নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
দুই
পরের দিন তন্ময়ের জন্য চমক অপেক্ষা করেছিলো । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে সূর্য দেবের পুজো শেষে । ভাজ ভাঙ্গা ধুতি,জামা পরে কলেজে উপস্থিত হয়ে যা দেখলো তাতে সে যারপরনাই অবাক হলো৷ পুরো কলেজে শিক্ষক সংখ্যা সাত, ছাত্রছাত্রী সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। বাঙ্গালীদের শিক্ষার প্রতি অনীহার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে? তার উপর নিয়মিত ক্লাসের কোন বালাই নাই৷
রাত্রি বেলা এলাকাটিকে যতোটা না দুর্বোধ্য, দুর্গম বলে মনে হয়েছিলো দিনের আলোয় মন থেকে সে ধারণা একেবারে মুছে গেলো। নীল চাষের সময় ইংরেজদের তৈরি রাস্তা ঘাট ও বড় বড় ইমারতগুলো অন্য আট দশটা তল্লাট থেকে প্রতাব গড়’কে যে আলাদা করে রেখেছে। তা তার নিভু নিভু জৌলুস থেকেও বেশ বোঝা যায়। সাহেবরা এ এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া স্থাপনা সর্বত্র বিরাজমান । নীল মজুদ ও সরবরাহ করার জন্য যেসব দালান কোঠা দপ্তর করা হয়েছিলো নীল চাষ বন্ধ হবার পর সেগুলোর এখন স্কুল কলেজের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । তারই একটিতে তন্ময়ের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ।
মাঠ পেরিয়ে কলেজ ভবনের দিকে হাটতে হাটতে তন্ময় চারপাশটা ভালো করে দেখতে থাকে । সাজানো গোছানো ছবির মতো লাগছে । সর্বত্র সবুজের সমারোহ । মাঠের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাড়িয়ে আছে বড় বড় তাল গাছ তারই ফাকে ফাকে বেড়ে উঠা সেগুন, কড়াই মেহগনি, সুপারির গাছের সারি যেন অন্যমাত্রা যোগ করেছে প্রকৃতিতে ।
কলেজ কলেজ ভবনের কাছাকাছি হতেই তাকে দেখতে পেয়ে ছোটখাটো আকৃতির মধ্যবয়স্ক এক লোক একটা রুম থেকে বের হয়ে তার দিকে প্রায় হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসতে লাগলো ।
কাছাকাছে হতেই লোকটা দু হাত বুকের কাছে জড়ো করে হাসি হাসি মুখ করে নমস্কার দিয়ে বলল, বাবু আমার নাম নরেন । আমি এ কলেজে দপ্তরির কাজ করি । আসুন বাবু, প্রিন্সিপাল স্যার আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে ।
তন্ময় নমস্কারের প্রতি উত্তর দিয়ে বলল, তুমিই তাহলে নরেন ? মকবুলের কাছে তোমার কথা শুনেছি ।
নরেন হাটতে হাটতে পেছন ফিরে লজ্জা পাবার ভঙ্গিতে ক্ষীণ হেসে বলল,জ্বী বাবু আমার নামই নরেন । আপনি আসবেন শুনে আমি আর মকবুল মিলে আপনার থাকার ঘরটা ঝাড় পোছ করে রেখেছিলাম । আজ বাকিটা গুছিয়ে দেবো ।
তন্ময় মাথা নেড়ে বলল, সে না হয় ঠিক আছে, তার আগে খাওয়া দাওয়া কোথায় হবে তার একটা ব্যবস্থা করো তো হে বাপু। তা না হলে যে, না খেয়েই মরে যাবো । তারপর জামার পকেট থেকে পকেট ঘড়ি বের করে সময় দেখে নিয়ে বলল, এই দ্যাখো, কত বেলা হয়েছে, অথচ এখনো জল খাবার খাওয়া হয়নি ।
নরেন একটু লজ্জা পাবার ভঙ্গিতে বলল, এ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না বাবু। আজই সব ঠিক হয়ে যাবে খন। আপনি আসুন আমার সাথে । এরপর দু’জনের মধ্যে আর কোন কথা হলো না। তন্ময় নরেনের পিছু পিছু মাঠের বাকি অংশটুকু পেরিয়ে গিয়ে ঢুকলো প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে।
দরজা বরাবর দেয়ালের গা ঘেষে প্রিন্সিপাল স্যারের টেবিল । মধ্যবয়স্ক যে ভদ্রলোক চেয়ারটিতে বসে আছেন । তার নামু ফণী ভূষণ মজুমদার । তাকে ঘিরে আরো জনা পাঁচেক লোক টেবিলের চারপাশে বেশ আরাম করে বসে আছেন। সকলের বেশভূষা আর সামনের টেবিলের উপর রাখা বই পুস্তক দেখে অনুমান করা যায় ওনারা সকলেই এ কলেজের শিক্ষক ।
তন্ময় এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই ফনি ভূষণ মজুমদার চেয়ার থেকে উঠে তন্ময়কে স্বাগত জানিয়ে অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন । তাদের মধ্যে একজনের নাম শান্তনু রাজবংশী । শান্তনু তন্ময়ের পরিচয় পেয়ে চেয়ার থেকে উঠে তন্ময়ে সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি কিন্তু পদবীতে জেলে । যদি আপত্তি না থাকে তাবে হাত মেলাতে পারেন । তন্ময় শান্তনুর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে হেসে বলল,এখানেও সেই জাত পাতের ভুত চড়ে বেড়াচ্ছে নাকি?
প্রিন্সিপাল ফনি ভূষন বললেন, না,না। সেসব এখানে চলে না । ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হচ্ছে । এই দেখুন না, এ কলেজের পহরী মুসলিম,দপ্তরি নরসুন্দর। ভাবা যায় ? জাত পাত দূর করেই এগিয়ে যেতে হবে ।
কথাটা যতো সহজ ভাবে বললেন বিষয়টা কি আসলেই ততো সহজ স্যার ? প্রশ্নটা করলেন ফনি ভুষণের ডান পাশে বসে থাকা অংকের শিক্ষক কৃষ্ণ ক্রান্তি লাল । ক্রান্তি লালের প্রশ্ন শুনে সবাই তাকালো ফণি ভুষনের দিকে উত্তরে তিনি কি বলেন তা শোনার জন্য।
ফণি ভুষন চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, এ সময় কৃষ্ণ ক্রান্তি লাল আবার বলে উঠলেন, জমিদার প্রথা বাতিলের ফলে, জমিদারেরা ক্ষমতা হারিয়ে দূর্বল হয়েছে বটে কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা জাত পাতের বালাই সমাজ থেকে মুছে যায়নি স্যার । যাবেও না। জমিদারের চারপাশে ওই পুজারী শ্রেনীটা যতোদিন থাকবে ততোদিন নিজেদের স্বার্থেই তারা জাত পাত বিষয়টাকে সমাজে জিইয়ে রাখবে। এরপর তিনি গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে এনে প্রায় ফিসফিস করে বললেন, “গতরাতেও সতীদাহ হয়েছে স্যার। সে খবর কি পেয়েছেন ?”
সতীদাহের কথা শুনু চমকে উঠলো তন্ময় । নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । কৃষ্ন কান্তি লালের শেষ কথাটায় সবাই যেন হঠাৎ চুপসে গেলো । কারণ কথাটা ইতিমধ্যে সবার কানেই পৌছেছে । কিন্তু কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্য কিছু বলছে না । কারণ এ ঘটনার পেছন থেকে যিনি ইন্দন দিচ্ছেন তার রোষানলে পরার কারো ইচ্ছে নেই । ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার কারই বা দায় পড়েছে । হঠাৎ করেই যেন পিন পতন নীরবতা নেমে এলো । সবার গতরাতের ঘটনাটা নিয়ে নিজের মতো ভাবছে ।
জমিদার প্রথা বাতিল হবার পরে একটা শ্রেনী মাথা চারা দিয়ে উঠেছে । আগে সেসব কর্মগুলো তারা প্রকাশ্য করতো এখন সেগুলো গোপনে করে । শোনা যায় এর পেছনে আছে উচু শ্রেনীর হিন্দুরা । তাই এ নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না ।
কেউ কিছু বলছে না দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে তন্ময় বলে উঠলো, বলেন কি মশাই? সতিদাহ! এখানে? সে যে দন্ডনিয় অপরাধ ।
রাখুন মশাই আপনার দন্ডের কথা। কোন লাট সাহেবের গরজ পরেছে যে, গাও, গ্রামে এসে সতীদের পাহারা দেবে? যাদের পাহারা দেবার নিজ গৃহে কেহ নাই বাহির থেকে তাদের সুরক্ষা কে দেবে বলুন ? কথাটা বললেন, টেবিলের অপর পাশে বসে থাকা তপন মজুমদার । তিনিও বয়সে তরুণ । ইংরেজি পড়ান । উচিত কথা শোনাতে তিনি কাউকে ছাড় দেন না । একটু থেমে সকলকে দেখে নিয়ে তারপর ফনি ভুষনের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, স্পর্শ আর অর্স্পশের অভিশাপ এ জাতিকে কখনো ছেড়ে যাবে না স্যার । তাই কিছুই হবে না । শেষের কথাগুলো বলার সময় তার কণ্ঠ অনেকটা ধরে এলো ।
আলোচনা জটিল হয়ে যাচ্ছে দেখে, ফনি ভুষণ তরিঘরি করে বলে উঠলেন, সমাজ থেকে একসময় এ সবই দূর হবে । এখন আসুন তো নতুন শিক্ষকে স্বাগত জানান সবাই । কথাটা বলেই তিনি হাক দিলেন, কই রে নরেন, এই নরেন ?
নরেন দরজার বাহিরেই দাড়িয়ে ছিলো । ফণী ভূষণের হাক শুন ছুটে এসে ঢুকলো রুমের ভেতর তারপর বলল, আজ্ঞে বাবু , এই তো আমি এখানে ।
ফনি ভূষন নরেনকে দেখে বলে উঠলেন, তোমাকে যে ফুল আনতে বলেছিলাম; সে সব কোথায় , নিয়ে এসো ।
নরেন দৌড়ে পাশের রুম থেকে একটা ফুলের তোড়া এনে ফণী ভূষণের হাতে দিলে তিনি সেটা হাতে নিয়ে অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে তন্মমের হাতে তোড়াটি তুলে দিতে দিতে বললেন, আমাদের কলেজে আপনাকে সুস্বাগতম তন্ময় বাবু । আশা করি আমাদের সুখ,দু:খ সব কিছুতে আপনাকে সাথে পাবো ।
তন্ময় স্বশ্রদ্ধে ফুলের তোরাটি গ্রহন করে ফণী ভূষণকে ধন্যবাদ দিয়ে একে একে সকলের সাঙ্গে করমর্দন সেরে ফুলের তোরাটি টেবিলের উপর রেখে, পকেট থেকে বদলি আদেশের চিঠিখানা বের করে , ফনি ভুষণের দিকে এগিয়ে দিলো। ফণী ভূষণ সেটা গ্রহণ করে একবার পড়ে নিয়ে ফাইল বন্ধি করে রাখলেন ।
প্রিম্সিপাল স্যারের রুমে সকলের সাথে জল খাবার শেষে তন্ময় শান্তনুকে সাথে নিয়ে বের হলো এলাকাটি ঘুরে দেখতে । কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে ওরা একসময় চলে শিপ্রা নদীর তীরে । নদীর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মেঠো পথ ধরে অনেকটা হাটার পর একসময় ক্লান্ত হয়ে একটা ছাতিম গাছ পেয়ে তার ছায়ায় এসে দাড়লো দু’জন।
দুপুরের ঝাঝালো রোধে নদীর আশেপাশের চরাঞ্চল রুপোর মতো চকচক করছে। অজস্র কচুরি পানা ভেসে যাচ্ছে বালু বিধৌত ঘোলা জলে। ছোট ছোট পাখির ঝাক কচুরী পানার ফাকে ফাকে মাছ খুজে বেড়াচ্ছে । খুব কাছে মাথার উপর কয়েকটা চিল ডানা মেলে ভেসে বেড়াচ্ছে । নদীর দিক থেকে মৃদু মন্দ হাওয়া এসে শরীর, মন উভয়ই জুড়িয়ে দিচ্ছে ।
তবে এলাকাটি বড্ড জনশূণ্য । কলেজ থেকে বের হবার পর একজন মানুষ ও তন্ময়ের চোখে পড়েনি । এতো বিশাল একটি এলাকা এতোটা জনশূণ্য হয় কি করে সে প্রশ্নটা মনের ভেতর বারবার উকি দিতে লাগলো ।
শান্তনু বেশ সুদর্শণ পুরুষ, যেমন উচু-লম্বা তেমনি তার শরীরের রং । রোদে পুড়ে কিছুটা শ্যাম বর্ণ ধারণ করলেও তার দিকে তাকিয়ে সহজে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তার উপরে মিশুক প্রকৃতির হওয়ায় তাকে খুব মনে ধরে গেলো তন্ময়ের । হাটতে হাটতে দু’জন নানা বিষয়ে গল্পে মেতে উঠলো । যেন কতো কালের চেনা পরিচয় । দু’জনের মুখেই কথার খই ফুটছে ।
নদীর শীতল হওয়ায় শরীর জুড়িয়ে নিয়ে আবার তারা হাটতে লাগলো । হাটতে হাটতে শান্তনু একসময় তন্ময়ের হাত টেনে ধরে বলল, ওগিকে নয়, চল ফিরে যাই । বয়সের পার্থক্য বেশি না থাকায় আপনি বলার দূরত্ব ঘুচিয়ে দু’জন কখন যে তুমিতে এসে পৌছেছে । সে তারা নিজেরাই বলতে পারবে না । কথা বলতে বলতে তন্ময় আপন মনে হাটছিলো আচানক হাত টেনে ধরায় সে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,কি হলো ?
শান্তনু তখন বেশ কিছুটা দূরে নদীর তীরে গাছ পালায় ঢাকা একটা জায়গা দেখিয়ে বলল, ওটা শশ্মান । ওকি নয় । চল ফিরে যা্ই ।
তন্ময় হেসে বলল,শশ্মান হয়েছে তো কি হয়েছে? ভয় পাচ্ছো বুঝি?
তন্ময়ের শিশু সুলভ হাসির প্রতিউত্তরে শান্তনু মাথা নেড়ে বলল, ভয়! না, সে নয়। অন্য বিষয় আছে । চলো ফিরে যাই।
ঠিক সে সময় তন্ময় কানে খুব করুণ বিলাপের শব্দ ভেসে এলো । মেয়েলি সুরে ক্ষণে ক্ষণে কে যেন গুমরে গুমরে কাঁদছে । কিছুক্ষণ কানখাড়া করে শোনার পর তন্ময়ের মনে হলো কান্নার শব্দটা শশ্মানের দিক থেকেই আসছে । সেদিকে তাকিয়ে আপন মনেই সে বলে উঠলো, শুনতে পাচ্ছ ? কে যেন কান্না করছে । শান্তনু তন্ময়ের কথার উত্তর না দিয়ে আবার তাকে তাড়া দিয়ে বলল, চল ফিরে যাই । ও কিছু না …….
তন্ময় শান্তনুর উত্তরের অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে হেটে গেলো শশ্মানের দিকে। অগত্যা শান্তনু ছুটল তার পিছু পিছু ।
শশ্মানের কাছাকাছি আসতেই বিলাপের শব্দটা আরো বেড়ে গেলো । শশ্মানের প্রবেশ পথের দু’পাশে সারি সারি গাছ লাগানো । তার মাঝখান দিয়ে ইট বিছানো প্রশস্ত রাস্তা একেবেকে প্রবেশ করেছে শশ্মানের ভেতর । চারপাশ গাছ পালায় ঢাকা থাকায় নদীর অংশ থেকে শশ্মানের ভেতরের অংশটা ভালো করে দৃষ্টিগোচর হয় না । দিনের বেলাতেই ক্যামন অন্ধকারাচ্ছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে গুমোট পরিবেশ । মনে হচ্ছে, এখানে ওখানে অন্ধকার যেন দানা বেঁধে আছে । অকারণেই শরীর ছম ছম করে উঠে ।
প্রবেশ পথ ধরে কিছুটা এগুতেই তন্ময়ের নাকে এসে লাগলো মরা পোড়াবার বিটকেল গন্ধ। হিন্দু ঘরের সন্তানদের এ গন্ধ বেশ পরিচিত । তবুও সে গন্ধে নাড়িভুড়ি উল্টে বের হয়ে আসতে চাইলো । কিন্তু সেদিকে ভ্রক্ষেপ করলো না সে। কান্নার শব্দ লক্ষ্য করে ছুটে গেলো শশ্মানের ভেতর ।
কিন্তু কি আশ্চর্য ! মূল শশ্মানে পা দেওয়া মাত্রই কান্নার শব্দ একেবারে থেমে গেলো । মুহূর্তেই চারপাশ অতিমাত্রায় শান্ত হয়ে গেলো । ঝিঝি পোকাদের ঝি ঝি শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। তন্ময় শশ্মানের ভেতর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কাউকে দেখতে পেল না । শেষটায় অবাক হয়ে, এক জায়গায় দাড়িয়ে রইলো । কিছু সময় পর পেছন থেকে শান্তনু তম্ময়ের বাহু ধরে টান দিয়ে বলল, হয়েছে ? এবার চলো ফেরা যাক। তন্ময় শান্তনুর দিকে তাকি কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারলো না । তার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছে। কথা বের হচ্ছে না। ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকটাই ঘাবড়ে গেছে । কি বলবে বুঝতে পারছে না । এখন মনে হচ্ছে, শান্তনুর নিষেধ অমান্য করে এভাবে ছুটে আসাটা ঠিক হয়নি । শান্তনু অবশ্য তন্ময়কে কিছু না বলে কোন অভিযোগ না তুলে । তন্ময়ের বাহু ধরে তাকি নিয়ে শশ্মান থেকে বের হয়ে ফেরার পথ ধরল ।
শশ্মান থেকে অনেকটা দূরে আসার পর আবার কান্নার শব্দ শোনা গেল । তন্ময় আবার দাঁড়িয়ে পড়লো । শান্তনু তার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, এমনটা এখানে প্রায়ই হয় ।
তন্ময় শান্তনুর দিকে তাকিয়ে বলল, কে,কে কাঁদে ?
মৃদু হেসে শান্তনু বলল, প্রকৃতির খেয়ালে কত কিছুই তো হতে পারে । কি করে নিশ্চিত করে বলবো কে কাঁদে? তারপর একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, হতে পারে কোন অশরীরী, হতে পারে কারো অতৃপ্ত আত্মা ।
নন্দিনী ১ম পর্ব (শঙ্খচূড়)
নন্দিনী ২য় পর্ব