নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুয়েটের স্মৃতি (১৯৮২-৮৮): পর্ব – ০৫

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০২



মানুষ নিজে যা পারে না, তার প্রতি তার দুর্বলতা থাকে, আকর্ষণ থাকে। সুন্দর করে কথা বলতে পারা, মানুষকে সহজে কাছে টেনে নেওয়া, ছোট-বড় সবার সাথে অবাধে মিশতে পারা – এই সব দুর্লভ গুণের অধিকারী মানুষদের প্রতি আমি আকর্ষণ অনুভব করতাম, এখনো করি।
.
চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের গেট পেরিয়ে পাঁচ তরুণ এগিয়ে চলেছে। বিকেলের রোদ ফিকে হয়ে সন্ধ্যার আধার জোকে বসছে। সাথে আছে এই কলেজেরই বড় ভাই রফিক ভাইয়ের একটা চিরকুট। চিরকুটে একজনের নাম লিখা আছে। তার সাথে যোগাযোগ করলে উনি তরুণদের থাকার ব্যবস্থা করে দিবেন হোস্টেলে। টিনের একতলা বড় আকারের ঘরের সামনে চেয়ার পেতে চা খাচ্ছে কিছু তরুণ। পরে এই ক্যান্টিনে কত নাস্তা করেছি, আড্ডা দিয়েছি। পাঁচ তরুণ সেদিকে এগিয়ে যায়। শাকিল বিনীত ভাবে উনাদের কাছে জানতে চান, কে কে হোস্টেল কোন দিকে? তরুণদের মধ্যে থেকে একজন জানতে চান, আপনারা কার কাছে যাবেন? শাকিল নামটা বলা মাত্রই উনি একগাল হেসে বলেন, আমি ই দেলোয়ার। রফিক তোমাদের কথা আমার কাছে বলে গেছে। চলো, বলে উনি বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের নিয়ে হাঁটা দিলেন।হোস্টেলের পথে হাঁটতে হাঁটতে গল্পে গল্পে মনের চাপা উদ্বেগ কখন হাওয়া। সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে এমন চমৎকার আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ। নোটিশ বোর্ডে সিট প্ল্যানিং দেখে উনি আমাদের রুম ঠিক করে দিবেন। আমি, মহসিন আর জামিল পরিক্ষার্থী । লুৎফর আর শাকিল আমাদের সঙ্গ দিতে এসেছে। লুৎফরের সলিমুল্লাহ মেডিকেলে হয়ে গেছে। আমরা তিন পরিক্ষার্থী তখনো পেন্ডুলামের মতো দুলছি, কোথাও ভর্তি হইনি। নোটিশ বোর্ড মহসিনের নাম নেই। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়াও সেবারই প্রথম ইংরেজীর নম্বর বিবেচনায় আনা হয়। ইংরেজীতে নম্বর কম থাকায় মহসিনের নাম সিট প্ল্যানিংয়ে নেই। আমাদের সবার মন খারাপ।পরিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখা করার জন্য আমি আর জামিল এক রুমে; ওরা তিনজন অন্য রুমে। তিন হোস্টেলেই আমাদের মতো ঢাকা বা অন্য জেলা থেকে আগত পরিক্ষার্থীদের বড় ভাইরা নিজের ছোট ভাইয়ের মতো জায়গা করে দিয়েছেন। জায়গা করে দেওয়ার জন্য রফিক ভাইয়ের মতো অনেকেই হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে গেছেন। কি অনুপম হৃদ্যতা! পরবর্তীতে কালে আমরাও ভর্তি পরিক্ষা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য নিজেরা ডাবলিং করেছি, দু’দিনের জন্য বাড়ি চলে গেছি।
.
পরিক্ষা শেষে সেদিনই দেলোয়ার ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে এলাম। ইচ্ছে ছিল কক্সবাজার বেড়াতে যাবো। মহসিনের জন্য আমাদেরও মন খারাপ। (আমরা যাকে মন্দ ভাবি, পরে সেটাই অনেক সময় ভালো হয়ে দেখা দেয়। পরের বছর মহসিন বুয়েটে পুর কৌশলে ভর্তি হয়েছিল।) তাই সিদ্ধান্ত হলো পতেঙ্গা সৈকতে এক সন্ধ্যা বেড়িয়ে পরদিন ঢাকা রওনা হবো। দুধের সাধ ঘোলে মেটানো আর কি! শহরের একটা হোটেল রাতের জন্য ঠিক করলাম। হোটেলে ব্যাগ রেখে লক্কড়-ঝক্কড় একটা বাসে চড়ে পৌঁছে গেলাম পতেঙ্গা। সমুদ্র দেখার অপার আনন্দে সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা । জলে সূর্যের লাল আভা তরল সোনা ছড়িয়ে বহমান। অনেক মানুষের ভিড় কমে আমরা কিছু যুবক তখনো সৈকতে ঘুরছি। সুঠাম একহারা গড়নের টক টকে ফর্সা এক যুবক আমাদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। আমরা কোথা থেকে এসেছি, কি জন্য এসেছি সব কিছু খুঁটিয়ে জেনে নিলেন। উনার পরিচয় দিলেন, হেলাল। নেভিতে আছেন। উনার সঙ্গের যুবকের নাম মুজিব। উনিও নেভিতে আছেন। উনার মাধ্যমেই জানলাম, সন্ধ্যার পর এই জায়গাটা ভালো নয়। অনেকে এখানে নেশা করে। উনি আমাদের সৈকত ত্যাগ করতে অনুরোধ করলেন। আমরা উনার সাথে সৈকত থেকে বেরিয়ে আসলাম। কথায় কথায় জানলাম, আমাদের মতো উনারও একটা ছোট ভাই আছে। উনি আমাদের উনার সেই ছোট ভাইয়ের মতোই আপন করে নিলেন। হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে উনাদের নেভির কোয়ার্টারে রাখার ব্যবস্থা করলেন। সম্ভবত আমরা ঈসা খাঁ তে রাতে ছিলাম। রাতের খাবার জন্য সাত জনের দলটা একটা হোটেলে বসলো। কর্ণফুলির ওপাড়ে আনোয়ারা থানা। সেখানে হেলাল ভাই উনার রোমাঞ্চকর অনেক অভিযানের গল্প শোনালেন। উনার কাছেই শুনলাম, আনোয়ারা স্মাগলিংয়ের আখড়া। ওরা কুঁড়ে ঘরে বাস করে। কিন্তু ভিতরে টিভি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শখের বিলাসি দ্রব্যের ছড়াছড়ি। খাওয়ার সব বিল উনি দিলেন। মাসুদ রানা পড়ে এতোদিন শুধু বইয়ের পাতায় রহস্য খুঁজে বেরিয়েছি। আজ জ্বলজ্যান্ত মাসুদ রানাকে পেয়ে তার সঙ্গ ছাড়তে মন চাইছিল না। রাতে ভালো ঘুম হলো না। কখন হেলাল ভাইয়ের সাথে সকালে দেখা হবে।
.
সকালে মুজিব ভাই আমাদের নাস্তা করতে নিয়ে গেলেন। হেলাল ভাই একটা কাজে আটকা পড়ে গেছে বলে জানালেন। মুজিব ভাই আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন। আমাদের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল – হেলাল ভাই কী আমাদের কোন ব্যবহারে বিরক্ত হয়েছেন? আড্ডাটা আর জমছে না। আড্ডার মধ্যমনিই যে নেই। বাসে উঠার আগে হেলাল ভাই আসলেন। গতকালের আন্তরিকতা, উষ্ণতা আজ উনার কথা-বার্তায় পেলাম না। কিছুক্ষণ পর পাঁচ যুবক বাসে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল । পিছনে পড়ে রইল হেলাল-মুজিব ভাইয়ের খন্ডকালীন অম্ল-মধুর স্মৃতি।
.
কিছুদিন পর চিটাগাং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির জন্য আবার সেই ক্যাম্পাসে ফিরে এলাম। হোস্টেল বেছে নেওয়ার সময় মনে পড়লো দেলোয়ার ভাইয়ের কথা; উনার সাহচর্য পেতে হলে কে কে হলে থাকতে হবে। রুমমেট কাকে নেব ভাবছি। এমন সময় দেখা হলো ভান্ডারির সাথে। ভান্ডারি আর আমি একসাথে নটরডেম কলেজে গ্রুপ থ্রিতে ছিলাম। যে ব্যাকব্রাশ করা কাধ ছড়ানো লম্বা চুলের কারণে ওর ভান্ডারি খেতাব, সেই চুল অনুপস্থিত। তবে চালচলনে সেই ড্যামকেয়ার ভাবটা যায়নি। কলেজে ভান্ডারি খেতাবের আড়ালে ওর আসল নাম ফজলে আহসান অনেকেই ভুলে গিয়েছিল। ওর সাথে আমাদের গ্রুপ থ্রির ফেরদৌসকেও পেয়ে গেলাম। নটরডেম কলেজে আমাদের তিনজনের রোল নম্বর ছিল পরপর – ফেরদৌস (৮২৩৪২), আমি (৮২৩৪৩) ও আহসান (৮২৩৪৪) । এখানে এসে কে কে হোস্টেলে আমরা তিনজন উঠলাম ৪৬৫ তে । চারতলায় আমাদের বিপরীত করিডোরেই দেলোয়ার ভাইয়ের রুম। চারতলাতেই আমাদের ব্যাচের আরো কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়ে গেল- শংকু, চন্দ্র, বসাক, .... আরো অনেকের সাথে । জীবনে এই প্রথম আমি ঘর ছেড়ে বাইরে এলাম । বাসার সবাই শঙ্কিত ছিল শান্তশিষ্ট, বোকা-সোকা এই আমাকে নিয়ে।তবে যে কোন পরিবেশের সাথে আমি কেমন করে যেন মানিয়ে নিতে পারি । সেই প্রথম আমি বুঝলাম, আমার অভিযোজন ক্ষমতা বেশ ভালো।
.
শুরু হলো হোস্টেল জীবন। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের পরিক্রমণ।
.
আগের পর্ব: Click This Link
.
চলবে...
.
৩১ আগস্ট ২০২০
মো. শামছুল ইসলাম
.

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

আমি সাজিদ বলেছেন: দারুন। আমি গ্রুপ ফোরে ছিলাম, ১১ সালের ব্যাচ।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: কলেজের ছোট ভাই হিসেবে তোমাকে তুমি ডাকাই যায়।

ধন্যবাদ ছোট ভাই।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: চুয়েটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এক রাত হলে ছিলাম।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: রাজীব ভাই, আপনার চুয়েটের পরিক্ষা ও রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৭

মা.হাসান বলেছেন: সম্ভবত বেশির ভাগ ছাত্রের জন্যই হল জীবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আগের পর্বের ছা্ত্র জীবন থেকে হঠাৎ করে ছাত্রত্ব প্রত্যাশী জীবনে চলে যাওয়ায় প্রথমে ভেবেছিলাম মনে হয় এক পর্ব বাদ পড়েছে, পরে বুঝলাম না, এই স্টাইলেই লিখতে চেয়েছেন।

সে সময়ে আসলে জীবনের জটিলতা কম ছিলো বলে নেভিতে কর্মরত একজন স্বল্প পরিচয়ে আপানাদেরকে হোটেল থেকে নেভির কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন এমনটা সম্ভব না বলেই মনে করি।
পরের দিন হেলাল ভাইয়ের অন্য রকম আচরনের কোনো ব্যাখ্যা পেয়েছিলেন কি?

ভর্তি পরীক্ষার্থী আসার সময়ে হল ছেড়ে আমিও সাময়ীক ভাবে দূরে থেকেছি কোনো এক বছর, তবে সেটা জায়গা করার জন্য না, বরং অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য।
সিরিজ খুব ভালো চলছে।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।

হেলাল ভাইয়ের অন্য রকম আচরণের কোন ব্যাখ্যা আর পাই নাই।

সাথে থাকার জন্য আবার ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.