে জিহাদ করা আর এখানে এসে জিহাদ করা এক কথা নয় । চারিদিকে শুধু মরু ভূমি । বালু আর বালু । তুমি আমি একদিন ও টিকতে পারবো না । চব্বিশ ঘণ্টা ৫০ কেজি ওজনের অস্ত্র নিয়ে এখানে থেকে ওখানে ছুটে বেরাতে হবে । তুমি এতো কষ্ট করতে পারবানা । তাছাড়া ট্রেনিং নেওয়াল ব্যাপার আছে ্
আমি সব পারবো ভাই । আপনি শুধু কথা দিন ।
ঠিক আছে আসো । যদি পারো আমি আপত্তি করবো না । সাবধানে থাকবে । আগামীকাল মানিক ভাইয়ের ফোন পেলে তার সঙ্গে দেখা করে সব বুঝে নাও । আজ রাখি আল্লাহ হাজেজ । জিহাদ জিন্দাবাদ ।
আল্লাহ হাজেজ , জিহাদ জিন্দাবাদ । ওপর প্রান্ত থেকে লাইন কেটে যায় । বিপ বিপ শব্দ হতে থাকে । শহীদ তবুও ফোন কানে চেপে রেখে বসে থাকে ।
এরপরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে । শহীদরা পরের দিন মানিক ভাই এর কাছ থেকে পাসপোর্ট, এয়ার টিকেট, আর কাগজ পত্র সঙ্গে এক হাজার করে ডলার বুঝে নেয় ।
পেপারগুলো দিতে দিতে মানিক ভাই বলেন, স্টুডেন্ট ভিসা । সঙ্গে মালয়েশিয়ার একটি বিখ্যাত কলেজে ভর্তির কাগজপত্র । ইমিগ্রেশন অফিসারের বাপের সাধ্য নাই আটকাবার । বিসমিল্লাহ করে পরশুদিন রওনা হয়ে যাও ।
ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় তিনজনেরই বুক ধুক ধুক করতে থাকে । কিন্তু খুব সহজেই ওরা ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনে গিয়ে বসে । প্লেন উড়তে শুরু করলে শহীদ জানালা দিয়ে তাকিয়ে নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশ দেখতে থাকে । হঠাত ওর মনে পরে যায় জহির ভাই এর কোন ফোন আসেনি । জহির ভাইয়ের বাড়িতে কোন খবরও দেয়া হয়নি ।
©somewhere in net ltd.