নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
এ গল্পের নায়ক একজন সিরিয়াল কিলার , যে কিনা অন্যের জন্য খুন করে ।
জোবাইদা গুলশান আরা বেগম । বয়স ৫৯ । মাঝারি আকৃতির স্বাস্থ্যবান মহিলা । ফ্লাটে ঢুকে তাকে বশে আনতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি । ম্যাডাম, আমি মারুফ "স্যার অফিস থেকে পাঠিয়েছেন । দলিল-দস্তাবেজ এ আপনার স্বাক্ষর লাগবে । " কথাটা বলার পর আর বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে হয়নি । তিনি নিজেই দরজা খুলে দিয়ে বলেছেন, "ভেতরে এসো ।" আমি ভেতরে প্রবেশ করলে, তিনি দরজা বন্ধ করে আবার বললেন, এসো আমার সাথে । তারপর ভেতরে হেটে গেলেন । আমি ওনার পেছন পেছন লম্বা করিডোর ধরে হাটতে লাগলাম।
দামি মার্বেল পাথরের মেঝে । চারপাশে দেশি বিদেশি দামি দামি সব আসবাবপত্র । দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে, নামি দামি দেশি বিদেশি পেইন্টিং । দেখে মনে হয়, কয়েক কোটি টাকার সম্পদ চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । আমাকে নিয়ে করিডোরের শেষ মাথায় ড্রয়িং রুম ঢুকে বাতি জ্বালিয়ে বললেন," তুমি বসো। আমি চশমা নিয়ে আসছি ।" আমি সুবোধ বালকের মতো মাথা নেড়ে সায় দিলাম । তিনি ভেতরে চলে গেলেন ।
নরম কার্পেটে হেটে দেয়াল ঘেঁষে গদি ওয়ালা একটা সিঙ্গেল সোফায় আরাম করে বসলাম । মনে হলো দূর্বাঘাসে পুরো শরীর ডুবে গেলো । টাকা পয়সা হলে মানুষ শুধু আরাম খোঁজে । বড় লোকের আরাম সহজে মেলে না । তাই সব কিছুতে বিস্তর অর্থ খরচ হয় । তারা অর্থ দিয়েই সুখ, আরাম খোঁজার নিরন্তন চেষ্টা চেষ্টা ফিকির চালিয়ে যায় ।
ঘরের প্রতিটি জিনিষ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম । এতো দামি দামি জিনিস আমি আগে কখনো দেখি নাই । সর্বত্র রুচির ছোঁয়া । শুধু টাকা থাকলে হয় না সাথে রুচিও থাকতে হয় । রুমের এক অংশ জুড়ে মোটা পর্দা দেওয়া । তার ঠিক মাঝখানে দামী সেগুন কাঠের উপর কারুকার্য করা দরজা । বোঝা যাচ্ছে, ওটা বারান্দায় যাবার যায়। দরজাটা বন্ধ । বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকালে হয়তো কুদরত কে দেখা যাবে । কুদরত 'কে বাড়ির নিচে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি । বলা আছে, রিং দিলেই যেন এক মুহূর্ত দেরি না করে উপরে চলে আসে।
কুদরত পুরাণ ঢাকার দাগি আসামী । পেশায় ডোম ছিলো । ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে বছর দশেক কাজ করেছে । অর্গান চুরির অপরাধে ধরা পরে চাকরি হারিয়েছে । এছাড়াও সে নেক্রোফিলিয়া নামক ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত । চাকরী হারাবার সেটাই মূল কারণ । এখন ভাড়াটে খুনি হিসাবে কাজ করে। কাজ না থাকলে মাজারে মাজারে ঘুরে । সুযোগ পেলে চুরি, ছিনতাই করে। মাদকাসক্ত । শ টাকার বিনিময় ওকে দিয়ে যে কোন কাজ করানো যায় । আমার সাথে পরিচয় বছর পাঁচেক । রমনা পার্কে, বাবার মাজারে ।
আমার মতো কুদরত ও মাজারে নিয়মিত যাতায়াত করে । দেখতে লিকলিকে, হালকা পাতলা । মুখে খোচাখোচা কাঁচাপাকা দাড়ি । ওর মুখের দিকে তাকালে অকারণেই শরীর রি রি করে উঠে । পুরো শরীর ত্রিশ কেজি গোস্ত আছে বলে মনে হয় না । তবুও খুব কাবিল লোক এই কুদরত। নিপুণ দক্ষতায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে যে কোন সাইজের একজন মানুষকে কেটে কুটে প্যাকেট করে ফেলতে পারে।
আজকের মিশনে কুদরত'কে শেষ মুর্হুতে যোগ করেছি । ও এখনো জানে না ওকে কেন নিয়ে এসেছি । একটা কাজ আছে বলে সাথে করে এনেছি। দরকার হলে কাজে লাগাবো না । না লাগলে নীল ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ভরপেট খাইয়ে একশ'টা টাকা হাতে দিয়ে বিদায় করবো ।
শেষ মুর্হুতে কুদরতকে এড করায় কাজের রিস্কটা বেড়ে গেছে । এই ধরনের কাজ একা করা ভালো । দু'জন হলে ধরা পরার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । প্রথমে প্লান ছিলো বার্থটাবে ডুবিয়ে মারার । মহিলাকে দেখার পর প্লানে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে । এতো বড় শরীরটাকে বাথটাবে ডোবানো সহজ হবে না। ছুরি ব্যবহার করতে হবে । তাতে রক্তারক্তির বিষয় আছে । ঘরের এতো দামি জিনিস পত্রগুলো নষ্ট করতে মন চাইছে না । এছাড়া রক্তারক্তি হলে ,ক্লু থেকে যায় । ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে । কাজ শেষ করে চলে যাবার আগে পুরো ঘটনাটার ডাকাতির রুপ দিতে হবে । ড্রয়িং রুম, বেড রুম এলোমেলো করে টুকটাক দামি জিনিসপত্র সাথে করে নিয়ে যেতে হবে । কাজটা করবে কুদরত । তাতেও রিক্স বেড়ে যাবে ।
সবকিছু বিবেচনায় এখন মনে হচ্ছে রিক্স অনুযায়ী কাজের পারিশ্রমিক কম হয়ে গেছে । মন্জু সাহেবের সাথে এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না । কাজের দরদাম ঠিক হয়ে যাবার পরে সেটা নিয়ে ক্যাচাল করলে আন্ডার ওয়ান্ডে ইজ্জত থাকে না ।
টি টেবিলের উপর তিনটে দৈনিক পত্রিকা রাখা । শেয়ার বাজার, রিজার্ভ চুরি । আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন । সবগুলোতে একই ধরনের নিউজ । একটা পত্রিকা টেনে ভেতরের পেইজ খুলে চোখ বুলাতে লাগলাম । খবরের কাগজের আসল মজা থাকে ভেতরের পেইজে । এক কোণের ছোট একটা নিউজে চোখে আটকে গেলো। "।টেকনাফ উপজেলায় চেয়ারম্যান ভাই কর্তৃক শিশু ধর্ষণ। মামলা করায় পরিবার গ্রাম ছাড়া । " নিউজটা পড়ে শরীরের মধ্যে কয়েক মুহূর্তের জন্য বিদ্যুৎ খেলে গেলো। খুনের নেশায় হাতের আঙুলগুলো কিলবিল করে উঠলো ।
অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে । পেপারটা ভাজ করে পাশের টেবিলে রেখে সাথে করে আনা ট্রাভেল ব্যাগটা টি টেবিলের উপর রেখে একটানে চেনটা খুলে ফেললাম । কাগজপত্রের উপর রাখা হান্ড গ্লাভস দুটো বের হয়ে এলো । সেগুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে । কাগজপত্রের নিচে রাখা কাপড়ের ব্যাগের ভেতরে ছুরিগুলো দেখে নিলাম।। সিজার টুলস । অপারেশন টেবিলে ডাক্তার, মর্গে ডোমেরা এসব ব্যবহার করে । দারুণ জিনিস। ঠিক মতো বসিয়ে দিতে পারলে , বেশি জোরাজুরি করতে হয় না । মুহূর্তের মধ্যে ফালাফালা করে ফেলে । কুদরত ছয়টা ছুরির পুরো সেটটা মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে এনে দিয়েছে ।
ব্যাগটা আবার লাগাবার জন্য চেন টানতেই পায়ের শব্দে মাথা তুলে তাকালাম । একটি ট্রলিতে টি পট , দু'টো কাপ পিরিজ । কোয়াটার সাইজের একটা প্লেটে কয়েটা বিস্কিট আর এক গ্লাস পানি রাখা । মহিলা ট্রলিটা ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছেন । আমি দ্রুত উঠে দাড়িয়ে বললাম , আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন ? আমি কিছু খাবো না ।
উনি আমার কথায় কর্ণপাত না করে ট্রলিটা টি টেবিলের সামনে এনে রেখে ওপর পাশের সোফায় আমার মুখোমুখি বসতে বসতে বললেন ,"আমারও চা খাওয়া হয়নি । তুমি নাও, আমি ও খাবো ।" তারপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এতো ঘামছো কেন ? দাড়াও এসি বাড়িয়ে দেই বলে রিমোটের খোজে এগিক ওদিক তাকালেন ।
আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, লাগবে না ম্যাম। লাগবে না । মহিলা সে কথা শুনলেন না । নিজের ভারি শরীরটা টেনে নিয়ে টিভির সামনে রাখা সোফার উপর থেকে রিমোট এনে এসি বাড়িয়ে দিলেন । তারপর টি পট থেকে কাপে চা ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, নাও । তারপর নিজের কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললেন, আমি ভালো চা বানাতে পারি না। প্রতিবার পাতার হেরফের হয়ে যায় । যখন কড়া চা বানাতে চাই তখন দেখা যায় পাতলা হয়ে যায় । আবার যখন পাতলা বানাতে চাই তখন উল্টোটা হয়ে যায় । নাও , খেয়ে দেখো ক্যামন হয়েছে ।
আমি হাত বাড়িয়ে কাপটা নিলাম । মহিলা এবার চামচ দিয়ে নিজের কাপ'টা নাড়া দিতে দিতে বললেন, "তোমাকে তো আগে দেখি নাই । তুমি কবে জয়েন করেছো ?"
আমি মৃদু কণ্ঠে বললাম, "জি ম্যাডাম আমি ল ফার্ম থেকে এসেছি । নতুন প্রযেক্টের জায়গার দলিলে আপনার স্বাক্ষর লাগবে ।" উত্তরটা আগেই তৈরি করে ছিলো এখন শুধু ডেলিভারি দিলাম ।
এবার তিনি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে সোফায় সোজা হয়ে বসতে বসতে বললেন, "কোন প্রজেক্ট ?"
আমি বললাম, "দিয়াবাড়ি। "
ও আচ্ছা বলে তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিলেন । তারপর জিহবা ঠোটের সংযোগে শিশুদের মতো চুকচাক শব্দ করে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, বাহ্ ! চা তো বেশ হয়েছে ।
কই তুমি তো বললে না কিছু, চা ক্যামন হয়েছে ?
আমি হাসি হাসি মুখ করে চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললাম, বেশ হয়েছে।
মনে মনে ভাবছি হিসাব নিকাশ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে । কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না । কাজের শুরুটাই আসল । শুরু হলে আপনেই শেষ হয়ে যায় ।
আমি কাপটা টেবিলে রেখে । ব্যাগটা টেনে কোলে উপর তুলে নিয়ে সেটা খোলার জন্য চেনে হাত রাখতেই তিনি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, আরে আগে চা টা শেষ করো । বিস্কুট তো নিলে না । নাও, নাও একটা বিস্কুট খাও । বলে বিস্কুটের প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন ।
আমি ব্যাগটা বন্ধ করে একটা বিস্কুট তুলে নিলাম । তারপর বিস্কুট চিবোতে চিবোতে শব্দ করে হেসে উঠলাম । হাসির শব্দে জোবাইদা গুলশান আরা বেগম ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন । তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে , হাসছো কেন ?
আমি বিস্কুটের শেষ অংশটা মুখে পুরে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললাম, "ম্যাডাম, আমি আপনাকে হত্যা করতে এসেছি ।"
আমার কথা যেন তিনি বুঝতে পারলেন না । ভ্র কুচকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ; কি বললে তুমি ?
আমি আবারো বিনয়ের সাথে বললাম,"ম্যাডাম, আমি আপনাকে হত্যা করতে এসেছি ।"
আমার কথার মানে বুঝতে পারার পর বিস্ময়ে মহিলার চোখ দু'টো প্রথমে ছোট হতে হতে বড় হয়ে গেলো । চায়ের কাপটা ধীরে ধীরে টেবিলের উপর নামিয়ে রাখতে রাখতে, তিনি বললেন , কি বলছো এসব ? একথাটা এমন ভাবে বললেন, যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না ।
আমি চায়ের কাপে শেষ চুমুকটুকু দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললাম, "ইয়েস ম্যাডাম, আমি আপনাকে খুন করতে এসেছি।" তিনি দ্রুত কিছু ভেবে নিয়ে বললেন, মন্জু, মন্জু , তাই না ?
আমি হেসে বললাম, হতে পারে; আবার নাও হতে পারে।
আমার কথা উনি শুনতে পেলেন কিনা বুঝতে পারলাম না । কাপা কাপা কণ্ঠে আপন মনেই বলে উঠলেন, "এই ধরনের জঘন্য কাজ ওই অসভ্যটা ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে সম্ভব নয় ।" তারপর আহত জন্তুর মতো হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন, কত,কত টাকা দিবে ও তোমাকে, আমাকে মারার জন্য ? কত টাকা আছে ওর ? এখনো সবকিছু আমার নামে । আমি, আমি তোমাকে তিন গুন বেশি টাকা দিবো । কি, করি নাই আমি ওই ইবলিসটার জন্য ? গ্রাম থেকে ভেসে আসা সামান্য একটা লজিং মাস্টার ছিলো । মা, বাবার অমতে বিয়ে করেছি । সমাজে প্রতিষ্টা করেছি । ২য় বিয়ে করেছে , সেটাও মেনে নিয়েছে । একটা মানুষ কতোটা অকৃতজ্ঞ, কতোটা অমানুষ হলে এতোটা নিচে নামতে পারে বলতে পারো ?
মহিলা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন । তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, জীবনে যাকে বিশ্বাস করেছি তার কাছেই ঠকেছি । দরজা খুলে তোমার শুকনো মুখটা দেখে নিজের ছোট ভাইয়ের কথা মনে হয়েছে । সাথে সাথে বিশ্বাস করেছি । দরজা থেকে বিদায় না করে ড্রয়িং রুমে এনে বসিয়েছি । নিজ হাতে চা বানিয়ে এনেছি । এখানেও ঠকেছি । একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবার তিনি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "ঠিক আছে; মেরে ফেলো,মেরে ফেলো আমায় । আমার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই । যথেষ্ট হয়েছে, আর নয় । এ পৃথিবীটা আমার মতো মানুষের জন্য নয়।"
কি করবো দ্বিধায় পরে গেলাম । খুনীদের নির্দয় হতে হয় । তাদের মধ্যে ভাব, ভালোবাসা, আবেগ, প্রেম এসব থাকতে নেই । কিন্তু আমি এখনো এসব থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি । নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে । আমার উচিত ছুরিটা বের করে মহিলার বুকের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া । সেটা না করে আমি তারপর বকবক শুনছি । প্যান প্যানানিতে ভেতরে ভেতরে মর্মাহত হচ্ছি । কি সব ভাবছি এসব । অথচ যতো দ্রুত সম্ভব কাজটা শেষ করে এখান থেকে কেটে পরা উচিত ।
আমাকে নিশ্চল হয়ে বসে থাকতে দেখে মহিলা ওড়না দিয়ে চোখের পানি, মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "দেখো, আমি তোমার নাম জানি না । কোনদিন দেখিও নাই । তবুও আজ মৃত্যুর আগে তোমাকে একটা অনুরোধ করবো , তুমি রাখবে আমার অনুরোধ ?
আমি অস্ফুট স্বরে বললাম, কী ?
তিনি আবার মুখ মুছে বললেন, আমার পরে তুমি ওই হারামজাদাটাকে খুন করবে । আমাকে হত্যার জন্য ও যেমন তোমাকে ঠিক করেছে, ওকে হত্যার জন্য আমি তোমাকে ঠিক করলাম । বলো কত টাকা চাও ? আমি কিছু বলার আগেই ভদ্র মহিলা চট করে উঠে দাড়িয়ে আচানক আমার হাত চেপে ধরলেন । আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে সরে যেতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু পারলাম না ।
মৃত্যুর আগে মানুষের শরীরে অসম্ভব শক্তি ভর করে । বুকের ভেতরটা ধুক ধুক করে উঠলো । এই রে ভুল করে ফেলেছি মনে হয় । এতোটা সময় নেওয়া ঠিক হয়নি । কয়েকবার হাতটা ছাড়াবার জন্য ঝাড়া দিতেই , মহিলা বললেন, ভয় পেও না । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । এসো আমার সাথে । কথাটা বলে আমাকে আর এক মুর্হুত সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে বিশাল বড় একটা বেড রুমে নিয়ে এলেন । তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানার পাশে রাখা আলমারি খুলে ফেলে সেখান থেকে একের পর এক গহনার বাক্স বের করে বিছানার উপর ছুরে ফেলতে ফেলতে বললেন, এই নাও,সব নিয়ে যাও । এসবের আর কোন দরকার নেই আমার । তারপর আলমারির নিচ থেকে একটা মাঝারি আকৃতির টুরিস্ট ব্যাগ বের করে বিছানার উপর রেখে এক টানে সেটার চেন খুলে ফেলে বললেন, "এতে পুরো পঞ্চাশ লাখ আছে । এটাও নাও । আমাকে মারার পর এটাও নিয়ে যাও । শুধু একটাই অনুরোধ ওই অমানুষটাকে ছেড়ে দিও না ।"
ব্যাগের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,পুরো ব্যাগ ভর্তি শুধু টাকা আর টাকা। এতো টাকা জীবনে কোনদিন দেখবো তা কল্পনা্য়ও ভাবিনি । লোভ এক বিচিত্র জিনিস । সে, যখন তখন, যাকে তাকে আক্রমণ করে কাবু করে ফেলে । আমিও কাবু হয়ে গেলাম।
সন্ধ্যায় মতিঝিল অফিস পাড়ায় মঞ্জু সাহেবের অফিসের গাড়ির গ্যারাজে মঞ্জু সাহেবকে খুন করে ফেললাম । তারপর রাতের বাসে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । কি আশ্চর্য! জীবনের ২য় খুনটা করার পরেও তিথির মামাকে খুন করার মতো বিন্দু মাত্র আফসোস বা অনুশোচনা হলো না আমার। উল্টো ভেতরে ভেতরে এক ধরনের বিচিত্র আনন্দ অনুভব করতে লাগলাম । মনে হলো , আরো একটা দায়মুক্তি ঘটলো।
১০।০৭।২০২৩
সাখাওয়াত বাবন
১০ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:০১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ৷। এই গল্পের নায়ক একজন সিরিয়াল কিলার যে কিনা অন্যের জন্য খুন করে ৷ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১১ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:০৫
মোঃ মোক্তার হাসান সবুজ বলেছেন: এই ধরনের ছোট গল্প আমার দারুণ লাগে।ভবিষ্যত্বে আরও চাই।
১১ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:২৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: এসব লেখার পাঠক নাই । রহস্যজনক করণে সবাই এড়িয়ে যায় । হয় ভয়ে নয়তো হিংসায়
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: খুন করাও কারো না কারো পেশা!! কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার।
১১ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:২৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।
৪| ১১ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভালো লেগেছে ভাই যদিও খুনোখুনি রক্ত আমার পছন্দ না।
১১ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:০৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আমার এ গল্পের নায়ক একজন সিরিয়াল কিলার । তবে সে অন্যের জন্য খুন করে । আইন শৃঙ্খলার ভীত যখন নড়বড়ে হয়ে যায় কিছু কিছু মানুষ তখন শাস্তি দেবার দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেয় । আমাদের নায়কের গন্তব্য এখন টেকনাফ - টার্গেট ধর্ষক চেয়ারম্যানের ভাই । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই । ভাল থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩
করুণাধারা বলেছেন: কি ভয়ংকর গল্প! খুনাখুনি আপনার প্রিয় বিষয়?