নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিঙ্গেল ফ্ল্যাট - গল্প

২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৯



অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবার সময় সিঁড়িতে বাড়িওয়ালার সাথে দেখা হয়ে যায়। ঘড়িতে বাজে সোয়া ন'টা। দশটার মধ্যে অফিসে পৌছতে না পারলে তিন দিনের সেলারি কাটা। বাড়িওয়ালা ওকে থামাতে চেষ্টা করলে, উপল উলটো তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, চাচা এক মিনিটও সময় নাই। রাতে ফিরে দেখা করবো, তখন যা বলার বলবেন।

বাড়িওয়ালা নাছোড়বান্দা । পানের পিক হাতের কৌটোর মধ্যে ফেলতে ফেলতে বলেন,আরে মিয়া,দাঁড়াও না এক মিনিট। তুমি যে ব্যস্ত সেইটা তো আমি জানিই। আইজ মাসের ২৫ তারিখ, ৩০ তারিখের মধ্যে তোমারে বাসা ছাড়ার কথা । কথা'টা মনে আছে তো ?

উপল মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। বাসা ছাড়ার ভয়ে ও এ ক'দিন বাড়িওয়ালাকে এক প্রকার এড়িয়েই চলেছে । সে এক চোর-পুলিশ খেলা। খুব সকালে বের হয়ে যাওয়া আবার দেরি করে বাড়িতে ফেরা । তার উপরে মাস ফুরিয়ে যাবার আগেই ভাড়া দিয়ে দেওয়া । যেন ভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালা নতুন করে ক্যাচাল করতে না পারে। কথায় আছে না,যেখানে বাঘের ভয় সেখানে নাকি রাত্রি হয় । সেরকম আজ একেবারে বাড়িওয়ালার মুখোমুখি। ব্যাটা ওকে ধরার জন্যই শিকারীর মতো ওৎ পেতে বসেছিলো ।

জাহানারা ভিলা'র পাঁচ তলায় উপল আর ওর স্ত্রী সুপ্রিয়া ভাড়া এসেছিলো প্রায় বছর খানেক আগে । বিয়ের পরপর অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওরা বাসাটা ভাড়া নিয়েছিলো ৷ কিন্তু নানা বিষয়ে বনিবনা না হওয়ার ডিভোর্স না হলেও মাস তিনেক ধরে সুপ্রিয়া বাবার বাড়িতে থাকছে। আপাতত দু'জনার মিটমাটের কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। উপল বেশ কয়েকবার ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে মিটমাট করে ফেলার কিন্তু সুপ্রিয়া স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে সে কিছুতেই আসবে না। উপলও তাই আর হ্যাংলাদের মতো হাতে পায়ে ধরে নাই । মেয়েদের বেশি মাথায় তুলতে নাই, মাথায় তুললে তারা গলা কাটা শুরু করে। সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে ঘরে ফিরে যদি শান্তিই না পাওয়া যায়, তবে তার চেয়ে একা থাকা ঢের ভাল ।

তিন রুমের এতো বড় ফ্ল্যাটের প্রয়োজন না থাকলেও শুধু শুধু ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাতেও কোন অসুবিধা ছিলো না। কিন্তু বাড়িওয়ালার মেয়ে আমেরিকা থেকে আসবে তাই নিজেদের ফ্ল্যাট দরকার এই কারণ দেখিয়ে ওকে ফ্ল্যাট ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে দু'মাস আগে।

ঢাকা শহরে বাসা খুজে পাওয়া চাট্রি খানি কথা না । ব্যাচেলর'দের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না উটকো ঝামেলা এড়াবার জন্য। তবু ও উপল যে একেবারে চেষ্টা চরিত্র করে নাই তা কিন্তু না । পরিচিত, অপরিচিত অনেকে'ই বলে রেখেছে । কিন্তু আজকাল কার এতো সময় যে, অন্যকে বাসা খুজে দেয়।

ব্যাংকের চাকরী, শ্বাস ফেলার সময় নেই। কাজ করতে করতে দম বের হয়ে যাচ্ছে । বাসা খোজার সময় কোথায় ? ব্যাপারটা বাড়িওয়ালাকে বুঝিয়ে বলেও কোন লাভ হয়নি। তার পরিষ্কার কথা, চুক্তি মেনে দু মাস আগে নোটিশ দিয়েছি । কাজেই, ঝামেলা না করে বাসা ছেড়ে দাও ।

উপলে'র অবশ্য ধারনা এর পেছনে সুপ্রিয়া'র হাত আছে। বাড়িওয়ালার স্ত্রী সাথে সুপ্রিয়া'র বেশ খাতির ছিলো। সুপ্রিয়া চলে যাবার পর মহিলা উপল'কে দু'চোখে দেখতে পারছে না। কথাটা মুখে না বললেও চোখের দৃষ্টিতে ঠিক ই বুঝিয়ে দিয়েছে । মাঝে মধ্যে সিঁড়িতে কিংবা নিচে দেখা হলে, এমন দৃষ্টিতে তাকায় যেন পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলবে ৷ উপল বুঝতে পারে না সুপ্রিয়া চলে যাওয়ায় ওর দোষটা কোথায়। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপলের সাথে থাকবে না । যতো দোষ সব শুধু ছেলেদের, মেয়েরা সব ধোয়া তুলশী পাতা ।

উপল কথা না বাড়িয়ে আবার বলে, রাতে এসে কথা বলবো চাচা ৷
বাড়িওয়ালা বলে,আর কোন কথাবার্তা নেই মিয়া। ৩০ তারিখে বাসা ছেড়ে দিবা এইটাই শেষ কথা। উপল আর মেজাজ ধরে রাখতে পারে না, বিড়বিড় করে বলে, বাসা চাইলেই কি পাওয়া যায় নাকি? দেখছেন না, একটা ক্রাইসিসে'র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি? হুট করে কোথায় যাবো? আপনি বাসা খুঁজে দেন,আমি চলে যাই।

কথাগুলো বলে উপল আর দাঁড়ায় না হনহন করে হেটে যায় ৷ পেছন থেকে বাড়িওয়ালা চিৎকার করে বলে উঠে, আরে মিয়া, তুমি কই যাইবা সেইটা আমি ক্যান চিন্তা করমু,আমি ক্যান তোমারে বাড়ি খুইজা দিমু? তুমি কি আমার শশুর হও নাকি? ৩০ তারিখে বাড়ি না ছাড়লে এই বাড়িতে আর ঢুকতে পারবা'না বইলা দিলাম। ঢাকা শহরে বাড়ি ওয়ালারা নিজেদের জমিদার মনে করে । ভাড়াটিয়ারা সব তাদের প্রজা । যখন ইচ্ছে ভাড়া বাড়াবে যখন যাকে ইচ্ছে উঠিয়ে দেবো । এ যেন এক তুঘলকি কারবার ।

উপল কোন জবাব দেয় না। বাড়িওয়ালা, বাড়িওয়ালী আর সুপ্রিয়া'র চোদ্দ গুষ্টিকে গালা গাল করতে করতে হাটতে থাকে। মনে মনে বলে, ছাড়ুম না বাড়ি । দেখি তুই কি করতে পারিস ৷ শালা বুইড়া খাটাশটার জন্য আজও লেট হয়ে গেলো।এখন তিন দিনের বেতন তোর বাড়ি ভাড়া থেকে কেটে রাখমু । এরপর আরো নোংরা একটা গালি দিয়ে থুক করে এক দলা থুতু ফেললো রাস্তার মাঝখানে । শালা, সকাল সকাল মেজাজটা খিচে দিয়েছে । এ জীবনের কোন মানে হয় না। এর চেয়ে রিকশা ওয়ালাদের জীবন অনেক ভাল । রোজ,রোজ এতো সব টেনশন নিয়ে বাঁচা যায় না। একদিন ফ্যানের সাথে ঝুলে পরে ব্যাটাকে ফাসিয়ে দিয়ে যাবো । তখন থাকিস তোর বাড়ি নিয়া ।

দুই

২৯ তারিখ রাত ঠিক ১২টায় বাড়িওয়ালা এসে দরজায় নক করে। উপল ঘুমের ভান করে কিছুক্ষন পরে থাকার চেষ্টা করেও পারে না। বাড়িওয়ালা একটু পরপর ডোর বেল বাজিয়ে যাচ্ছে । বাজাবার ধরনই বলে দিচ্ছে, উপল দরজা না খোলা পর্যন্ত সে বাজাতেই থাকবে । উপল ত্যক্ত, বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে বাড়িওয়ালা কিছু বলার আগেই সালাম দিয়ে বেশ নরম সুরে বলে, "চাচা এই মাসটা সময় দিন, কথা দিচ্ছি, আগামী মাসে বাসা ছেড়ে দিবো।"

বাড়িওয়ালা কোন কথা না বলে কিছুক্ষণ উপলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ফুসস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,তুমি এক কাজ করো, আমার ৭ তলার সিঙ্গেল ফ্ল্যাটে চলে যাও। ভাড়া এই ফ্ল্যাটে'র অর্ধেক। একমাস না, যতদিন ইচ্ছা থাকো। তবে কন্ডিশন একটা, ছাদে গাছ গাছালি আছে সেগুলি নষ্ট করবা না। ফুল,ফল ছিড়বা না। কাল ই ফ্লাট ছেড়ে দাও। পরশু আমার মেয়ে আসছে।

বাড়িওয়ালার কথা শুনে উপল যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ওর কাছে মনে হয় হুট করে মাথা থেকে মস্ত একটা বোঝা নেমে গেল। কিন্তু সেটা বাড়িওয়ালাকে বুঝতে না দিয়ে বলে, এতো এতো জিনিসপত্র একদিনে কিভাবে সরাবো ? না চাচা, আপনি এই মাসটা সময় দেন, আগামি মাসে বাসা ছেড়ে দিবো ।

বাড়িওয়ালা বলে,আমি দারোয়ানকে বলে দিচ্ছি ও সকালে দু'জন লোক নিয়ে আসবে। তারাই মালামাল যা আছে সড়াবে । তুমি শুধু দেখিয়ে দিবে । তারপর একটু থেমে আদেশের সুরে বলে, এ নিয়ে আর কোন কথা শুনবো না। আগামী কাল শুক্রবার । ভালো দিন তুমি কালই সিফট করবে এটা আমার শেষ কথা ।

উপল বাড়িওয়ালার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে স্বস্তির হাসি হেসে বলে, ঠিক আছে চাচা, আপনে যখন এতো করে বলছেন তখন কালই সিফট করবো। আপনি বজলু ভাইকে বলে রাখেন সকাল ১১ টার পর লোক নিয়ে আসতে। তবে একটা কথা বলে দিলাম, ১১ টার এক মিনিট আগেও যেন না আসে । আসলেও কিন্তু দরজা খুলবো না। সারা সপ্তাহ গাধার মতো খাটি শুক্রবার সকাল'টা অন্তত শান্তিতে ঘুমাতে চাই।

উপলের কথায় বাড়িওয়ালা বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বলেন না। ভ্র কুচকে একবার ও'র মুখের দিকে তাকিয়ে চলে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়ান। তারপর কি মনে করে ফিরে তাকিয়ে বলেন, একটা কথা মিয়া, যতো তাড়াতাড়ি পারো বউ মা'রে নিয়া আসো। কামাইওয়ালা পুরুষ মাইনষের বেশি দিন একা থাক'ন ভাল কথা না। তাতে দোষ হয়। এইবার উপল বিরক্ত হয়ে কোন উত্তর না দিয়ে দরজা বন্ধ করে ড্রইং রুমের বারান্দায় এসে সিগারেট ধরায়।

তিন

জাহানারা ভিলা'র ছাদটা খুব সুন্দর। ছবির মতো পরিপাটি করে গোছানো। ছাদের চার পাশে বাহারি সব ফুল,ফলের গাছ। সারাক্ষণ পাখপাখালির কুঞ্চনে মুখরিত থাকে। ছাদের মাঝখানে দাঁড়ালে মনে ই হয় না ইট পাথরের শহরে আছি। ছাদের অন্যপাশে দু রুমের একটা সিঙ্গেল ফ্ল্যাট। সেটি ও বেশ সুন্দর। দামী মার্বেল পাথরের মেঝ। দামি দামি সব টাইলসের ওয়াশ রুম,রান্না ঘর । রুম দুটো ও বেশ বড় বড়। এতো সুন্দর ফ্ল্যাটটা কেন যে খালি ফেলে রাখা হয়েছে সেটা উপল ভেবে পায় না।

একটা রুমে জিনিসপত্র ঠাসাঠাসি করে রেখে বেড রুমটা রেডি করতে করতে বেশ রাত হয়ে যায়। সুপ্রিয়া'কে ফোন করে বলতে হবে, বিয়েতে ওর বাবার দেওয়া ফার্নিচারগুলো নিয়ে যেতে । সেগুলো এখন ওর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে । যে নেই তার ফার্নিচার রেখার ও কোন দরকার নাই । লোকদের মজুরি মিটিয়ে দিয়ে বজলু'কে বিদায় করে সোজা গোসল করতে ঢুকে পরে উপল ৷

গোসল করতে করতে ভাবে রাতে কি খাবে। সিঙ্গেল পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার কাজ হচ্ছে, তিন বেলা নিজের খাবারের এরেঞ্জমেন্ট করা। সুপ্রিয়া থাকতে এসব নিয়ে কোন চিন্তা করতে হয়নি। মানুষ থাকতে, মানুষের মর্যাদা বুঝে না।

রাথ রুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথা মোছার সময় দরজায় নক হয়। একটা নক হতেই কে বলে উপল এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে চমকে উঠে উপল । দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বজলু আর বাড়িওয়ালী। বজলুর হাতে একটা ট্রে, তাতে দু'তিনটি প্লেট ঢাকা। বুঝতে বাকি থাকে না যে, বাড়িওয়ালী ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন।

উপল সালাম দিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। বজলু ঘরে ঢুকে ট্রেটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলে,তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন দাদা। ঠান্ডা হয়ে যাবে । তারপর ঘর থেকে বের হয়ে বাড়িওয়ালীর পেছনে গিয়ে দাড়ায়।

বাড়িওয়ালীও কিছু বলেন না। উপলের পেছন দিয়ে একবার ঘরের ভেতরে তাকিয়ে চলে যাবার সময় উপলের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে বলেন,ছাদে অযথা ঘুরঘুর করবে ন। মনে রাখবে, ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছি ছাদ নয় । সিগারেটে খেয়ে এখানে ওখানে বাট ফেলবে না। ফুল,ফল ছিঁড়বে না। ভদ্রলোকে'র মতো থাকবে ৷ কি মনে থাকবে ?

উপল মাথা নাড়ে , জি মনে থাকবে ।

বাড়িওয়ালী আর দাড়ান না চলে যান ।

বাড়িওয়ালীর কথায় উপল এখন আর কিছু মনে করে না । উলটো তার প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা অনুভব করে। মানুষ বড্ড বিচিত্র প্রাণী কখন কি করে কিছুই বোঝা যায় না । মহিলা যতোই রুক্ষভাষী হোক না কেন ভেতরটা যে মোমের মতো নরম সেটা মুহূর্তে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।

দ্রুত হাত ধুয়ে এসে প্লেটগুলো উলটে দেখে, একটা বাটিতে পুইশাক দিয়ে চিংড়ি মাছ । অন্যটাতে ইলিশ মাছের ভুনা । বড় বাটিটাতে চিকন চালের ভাত আর ছোট বাটিতে ঘন ডাল। এ যেন রাজার ভোগ। সারাদিন প্রায় অভুক্ত থাকায় ক্ষুধা একেবারে মাথা চারা দিয়ে উঠছে। আর কোন কিছু চিন্তা না করে খাবারের উপর ঝাপিয়ে পরে গোগ্রাসে গিলতে থাকে । পেটে ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা।

চার

রাত প্রায় তিনটা।
খুট খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় উপলের।

শুয়ে থেকেই ও বুঝতে পারে শব্দটা দরজা থেকে আসছে। বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে, রাত তিন'টা বেজে, দুই মিনিট। ভেবে পায় না এতো রাতে কে আসবে? বজলু ভাই নয় তো? বজলু ভাই কেন এতো রাতে আসবে? সুপ্রিয়া চলে যাবার পর , ডোর বেল বাজলেই উপলে'র মনে হতো এই বুঝি সুপ্রিয়া ফিরে এসেছে । কিন্তু ধীরে ধীরে সেই অনুভুতিটা মরে যাচ্ছে । এখন আর ডোর বেলের শব্দে সুপ্রিয়ার কথা মনে হয় না । মনে হয় না সে,ফিরে এসেছে । ভালবাসা বুঝি এমনই করে হুট করে একদিন ফিকে হয়ে যায়।

উপল কোন শব্দ না করে আবার শব্দটা শুনার জন্য কান খাড়া করে শুয়ে থাকে। দরজায় আর কোন শব্দ হয় না। দেয়াল ঘড়ির কাটার খচখচ শব্দ ছাড়া একেবারে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে । দিনের ব্যস্ত শহর রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে । এ ঘুম সহজে ভাংবে না।

দরজার শব্দটা মনের ভুল ভেবে উপল পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। কিন্তু ঘুম আসে না। নতুন জায়গা তাই ঘুমে একটু ব্যাঘাত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। এ পাশ ও পাশ করতে করতে ও সুপ্রিয়ার কথা ভাবে ৷ সুপ্রিয়া'র সাথে ছোট ছোট খুনসুটিগুলোর কথা মনে করে পুলকিত হয়। পরক্ষনেই আবার ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া ঝাটির কথা মনে পরাতে ভেতরে ভেতরে তেতে উঠে।

উপল এখন আর সুপ্রিয়া'র কথা ভাবতে চায় না। ভাবলে কষ্ট বাড়ে। সব দোষ একা ওর নয় । কিন্তু সুপ্রিয়া মনে করে সব দোষ উপলের । এক রোখা, বদরাগী একটা মেয়ে।

আকাশ পাতাল নানান কিছু ভাবতে ভাবতে একসময় চোখর পাতা লেগে আসে। ধীরে ধীরে ক্লান্ত শরীর ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়। ঠিক সে সময় দরজায় খুব মৃদু ভাবে ঠুক, ঠুক, ঠুক করে শব্দ হয়।

কিন্তু সে শব্দ উপলের গভীর নিদ্রায় কোন ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না।

সকালে ঘুম থেকে উঠতে প্রায় ১১টা বেজে যায়।

এতো আরামের ঘুম বহুদিন হয়নি। ঘুম ভাঙ্গার পরেও বিছানায় দীঘক্ষন শুয়ে থাকে ও । ছাদ ঝাড়ু দেবার শব্দ আসছে । দু একটা পাখি এখনো কিচির মিচির করে ভোরের গান গাইছে । জানালার পর্দা ঠেলে হালকা আলো এসে ভরিয়ে দিয়েছে ঘর।

দেহ মনে প্রশান্তি নিয়ে দরজা খুলে ছাদে এসে দাড়ায় উপল । ঝরঝরে একটা দিন । চারিদিকে সূর্যের আলো জ্বলমল করছে । বজলু ভাই ছাদ ঝাড়ু দিচ্ছিলো উপল'কে দরজা খুলে বাহিরে আসতে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলে,"দাদা, রাতে ঘুম ক্যামন হইলো?" বজলু মিয়ার বলার ধরন দেখে হাসি পেয়ে যায় উপলের, সে দাত ক্যালিয়ে হেসে আড়মোড়া ভাংতে ভাংতে বলে,এক্কেবারে ফাস্ট ক্লাস।

সাখাওয়াত বাবন
২৮ জুন ২০২২

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
অপহরন শেষ করে এটি দিতে পারতেন।

২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৩১

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অপহরণ ও চলবে ভাই । সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ । লেখাটা ক্যামন হয়েছে জানার ইচ্ছে থেকে পোস্ট দিলাম ।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৩০

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: এর জন্য আমি আমার আম্মু আর নানী কে বাদে সম্পন্ন নারী জাতি কে পছন্দ করি না।

২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৩৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: হায় হায় বলেন কি ভাই ? আমি ও ছোট বেলায় এমন ছিলাম । ঘোষুনা দিয়েছিলাম জীবনে কোনদিন বিয়া করবো না । কিন্তু সেই আমিই ভাই বোন সবার আগে বিয়াসাদি করে সংসারী হয়ে গিয়েছিলাম :)

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৪৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: এমন বিজি হইছি যে গল্প পড়া বা পোস্ট দেয়ার আর সময় নাই :( এই ব্যস্ততা আর কমবে না । ব্লগে আসা হবে না হয়তো একদিন :(

গল্পটা পড়িনি । পড়ার ইচ্ছে আছে ইনশাআল্লাহ

২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:০১

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সবাই আপনাকে মিস করে তাই ছেড়ে যাবেন না । শত ভাই চম্পা আপনি , শুভ কামনা রইলো

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৩১

কোনেরোসা বলেছেন: অসম্পুর্ন

২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:২৭

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ , হয়তো ভবিষ্যতে কোন একদিন শেষ করবো ইনশাআল্লাহ্

৫| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৫৩

শায়মা বলেছেন: রাতে কি ভূত এসেছিলো নাকি বাড়িউলী !!

নাকি কোনো খুনী!!


আমার ধারণা এই ফ্লাটে ভূত আছে।

বাড়িউলীর মেয়ের ভূত যে ফ্যানে ঝুলে মরেছিলো :(

২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: কেউ তো একজন এসেছিলো এটা ঠিক, তবে আপনার অনুমান সঠিক হয়নি । ফ্যানে ঝুলে মারা যাওয়া আবার ফিরে আসা এসব পুরাতন হয়ে গেছে ।

৬| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৮

জুল ভার্ন বলেছেন: মনে হয় - শেষ হয়েও শেষ হলোনা, আরও কিছু বাকী আছে...... । তবুও চমৎকার গল্প! +

২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৩

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আসলেই শেষ হয়নি । পাঠকের অনুভূতি জানার জন্য পোস্ট দিয়েছি । সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকুন

৭| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৯

সোনাগাজী বলেছেন:



লেখায় কোন প্লট আছে?

২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অবশ্যই প্লট আছে , সেই প্লটে ফ্লাট বানাচ্ছি । বিষয়টা একটু খেয়াল করলেই ধরতে পারবেন । কর্পোরেট জীবনের ভোগান্তি , একদিকে সংসার ভাঙার মানসিক যন্ত্রণা অন্যদিকে ব্যাচেলরদের আবাসন নিয়ে সমস্যা, আবার রাত্রি বেলা অশরীরী কারো পদচারণ এতো কিছুর ভিতর ও আপনি প্লট খুঁজে পেলেন না ভাই ?

৮| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪০

ফয়সাল রকি বলেছেন: গল্প কি শেষ? ভালোই চলছিলো কিন্তু শেষ হলো কিনা বুঝলাম না।

২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য । ভাল থাকুন

৯| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৮:১৬

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: বাহ ভালোই লাগছিল আরেকটু লিখতেন?

২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৪০

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ইনশা আল্লাহ লিখবো ভাই , ভাল থাকুন ,সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

১০| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৯:২২

ইসিয়াক বলেছেন: ছোট গল্প এমনই হয়।
ভালো লাগলো।

২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৪১

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: খুব ভালো বলেছেন । ছোট গল্পের জন্য বনফুলের লেখা পড়তে পারে সবাই । সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.