নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোছনা ও জননীর গল্প

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৯






ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওঠে সময় দেখলাম পৌনে তিনটা, চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই। সময়টাকে কাজে লাগাই, দাঁত মাজলাম, ওজু করে নামাজ পড়লাম। তার পরও দেখি তিনটা পনোরো। কি করি? একটা বইয়ের কথা মনে পড়ল, হুমায়ূন আহমেদের লেখা – “জোছনা ও জননীর গল্প”। হঠাত করে এত রাতে ওই বইটার কথা মনে পড়ার একটা কারণ আছে।

সালটা খেয়াল নেই, বই মেলাতে গিয়েছি আমরা তিন জন – আমি, আমার স্ত্রী (তুহিন) ও আমার ছেলে (তানজিম)। শিশু তানজিমের জন্য কিছু শিশুতোষ বই কিনলাম, ও প্রথম শ্রেণীতে পড়ে, কিন্তু গল্পের বইয়ের খুব শখ।কী কী বই কিনব তা আমরা দু’জন মেলায় আসার আগেই ঠিক করে এসেছি – তালিকায় “জোছনা ও জননীর গল্প” ও আছে, সেবারই বইটা প্রথম মেলায় এসেছে। অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে অসম্ভব ভীড়, হুমায়ূন আহমেদ অটোগ্রাফ দিচ্ছেন তার কেনা বইয়ে তার ভক্তদের। বই কিনে যথারীতি লাইনে দাঁড়ালাম অটোগ্রাফের জন্য, তানজিমের খুব ইচ্ছা অটোগ্রাফটা ও নিবে। ভক্তরা অটোগ্রাফ নিয়ে হাসিমুখে প্রস্থান করছে। তানজিমের পালা এগিয়ে আসছে, লাইনে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছি, লেখক গুরু-গম্ভীর এই উপন্যাসের জন্য তার এই ক্ষুদে ভক্তের জন্য কি লিখবেন? বইটা হাতে নিয়ে উনি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে নাম জানতে চাইল। ও উত্তর দিল:
-তানজিম।
মাথা নামিয়ে খস খস লিখে বইটা ফেরত দিলেন।
উনার প্রত্যুৎপন্নমতি আমাকে মুগ্ধ করল, উনি সম্ভবত: লিখেছিলেন: “বড় হয়ে পড়বে”।
আমার সেই অনুমানটা যাচাই করার জন্যই এই খোঁজাখুঁজি।

বুক শেলফে খুঁজতে গিয়ে দেখি হুমায়ূন আহমেদের “শ্রেষ্ঠ উপন্যাস”- অনেকগুলো ভাল ভাল উপন্যাসের সংগ্রহ। বের করে নিয়ে ওটার উপরের খাপটা সরাতেই দু’তিনটা তেলাপোকা হাত বেয়ে গায়ে ওঠে পড়ল-বইটা টেবিলে রেখে গা ঝাড়া দিলাম, দৌড়ে তারা পালাল্। আমার ওপর ওদের এই উপদ্রব আমি হাসি মুখে মেনে নেই, কিন্তু যখন দেখি বইয়ের পাতার গায়ে তাদের ডিমের কারুকার্য, যা বই গুলোকে নোংরা করে অপাঠ যোগ্য করে তোলে, তখন মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু বই কেঁটেও ফেলেছে। একটা কাপড় নিয়ে এসে বইটার পাতাগুলো পরিষ্কার করলাম।তারপর পেলাম হুমায়ূন আহমেদের দশটা সেরা ছোট গল্পের সংকলন “দশজন”, ওটা মোটামুটি ভালই আছে। ড্রইং রুমের বুক শেলফটার সব গুলো বই খুঁজে দেখলাম, “জোছনা ও জননীর গল্প” বইটা পেলামনা। সম্ভাব্য আরোকটা জায়গা, শোবার ঘরের পুরনো বুক শেলফটা। শোবার ঘরে তুহিন অঘোরে ঘুমাচ্ছে, লাইটা জ্বালালে ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে, তাই বিরতি দিলাম, সকালে খুঁজব।

১৫ই আগস্ট, জাতীয় শোকদিবস – অফিস যাওয়ার তাড়া নেই। ফজরের নামাজ পড়ে ধানমন্ডি লেকের দিকে রওনা হলাম ঝিকাতলা থেকে। ধানমন্ডি তিন নম্বর রোডের আওয়ামী লীগের অফিসে থেকে ভেসে আসছে কুরআন তেলায়াতের আওয়াজ, শুনতে শুনতে আনাম রাংগসের পাশ দিয়ে ঢুঁকে গেলাম লেকে। রাতে বৃষ্টি হয়েছে, ঠান্ডা হাওয়ায় গা জুড়িয়ে যাচ্ছে, লেকের পাড়ের গাছগুলো নুয়ে পড়েছে জলের একেবারে কাছে, স্বচ্ছ পানিতে তাদের ছায়া-প্রকৃতি এখনো কত নির্মল!!!
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই মানুষকে চলে যেতে হয়, সেই চলে যাওয়ার দলে আছে মা, বাবা আরো অনেকে, আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। অপেক্ষমানের তালিকায় আছি আমি, আমরা।
তাই ছুটির এই সকালে চলে গেলাম আজিমপুর – যেখানে শুয়ে আছেন মা, বাবা। বাসায় ফেরার পথে কিছু কাঁচাবাজার করে বাসায় ফিরলাম আটটায়।মুখহাত ধুয়ে সোজা শোবার ঘরের বুক শেলফে তল্লাশী। একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম বহুল কাঙ্খিত বইটা। কিন্তু বইটার পাতাগুলো খোলা যাচ্ছে না, তোলাপোকার পাড়া ডিম শুকিয়ে পাতাগুলোকে সেঁটে দিয়েছে। একটি কাপড় দিয়ে যত্ন করে সব পরিষ্কার করে বইয়ের পাতাগুলো অবমুক্ত করলাম।
হুমায়ূন আহমেদের লেখাটা খুঁজে পেলাম, উনি লিখেছিলেন : “তানজিম বড় হয়ে পড়বে।”

মোবাইলটা নিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম।
হুমায়ূন স্যারের কথা ঠিক, সেদিনের শিশু তানজিমের গল্পের বই পড়ার খুব নেশা। পড়তে পড়তে সেই শিশু কিশোর বয়স থেকেই এক-আধটু লিখে আসছে, তারুণ্যে সে লেখা আরো পরিপক্ক হয়েছে। এবার একুশের বইমেলায় বেশ কয়েকটা গল্প বেরিয়েছে। ওর প্রায় সবলেখার প্রথম পাঠক আমি আর আমার প্রায় সবলেখার প্রথম পাঠক ও। পিতা-পুত্রের এই যৌথ প্রচেষ্টায় একটা কঠিন প্রকল্প হাতে নিয়েছি - “জোছনা ও জননীর গল্প” নিয়ে আমার অনুভূতির কথা লিখব, আলোচনা নয়।

এত বিশাল মাপের একজন লেখকের এত মহান একটা উপন্যাসের আলোচনা আমার মত একজন নগণ্য মানুষের মানায় না, কিন্তু ২০০৪ সালে পড়া উপন্যাসটা আমাকে যেভাবে আলোড়িত করেছিল, তা পাঠকদের জানাতেই আমার এই দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। অনেককিছুই ভুলে গেছি, আবার নতুন করে পড়ছি, প্রতি সপ্তাহে কিছু লেখার আশা রেখে আজকের মত শেষ করছি।

ঢাকা
১৮ আগস্ট ২০১৬

(রি-পোস্ট)

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: বইটা পড়েছি।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।

কেমন লেগেছে?

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: কেমন লেগেছে?

দারুণ !

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আমার ও খুব ভালো লেগেছে।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদুর রহমান ভাই।

আপনার সাথে একমত।

৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

রাকু হাসান বলেছেন:


জোছনা ও জননী’র গল্প বইটি স্যারের সেরাদের সেরা বই । সবার পড়া উচিত । পোস্ট ভালো লেগেছে।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: কৃতজ্ঞতা।

জোছনা ও জননী’র গল্প বইটি স্যারের সেরাদের সেরা বই । সবার পড়া উচিত । - আপনার সাথে একমত, বইটা সবারই পড়া উচিত।

৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বইটা পড়ার ইচ্ছে আছে। এখনও পড়া হয়নি :(

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৭

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।
সময় পেলে পড়ে নিতে পারেন।

৬| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ পারমাণবিক বোম।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: হা..হা..।

ভালোই বলেছেন।

৭| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২১

অলিউর রহমান খান বলেছেন: জনাব, বইটি কি অনলাইনে কোন ভাবে সংগ্রহ করা যাবে?
তানজিম শিশু ছিলেন, গল্প পড়ার পোকা ছিলেন, এখন তিনিও লিখছেন; জেনে ভালো লেগেছে।
আপনার ছেলের লিখা ও কি আমি কোন ভাবে
অনলাইনে পেতে পারি? দয়া করে জানাবেন।

আপনার লিখাটা আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। স্বচ্ছ, সুন্দর, গোছানো লিখা।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: জোছনা ও জননীর গল্প pdf - লিখে ব্রাউজ করলে বেশ কিছু সাইট পাবেন বিনামূল্যে পিডিএফ ডাউনলোড করার জন্য।

নীচে একটা লিংক দিলাম।

http://priyoboimela.blogspot.com/2016/08/jochhna-o-jananir-golpo-humayun-ahmed.html


তানজিম পড়াশোনা নিয়ে এখন বেশী ব্যস্ত।
লেখালেখির তেমন সময় পায় না।

আপনার আগ্রহের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।


৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫২

জুন বলেছেন: আপনার লেখা সব সময়ই ভালো লাগে তবে হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে এই লেখাটি সব লেখাকেই অতিক্রম করে গেছে । আগামীতে উনাকে নিয়ে আপনার লেখালেখির অপেক্ষায় ।
+

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আপনার কথায় খুব উৎসাহ পেলাম।

ইচ্ছে আছে উনাকে নিয়ে আরও লেখার।

৯| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: শামছুল ইসলাম ,




আগেও আপনার পর্বে পর্বে লেখা "জোছনা ও জননীর গল্প" এ মন্তব্য করেছি । কিন্তু এটা পর্ব না হয়ে আলাদা ও একক একটি লেখা । স্মৃতিচারণ, জোছনা ও জননীর গল্পকে ঘিরে । উপন্যাসটি যে আপনাকে জোছনার আলোয় ভিজিয়ে দিয়ে গেছে , লেখাটি তারই স্মারক ।
ভালো বলেছেন , তেলাপোকা বুকশেলফে ঘুরুক ক্ষতি নেই কিন্তু ডিমের কারুকাজ বড্ড বিশ্রী লাগে ।

ভালো থাকুন। শুভেচ্ছান্তে ।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি যে, আপনি আমার প্রায় প্রতিটা লেখায় (লেখার মান যেমন ই হোক) মন্তব্য করেছেন। এবং উৎসাহ দিয়েছেন।

হা...হা... ভালো বলেছেন , তেলাপোকা বুকশেলফে ঘুরুক ক্ষতি নেই কিন্তু ডিমের কারুকাজ বড্ড বিশ্রী লাগে ।


ভালো থাকুন। একরাশ শুভেচ্ছা।

১০| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯

প্রামানিক বলেছেন: খুব ভালো একটা বই নিয়ে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।

আসলেই খুব ভালো একটা বই। পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা যায়।

১১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২২

কালীদাস বলেছেন: আগের পোস্টে কমেন্ট করেছি কিনা মনে নেই। স্মৃতিকথাটা সুন্দর :)

এই বইটা আমি একটা পার্টিকুলার রেফারেন্স হিসাবে প্রায়ই ব্যবহার করি। এক শ্রেণীর লোক আছে ড. আহমেদকে নিয়ে সবসময় ক্রিটিসাইজ করে "হুমায়ুন বাজারি লেখা লেখে, কালজয়ী কোন কিছু লেখার ঘিলু নাই, ব্লা ব্লা.... অমুকের মত লেখা জিন্দেগীতে লেখতে পারবেনা, ব্লা ব্লা .... " এদের ফার্স্টেই প্রশ্ন করি এই বইটা পড়েছে কিনা? চুপ হয়ে যায়।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।

এই বইটা আমি একটা পার্টিকুলার রেফারেন্স হিসাবে প্রায়ই ব্যবহার করি। - দারুণ আইডিয়া। যারা উনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন তাঁদের জন্য একটা মোক্ষম জবাব এই বইটা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.