নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধানমন্ডি স্কুলের ৫০ বছর পূর্তি

১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৫



ঢং-ঢং-ঢং-.. শব্দটা কি কারো পরিচিত লাগছে ? “মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে, সুধার মত” – আরও একটি বাণী/শব্দের জন্য কানটা এক সময় অধীর হয়ে থাকত, কখন বাজবে? পৌষের এই মিষ্টি রোদেলা সকালে ( ১১ টা, ২ জানুয়ারি, ২০১৫) কিছুক্ষণ আগে সেই শব্দটা পুরো ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়কে নাড়া দিয়ে বেজে গেল, ষষ্ঠ ক-এর দরজা পেরিয়ে দু’টি কিশোর চঞ্চল পা ‘৭৫ পেরিয়ে ‘৮০ হয়ে ২০১৫ -এ প্রৌঢ়ত্বে। এটা প্রতীকি ছুটির ঘন্টা, তাই ছোট ছোট পায়ের মিষ্টি দাপাদাপি নেই, নেই “ছুট্টি,ছুট্টি গরম,গরম রুট্টি”-র দুরন্ত হই-হূল্লোড়। তবে ‘৬৫ থেকে ২০১৫- দীর্ঘ ৫০ বছরের বলিষ্ঠ পথ পরিক্রমায় নবীন-প্রবীণ যারা “ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়”-এর সহযাত্রী, সবাই যেন ফিরে গ্যাছে কৌশরের সেই প্রাণোচ্ছল দিন গুলোতে, সারা মাঠে গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে ছড়িয়ে প্রাণের আড্ডায় মেতেছে ‘৬৭,’৬৮,’৬৯,........,২০১৪-এর পায়রারা। সব ব্যাচ যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, তখন সঞ্চালক যুবায়ের সবার দৄষ্টি মঞ্চের দিকে ফেরানের জন্য মাইকে গলার সবটুকু জোর দিয়ে বলে উঠে : Heyyyy… DExSAAAAn (Ex-Students Association Of Dhanmondi Govt. Boys’ High School)। কিছু বিচ্ছিন্ন সাড়া পাওয়া গ্যালো। তারুণ্যের শক্তিটা আরে একটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য আরও দু,তিন বার একই আওয়াজ দিল ২০০৫ ব্যাচের “যমুনা টিভি”-র সদাহাস্যময় উপস্থাপক যুবায়ের – দর্শক-শ্রোতাদের মনঃসংযোগ ধরে রাখার অপূর্ব কৌশল। চারদিক থেকে ভেসে আসছে একটাই শব্দ- : Heyyyy….DExSAAAAn।

চমৎকার বাচন ভঙ্গির মাধ্যমে যুবায়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইনসান আলীকে স্বাগত ভাষণ দিতে অনুরোধ করলেন। এরপর সঞ্চালক DExSA-র এসরার ভাইকে কিছু বলার জন্য একান্ত অনুরোধ করল। এসরার ভাইয়ের সরল স্বীকারোক্তি – আমি ভাল বক্তা নই, কাজ ছাড়া কিছু বুঝি না। তুমুল করতালি।
এবার “স্মৄতিরোমন্থন পর্ব”- ‘৬৭ থেকে, স্কুল শুরু ’৬৫-তে, কিন্তু ম্যাট্রিক ১ম ব্যাচ ‘৬৭।

‘৬৭- ব্যাচের এক জন মঞ্চে আসলেন, সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। উনি BRRI-এর DG হিসাবে অবসরে গিয়েছেন-সাফল্যমন্ডিত ছাত্র জীবন শেষে সাফল্যের শীর্ষে পৌছে কর্ম বিরতি। স্বতঃস্ফূর্ত করতালি, সঞ্চালক যুবায়েরের প্রাসঙ্গিক,প্রত্যুৎপন্নমতি মন্তব্য- পুরো অনুষ্ঠানটিকে উপভোগ্য করে তুলেছে।

পেশায় সাংবাদিক, ’৬৮-ব্যাচ, বেশ রসিক। শুরুর সেই দিন গুলোতে নবম-দশম শ্রেণীর দুরন্ত কয়েক কিশোরের রোমাঞ্চকর হোস্টেল জীবনের চমকপদ বর্ণনা। হোস্টেলের নিম্নমানের খাবারের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হোস্টেল সুপারের পোষা মুরগি দিয়ে রসনা মিটানো, আর মুরগির পাখনা-ছাল স্যারের-ই বাসার পিছনে নিক্ষেপ গভীর রাতে। শুধু দুষ্টুমিই নয়, পড়ালেখার প্রতিও ছিল গভীর নিষ্ঠা। ইংরেজী শিক্ষক মহোদয়ের অক্লান্ত চেষ্টা এবং তারই ফলশ্রুতিতে উনার ইংরেজীতে বুৎপত্তি। উন্নত পাঠদান এবং সেই সাথে মান সম্মত প্রশ্ন, দুটো বিষয়েই স্যার ছিলেন অত্যন্ত সজাগ। তাইতো দেখি টেস্টে ছাত্র ইংরেজী গ্রামারে ৩০-এ ৩০ পাওয়ায় স্যার বার বার উনাকে জিজ্ঞেস করেছেন প্রশ্ন সহজ হয়েছে কি না?

আরে, এযে আনিস ভাই!! আমাদের কলাবাগান ষ্টাফ কোয়ার্টারের মেধাবী মুখ, রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বর্তমানে মেট্রো রেলের সাথে যুক্ত, – ’৬৯ ব্যাচের আনিসুর রহমান। একজন দ্রুতগতির দৌড়বিদ এবং ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবেও সুনাম ছিল। তুহিনকে (আমার স্ত্রী) উনার কথা বললাম সবিস্তারে। উনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র আমি গেলাম উনার কাছে। আরে তুমি বাবু (আমার ডাক নাম)! ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
‘পুরনো সেই দিনের কথা,....” দুজনেই মশগুল হয়ে গেলাম।

কিছুক্ষণ পর নিজের আসনে ফিরে এসে দেখি ’৭০-৭১ ব্যাচের সৌম্য সাদা চাপ দাড়ির বড় ভাই তার দুরন্ত হোস্টেল জীবনের বর্ণনার শেষ প্রান্তে--- স্যার, দারোয়ান উনার পিছনে পিছনে ছুটছেন, হোস্টেলের সিড়ি বেয়ে ছাদে, স্যাররাও উঠে আসছে, ধরা পড়া নিশ্চিত। একটা উপায় আছে, ছাদের পানির ট্যাংকে আশ্রয়। তন্ন তন্ন করে পুরো ছাদ খুজে পানির ট্যাংকের কাছে এসে স্যার বললেন, “এখানে বোধ হয় কেউ নেই।” অথচ .... হা..হা... ট্যাংকের ভিতরে লোহার রড ধরে ঝুলছে অকুতোভয় কিশোর!! ষাটোর্ধ একজন মানুষ, কি অবলীলায় কিশোর বনে যায় !!!

করতালি দিয়ে উনাকে অভিনন্দন জানিয়ে যুবায়ের সবাইকে মিষ্টি হেসে অনুরোধ করল সংক্ষিপ্ত কিন্তু মজার অভিজ্ঞতা বর্ণনার করতে। আরও একজন মঞ্চে, কিন্তু উনার কথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না, আমাদের ব্যাচের কাউকেই তো দেখছি না!তৌফিকের আসার কথা ছিল, মোবাইলে রিং দিলাম, একটা কাজে আটকে গ্যাছো, আসতে দেরী হবে। স্মৃতি হাতড়ে ফিরছি, মনের মনিকোঠায় একটার পর একটা স্মৃতি দৃশ্যমান হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, একটা স্মৃতিতে এসে মনটা আটকে গেল – এটাই বলব।

খুব চেনা চেনা লাগছে, কথা বলার ধরন, অঙ্গ-ভঙ্গি,চটপটে, চৌকষ..কে যেন..কে যেন..মাসুদ ভাই, আমাদের কলোনীর ৫ নাম্বার বিল্ডিংয়ের খোকনের ভাই। তখন প্রতি বছর স্কুলে রচনা প্রতিযোগিতা,কবিতা আবৃত্তি,হামদ-নাত ইত্যাদি হতো। রচনা প্রতিযোগিতা,কবিতা আবৃত্তিতে উনি প্রতি বছর ১ম পুরস্কার পেতেন। কবিতার পংক্তি গুলো এখনো মনে আছো.. “এই খানে তোর দাদীর কবর..”। চমৎকার আবৃত্তি। সাহিত্য-সংস্কৃতির সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে কি না, তা নিয়ে উনি সন্দিহান!
উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে যুবায়ের অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানালো যে, এই স্কুলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নতুন প্রজন্মের ফসল ও নিজেই। শান্ত-শিষ্ঠ একটা ছেলেকে, যে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জোর করে বিতর্কের মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রতি জানালো অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

এর পর মঞ্চে আবির্ভূত হলেন এক সময়ের কৃতি ফুটবলার, বর্তমানে স্বনাম ধন্য কোচ, মানিক ভাই। মঞ্চ আলো করে তার বিশাল দল নিয়ে একতার এক অনন্য প্রদর্শনী দেখালেন।

’৭৯ ব্যাচও কম যায় না, মঞ্চ আলো করে আসলো। উনাদের মধ্যে একজন, বি.সি.এস. কর্মকর্তা, তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, নুরুল হক ভূইয়া স্যারের স্মৃতিচারণ করলেন। নায়করাজ রাজ্জাকের মত DGBHS-এর দশম শ্রেণীর কিছু দুষ্ট বালক, “..লাল ইটের এই পথটাকে ভালবেসেছি” গাইতে গাইতে স্কুল পালিয়ে আড্ডা দিত ফার্মগেটের কোন এক বালিকা বিদ্যালয়ের গেটের সামনে (আজকের পীচ ঢালা মানিক মিয়া এভিনিউ, তখন প্রশস্ত-দীঘল রাস্তা জুড়ে ছিল লাল ইট বিছানো, দু’পাশে ছিল লাল কৃষ্ণ চূড়ার সারি – যেন সাক্ষাত কবিতা )। এই খবরে অত্যন্ত রুষ্ঠ হয়ে স্যার সবাইকে খুব বকা-ঝকা করলেন। পিতৃতুল্য স্যারের সেই স্নেহ শাসন উনি ভুলেননি। তাই মুন্সীগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসক হিসাবে কর্মরত থাকাকালীন উনি একটি স্কুলের জন্য সাহায্যের হাত অবারিত রেখেছিলেন; কারণ আমাদের স্কুলে আসার আগে স্যার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

উনার কথার রেশ ধরে যুবায়ের সবাইকে অনুরোধ করল DGBHS-এর CV পেলে যেন একটুউউউ, একটুউউউ পক্ষপাতিত্ব করেন। তাইতো “..একটু সহানুভূতি কি DExSAn পেতে পারেনা।“

ভাবতে ভাবতে মঞ্চে উঠলাম। নিউ টেন মানেই অনেক গুলো ছোট ছোট রাজ্যের অধিকার করতলগত হওয়া। তার মধ্যে আমরা টেবিল টেনিস প্রেমীরা দোতালার টেবিল টেনিস রুমটা নিয়ে বুদ হয়ে আছি, লেখা-পড়া শিকেয় উঠেছে। তখন ক্লাস শুরু হতো ১০ টায়, আমরা (টেনিস প্রেমীরা) আসতাম ৮ টায়। সম্ভবত: রুমের দায়িত্বে ছিল নিউ কলোনীর মঞ্জু (ইশরাত রহিম), কেয়ার টেকারের কাছ থেকে চাবিটা ওই নিয়ে আসত। সেদিন সবাই অস্থির হয়ে টেবিল টেনিস রুমের সামনে পায়চারি করছে, ৯ টা বেজে গেল, রুমের চাবিটা এখনও হাতে এলো না, কেয়ার টেকার ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন চাবি দিয়ে চেষ্টা করা হলো, যাদের হাতে জোর বেশি, তারা দরজার কড়া ধরে মোচড়া-মুচড়ি করছে, দেখতে দেখতে ৯:৩০ হয়ে গেল, মুকিত এগিয়ে এসে সবাইকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে এসে জোড়া পায়ে তালায় লাথি মারল। প্রচন্ড শব্দ হলো, কিন্তু তালার কিছুই হলো না। সবাই হৈ হৈ করে মুকিতকে উৎসাহ দিচ্ছে, দু’বার, তিনবার..কড়া ছুটে দরজা খুলে গেল, তাল সামলাতে না পেরে মুকিত পড়ে গেল, আমরা ওকে টপকিয়ে ব্যাটের দখল নিতে ব্যস্ত, সমস্ত উত্তেজনায় জল ঢেলে দিল একটা কন্ঠ, “তোরা এটা কি করলি?” কখন যে হেড স্যার পিছনে এসে দাড়িয়েছে, চরম উত্তেজনায় কেউ টের পাইনি। ভো দৌড়, কিছুক্ষণের মধ্যে জায়গা ফক্কা, যে যার ক্লাসে সুবোধ বালকের মত আসন নিয়েছে, কিন্তু বুক দুরু দুরু কাপছে। বিপদের এখানেই শেষ নয়, মাঠে এ্যাসেম্বিলির জন্য ডাকা হচ্ছে। আমরা পাপীরা লাইনের পিছনে, ঘটনা জানতে বাকী নেই কারো। জাতীয় সংগীত শেষে হেড স্যার থমথমে মুখে যা বলেছিলেন, তার সব আজ মনে নেই, শুধু একটা কথা এখনও কানে বাজে “ তোরা তালায় লাথি দিসনি, আমার বুকে লাথি দিয়েছিস।“ এল আকৃতির তিন ত’লা ইটের একটা বিল্ডিং, কি ভাবে এক জনের মনের গভীরে স্থান করে নেয়, সেদিন তা বুঝিনি,আজ পরিণত বয়সে তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি। শুধু জ্ঞান নয়, মানবিকতার যে শিখা উনি জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়ে ছিলেন, তার কিঞ্চিৎ ভাগ কি এই অধম নিতে পেরেছে? উনার দেহ ও আত্মার শান্তি কামনা করছি, সেই সাথে আরও যারা চলে গ্যাছেন আমাদের ছেড়ে, প্রাক্তন শিক্ষকদের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।


আরও কিছু ঘটনা বাকী ছিল বলার,
বিকেল আর গোধূলি বেলার,
Heyyyyyyy…. DExSAAAAn, শুনবে কি? হবে কি সময়?
ঢং-ঢং-ঢং-.. শব্দটা কি কারো পরিচিত লাগছে ? “মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে, সুধার মত” – আরও একটি বাণী/শব্দের জন্য কানটা এক সময় অধীর হয়ে থাকত, কখন বাজবে? পৌষের এই মিষ্টি রোদেলা সকালে ( ১১ টা, ২ জানুয়ারি, ২০১৫) কিছুক্ষণ আগে সেই শব্দটা পুরো ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়কে নাড়া দিয়ে বেজে গেল, ষষ্ঠ ক-এর দরজা পেরিয়ে দু’টি কিশোর চঞ্চল পা ‘৭৫ পেরিয়ে ‘৮০ হয়ে ২০১৫ -এ প্রৌঢ়ত্বে। এটা প্রতীকি ছুটির ঘন্টা, তাই ছোট ছোট পায়ের মিষ্টি দাপাদাপি নেই, নেই “ছুট্টি,ছুট্টি গরম,গরম রুট্টি”-র দুরন্ত হই-হূল্লোড়। তবে ‘৬৫ থেকে ২০১৫- দীর্ঘ ৫০ বছরের বলিষ্ঠ পথ পরিক্রমায় নবীন-প্রবীণ যারা “ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়”-এর সহযাত্রী, সবাই যেন ফিরে গ্যাছে কৌশরের সেই প্রাণোচ্ছল দিন গুলোতে, সারা মাঠে গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে ছড়িয়ে প্রাণের আড্ডায় মেতেছে ‘৬৭,’৬৮,’৬৯,........,২০১৪-এর পায়রারা। সব ব্যাচ যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, তখন সঞ্চালক যুবায়ের সবার দৄষ্টি মঞ্চের দিকে ফেরানের জন্য মাইকে গলার সবটুকু জোর দিয়ে বলে উঠে : Heyyyy… DExSAAAAn (Ex-Students Association Of Dhanmondi Govt. Boys’ High School)। কিছু বিচ্ছিন্ন সাড়া পাওয়া গ্যালো। তারুণ্যের শক্তিটা আরে একটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য আরও দু,তিন বার একই আওয়াজ দিল ২০০৫ ব্যাচের “যমুনা টিভি”-র সদাহাস্যময় উপস্থাপক যুবায়ের – দর্শক-শ্রোতাদের মনঃসংযোগ ধরে রাখার অপূর্ব কৌশল। চারদিক থেকে ভেসে আসছে একটাই শব্দ- : Heyyyy….DExSAAAAn।

চমৎকার বাচন ভঙ্গির মাধ্যমে যুবায়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইনসান আলীকে স্বাগত ভাষণ দিতে অনুরোধ করলেন। এরপর সঞ্চালক DExSA-র এসরার ভাইকে কিছু বলার জন্য একান্ত অনুরোধ করল। এসরার ভাইয়ের সরল স্বীকারোক্তি – আমি ভাল বক্তা নই, কাজ ছাড়া কিছু বুঝি না। তুমুল করতালি।
এবার “স্মৄতিরোমন্থন পর্ব”- ‘৬৭ থেকে, স্কুল শুরু ’৬৫-তে, কিন্তু ম্যাট্রিক ১ম ব্যাচ ‘৬৭।

‘৬৭- ব্যাচের এক জন মঞ্চে আসলেন, সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। উনি BRRI-এর DG হিসাবে অবসরে গিয়েছেন-সাফল্যমন্ডিত ছাত্র জীবন শেষে সাফল্যের শীর্ষে পৌছে কর্ম বিরতি। স্বতঃস্ফূর্ত করতালি, সঞ্চালক যুবায়েরের প্রাসঙ্গিক,প্রত্যুৎপন্নমতি মন্তব্য- পুরো অনুষ্ঠানটিকে উপভোগ্য করে তুলেছে।

পেশায় সাংবাদিক, ’৬৮-ব্যাচ, বেশ রসিক। শুরুর সেই দিন গুলোতে নবম-দশম শ্রেণীর দুরন্ত কয়েক কিশোরের রোমাঞ্চকর হোস্টেল জীবনের চমকপদ বর্ণনা। হোস্টেলের নিম্নমানের খাবারের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হোস্টেল সুপারের পোষা মুরগি দিয়ে রসনা মিটানো, আর মুরগির পাখনা-ছাল স্যারের-ই বাসার পিছনে নিক্ষেপ গভীর রাতে। শুধু দুষ্টুমিই নয়, পড়ালেখার প্রতিও ছিল গভীর নিষ্ঠা। ইংরেজী শিক্ষক মহোদয়ের অক্লান্ত চেষ্টা এবং তারই ফলশ্রুতিতে উনার ইংরেজীতে বুৎপত্তি। উন্নত পাঠদান এবং সেই সাথে মান সম্মত প্রশ্ন, দুটো বিষয়েই স্যার ছিলেন অত্যন্ত সজাগ। তাইতো দেখি টেস্টে ছাত্র ইংরেজী গ্রামারে ৩০-এ ৩০ পাওয়ায় স্যার বার বার উনাকে জিজ্ঞেস করেছেন প্রশ্ন সহজ হয়েছে কি না?

আরে, এযে আনিস ভাই!! আমাদের কলাবাগান ষ্টাফ কোয়ার্টারের মেধাবী মুখ, রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বর্তমানে মেট্রো রেলের সাথে যুক্ত, – ’৬৯ ব্যাচের আনিসুর রহমান। একজন দ্রুতগতির দৌড়বিদ এবং ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবেও সুনাম ছিল। তুহিনকে (আমার স্ত্রী) উনার কথা বললাম সবিস্তারে। উনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র আমি গেলাম উনার কাছে। আরে তুমি বাবু (আমার ডাক নাম)! ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
‘পুরনো সেই দিনের কথা,....” দুজনেই মশগুল হয়ে গেলাম।

কিছুক্ষণ পর নিজের আসনে ফিরে এসে দেখি ’৭০-৭১ ব্যাচের সৌম্য সাদা চাপ দাড়ির বড় ভাই তার দুরন্ত হোস্টেল জীবনের বর্ণনার শেষ প্রান্তে--- স্যার, দারোয়ান উনার পিছনে পিছনে ছুটছেন, হোস্টেলের সিড়ি বেয়ে ছাদে, স্যাররাও উঠে আসছে, ধরা পড়া নিশ্চিত। একটা উপায় আছে, ছাদের পানির ট্যাংকে আশ্রয়। তন্ন তন্ন করে পুরো ছাদ খুজে পানির ট্যাংকের কাছে এসে স্যার বললেন, “এখানে বোধ হয় কেউ নেই।” অথচ .... হা..হা... ট্যাংকের ভিতরে লোহার রড ধরে ঝুলছে অকুতোভয় কিশোর!! ষাটোর্ধ একজন মানুষ, কি অবলীলায় কিশোর বনে যায় !!!

করতালি দিয়ে উনাকে অভিনন্দন জানিয়ে যুবায়ের সবাইকে মিষ্টি হেসে অনুরোধ করল সংক্ষিপ্ত কিন্তু মজার অভিজ্ঞতা বর্ণনার করতে। আরও একজন মঞ্চে, কিন্তু উনার কথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না, আমাদের ব্যাচের কাউকেই তো দেখছি না!তৌফিকের আসার কথা ছিল, মোবাইলে রিং দিলাম, একটা কাজে আটকে গ্যাছো, আসতে দেরী হবে। স্মৃতি হাতড়ে ফিরছি, মনের মনিকোঠায় একটার পর একটা স্মৃতি দৃশ্যমান হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, একটা স্মৃতিতে এসে মনটা আটকে গেল – এটাই বলব।

খুব চেনা চেনা লাগছে, কথা বলার ধরন, অঙ্গ-ভঙ্গি,চটপটে, চৌকষ..কে যেন..কে যেন..মাসুদ ভাই, আমাদের কলোনীর ৫ নাম্বার বিল্ডিংয়ের খোকনের ভাই। তখন প্রতি বছর স্কুলে রচনা প্রতিযোগিতা,কবিতা আবৃত্তি,হামদ-নাত ইত্যাদি হতো। রচনা প্রতিযোগিতা,কবিতা আবৃত্তিতে উনি প্রতি বছর ১ম পুরস্কার পেতেন। কবিতার পংক্তি গুলো এখনো মনে আছো.. “এই খানে তোর দাদীর কবর..”। চমৎকার আবৃত্তি। সাহিত্য-সংস্কৃতির সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে কি না, তা নিয়ে উনি সন্দিহান!
উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে যুবায়ের অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানালো যে, এই স্কুলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নতুন প্রজন্মের ফসল ও নিজেই। শান্ত-শিষ্ঠ একটা ছেলেকে, যে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জোর করে বিতর্কের মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রতি জানালো অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

এর পর মঞ্চে আবির্ভূত হলেন এক সময়ের কৃতি ফুটবলার, বর্তমানে স্বনাম ধন্য কোচ, মানিক ভাই। মঞ্চ আলো করে তার বিশাল দল নিয়ে একতার এক অনন্য প্রদর্শনী দেখালেন।

’৭৯ ব্যাচও কম যায় না, মঞ্চ আলো করে আসলো। উনাদের মধ্যে একজন, বি.সি.এস. কর্মকর্তা, তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, নুরুল হক ভূইয়া স্যারের স্মৃতিচারণ করলেন। নায়করাজ রাজ্জাকের মত DGBHS-এর দশম শ্রেণীর কিছু দুষ্ট বালক, “..লাল ইটের এই পথটাকে ভালবেসেছি” গাইতে গাইতে স্কুল পালিয়ে আড্ডা দিত ফার্মগেটের কোন এক বালিকা বিদ্যালয়ের গেটের সামনে (আজকের পীচ ঢালা মানিক মিয়া এভিনিউ, তখন প্রশস্ত-দীঘল রাস্তা জুড়ে ছিল লাল ইট বিছানো, দু’পাশে ছিল লাল কৃষ্ণ চূড়ার সারি – যেন সাক্ষাত কবিতা )। এই খবরে অত্যন্ত রুষ্ঠ হয়ে স্যার সবাইকে খুব বকা-ঝকা করলেন। পিতৃতুল্য স্যারের সেই স্নেহ শাসন উনি ভুলেননি। তাই মুন্সীগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসক হিসাবে কর্মরত থাকাকালীন উনি একটি স্কুলের জন্য সাহায্যের হাত অবারিত রেখেছিলেন; কারণ আমাদের স্কুলে আসার আগে স্যার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

উনার কথার রেশ ধরে যুবায়ের সবাইকে অনুরোধ করল DGBHS-এর CV পেলে যেন একটুউউউ, একটুউউউ পক্ষপাতিত্ব করেন। তাইতো “..একটু সহানুভূতি কি DExSAn পেতে পারেনা।“

ভাবতে ভাবতে মঞ্চে উঠলাম। নিউ টেন মানেই অনেক গুলো ছোট ছোট রাজ্যের অধিকার করতলগত হওয়া। তার মধ্যে আমরা টেবিল টেনিস প্রেমীরা দোতালার টেবিল টেনিস রুমটা নিয়ে বুদ হয়ে আছি, লেখা-পড়া শিকেয় উঠেছে। তখন ক্লাস শুরু হতো ১০ টায়, আমরা (টেনিস প্রেমীরা) আসতাম ৮ টায়। সম্ভবত: রুমের দায়িত্বে ছিল নিউ কলোনীর মঞ্জু (ইশরাত রহিম), কেয়ার টেকারের কাছ থেকে চাবিটা ওই নিয়ে আসত। সেদিন সবাই অস্থির হয়ে টেবিল টেনিস রুমের সামনে পায়চারি করছে, ৯ টা বেজে গেল, রুমের চাবিটা এখনও হাতে এলো না, কেয়ার টেকার ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন চাবি দিয়ে চেষ্টা করা হলো, যাদের হাতে জোর বেশি, তারা দরজার কড়া ধরে মোচড়া-মুচড়ি করছে, দেখতে দেখতে ৯:৩০ হয়ে গেল, মুকিত এগিয়ে এসে সবাইকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে এসে জোড়া পায়ে তালায় লাথি মারল। প্রচন্ড শব্দ হলো, কিন্তু তালার কিছুই হলো না। সবাই হৈ হৈ করে মুকিতকে উৎসাহ দিচ্ছে, দু’বার, তিনবার..কড়া ছুটে দরজা খুলে গেল, তাল সামলাতে না পেরে মুকিত পড়ে গেল, আমরা ওকে টপকিয়ে ব্যাটের দখল নিতে ব্যস্ত, সমস্ত উত্তেজনায় জল ঢেলে দিল একটা কন্ঠ, “তোরা এটা কি করলি?” কখন যে হেড স্যার পিছনে এসে দাড়িয়েছে, চরম উত্তেজনায় কেউ টের পাইনি। ভো দৌড়, কিছুক্ষণের মধ্যে জায়গা ফক্কা, যে যার ক্লাসে সুবোধ বালকের মত আসন নিয়েছে, কিন্তু বুক দুরু দুরু কাপছে। বিপদের এখানেই শেষ নয়, মাঠে এ্যাসেম্বিলির জন্য ডাকা হচ্ছে। আমরা পাপীরা লাইনের পিছনে, ঘটনা জানতে বাকী নেই কারো। জাতীয় সংগীত শেষে হেড স্যার থমথমে মুখে যা বলেছিলেন, তার সব আজ মনে নেই, শুধু একটা কথা এখনও কানে বাজে “ তোরা তালায় লাথি দিসনি, আমার বুকে লাথি দিয়েছিস।“ এল আকৃতির তিন ত’লা ইটের একটা বিল্ডিং, কি ভাবে এক জনের মনের গভীরে স্থান করে নেয়, সেদিন তা বুঝিনি,আজ পরিণত বয়সে তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি। শুধু জ্ঞান নয়, মানবিকতার যে শিখা উনি জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়ে ছিলেন, তার কিঞ্চিৎ ভাগ কি এই অধম নিতে পেরেছে? উনার দেহ ও আত্মার শান্তি কামনা করছি, সেই সাথে আরও যারা চলে গ্যাছেন আমাদের ছেড়ে, প্রাক্তন শিক্ষকদের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।


আরও কিছু ঘটনা বাকী ছিল বলার,
বিকেল আর গোধূলি বেলার,
Heyyyyyyy…. DExSAAAAn, শুনবে কি? হবে কি সময়?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: এত সুন্দর একটা লেখা! কত সুখময় স্মৃতিচারণ! প্রায় আট মাস ধরে মন্তব্যহীন পড়ে রইলো, কষ্ট পেলাম।
আরও অনেক পুনর্মিলনীতে যোগ দেয়ার সুযোগ আসুক জীবনে, আরও অনেক ধারা বর্ণনা আসুক, এই দোয়া করি।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আহসান ভাই, আপনি দেখছি ডিটেকটিভদের মত।
আমার পুরনো খঁড়ের গাঁদায় সুঁই খুঁজছেন!!!

আসলে লেখাটার কথা আমিও ভুলেই গিয়েছিলাম।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার যে কতটা ভাল লাগছে, তা কেন ওজন পরিমাপক দিয়ে পরিমাপ করে বলতে পারব না।

আল্লাহ্ আপনার দোয়া কবুল করুন।

ভাল থাকুন। সবসময়।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.