নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুয়েটের স্মৃতি (১৯৮২-৮৮) : শেষ পর্ব

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৫৩


.
মজাদার ঘটনার কুশীলবরা কিন্তু আর দশটা ছেলের মত নয়, এদেরকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই কথাটা বলছি । আবার সুদূর প্রসারী কোন পরিকল্পনা করে কিন্তু মজার ঘটনার জন্ম দেওয়া যায়না, হঠাৎ করেই ঘটে। এবং এর কুশীলব-সহকুশীলবদের মধ্যে একটা খুব ভাল বোঝা পড়া থাকে, না হলে ঘটনা মাঝপথেই কেঁচে যায়। এই বোঝা পড়াটা গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল বিনোদনহীন শহর থেকে পনের মাইল দূরে পাহাড়তলির মতো একটা অজ পাড়া গাঁয়ের মধ্যে কলেজের অবস্থান। ’৮২-ব্যাচের ১৮০ টা ছেলে যেন এই ক্যাম্পাসটাকেই তাদের ঘর বানিয়ে ফেলেছিল বছর না ঘুরতেই। সেই পরিবারের কয়েকটা ছেলে ’৮৫-এর এক স্নিগ্ধ বিকেলে যে মজাদার ঘটনা ঘটিয়ে ছিল, তাই আজ বলব।
.
কিছুটা ‘বিনোদন’ দেওয়ার জন্যই হয়ত কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি সপ্তাহে একদিন শহরে ছাত্রদের জন্য একটা বাস সার্ভিস চালু করেছিল - বারটা মনে নেই। ক্লাস চলত দুপুর ১ টা পর্যন্ত, দুটা কি আড়াইটায় বাস ছাড়ত, শহরের রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফিরতি বাস ছাড়ত সন্ধ্যার পর। সেদিনও বাস সার্ভিস ছিল, তাই দুপুরের পর সব গুলো ছাত্রাবাসই ঝিমিয়ে গিয়ে ছিল। তিনটা ছাত্রাবাস ছিল ছেলেদের। কলেজ গেট থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে গেলে প্রথমে সাউথ, তারপর নর্থ, সবশেষে কে কে(কুদরত-এ-খুদা) হোস্টেল। আরো দক্ষিণে পুকুর, খেলার মাঠ, স্যারদের বাসা এবং ছাত্রীদের থাকার জন্য একটা বাসা। হোস্টেল গুলো লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত। হোস্টেল থেকে আরো পশ্চিমে ছোট টিলার ওপর বেশ কয়েকটা বিল্ডিঙে ক্লাস হতো । সবুজ পাহাড় ঘেরা প্রকৃতির বুকে সাদা সাদা দালান গুলো দেখতে নয়নাভিরাম ছিল। আমি(ME) ছিলাম কে কে ছাত্রাবাসের ৩৬৫-তে, রুমমেট ছিল আহসান(EE),ওহাব(ME) । দিবা নিদ্রার প্রতি আমাদের ৩ জনারই পরম আসক্তি ছিল। আর কারো মন খারাপ হলে বা আড্ডা দিতে চাইলে বা কোন মজার ঘটনার পরিকল্পনার জন্য ৩৬৫-র দ্বার ছিল অবারিত । ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ শুয়ে আছি, বাইরে থেকে কেউ ভেজানো দরজায় টেকা দিল। আমি বললাম , “ধাক্কা দাও।” শঙ্কু ভিতরে ঢুকল, আমরা তিন জনই জেগে গেছি। শঙ্কু(CE) একটা চেয়ার টেনে বসল। কিছুটা চাপা স্বরে ফিস ফিস করে বললে, “বিল্লার(EE) বাবা-মা এসেছে”। আহসানঃ “উনারা তো প্রায়ই আসেন।” শঙ্কু আরো চাপা স্বরে, “বিল্লাহ,মানিক ভাই(EE) নেই।”
আহসানের সাথে বিল্লার বেশ খাতির, ও বলল, “ডুপ্লিকেট চাবি তো খালাম্মার কাছে থাকার কথা।” শঙ্কু এবার আহসানের বিছানায় গিয়ে বসল, “উনারা রুমে ঢুকেছেন, হাতে আলাউদ্দিনের মিষ্টির প্যাকেট।” আমি ভাবছি, ছেলের জন্য মা-বাবা মিষ্টি আনতেই পারে, অসুবিধাটা কোথায়?
আহসানঃ “কয় প্যাকেট?”
শঙ্কুঃ “পাচ-ছয় প্যাকেট।”
ওহাব শঙ্কুর কথায় একটু সন্দেহ প্রকাশ করেঃ “পাচ – ছয় প্যাকেট?”
ওহাবের দোষ দিয়ে লাভ নেই, ভাবলেশহীন চিত্তে মজা করার জন্য এর আগে অনেককে শঙ্কু বোকা বানিয়েছে, মুখে এক ফোটা হাসির রেখা দেখা যায়নি ।
আত্নপক্ষ সমর্থনের জন্য শঙ্কু বলেঃ “সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় খালাম্মার সাথে আমার দেখা হয়েছে,কথাও হয়েছে।”
আমি শঙ্কুর পক্ষ নেইঃ “তিন- চার প্যাকেট তো হবে?”
শঙ্কুঃ “অত ভাল করে তো দেখতে পারি নাই।”
এবার আহসান আসল কথায় আসেঃ “খালাম্মারা কি চলে গ্যাছেন?”
এমন সময় বাইরে থেকে নোমানের(ME) গলাঃ “গুরু, আসঅনি।” নোমান সিলেটের ছেলে, কথায় তাই একটু টান ।
অনেকেই আহসানকে “গুরু” বলে ডাকে। কারণ কোন কিছু বুঝতে হলে, সেটা ম্যাকানিক্যাল হোক আর ইলেকট্রিকাল হোক, ওর কাছে আসলে কখনো কাউকে না বলেনি । না জানা থাকলে বইটা রেখে যেতে বলতো, তার পর নিজে পড়ে বোঝাত। সিলেবাসের চেয়ে সিলেবাসের বাইরের Technical বইয়ের প্রতি ওর আগ্রহ বেশী ছিল। ওর সাথে আমার পরিচয় নটর ডেম কলেজ থেকে – গ্রুপ থ্রীতে। তখন হালকা পরিচয় ছিল, First Class – এর পরোয়া করে না, ভাল ফলাফলের পরোয়া করে না, শুধু জানার জন্য পড়ে – অদ্ভুত! অনেক প্রবন্ধ পড়েছি, জ্ঞান আহরণই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য – বাস্তবে কাউকে পাইনি, আর কাউকে পাব কি না তাও জানিনা।
যাই হোক ঘটনায় ফিরি।
আহসান ওর দরাজ গলায় হাঁক ছাড়লঃ “আছি।”
শঙ্কু গম্ভীর ভাবে ওকে দরজাটা বন্ধ করে ভিতরে ঢুকতে বলল, নোমানের চোখে কিঞ্চিৎ বিস্ময় – আমাদের রুমের দরজা রাতে ঘুমানোর আগে ছাড়া বন্ধ হয় না। যাই হোক – আপাততঃ যথাজ্ঞা।
সমস্ত পরিস্থিতিটা শঙ্কু নোমানকে সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলল – এই কাজে ও এক্সপার্ট ।
নোমানকে দায়িত্ব দেওয়া হল, চন্দ্র(EE) (শঙ্কুর রুমমেট) যেন বিল্লার রুমের দিকে খেয়াল রাখে, খালাম্মারা বেরোনোর সাথে সাথে ৩৬৫-তে খবর দিতে।
.
এখানে বিল্লার রুমের অবস্থানটা একটু বলে নেই। বিল্লার রুম সম্ভবতঃ ৩৫৮, তার দুরুম পর নোমানদের রুম তার পর শঙ্কুদের রুম – পুব থেকে পশ্চিমে টানা, তার বিপরীতে আমাদের ব্লক , মাঝখানে একটা বারান্দা দিয়ে করিডর দুটা যুক্ত।
সুতরাং চন্দ্রর জন্য ব্যাপারটা সরল। কিছুক্ষণ পর নোমান ফিরে আসলো। আমি, ওহাব দুজন প্রায় একই সাথে বলে উঠলাম, “কিন্তু রুমের চাবি পাবে কোথায়?”
আহসান অভয় দেওয়ার ভঙ্গিতে বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে বললে “কুছ পরোয়া নেহি, জানলার কাছে বিছানার নীচে চাবিটা থাকতে পারে।” যাদের রুমের একটাই চাবি, তারা অনেকেই তালা মেরে চাবিটা জানালার কাছে বিছানার নীচে রেখে জানালাটা ভিজিয়ে দিত, পরে যেই আগে আসত চাবিটা পেয়ে যেত। এবার অপেক্ষার পালা, কখন চন্দ্র আসে?
.
সময় যেন আর যেতেই চায় না। অবশেষে চন্দ্র এসে খবর দিল, উনারা চলে গ্যাছেন। আমরা দ্রুত অ্যাকশনে গেলাম; আহসান, শঙ্কু , নোমান আর আমি ৩৫৮-এর সামনে, চন্দ্র করিডরের পশ্চিমে আর ওহাব পুবে নজর রাখছে – কেউ আসে কি না। শঙ্কু জানালাটা খুলে ভিতরে হাত ঢুকায়, বিছানার নীচ পর্যন্ত হাত যাচ্ছে না, শঙ্কুকে সরিয়ে নোমান চেষ্টা করে, একই ফল । আমরা কিছুটা হতাশ , আহসান এগিয়ে আসে, ও বেশ লম্বা, ওর হাতও বেশ লম্বা, কিছুক্ষণ চেষ্টার পর কাঙ্খিত চাবি নিয়ে ওর হাত বেরিয়ে আসে। দ্রুত তালা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখি, সত্যি আলাউদ্দিনের মিষ্টির প্যাকেট, তবে দু’ টা, তাতে কি? আগেই ঠিক করা ছিল, কম্ম সাবাড় করতে হবে ছাঁদে । সবাই সুবোধ ছেলের মত হাঁটতে হাঁটতে চার তলা পেরিয়ে ছাদে।
.
এর পরের ঘটনা, খুবই সরল, ছয় তরুণের পেটে আলাউদ্দিনের দুই কেজি চালান হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই; বিকেলের নাস্তাটা চানা-বুট আর পেঁয়াজুর পরিবর্তে রাজসিক ভাবে হওয়ায় সবাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। বিকেল গড়িয়ে কখন যেন পাহাড়ি মায়াবী সন্ধ্যা পশ্চিমের ক্লাস বিল্ডিং গুলোর পিছনে হেলে পড়েছে, এবার যেতে হয় যে যার ডেরায়।
.
শেষ ।
.
কিছু কথা : চুয়েটের স্মৃতি মাত্র সাত পর্বে শেষ করতে মন চাই ছিল না। সুদীর্ঘ পাঁচ বছরের কত অজস্র স্মৃতি! ৩৮ বছরের পরিক্রমায় সেসব পুরোপুরি মনেও নেই। করোনাকালের ছুটিতে সেসব স্মৃতি জোড়াতালি দিয়ে সোনালী অতীতকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। আবার কোন অকস্মাৎ ছুটি পেয়ে গেলে স্মৃতির মালা গাথার ইচ্ছে নিয়ে শেষ করছি।
.
মো. শামছুল ইসলাম।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: চুয়েটের প্রতিটা পর্ব আমি পড়েছি। ভালো লেগেছে। লেখার মুন্সিয়ানায় অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম। বড় ভালো ভেগেছে।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই প্রতিটি পর্ব পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.