নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
নিতু'র কথায় শফি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, "দূরে গিয়ে মর, ওই সব হালার পোলা রে চোদনের টাইম এই শফির নাই । "
শব্দটা শুনে, নিতুর কান ঝালাপালা করে উঠে । ইচ্ছে, করে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে । কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে ,তাতে এই মুহূর্তে সেটা সামাল দিতে হলে মাথা গরম করা চলবে না । নিতু কিছু না বলে মাথা নত করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রইলো ।
শফি গজগজ করতে করতে মোবাইল ঘেঁটে একটা নাম্বার বের করে সেটায় ফোন দিয়ে বলে, "এই, তুই কই রে ? তারপর অপর প্রান্ত থেকে আসা উত্তর শুনে বলে, যেখানেই থাকিস,এক ঘণ্টার মধ্যে দেখা কর। এক শালারে ফালায় দিতে হইব । আজ রাতেই ফলাইতে হইবো ? পারবি না ? না পরলে বল,ঝন্টুরে কল দেই । এতেই কাজ হলো, শফি যাকে ফোন দিয়েছে তার সাথে ঝন্টুর সাথে "ক্যালিং" আছে। ক্যালিং শব্দটা ডিকশনারিতে খুজে লাভ নেই। এটা আন্ডার ওয়ান্ডের ভাষা । যার অর্থ খুব সম্ভবত ঝুট,ঝামেলা,দাঙ্গা, ফ্যাসাদ। যে কাজ ঝন্টু পারবে, সে কাজ সে পারবে না, তা তো হতে পারে না। আন্ডার ওয়াল্ডে এমনটাই হয়। কেউ কাউকে টপকে যেতে দেয় না। অনেক সময় লেনদেন ছাড়াই লাশ পরে যায়। যে মরে সে নিজেও জানে না কে মারলো কেন মারলো ।
অপর প্রান্তের হ্যা জবাব শুনে, শফি আবার বলল, তাইলে কয়েটা পোলাপান নিয়া চিত্রা হলের সামনে মামা'র চায়ের দোকানে চলে আয় । আমিও আইতাছি ।"
ফোন রেখে শফি নিতুর দিকে তাকিয়ে বলে দেখ, শালারে কি করি।
নিতু আবার বাধা দিয়ে বলে, বাদ শফি । এতোটা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না ।
কেন ঠিক হবে না ? শালায় সম্পর্ক করতে পারছে , চো..ই'তে পারছে আর এখন দায়িত্ব নিতে পারবো না ক্যান ?
শফির মুখে বাজে শব্দ শুনে নিতুর কান আবারো ঝালাপালা করে উঠে। ইচ্ছে করে শফির গালে ঠাসঠাস করে দুটা চড় বসিয়ে দিতে। নোংরা শব্দগুলো কি অবলিলায় বলে যাচ্ছে হারামিটা। অন্য সময় হলে, ওর গালে চড় নয় জুতা মারা থেকে কেউ ওকে নিবৃত্ত করতে পারতো না। কিন্ত এই মুহুর্তে সেটা সম্ভব না। তবুও হালকা প্রতিবাদ করে নিতু বলে,বাজে কথা বলিস না। তারপর আরো নরম সুরে বলে, "খোজ,খবর না নিলে না নিক । আমিও চাই না ওর খোজ নিক। যা হইছে সেইটা দুই'জনের ভুলেই হইছে । এখন বিষয়টা আর বাড়াইতে চাই না।
কথাটা মুখে বললেও নিতু জানে, যা হইছে সেটা ভুলে হয় নাই । বরং যা হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে সেটা নিতু'র পরিকল্পনা অনুযায়ীই হচ্ছে ।
নিতুর কথা শুনে শফি অবাক হয়ে বলে, "এমনি এমনি ছেড়ে দিবি ?"
নিতু মাথা নেড়ে বলে , "হ্যাঁ , দিমু । বললাম তো,পুরাটাই ভুলে হইছে । কাজটা করে ফেলার পর মনে হইছে, আমি গোফরান'কে ছাড়া থাকতে পারবো না । যা করছি সেটা গোফরানের সাথে রাগের মাথায় করছি । তুই এখন শুধু দেখ, ও যেন তালাক নামায় সই করে দিয়ে সব ভুল যায় । আর গফরান'কেও যেন এ বিয়ে সম্পর্কে কোনদিন কিছু না বলে। আমিও কাউকে কিছু বলুম না। "
শফির মেজাজটা এবার নিতুর উপর খারাপ হয় । সে রাগি চোখে নিতুর দিকে তাকিয়ে বলে, তুই ই হচ্ছিস যতো নষ্টের গোঁড়া । বিয়াইত্তা পুরুষ জাইন্নাও কেন
মা..ইতে গেছিলি ?
শফির কথায় নিতু এবার আর রাগ করে না । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে, তুই ক্যামনে জানবি, "বিয়ের ১২ বছরে ও স্বামী যখন সন্তান দিতে পারে না । সকাল, সন্ধ্যা আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু,বান্ধব এর,ওর কাছে যখন সে জন্য কথা শুনতে হয় তখন মাড়ানের জন্য সত্যিই এমন একজনকে লাগে যে সন্তান দিতে পারে"
নিতু'কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে, শফি একটা সিগারেট ধরায় । ওর বুঝে আসে না । এই মেয়েটা এতো বোকা হলো কি করে ? সামান্য ভাব,ভালবাসায় চক্করে পরে ১২ বছরের সংসার ছেড়ে হুট করে অন্য একজনকে বিয়ে করে এখন আবার তালাক নেবার জন্য ওর কাছে এসেছে ।
শফিকে সিগারেট ধরাতে দেখে, নিতু উঠে দাড়ায় তা দেখে শফি কপাল কুচকে বলে , কি হলো ?
ধোয়া সহ্য হয় না ।
শফি নিতুর কথায় বলে, আরে বাসসস! সেটা আবার কবে থেকে গুরু । তোর সহ্য হয় সিগারেটের ধোয়া ? এক সময় তো আড্ডায় বসে গাজার ধোয়াও গিলে খেতি । কথাটা বলে, শফি হো হো করে আপন মনে হেসে উঠে। নিতুর সে হাসি অসহ্য লাগে। গা ঘুলাতে থাকে ।
উঠে দাড়িয়ে বলে, আজ উঠি ?
শফি বলল, যাবি যা, এক ঘণ্টা পর ফোন দিবো, ধরিস ।
নিতু মাথা নেড়ে দরজার কাছে গিয়ে কি মনে করে ঘুরে দাড়িয়ে বলে, দেখ ভাই, তুই ওকে কিছু করিস না । প্রমিস কর গায়ে হাত তুলবি না কিংবা অপমান করবি না ?
বাব্বা খুব তো দেখি মায়া দেখাচ্ছিস, তা এতো মায়া থাকলে, যা ঘর কর গিয়া । সেই ব্যবস্থা করে দেই ।
না, সেইটা সম্ভব না । তুই জানিস, গোফরান এর শরীর ভালো না । একবার ষ্টোক হয়ে গেছে । আমি ছেড়ে গেলে ব্যাচারা মরে যাবে ।
আরে, বাসসস! এদিকেও মায়া ওদিকেও মায়া, এতো দেখি মায়ার ছড়াছড়ি। নিতু কিছু বলে না । চুপ করে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকে । হাতি যখন গর্তে পরে চামচিকা ও নাকি লাথি মারে । ওর অবস্থা এখন অনেকটা সেরকম ।
শফি বলে, যা, ভালয় ভালয় কথা শুনলে কিছুই বলবো না । তা না হলে লাশ ফেলে দিবো । তারপর টেবিলের উপর নিতুর রেখে যাওয়া খামটা হাতে নিয়ে বলে, এখানে সব কাগজ পত্র আছে তো ?
নিতু মাথা নেড়ে বলে হুম , আছে । কাবিন নামার আসল কপি। আমার আর ওর এন আই ডি।
ঠিক আছে তাইলে , যা বাড়ি গিয়া ঘুমা । নিতুর মনটা খচখচ করতে থাকে । তার শফি'কে বিশ্বাস হয় না । ওর যা মাথা গরম । তাতে খুন টুন করে ফেললে মস্ত যন্ত্রনা হয়ে যাবে । শফি, নিতুর ছোট খালার মেঝ ছেলে। বয়সে ওরা একদিনের ছোট বড় । অনেকটা বন্ধুর মতো বড় হয়েছে। কলেজের পর শফি আর লেখাপড়া না করেও রাজনীতিতে ঢুকে নেতা হয়েছে। থানা, পুলিশ জানাশুনা বেশ ভাল।
নিতু এবার এগিয়ে এসে শফির কাঁধে একটা হাত রেখে বলে , দ্যাখ ভাই, উল্টাপাল্টা কিছু করিস না । তুই উল্টাপাল্টা কিছু করলে, আত্মীয় স্বজন সবাই জেনে যাবে । তখন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া অন্য কোন পথ থাকবে না। দয়া করে ভাই আমার কথাটা শুন । ওকে ডেকে এনে কাগজপত্রে সই নিয়ে ছেড়ে দে ।
শফি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে, তোদের, মানে মেয়েদের বুঝাতে পারা আসলেই কঠিন ব্যাপার । এই কারণেই আমি বিয়া সাদি না করে রাজনীতি করি । তারপর কিছু একটা ভেবে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তা, এই বিয়ের কয়দিন হইছে রে ?
নিতু বলে, তিন, চার মাস হবে । এরপর আরো আস্তে আস্তে বলে, নামের বিয়ে। বিয়ের পর থেকে ওর সাথে আমার আর দেখা হয়নি । কোন রকম শারীরিক সর্ম্পকও হয় নাই ।
বর্তমান স্বামী থাকতে, অন্যরে বিয়া করতে হইলে,আগের স্বামীরে তালাক দিতে হয় । তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হয়, এইডা কি জানিস?
হুম জানি।
জানলে এই বিয়া করলি ক্যামনে? তারপর বিজ্ঞের মতো শফি বলে, আসলে এই বিয়া হয় নাই। আইনে টিকবে না।
গোফরান মামলা করলে তুই ফেসে যাবি।
কোন শয়তান যে মাথায় ভর করছিল জানি না। এখন মরতে ইচ্ছে করছে।
শফি নিতুর কথার পুরোটা শুনতে পেল কিনা বোঝা গেল না। সে সিগারেটের শেষ অংশটা এস্ট্রে তে গুজতে গুজতে বলল, "দেনমোহর কত দিছিলি রে?" তারপর নিতুর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে, কিছু হউক আর না হোক নামের বিয়া তো হইছে , দেনমোহরটা তো আদায় করতে হবে ।
নিতু ব্যাগের ভেতর থেকে আর একটা খাম বের করে, টেবিলের উপর রেখে বলে , দশ হাজার ! বিয়ের দিনই ও এটা দিয়ে দিয়েছে । তুই এইটা খরচ করে ফেল ভাই । এই টাকা আমার কোন কাজে আসবে না ।
শফি , খামটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে বলে,দশ হাজার! মাত্র ? এই টাকা তো একটা ফকিন্নির বিয়াতেও কেউ দেনমোহর নেয় না । তুই কি রে নিতু ? তু্ই কি আসলে বোকা! নাকি বোকার ভান করে থাকিস ?
নিতু কিছু বলে না, ওড়নার নিচে দিয়ে আলতো করে নিজের তল পেটটা ছুঁয়ে থাকে । সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় ওর। মাতৃত্বের অনুভুতিতে পুরো শরীর কেপে কেপে উঠে। নিতু চোখ বন্ধ করে সে অনুভুতি অনুভব করে শিহরিত হয়।
তারপর ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ।
দুই
গোফরান বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছে। রাতের রান্না শেষ করে নিতু ড্রেসিন টেবিলের সামনে, বসে মাথা আচড়াচ্ছে আর আড় চোখে, গোফড়ান'কে দেখছে। ছোট খাটো শরীরের টাক মাথার লোকটাকে এখন আর ওর অসহ্য লাগছে না। উল্টো ক্যামন মায়া মায়া লাগছে। ইচ্ছে করছে পাশে বসে গল্প করতে। নিতু মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছে শারীরিক পরিবর্তনের কথাটা কি করে গোফরান'কে বলবে। যা বলার আজ ই বলতে হবে। অনমনা নিতু কি মনে করে লিপিস্টিক বের করে ঠোটে ঘষতে থাকে।
সেটা দেখে গোফরান বলে উঠে,"কি ব্যাপার কোথাও যাবে নাকি?" নিতু, আয়না থেকে চোখ না সড়িয়ে ঠোটে লিপিস্টিক ঘষতে ঘষতে বলে," হুম যাবো।"
নিতুর উত্তরে গোফরান বেশ অবাক হয়! ঘড়ির দিকে তাকায়ে দেখে নেয় কটা বাজে । তারপর কপালে ভাজ ফেলে অবাক হয়ে বলে, "রাত সাড়ে দশটা বাজে, এতো রাতে কোথায় যাবে?"
নিতু হেসে বলে, "তোমার বিছানায়।"
নিতুর কথায় গোফরানের মনটা চনমন করে উঠে। আহা! কতদিন নিতু ওর সাথে এভাবে কথা বলেনি। সে বিছানা থেকে উঠে এসে নিতুর কাঁধ স্পর্শ করে পেছনে দাঁড়ায়। নিতু নিজের শরীরটা হেলিয়ে দেয় গোফরানের শরীরে।
শেষ ..................
২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৫৭
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ফরাসি এক লেখকের গল্প পড়ে ক্লাসিক লিখলাম৷ সবার বুঝবে না। মাথার উপর দিয়ে যাবে।
২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:২২
রানার ব্লগ বলেছেন: গোফরান ভাই তলে তলে এই ??!!!!
২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৫৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: গোরফান ভাই! চিনেন নাকি, হায় হায়
৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো লাগলো।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:০১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: জ্বি ভাই মাথার সাইড দিয়ে যাবে। ফরাসি ক্লাসিক গল্প অনুসারে যাকে কেন্দ্র করে গল্প তার নাম ধাম উহ্য রেখেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। +