নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
সাত
দিন কতক আগে ইতি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে । এ'তে সামস্ সাহেব আমার যে কাহিনীটা নিয়ে ছবি বানাবেন ইতি সেটির নায়িকা । মেয়েটিকে তিনি আমার কাছে পাঠিয়েছেন ওর চরিত্রটি বুঝিয়ে দেবার জন্য । অনার্স পড়ছে । ছোট খাটো আকৃতির চঞ্চল চপলা,গোলগাল মুখশ্রী পারিজাতের উর্বশী বলে মনে হয় । সব সময় চোখে মুখে শিশুসুলভ দুষ্ট হাসি লেগে থাকে । দেখেই মুগ্ধ হতে হয় । আমিও মুগ্ধ হলাম ।
এ বয়সের মেয়েরা সাধারণত খুব ভয়ংকর হয় । তাদের মেজাজ মর্জি চিন্তা ধারা কখন কোন প্রবাহে প্রবাহিত হয় সেটা বোঝা খুব একটা সহজ নয় । তাই, কখন কি করে বসে তারও কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না । নদীর জলের মতো বিরামহীন ছন্দে কলকল ছলছল করে বয়ে চলে। ছোটবেলা থেকেই আমি নারী সঙ্গ বঞ্চিত । এখনও বুঝতে পারিনা মেয়েদের সঙ্গে ঠিক কিভাবে মিশতে হয় । তাই হঠাৎ করে মেয়েটির আবির্ভাবে একটু টালমাটাল হয়ে পরেছি । দৈনন্দিন কর্মকান্ডে ছেদ পরেছে ।
মেয়েটি'কে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি । একেবারে ফেবিকল আঠার মতো আটকে আছে আমার সঙ্গে । সব কিছু দেখে মেয়েটি সম্পর্কে আমার ধারণা জন্মেছে ওর মাথায় কিঞ্চিত গণ্ডগোল রয়েছে। একবার এলে আর যেতে চায় না । ঘরদোর নিজের মতো করে গুজ গাছ করে । মেসের রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে আনে । ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজে । গান গায় । ফিসফিস করে বলে বেড়ায় একদিন স'দু ভাইয়ের সাথে বসে নাকি গল্প করবো ।
ইতি'র সবচেয়ে বড়গুণ ও খুব মিশুক প্রকৃতির। এ ক'দিনে মেসের অনেকের সাথেই খুব ভাব জমিয়ে ফেলেছে । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রেহানর মা । ইতি মেসে এলে রেহানার মা ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার আশে পাশে ঘুরঘুর করে । সেদিন দেখলাম , আম তলায় বসে পুলিশ দু'জনের সাথে চা খেতে খেতে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ।
ভেবেছিলাম ওর চরিত্রটা বুঝিয়ে দিলেই কেটে পরবে । কিন্তু সেটা নিয়ে ওর সঙ্গে একদিনও বসতে পারিনি । আমি যখনই বলেছি চলো তোমার চরিত্রটি বুঝিয়ে দেই, তখনি ও বলেছে,"রাখেন তো,আপনি তো আর উড়ে যাচ্ছেন না। পরেও এ নিয়ে বসা যাবে ।" চরিত্রটি বুঝে নেবার কোন আগ্রহ তার মধ্যে আছে বলেও মনে হয় না । ওর ভাষায় কাহিনীকারকে বুঝতে পারলে নাকি অতি সহজেই তার রচিত যে কোন চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করা যায়। তাই ওর এখনকার মিশন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করা।
এ কদিনে মেসের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে । স'দু ভাই এর সাথে সাথে বদরুলকেও নাকি ইদানিং এখানে ওখানে দেখা যাচ্ছে । তবে সেদিনের পর আমি কাউকে না দেখলেও সেই লোকটাকে সব সময় আমার চারপাশে যখন তখন দেখতে পাচ্ছি । একটা নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসে । কাছে যাবার চেষ্টা করলেই ভেনিস হয়ে যায় ।
আমার শরীরের অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়েছে যে, সেটা লিখে বর্ণনা করা যাবে না । শুরুতে মহল্লার নিরালা ফার্মেসির কম্পাউডার সেকান্দারের কাছ থেকে বেশ কিছু ভিটামিন এনে খেয়ে ও কোন লাভ হয়নি । পরে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি । তিনি মল,মূত্র পরীক্ষার পর নানান ওষুধের সাথে একগাদা ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন । সেগুলো খেয়ে ফল হচ্ছে উল্টো । আগে ঘুম হতো না আর এখন ঘুমলে কেউ আমাকে ঘুমের মধ্যেই ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে । রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমতে গেলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি হয় ছাদে নয়তো রাস্তার পাশে শুয়ে আছি । এটা কি করে হচ্ছে তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না ।
ঘুমের মধ্যে হাটা হাটি করা রোগের নাম হচ্ছে,সোমনাম্বুলিজম । এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই জানে না বা মনে করতে পারে না কখন সে ঘুমের মধ্যে হেটে একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলে গেছে।
বিষয়টা পরীক্ষা করার জন্য গতরাত রাতে ঘুমাবার আগে দরজায় তালা দিয়ে ডান হাতটা খাটের পায়ার সাথে বেঁধে ঘুমতে গেলাম । কিন্তু সকাল উঠে দেখি আমি শাহবাগে জাতীয় যাদু ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছি । রাতের বেলা যাদু ঘর চত্বর তালা দেয়া থাকে । কারো পক্ষে ভেতরে ঢুকা সম্ভব নয় । কিন্তু আমি ঢুকেছি । কিভাবে ঢুকেছি, সেটা কিছুতেই মনে করতে পারছি না । আমার বাসা হতে যাদু ঘরের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলো মিটার হবে । এই পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব কি ঘুমের মধ্যে আধোও হেটে অতিক্রম করা সম্ভব ? পুরো সিচুয়েশনটা এতোটাই বিদঘুটে যে, এখন রাতের বেলা ঘুমাতেই ভয় পাচ্ছি ।
আর একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে আমার সাথে , সেটা হচ্ছে একজন মানুষের দু'টো অবয়ব দেখতে পাচ্ছি । অর্থাৎ একই সাথে একজন মানুষের দু'টো রূপ দেখছি । সেদিন দুপুরে লিখতে লিখতে চোখ লেগে আসায় ঘুমিয়ে পরেছিলাম। হঠাৎ গুনগুন গানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । চোখ খুলে দেখি রুম অন্ধকার । সন্ধ্যা হয়ে গেছে ভেবে জানালার দিকে তাকাতেই দেখি এক সঙ্গে দু'জন ইতি আমার ঘরে। একজন টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছে অন্যজন জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে গুনগুন করে গান গাইছে । আমি বেড সুইটা টিপে দিতেই রুম আলোকিত হয়ে গেলে দেখতে পেলাম ইতি চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে । জানালার সামনে কেউ নেই ।
ব্যাপারটা যদি শুধু মাত্র ইতি'কে দেখা নিয়ে হতো তাহলে ভেবে নিতাম এটা হ্যালুসিনেশন। ঠিক মতো ঘুম না হবার কারণে উলটা পালটা দেখছি । কিন্তু সেদিন দুপুর বেলা কফির জন্য কিচেনে গিয়ে দেখি রেহানার মা কি একটা রান্না করছে। আমাকে কিচেনে ঢুকতে দেখে বলে উঠলো, ভাইয়া কফি খাবেন, দেবো এক কাপ?
আমি বললাম, দাও ।
কথাটা বলে কিচেন থেকে বের হয়ে আম গাছ তলায় এসে দেখি , কল তলায় রেহানা'র মা একমনে কাপড় ধুচ্ছে । পুরো বিষয়টায় এতোটাই হকচকিয়ে গেলাম যে, কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারলাম না । মনে হলো মস্তিষ্ক তার কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। একটু ধাতস্থ হয়ে রান্না ঘরে এসে দেখি কেউ নেই ।
এসব কিসের লক্ষণ বুঝতে পারছি না । সর্বক্ষণ মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাকে ফলো করছে । হাটার সময় প্রায়ই পেছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করি । মনে হয় কেউ ঠিক আমার পেছন পেছন হাঁটছে ।
একটা দুটো ঘটনা হলে একটা ব্যাখ্যা দাড় করানো যায় কিন্তু এক সাথে এতোগুলো ঘটনা আমার উপর কি পরিমাণে যে চাপ সৃষ্টি করছে তা বলে বুঝানো যাবে না ।
একদিন কোন কারণ ছাড়াই রক্ত বমি হলো । অনেক দিন পর দুপুর বেলা, আতপ চালের খিচুড়ির সাথে শিং মাছের ঝোল খেলাম । মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারিনা বলে শুধু ঝোল দিয়ে সামান্য পরিমাণে খিচুড়ি খেলাম কিন্তু খাবার শেষ করে রুমে আসতে না আসতেই শুরু হলো রক্ত বমি । তাজা, জমাট বাধা রক্ত গলগল করে বের হয়ে আসলে লাগলো মুখের ভেতর থেকে । তড়িঘড়ি করে ইতি, আমাকে ঢাকা মেডিকেলের ইমাজেন্সিতে নিয়ে গেলো । প্রায় ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে অপারেশন করে ডাক্তার গলার ভেতর থেকে বের করে আনলেন আস্ত জীবিত একটা শিং মাছ ।
এই প্রথম আমার মনে হলো, আমি আর বাঁচবো না । মৃত্যু ভয় পেয়ে বসলো আমায় । আর সেদিন রাতেই দেখলাম, বদরুল সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমার অবস্থা দেখে ইতি একদিন ওর বড় ভাই এসআই ফরহাদ সাহেব কে সাথে করে নিয়ে এলো । আমি তাকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা এক এক করে খুলে বললাম । এফডিসির সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাও বাদ গেল না । এসআই ফরহাদ আদি অন্ত খুব মনোযোগ সহকারে শুনলেন । তারপর আমার সদ্য সমাপ্ত চিত্রনাট্যটি যেটার শুরুটা করেছিলাম আমি আর বাকিটা শেষ করেছে অন্য কেউ, সেটা নেড়েচেড়ে দেখে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন ।
একদিন বিকেল এসে বললেন, রন্জু সাহেব, এটা আমি পরপর তিনজন হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্ট'কে দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি । তারা সকলেরই মোটামুটি নিশ্চিত যে, পুরোটা লেখাটা একই ব্যক্তির হাতের লেখা । আপনি খুব সম্ভব , ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন ।
'ডিমেনশিয়া' নতুন শব্দ শুনে অবাক হলাম। পরে ডিকশনারি ঘেঁটে দেখি, এটা একটা রোগের নাম । ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিভ্রষ্ট ঘটে । কিছু মনে রাখতে পারে না । মস্তিষ্কের অনেক অসুখের একটি উপসর্গ এই ডিমেনশিয়া। এর স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া বা ভুলে যাওয়া। কেউ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে তার পক্ষে অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রাখা অনেক বেশি কঠিন।
কিন্তু আমি তো কিছু ভুলছি না । সব মনে থাকছে, মনে রাখতে পারছি । তাহলে ..........
মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সব রোগ শোক একসাথে এসে আমার উপর বাসা বাঁধছে । এসআই ফরহাদ আমাকে উপদেশ দিয়ে বললেন, কোথাও থেকে সপ্তাহ খানেক ঘুরে আসুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে । সত্যি বলতে কি, আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনার উপর এক ধরনের চাপ ফেলছে । সে কারণে হয়তো কোন কাজ করে সেটার কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন । কোথাও থেকে ঘুরে আসুন,দেখবেন মাথাটা একেবারে ক্লিয়ার হয়ে যাবে । তখন আর এমন কিছু ঘটবে না। এসআই ফরহাদ সাহেব বিজ্ঞের মতো হাসলেন ।
এসআই ফরহাদের উপদেশ আমি পাত্তা না দিলেও ইতি বিষয়টা খুব গুরুত্বের সাথে নিলো । শেষমেশ ওর চাপাচাপিতে ব্যাগ গুছিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলাম । কিন্তু তাতে সমস্যার কোন হেরফের হলো না। বরং নতুন এক উপদ্রব শুরু হলো। সারাক্ষণ মাথার ভেতর ক্যামন সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাই। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, আমি সমুদ্রের মধ্যে পরে গেছি আর চারিদিক থেকে রাশি রাশি জল এসে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।
আট
একদিন বিকেলে ইতি আমাকে পরানো ঢাকায় ওর এক স্যারের বাসায় নিয়ে গেলো । ভদ্রলোক একজন সাইকিয়াট্রিস্ট । কিন্তু দেখে তা মনে হয় না । নাম মোস্তফা মল্লিক। শরীরের গড়ন হালকা পাতলা। ঠোটের উপর মস্ত একজোড়া গোঁফ। দু’গালে কয়েক দিনের না কাটা দাঁড়িতে ভদ্রলোককে দেখলে মনে হয় না তিনি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী । মধ্যবয়স্ক শরীরটা ধনুকের মতো সোজা, মাথায় ঘার পর্যন্তে নেমে আসা বড় বড় চুল এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখলে যাযাবর বলে মনে হয় ।
আমরা রিকশায় থাকতেই বাতাস শুরু হয়েছিলো। চারিদিক কালো করে এলো । বাতাসের তর্জন গর্জন দেখে মনে হচ্ছিলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । পুরোটা পথ ইতি আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো । মল্লিক সাহেবের বাসায় পৌছুতেই প্রচণ্ড ঝড় হলো । আমরা যখন পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই । অনেকক্ষণ দরজায় কড়া নাড়ার পর কালো রঙের লুঙ্গি পরা উদম শরীরে মোস্তফা মল্লিক সাহেব দরজা খুলে দিয়ে ইতিকে দেখে বলে উঠলেন, ও তুমি । রান্না ঘরে ছিলাম তো তাই দরজা খুলতে দেরি হয়ে গেছে । তারপর আমার দিকে তাকিয়েই যেন চমকে উঠলেন । অপ্রত্যাশিত কোন ভয়ংকর ঘটনার মুখোমুখি হলে আমাদের চোখ মুখের যে অবস্থা হয় অনেকটা ঠিক সে রকম ।
বুঝতে পারলাম না কি হয়েছে । তিনি পলকহীন ভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি প্রচণ্ড রকমের অস্বস্তিতে পরে গেলাম । একজন মানুষের দৃষ্টি অন্য একজন মানুষের কাছে যে কি পরিমাণে অস্বস্তিকর হতে পারে তা হারে হারে টের পেলাম ।
একসময় মনে হলো, ভদ্রলোকের দৃষ্টি আমার অস্থি মজ্জা ভেদ করে শরীরের রন্ধে রন্ধে পৌঁছে যাচ্ছে । হঠাৎ করে আমার ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো । মনে হলো, এ লোকের কাছ থেকে যতো দ্রুত পালিয়ে যাবো ততোই মঙ্গল । আমি ইতির দিকে তাকিয়ে কোন রকম বললাম, ইতি চলো । ঠিক তখনি ভদ্রলোক ছোবল মারার মতো খপ করে থাবা দিয়ে আমার ডান হাতটা ধরে ফেললেন। তারপর অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বললেন, “ ভেতরে আসো, এখানে তোমার কোন ভয় নেই । তুমি ঠিক জায়গাতেই এসেছ”।
মল্লিক সাহেব আমার হাত আর ছাড়লেন না। ইতিকে দরজা বন্ধ করতে বলে, একটা দরজা বদ্ধ ঘরের সামনে নিয়ে এসে অন্য হাতটি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলে ফেললেন । তারপর দ্রুত ঘরের ভেতর ঢুকে আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে পেতে রাখা একটা বিছানা দেখিয়ে বললেন, ওখানে বস।
আমি পুরো ঘরটার দিকে একবার তাকালাম । আসবাবপত্র শূন্য মাঝারি আকৃতির একটি ঘর। ঘরের এক কর্নারে মেঝেতে জাজিম, তোশক দিয়ে একটি বিছানা। তাতে কালো রং চাদর আর দু'টো বালিশ দেওয়া । তার পাশেই বহু পুরাতন বড় একটা কাঠের আলমারি। ঘরের ঠিক মাঝখানে সাদা রং দিয়ে বড় একটা বৃত্ত আঁকা । বৃত্তের ভেতর হিজিবিজি করে আরো অনেক কিছুর ছবি আঁকা । জানালাগুলো সব ভেতর থেকে বন্ধ । ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই আমার মনে হলো, আমি যেন ফ্রিজের ভেতর ঢুকে গেছি । হঠাৎ তীব্র শীতে আমার পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠল ।
আমি উহু করে কুঁকড়ে যাবার ভঙ্গি করলাম । মল্লিক সাহেব সেটা খেয়াল করে দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা ইতির দিকে তাকিয়ে বললেন, যা তো মা, বেডরুম থেকে একটা চাঁদর এনে ওকে দে। এর পর তিনি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দু’হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বললেন, এখানে বসো ।
আমার নাম মোস্তফা মল্লিক । আমি ইতির কলেজে মনোবিজ্ঞান পড়াই । আমার এখানে তোমার কোন ভয় নেই । তুমি নিশ্চিন্তে এখানে থাকো । তোমার সাথে যা ঘটছে তা আমি বুঝতে পেরেছি ।কোন ভয় নেই । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
ইতি, একটা চাঁদর এনে আমার শরীরে পেঁচিয়ে দিল । তীব্র শীতে ততোক্ষণে ঠকঠক করে আমার দাঁতের সঙ্গে দাঁতে বারি খাচ্ছে । মল্লিক সাহেব ইতির দিকে তাকিয়ে বললেন, তোর কাকী গ্রামে গিয়েছে । আমি রান্না বসিয়েছি। তুই যা তো মা রান্নাটা দেখ। আমি ওকে নিয়ে বসছি । ওর অবস্থা ভাল না । হাতে সময় খুব কম । তোর মুখে ওর কথা শুনে এতোটা এতোটা খারাপ আশা করিনি । আরো আগে নিয়ে আসা উচিত ছিল ।
হঠাৎ ইতির পেছনে আমার চোখ যেতেই আমি চমকে উঠলাম । ইতির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এফডিসির সামনে দাঁড়ানো সেই লোকটা । চোখ দু'টো থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে আগুন। তীব্র ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এখুনি সে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পরবে । ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে আমাকে। আমি লোকটার থেকে চোখ সরিয়ে নিতে পারলাম না । বড় বড় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম আমার মুখ দিয়ে ঘোঁত ঘোঁত শব্দ বের হতে লাগলো ।
ইতি আমার এমন আচরণে ভয় পেয়ে গেল । দৌড়ে এসে আমার দু’কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, রন্জু ভাই, এ্যই রঞ্জু ভাই, কি হয়েছে ? কি হয়েছে আপনার ? আমি একটা আঙুল তুলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখালাম । কুৎসিত লোকটার দৃষ্টির কোন পরিবর্তন হয়নি । সেই একই দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মল্লিক সাহেব আমার আঙুল বরাবর তাকিয়ে কি দেখলেন বুঝলাম না ।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে গেলের আলমারির কাছে, একটানে আলমারি খুলে তার ভেতর থেকে একটা শিশি বের করে তার ভেতরে থাকা তরল পদার্থটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ছুড়ে দিলেন দরজার বাইরে । সঙ্গে সঙ্গে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার শরীর মুচড়ে উঠল এবং সাথে সাথে মিলিয়ে গেল ।
মল্লিক সাহেব আমার শরীরে শিশিটা থেকে কয়েক ফোঁটা তরল পদার্থ ছিটিয়ে দিলেন। তীব্র আতরের সুগন্ধিতে পুরো ঘর ভরে করে উঠল । হঠাৎ আমার শীত অনুভূতিটা চলে গিয়ে আরাম বোধ করায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলাম ।
মল্লিক সাহেব ইতির দিকে তাকিয়ে বললেন, ও এখন ঘুমা'বে । এর মধ্যে আমাকে কয়টা জরুরী কাজ সেরে নিতে হবে। তুমি রান্না ঘরে গিয়ে গরম পানি বসাও ।
চলবে ...........।
১৬ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভালো। বেশ ভালো।
+ রইলো।
১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০০
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভাল থাকবেন
৩| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:০৯
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: বাপরে কী ভয়ংকর অবস্থা
দেখি পরে কী হয়
১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৪| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:১০
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: #দস্যু ভাইও প্লাস দিতে পারে এই প্রথম দেখলাম মাশাআল্লাহ
১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০২
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন:
৫| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৫০
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভালো লাগছে, পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০৩
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন, শুভ কামনা রইলো
৬| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাওয়াটা সঠিক কাজ নয়।
ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া সঠিক কাজ।
১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ওকে বিষয়টা রঞ্জু'কে বলে দিবো। কিন্তু ভাই টুকটাক সমস্যার জন্য কে চিকিৎসকের কাছে যায় বলুন?
৭| ১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম অভিজ্ঞতা থেকে অভ্যাস, অভ্যাস থেকে আসক্তি, আসক্তি থেকে বিপর্যয় ...
১৭ ই জুন, ২০২২ সকাল ৭:২৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় নুর
৮| ১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৫৩
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: চলুক।
১৭ ই জুন, ২০২২ সকাল ৭:৩০
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের অন্য ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন, শুভকামনা রইলো
৯| ১৭ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: গতকাল রাতে পড়লাম গল্পটা । গল্প দেখি বারে বারে দিক পরিবর্তন করছে । সত্যি বলার কোন উপায় নেই যে গল্প আসলে কোন দিনে যাচ্ছে ।
১৭ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:০৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। গল্প তার আপন গতিতে অন্তিম পর্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে থাকার জন্য আবারো ধন্যবাদ, শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
১০| ১৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ৯:৪৯
খাঁজা বাবা বলেছেন: মজা পাচ্ছি পড়ে, তবে টানা পড়তে পারলে আরো ভাল লাগোত।
২৭ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১:০৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
১১| ০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ৮:০১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অপু তানভীর এর সাথে একমত। দারুণ টার্ন নিচ্ছে গল্প। এই পর্বে এসে ভৌতিক ফিল হচ্ছে। ++++
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:০৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: Good story.