নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
এক
বয়স্ক মানুষের শুষ্ক চামড়ার মতো কুচকে যাওয়া কাঠের দরজার আংটায় ঝুলতে থাকা মস্ত তালাটা খুলতে খুলতে লোকটা বলল, বাবু, আমার নাম মকবুল। আমি এ কলেজে নৈশ প্রহরীর কাজ করি । সকালে শান্তনু স্যার বলেছিলেন, আজ আপনি আসবেন। দুপুরে কলেজ ছুটির পর তাই, আমি আর নরেন দা মিলে আপনার থাকার ঘরটা কোনরকম ঝাড়পোছ করে রেখেছি। রাতটা কোনভাবে কাটিয়ে দিন, কাল একেবারে ঝকঝকে পরিষ্কার করে দেবো ।
সন্ধ্যার আধো আলো, আধো অন্ধকারে আগাগোড়া কালো বর্ষাতিতে মোড়ানো দীর্ঘাকৃতির স্বাস্থ্যবান মকবুলকে দানবের মতো দেখালেও তন্ময়ের কাছে তাকে পরম আপন বলে মনে হয় । জগত সংসারে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে স্বার্থক মনে করে । মকবুল তাদের মধ্যে একজন ।
বৃষ্টি স্নাত এই সন্ধ্যায় তন্ময়ের প্রতি তার আন্তরিকতা যতোটা না কর্তব্যের খাতিরে তার চেয়ে ঢের বেশি মানবতার কারণে । কলেজ গেট থেকে ব্যাগগুলো সে একাই ঘরের দরজা পর্যন্ত বয়ে এসেছে । তন্ময়কে ছুতে পর্যন্ত দেয়নি।
ট্রেন থেকে নেমে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর, একটা গরুর গাড়ি পেয়ে অর্ধেকটা পথ আসতে না আসতেই শুরু হয়েছিল মুষলধারে বৃষ্টি। সে বৃষ্টি এখনো অঝোর ধারায় ঝরছে। ভাগ্যিস গরুর গাড়িটা পাওয়া গিয়েছিলো । তা না হলে যে, কি হতো; সে কথা ভাবতেই তন্ময়ের শরীরে কাটা দিয়ে উঠে ।
কাদা,জল মাড়িয়ে, মাঠ পেরিয়ে পুকুরের পাশ ঘেষে দাড়িয়ে থাকা ইংরেজ আমলে তৈরি পুরাতন বিল্ডিংটায় শিক্ষকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। একতলা, দোতলা মিলিয়ে মোট কুড়িখানা ঘর । যার অধিকাংশ ই খালি পড়ে থাকে। শিক্ষকদের কেউ এখানে থাকেন না। বদলি হয়ে আসার পর এখানে উঠলেও দু’একদিন থাকার পরেই বিচিত্র কারণে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করে নেন ।
থাকা, খাওয়া, পড়াশোনার এতো চমৎকার পরিবেশ থাকার পরেও শিক্ষকদের এখানে না থাকাটা একটা রহস্য । এ নিয়ে এক সময় বিস্তর কানাঘুষা থাকলেও এখন আর কেউ রাখ ঢাক না করে, মুখে যা আসে তাই বলে বেড়ায়। মফস্বল শহরগুলোতে পুরাতন স্থাপনা নিয়ে এমন অনেক গল্প অহরহ শোনা যায় ।
একতলার সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতালায় উঠে লম্বা করিডোরের শেষ মাথায় একটা তালাবন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে মকবুল। তারপর পকেট হতে চাবি বের করতে করতে বলে, বাবু; এটাই আপনার থাকার জায়গা। তারপর কিছুক্ষণ তালা খোলার কসরত করে সেটা খুলে ফেলে একটা ধাক্কা দিয়ে বন্ধ দরজার পাল্লা দু'টো দু দিকে সরিয়ে দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পরে ঘরের ভেতর।
মকবুল ঘরের ভেতর ঢুকে যাওয়ায় হুট করেই করিডোরটা অতিমার্ত্রায় নির্জণ হয়ে যায়। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার । কিছুই দৃষ্টিগোচড় হয় না । তবুও সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে। বারান্দার পরে খোলা প্রান্তরে অঝর ধারায় বৃষ্টি পরছে । শূণ্য করিডোরের দিকে তাকাতেই অজানা কারণে শরীরটা শিরশির করে উঠে। কি করবে বুঝতে না পেরে শেষমেশ ঘরের ভেতর ঢুকে পরে। ঘরের ভেতরে আরো বেশি অন্ধকার যেন ওৎ পেতে ছিলো। সে ঘরের ভেতর পা রাখতেই একরাশ অন্ধকারে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে ।
তন্ময় ঘরের ভেতরে ঢুকছে বুঝতে পেরে ভেতর থেকে মকবুল বলে উঠলো, দাঁড়ান স্যার, দাঁড়ান ........। এখুনি বাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছি । তন্ময় কিছু না বলে দু পকেটে হাত ঢুকিয়ে ঠায় দাড়িয়ে রইলো। অনতিদূর অন্ধকারে খচরমচর শব্দ করে কিছু একটা হাতড়ে বেড়াচ্ছে মকবুল। খুব সম্ভব দিয়াশলাই খুঁজছে সে।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একসময় তন্ময়ের কাছে মনে হয়, অনাদি অনন্তকাল ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন কোন গুহার অভ্যন্তরে। বহুদূর থেকে ভেসে আসছে বৃষ্টির শব্দ। সে শব্দ নর্তকীর পায়ের নূপুরের ছন্দের মতো রুমঝুম, রুমঝুম, ঝুমঝুম শব্দ করে বাজছে । সেই সাথে ঢাক-চাকির শব্দে উত্তাল নৃত্য করে বেড়াচ্ছে কারো অভিশাপে গুহার অভ্যন্তরে আটকে পরা শত সহস্র প্রেতাত্মার দল।
ঠিক সে সময় খুব ক্ষীণ স্বরে কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়...... তন্ময়.......এই... তন্ময়...।
ব্যাপারটা এতো আচানক ঘটে যে,পুরো শরীর কেপে উঠে তন্ময়ের। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘাড়ের পেছনে কারো শ্বাস প্রশ্বাস ফেলার স্পষ্ট শব্দে চমকে উঠে তড়িৎ পেছন ঘুরে, ভয়ার্ত স্বরে চিৎকার করে উঠে .... কে.....কে ......?
হঠাৎ প্রচন্ড ভয়ে শরীরে তীব্র একটা ঝাকুনি লাগে । বুকের ভেতর হৃদপিন্ডডা ধুকধুক করে লাফাতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় সে ।
তন্ময়ের চিৎকারে মকবুল আঁতকে ওঠে জিজ্ঞাসা করে, কি হলো, কি হলো বাবু ? তার কন্ঠে শুনে বোঝা যায় তন্ময়ের চিৎকারে সে ভয় পেয়েছে ।
দরজা দিয়ে আবছা আলো এসে ঢুকছে ঘরের ভেতর তার ম্রিয়মাণ আলোয় ভীত সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে দরজার বাহিরে তাকিয়ে থাকে তন্ময়। কিছু দেখতে না পেলেও ক্ষণিকের জন্য মনে হয়, অস্পষ্ট একটা অবয়ব মুর্হুতের জন্য দেখা দিয়ে চট করে মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে।
ব্যাপারটা যে দৃষ্টিভ্রম সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগে না। হঠাৎ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে তাকালে এমনটা হতে পারে । পুরোটাই বিজ্ঞান । দৃষ্টিভ্রম, বলে নিজেকে শান্তনা দেয় সে ।
মকবুল তখনো জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে , কি হলো বাবু ? ভয় পেয়েছেন কেনে ? ভয় পেয়েছেন কেনে ?
তন্ময় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কিছু হয়নি । তারপর পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য কন্ঠে কৃত্রিম বিরক্তি ভাব জাগিয়ে তুলে বলে উঠলো , তোমার হলো ? আর কতক্ষন অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে রাখবে বাপু ?
সঙ্গে সঙ্গে মকবুল বলে উঠলো, আর একটু বাবু, আর একটু ...........।
তারপর বিরক্তি নিয়ে আবার বলল, দিয়াশলাই'টা যে নরেন দা কোথায় রেখে গেছে । সেটা খুঁজে পাচ্ছি না ৷ তা না হলে কি এতো সময় লাগে ? ব্যাটা'কে কত করে বলে রেখেছি দিয়াশলাইটা সবসময় টেবিলের উপর রাখতে।কিন্তু কে শুনে কার কথা ।
এবার তন্ময় টেবিলের ড্রয়ার খোলার শব্দ শুনতে পেলো। এবং কয়েক সেকেন্ড পরেই দিয়াশলাইয়ের বাক্স ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে, মকবুল চিৎকার করে উঠলো ..... পেয়েছি বাবু, পেয়েছি।
তন্ময় কিছু বলে আগেই, ফস করে শব্দ করে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বলে উঠে পুরো ঘর আলোকিত করে তুলল।
দুই
লন্ঠন জ্বালিয়ে সেটা দেয়ালের তাকের উপর রাখতে রাখতে হাতের ডান দিকের একটা বদ্ধ দরজা দেখিয়ে মকবুল বলল, বাবু ওটা বাথরুম । পানি তোলা আছে । আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন । আমি যাই; দেখি, আপনার রাতের খাবারের কোন ব্যবস্থা করতে পারি কিনা ।
তন্ময় মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে ।
মকবুল দরজার কাছে গিয়ে কি মনে করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, বাবু একটা কথা ।
তন্ময় অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, আবার কি ?
রাতে একা ঘরের বাহিরে যাবেন না ।
কেন ? কপাল কুচকে প্রশ্ন করলো তন্ময় ।
মকবুল একটু আমতা আমতা করে বলল, না, মানে , নতুন জায়গা । কত কিছু আছে । দু'চারটা দিন যাক, তারপর না হয় যাবেন ।
তন্ময় মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে ।
মকবুল আর কিছু বলে না ঘর থেকে বের হয়ে গেলো ।
মকবুল চলে যেতেই তন্ময় দরজা বন্ধ করে ঘুরে তাকাল ঘরের দিকে । শত বছরের পুরাতন পুরো দেয়াল । দেখেই বোঝা যায় রন্ধে রন্ধে তার লেগে রয়েছে ইতিহাসের ছোয়া। দেয়ালের এখানে ওখানে পেলেস্তার খসে গিয়ে ইট,সুরকি বের হয়ে আছে। মাথার উপর মস্ত ছাদ । তাতে মোটামোটা কাঠের গুড়ির সাথে লোহার ভীম দিয়ে এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত টানা দেওয়া । তাতে ছোপছোপ ঝুল জমে আছে । মেঝের অবস্থাও বেহাল । সমস্ত মেঝ জুড়ে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত হয়ে আছে। দেখে মনে হয়, এ যেন ঘরের মেঝ নয়, হলুদ মরিচ পেসার শীলপাটা ।
ঘরে আসবার বলতে, একটা সিঙেল খাট । একটা আলমিরা আর একটা টেবিল । টেবিলের পাশে একটা পানির কলস রাখা । খাটের পাশের দেয়ালে মাঝারি আকৃতির কাঠের জানালা । সবকিছু দেখে খুব একটা খারাপ লাগলো না তন্ময়ের কাছে। মনে মনে বলল, এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা ভুল ।
দ্রুত ব্যাগ খুলে তোয়ালে বের করে বাথরুমে ঢুকে গেলো তন্ময়। বাথরুমটা কিন্তু ততো পুরাতন নয়। বেশ ঝকঝকে। ফ্রেশ হয়ে এসে, জামা কাপড় পাল্টে ফতুয়া,পাজামা পরে বিছানার চাদর পাল্টে তাতে আরাম করে বসে।
পায়ের পাতার উপড়ের যে অংশটায় শঙ্খচুর ছোবল মেরেছিলো সে জায়গাটা একটু একটু করে ব্যাথা করছে । চিকিৎসক বলেছে, শরীর থেকে বিষ এখনো পুরোপুরি নেমে যায়নি । যে কোন সময় আবার বাড়তে পারে । তাই একটু সাবধানে চলতে হবে । ব্যাথার জায়গাটায় তন্ময় আল্ত করে হাত বুলাতে বুলাতে বিছানায় শুয়ে পড়ল । দীর্ঘ পথ যাত্রায় ক্লান্ত শরীর নরম বিছানার ছোয়ায় ধীরে ধীরে তলিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছে বলতে পারবে না । হঠাৎ ঠক ঠক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তন্ময়ের । চোখ খুলে বুঝতে পারে না কি হয়েছে, কেন ঘুম থেকে জেগে উঠলো। ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ ঘরের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে । জ্বলতে থাকা লণ্ঠনের আলো একটু একটু করে কাপছে । দেখে মনে হচ্ছে, অসংখ্য ছায়ামুতিরা যেন দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের ভেতর ।
দরজায় আবার, ঠক ঠক ঠক ...করে শব্দ হলো ।
এবার সে বুঝতে পারলো, দরজায় কেউ নক করছে ।
ঘুম জড়ানো চোখে বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কে ?
কোন উত্তর এলো না ।
তন্ময় আবার জিজ্ঞাসা করলো, কে..........কে ?
এবার খুব ধীর,মোলায়েম এক নারী কণ্ঠ উত্তর দিলো, আমি ....
আমি......, আমি কে ?
হঠাৎ উত্তেজনায় তন্ময়ের চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেছে । চুপচাপ সে কান পেতে দাড়িয়ে রইলো ।
দরজার ওপাশ থেকে এবার নারী কণ্ঠ উত্তর দিলো , বাবু আপনার খাবার নিয়ে এসেছি ।
একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলেও দরজা খুলতেই সে দেখতে পেলো, টিফিন ক্যারিয়ার হাতে বিশ বাইশ বছরের একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে । তন্ময় দরজা খুলে তার দিকে তাকাতেই মেয়েটি কাপড় টেনে মুখটা ঢেকে ফেললো ।
তন্ময় দরজার একপাশে সরে গিয়ে মেয়েটিকে ঘরে ঢুকার জন্য জায়গা করে দিতেই টিফিন ক্যারিয়ার হাতে মেয়েটি ঘরে ঢুকে সোজা এগিয়ে গেলো টেবিলের দিকে ।
বৃষ্টি বাদলের রাতে একটি মেয়ে খাবার নিয়ে এসেছে সে দেখে তন্ময় যারপর নাই অবাক হলেও মুখে কিছু বলল না । হালকা পাতলা গড়নের মেয়েটি শাড়ি পরে আছে । মুখের উপর এখন বড় করে ঘোমটা টানা । তাতে মুখের আদল বোঝা যাচ্ছে না । গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে বড় করে ঘোমটা দেবার রীতি অনেক পুরাতন । বিশেষ করে মুসলিমদের মধ্যে এ রীতি খুব দেখা যায় । তবে সনাতন ধর্মের মেয়েরাও এ রীতি মেনে চলে । বনেদী ঘরের বউ, ঝিরা বড় ঘোমটা ছাড়া অচেনা মানুষের সামনে যায় না ।
মেয়েটি তন্ময়ের পাশ দিয়ে হেটে টেবিলের কাছে গিয়ে টেবিলের উপর টিফিন ক্যারিয়াটা রেখে, ঘরে হতে বের হয়ে যাবার জন্য দরজার কাছে গিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনি খেয়ে নিন বাবু , আমি একটু পরে এসে বাটিগুলো নিয়ে যাবে ।"
মেয়েটি এবার লণ্ঠনের আলোর উল্টো দিকে দাঁড়িয়েছে, ফলে লন্ঠনের আলো সরাসরি গিয়ে পরেছে তার মুখের উপর। তন্ময় এবার তার মুখের একটা অংশ দেখতে পেলো । আয়ত নেত্র, তাতে শানিত করে কাজল দেয়া। চন্দ্রাকৃতি উজ্জ্বল দেবী আকৃতির মুখশ্রী। সাক্ষাৎ দেবী যেন মণ্ডপ ছেড়ে উঠে এসেছেন । মুগ্ধ নয়নে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো তন্ময় । তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় তার কাছে মনে হলো, এমন নারী রূপ সে বহুকাল দেখেনি । এ মুখের দিকে তাকিয়ে পাড় করে দেওয়া যায় গোটা একটা জীবন ।
হঠাৎ দেখা একটি মেয়েকে নিয়ে এমন উদ্ভট ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো । মনে মনে নিজেকে ভৎসনা করতে লাগলো । ছি, এসব সে, কি চিন্তা করছে । নিজেকে সামলে নিয়ে, মেয়েটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথা নেড়ে সায় জানাতেই মেয়েটি ঘর থেকে বের হয়ে গেলো ।
খাওয়ার পর্ব শেষ হতে বেশি সময় লাগলো না । বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে ঘরে এসে হাত মোছার জন্য চেয়ারের হাতল থেকে তোয়ালেটা তুলে নিতেই দরজায় টোকা পড়লো ।
দরজা খুলতেই দেখতে পেল মেয়েটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তাকে দেখে মনে হচ্ছে, খাবার দিয়ে সে চলে যায়নি। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে তন্ময়ের খাওয়া শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করছিলো ।
তন্ময় দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো ।
সাবলিল ভঙ্গিতে মেয়েটি ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর থেকে বাটিগুলো গুছিয়ে নিতে লাগলো ।
তন্ময় হঠাত খেয়াল করল, খোলা দরজা দিয়ে অচেনা কোন ফুলের অদ্ভুত মিষ্টি সুন্দর গন্ধ এসে ঢুকছে ঘরের ভেতর । গভীর ভাবে বার'দুয়েক শ্বাস নিয়ে তন্ময় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "আশেপাশে কোন ফুলের বাগান আছে ?" কি অদ্ভুত মিষ্ট গন্ধ তাই না ?
মেয়েটি অবাক হয়ে তাকালো তন্ময়ের দিকে । তারপর বলল, জি আছে বাবু । ওই, জানালাটি খুলে দিলেই নিচের ফুলের বাগান দেখতে পাবেন। মেয়েটি ইশারায় করলো বিছানার পাশে থাকা জানালাটার দিকে । একটু থেকে তারপর বলল,আগে যে বাবুরা এখানে থাকতেন তেনারা বাগান করতেন । এখন আর কেউ গাছগুলোর যত্ন করে না । অবহেলা অযত্নে এখনো অতকগুলো গাছ টিকে আছে বাবু । গ্রীষ্ম,বর্ষায় তারাই সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটায়।
মেয়েটির কণ্ঠস্বরও খুব সুন্দর। কথায় ভেতর কেমন একটা মাদকতা আছে । তন্ময়ের কর্ণে সে কণ্ঠ যেন, কিন্নরের সুর হয়ে ধরা দিলো । সে আবারও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটির দিকে । লণ্ঠনের আবছা আলোয় মেয়েটিকে এখন অনেক বেশি রহস্যময়ী লাগছে । দেখে মনে হচ্ছে, সে যেন এ ধরার কেউ নয়, রূপকথার গল্পের কোন পাতা থেকে উঠে এসেছে ।
নিজেকে সামলে নিয়ে তন্ময় আবার জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি কি এখানেই থাকো ?"
মেয়েটি মাথা নেড়ে উত্তর দিলো, জি বাবু ।
মকবুল, তোমার কি হয় ? তন্ময় মনে মনে ভেবেছিলো মেয়েটি মকবুলের কিছু হবে ।
তন্ময়ের প্রশ্নে মেয়েটি চট করে একবার তাকালো তন্ময়ের মুখের দিকে । তারপর চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল, "বাবু, আমার নাম নন্দিনী; আমি এখানেই থাকি।"
অতঃপর দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেলো ।
২২.০৭.২০২৩
২৬ শে জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১২
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ঠিক তাই... এ জন্যই এটা সনাতন গল্প। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ২৬ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:০২
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: মুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম, এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো।
২৭ শে জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: এটি ৭ পর্বের একটি সিকুয়েল উপন্যাস ।
প্রতিটি পর্ব আলাদা আলাদা প্রতিটি গল্পের নাম ও ভিন্ন ভিন্ন । তাই একক ভাবে পড়লে মনে হবে পুরো একটা গল্প পড়লাম । কিন্তু এই শেষ থেকে শুরু হয়েছে অন্য একটি গল্প । যেমন এটির প্রথম পর্ব , শঙ্খচুর , ২য় পর্ব হচ্ছে, নন্দিনী ৩য় পর্ব প্রীতি লতা ...
নিজের উপর এক্সপেরিমেন্ট করছি ভাই ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আপনার মতো পাঠকের এই সময়ে অনেক বেশি প্রয়োজন । ভালো থাকবেন । শুভ কামনা রইলো ।
৩| ২৬ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম। মন্দ নয়।
২৭ শে জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন । আপনি একজন নিয়োমিত পাঠক , শুভ কামনা আপনার জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৮
শায়মা বলেছেন: এই মেয়ে তো নিশ্চয়ই ভূত তাইনা?