নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
করোনা মহামারীর পর সরকারী কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হুটহাট বদলির ঘটনা ঘটছে । দু, তিন বছর ধরে একটা অচেনা অজানা জায়গার, অচেনা পরিবেশ, লোকজনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে ঘাট গেড়ে বসে, একটু থিতু হবার পর হুট হাট এই বদলি অনেকেই সহজ ভাবে নিতে পারে না । নতুন জায়গা মানেই নতুন নতুন ঝক্কি ঝামেলা । এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে সবসময় এক ধরনের চাপা আতংক কাজ করে। কখন যে কাকে,কোথায় বদলি হয়ে চলে যেতে হয় তার কিছুই বলা যায় না ।
গতমাসে দু'জন গিয়ে তিন জন এসেছেন । ছোট্ট কলেজটিতে এখন সর্বমোট শিক্ষকের সংখ্যা ২৩ জন। তন্ময়ের বদলির ব্যাপারেও বাতাসে একটা গুঞ্জন ছিলো । আজ কলেজে আসার পর প্রিন্সিপাল স্যার ডেকে নিয়ে হাতে বদলি অর্ডারটা ধরিয়ে দিলেন । খাম খুলে এক পাতার চিঠিটাতে চোখ বুলিয়ে, প্রিন্সিপ্যাল স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে থম মেরে বসে রইলো তন্ময় চক্রবর্তী। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ।
কলেজ প্রিন্সিপাল শ্যামল মিত্র । পরিবেশ হালকা করার জন্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললেন, "বুঝেছ, তন্ময়, তোমাদের মতো বয়স থাকতে, আমি কিন্তু বদলি অর্ডার হাতে নিয়ে এভাবে মুচড়ে পড়তাম না । নতুন জায়গা, নতুন নতুন সব মানুষ , নতুন নতুন ছাত্রছাত্রীদের সাথে মেশার নেশায় আমার মনটা সব সময় চনমন চনমন করতো । তাই, বছর দুয়েক পর পর বদলির অর্ডার না পেলে ভালোই লাগতো না ।
এ টুকু বলে, তন্ময়কে একবার দেখে নিয়ে, পাশের টেবিলে রাখা পানের কৌট থেকে একটা সুপড়ি তুলে নিয়ে মুখে পুরে দিয়ে আবার বললেন, তোমার তো একটা ঐতিহ্যবাহী কলেজে বদলি হয়েছে । কত বড় ক্যাম্পাস । কত ছাত্রছাত্রী । যাও যাও খুশি মনে চলে যাও । চাকরি করতে হলে এসবে মন খারাপ করতে হয় না । তোমার এসিআর ভালো । সামনে প্রমোশন পেয়ে হয়তো আবার ফিরে আসবে । তা, জয়েনিং ডেট কবে ?
তন্ময় চিঠিটা স্যারের দিকে এগিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো । চিঠি হাতে নিয়ে তাতে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিয়ে শ্যামল মিত্র বলে উঠলেন, ওমা আগামী শনিবার যে জয়েন করতে হবে । আজ হচ্ছে বৃহস্প্রতিবার । হাতে তো দেখছি একদম সময় নেই । শনিবার জয়েন করতে হলে আজ রাতেই রওনা দিতে হবে । এদের কাজ দেখেছো ? কয়েকটা দিন সময় পর্যন্ত দিতে চায় না ।আরে বাবা, মানুষ তো আর জন্তু জানোয়ার নয় যে,চাইলেই হুট করে কোথাও চলে যেতে পারে । তারপর দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন, আজ আর তোমার ক্লাসে যেতে হবে না। তুমি বাসায় গিয়ে গোছগাছ শুরু করো । আমি তিনটায় তোমার ফেয়ারওয়েলের ব্যবস্থা করছি ।
মফস্বল কলেজগুলোতে ফেয়ারওয়েল মানে হচ্ছে, প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে সকল শিক্ষক শিক্ষিকারা এক সাথে বসে কিছুক্ষণ স্মৃতি চারণ করে শেষমেশ চা, সিঙ্গারা খেয়ে বিদায় নেওয়া । সরকারী সহকর্মীদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু কেউ কখনো আশা করে না । কর্ম ক্ষেত্রের এই শেষ মিলন মেলাকেই জীবন চলার পথের পাথেয় মনে করে খুশি চিত্তে সকলে রওনা দেয় নতুন গন্তব্যে ।
প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বের হয়ে কলেজ মাঠের পাশে দিয়ে চলে যাওয়া লম্বা করিডোর ধরে হাটতে হাটতে তন্ময় পরম মমতায় চারপাশের পরিবেশের উপর চোখ বুলায়। এতোদিন ধরে থাকতে থাকতে ক্যামন একটা মায়া জন্ম গেছে। আজ সব ছেড়ে চলে যাবার দিনে মনে হচ্ছে, এতো কাছাকাছি থাকার পরেও কোন কিছুই যেন প্রাণ ভরে দেখা হয়নি । কাঠ তক্তার বেড়া দেওয়া ক্লাস রুম, জং ধরা টিনের চাল । কর্দমাক্ত মাঠ । মাঠের অদূরে একে বেকে বয়ে যাওয়া বুড়ি'র খাল। তার পাশ ছুঁয়ে দাড়িয়ে থাকা সুপরি, তাল গাছ ,গুম্ললতার ঝোপ সমেত সবকিছু যেন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্ময়ের দিকে।
হাটতে হাটতে মাঠের মাঝখানে এসে ঘুরে তাকায় সে ক্লাসরুমগুলোর দিকে । পতাকা স্ট্যান্ডে জাতিয় পতাকাটি অবিরাম বয়ে চলা শ্রাবণ শেষের পবনে পতপত করে উড়ছে । সুনীল শান্ত আকাশের নীচে মেঘের ছায়ায় দাড়িয়ে তন্ময়ের শরীর অদ্ভুত এক অনুভূতিতে তিরতির করে কাপতে লাগলো। বিদায় ক্ষণের শেষ মুহূর্তে তন্ময় বড্ড বেশি আবেগ প্রবণ হয়ে পরে । কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সব কিছুর জন্য মন পোড়াতে থাকে।
এতো প্রেম, এতো ভালবাসা এতদিন কোথায় ছিলো । দমকা হাওয়ার মতো হুট করে আসা একটি মাত্র কাগজের টুকরো সবকিছু এক মুহূর্তে এলোমেলো করে দিয়ে গেলো । শিশুদের মতো কান্না পেয়ে যায় তন্ময়ের । পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে সে এসে বসে বুড়ি'র খালের কাছে কালি মন্দিরের পাশে ছাতিম গাছের তলায় বাঁধানো বেদিতে । রোদে পুড়ে, জলে ভিজে বেদির এখানে ওখানে অনেকটা অংশ ক্ষয়ে,ধ্বসে গেলেও পরম যত্নে ছাতিম গাছটিকে বুকের মাধ্যিখানে আগলে রেখেছে ।
শান্ত নির্মল পরিবেশ । ছেলে মেয়েরা সব ক্লাসে থাকায় চারপাশ এক প্রকার বিরান ভূমি হয়ে আছে । সকলের পদচারণয় মুখোর প্রাঙ্গণ নীরব নিথর হয়ে আছে । দু'একটা অচেনা পাখির কিচিরমিচির শব্দে তন্ময় মাথা উঠিয়ে তাকায় বিশাল ছাতেমির পত্র পল্লবের শাখায় শাখায় । পড়ন্তু দুপুরের রক্তির সূর্যের আলো ঝিলিক খেলে যায় । সেই সাথে খালের অপর পাশ থেকে বয়ে আসা মৃদু হাওয়ায় তন্ময়ের শরীরে ভেঙ্গে আসে । পকেট থেকে রুমাল বের করে সেটা মাথার কাছে বিছিয়ে তাতে মাথা রেখে শুয়ে পরে ও ।
ছাতিমের পল্লবের ফাক গলে নেমে আসা সূর্য কিরণের নাচন দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমে চোখ বুঝে আসে বুঝতে পারে না সে । নিজেকে ছাতিম দেবীর চরণে অর্পণ করে নিবিঘ্নে ঢুবে যায় সে ঘুমের অতলে ।
তন্ময়ের চোখ লেগে আসতেই ছাতিমের গায় বেয়ে নেমে আসে রাজশাহী অঞ্চলের মূর্তিমান আতঙ্ক কুচকুচে কালো শরীরের হলদেটে পেটের হাত দশেক লম্বা এক শঙ্খচূড় । ছাতিম গাছ থেকে নেমে সে নিরবে এগিয়ে যায় ঘুমন্ত তন্ময়ের শরীর ঘেষে কালি মন্দিরের দিকে ।
জীবন মৃত্যুর এমন নিবিড় সহাবস্থান দেখেনি পৃথিবীর কেউ আর । এক চুল এদিক ওদিক হলেই জীবন হেরে গিয়ে মৃত্যুর গলায় পরিয়ে দেবে বিজয়ের মালা । বিধাতার পুরুষ দূরে দাড়িয়ে মুচকি হাসেন । হঠাৎ খালের জলে শব্দ উঠলে কেপে উঠে শঙ্খচূড়,তন্ময়সমেত বিশ্বচরাচর।
বাবন
১৯.০৭.২০২৩
২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:৪২
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সাপ ভয় পাবার জন্যই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে । সাপ নয় গল্প নিয়ে কথা বলুন ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টের সাথে যে ছবিটা দিয়েছেন। সেটা ভয়াবহ। আমি সাপ খুব ভয় পাই।