নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: যেতে যেতে পথে - ২য় পর্ব

১৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:২৪

১ম পর্বের লিংক:

মিতালীকে করোনারোগী সাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা যেতে অপহরণকারীদলের খুব একটা বেগ পেতে হয় না। করোনা রোগী শুনে পুলিশও তেমন তল্লাশী করে না। রাতের আধারে আগরতলা হয়ে মিতালীকে ওরা নিয়ে যায় কোলকাতা।
.
মুখে পানির ঝাপটায় মিতালীর জ্ঞান ফিরে আসে। চোখ মেলে ফ্যানটাকে ঘুরতে দেখে। ওঠে বসতে চায়। একটা নারী কণ্ঠ তাকে বাঁধা দেয়, আপনি এখনো যথেষ্ট দুর্বল। প্লিজ, শুয়ে থাকুন। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। সাদা ধব ধবে একটা বিছানায় ও শুয়ে আছে। পাশেই একটা চেয়ারে মেয়েটা বসে আছে। ওর দিকে এক গ্লাস দুধ নিয়ে এগিয়ে আসে। বাম হাতে ওর মাথাটা উচুঁ করে ধরে ডান হাতে গ্লাসটা মুখের কাছে ধরে। গরম দুধটা খেয়ে ও যেন কিছুটা শক্তি ফিরে পায়। ধীরে ধীরে মনে পড়তে থাকে সেদিনের ভয়াবহ ঘটনা।
.
তালহার মায়ের প্রেসারের ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই বেশ রাত হওয়া সত্বেও তালহা ওর মোটরবাইকটা নিয়ে ওষুধ কিনতে যায়। কলিংবেল শুনে সায়মা ভেবেছিল ভাইয়া ফিরে এসেছে। তাই দরজা খুলে দেয়। অস্ত্রের মুখে মিতালীকে ওর ঘর থেকে বের করে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। টিপ টিপ বৃষ্টিতে এতো রাতে রাস্তা পুরো ফাঁকা। দূরের রাস্তায় তালহার মোটরবাইকটা দেখে ও চিৎকার দিয়ে ওঠে। দুই যুবকে ওকে জোর করে গাড়ির ভিতরে বসায়। গাড়িটা স্টার্ট দেওয়াই ছিল। এবার গাড়ি চলতে গুরু করে। গাড়িটাকে অনুসরণ করে তালহাও আসতে থাকে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিতালী বর্তমানে ফিরে।
.
ও এখন কোথায়? মেয়েটার কাছে জানতে চেয়ে কোন লাভ নেই। ও বুঝতে পারছে। কিছুক্ষণ পর ওকে নাস্তা খেতে দিল মেয়েটা। নাস্তা খেতে খেতে ও চিন্তা করছে কীভাবে এখান থেকে পালানো যায়। এমন সময় ঘরে ঢুঁকলে এক যুবক। আগে দেখা যুবকদের সাথে এর পার্থক্য স্পষ্ট। ওদের চেহারায় ছিল রুক্ষতা। একে দেখে বোঝার উপায় নেই সে অপহরণকারী দলের একজন। মনে হচ্ছে, এই যুবকই এদের নেতা। একটা চেয়ারে বসল। মেয়েটাকে চোখের ইংগিত করতেই সে রুমের বাইরে চলে গেল। আলাপ শুরু করলো যুবক,
-কেমন বোধ করছেন?
মিতালী পাল্টা প্রশ্ন করে,
-কেমন বোধ করা উচিৎ?
নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অভিনয় করা আনোয়ার হোসেনের মতো একটা অট্টহাসি দিল যুবক।
-আপনার সাহসের প্রশংসা করতে হয়। আমাকে কেউ প্রশ্ন করে না, আমি সবাইকে প্রশ্ন করি।
কথাগুলো বলে যুবক কড়া চোখে ওর দিকে তাকায়।
মিতালীও ওর চোখে চোখ রেখে বলে, আমি কারো কেনা গেলাম নই।
স্মিত হেসে যুবক বলে, ভুল বললেন। দু’দিন আগেও আপনি স্বাধীন ছিলেন, কিন্তু এখন আপনি আমার গেলাম।
-আমাকে কে আপনার কাছে বেঁচে দিল?
-বাহ, আপনি তো বেশ বুদ্ধি রাখেন। তার নাম তো আমি আপনার কাছে বলবো না। যদিও বললে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু এটা আমাদের ব্যবসার নীতি।
-এটা কী ব্যবসা?
-কোন নয়। লোকজন ব্যবসায় টাকা খাটায় আর আমি আমার জীবনকে ব্যবসার লগ্নি হিসেবে ব্যবহার করছি। আমার রিক্সটা চিন্তা করে দেখেছেন?
-এতো রিক্স নিয়ে ব্যবসা না করলেই হয়।
-আমি বস্তির ছেলে। আমাকে ব্যবসার টাকা কে দেবে? কিন্তু আমার শক্তি আছে, বুদ্ধি আছে, ছুরি চালাতে জানি, অস্ত্র চালাতে জানি। সেটাকে ব্যবহার করে টাকা উপার্জন করছি। কয়জন সৎ ব্যবসায়ী আছে? আমি সরাসরি জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছি আর ওরা ছলে-বলে কৌশলে জনগণের পকেট খালি করছে অন্যায় ভাবে।
কথাগুলো বলার সময় যুবকের চোখগুলো কেমন জ্বলছিল।
মিতালী কোন উত্তর খুঁজে পায় না।
স্বগতোক্তির মতো যুবক বলে চলে, জানি আপনার কাছে কোন জবাব নেই।
যুবক জানালায় কাছে গিয়ে পর্দাটা সরায়।
বাইরে আলো ঝলমলে সকাল। বাইরের পৃথিবীটাকে বড্ড আপন লাগে মিতালীর। ও জানে না আর কখনো মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারবে কি-না।
যুবক বোধ হয় মিতালীর মনোভাব বুঝতে পারে।
-কি, বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে?
মিতালী চুপ করে থাকে। একটা বিষন্নতা ওকে ছুঁয়ে যায়।
হঠাৎ যুবক প্রশ্ন করে, আপনি বাচ্চাদের পছন্দ করেন?
-এসব অবান্তর আলাপ আমার ভালো লাগছে না।
-না, আলাপটা মোটেই অবান্তর নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে আপনার আংশিক মুক্তি?
- কি রকম?
-একটা চার-পাঁচ বছর বয়সের মা হারা বাচ্চা ছেলে। তাকে দেখাশোনা করতে পারবেন?
মিতালী বাচ্চাদের খুব পছন্দ, বাচ্চারাও কেন জানি ওকে পছন্দ করে।
প্রস্তাবটা মন্দ নয়। এই বন্দী জীবনের চেয়ে। তবে সরাসরি রাজি না হয়ে নিজের দামটা একটু বাড়িয়ে নিতে চায়।
-মা হারা একটা বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে পারলে আমি খুশিই হতাম। কিন্তু আমার কী লাভ?
- কা্জটা আপনি সাফল্যের সাথে করতে পারলে আপনাকে আমি মুক্তি দিয়ে দেব।
- ঠিক আছে, আমি রাজি।
- আপনার জন্য কিছু ড্রেস আছে। মেয়েটা দিয়ে যাবে। চটজলদি আপনি রেডি হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমরা বেরুবো।
তার মানে তুমি জানতে আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি হবেই। তাই ড্রেসও আগাম কিনে রেখেছো। মিতালী মনে মনে বলে, ঠিক আছে। আমিও একদিন সুযোগ পেলে তোমাকে দেখে নেব।
.
গাড়িতে ওঠার সময় মিতালী পিছনে বসতে চেয়েছিল। যুবক মিষ্টি হেসে বলে, পাশে কেউ না থাকলে আমার ড্রাইভ করেতে বিরক্ত লাগে। মিতালী একটা কাষ্ঠ হাসি হেসে সামনের সিটে বসল।
দরজা খুলে লাফ দেওয়ার পরিকল্পনা জলে গেল। মিতালী নিজের মধ্যে এতোটাই মগ্ন ছিল যে কখন একটা বাড়ির গেটের সামনে এসে পড়েছে টের পায়নি। গাড়ি থেকে নেমে চোখ জুড়িয়ে গেল। অনেকটা জায়গা জুড়ে সুন্দর একটা ফুলের বাগান। পিছনে ডুপ্লেক্স টাইপ দোতলা একটা বাড়ি – দৃষ্টিনন্দন। ‘বাবা, বাবা’ ডাক শুনে মিতালী অবাক হয়ে তাকায়। হাওয়ার উড়ানো মাথাভর্তি চুল নিয়ে ছোট্ট বাবুটা ছুটে আসছে ওদের দিকে। এক লাফে যুবকের কোলে।
.
মিতালীকে ওর রুম দেখিয়ে দেয় সালমানের বাবা, ইরফান। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসে তিন জন। সালমান কিছুই খাচ্ছে না দেখে ইরফানকে উদ্দেশ্য করে মিতালী জানতে চায় ও খাচ্ছে না কেন? খাওয়া পরিবেশনকারী মেয়েটা ওর পাশে দাঁড়িয়ে নিম্ন স্বরে বলে, কয়েক দিন হলো করোনায় সালমানের মা মারা গেছে। তারপর থেকেই খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। মা ছাড়া কারো কাছে সে খাচ্ছে না। বাবাকে প্রতিদিন বলে, হাসপাতাল থেকে মাকে নিয়ে আসতে। মিতালীর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ও অপলক তাকিয়ে সালমানের দিকে। ওঠে গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ায়। ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে, তোমার আম্মা আমাকে পাঠিয়েছে। আর বলেছে, তুমি ভাত খেলে উনি হাসপাতাল থেকে চলে আসবেন।
-তুমি সত্যি বলছো খালামনি?
-বাহ, আমি মিছে বলতে যাবো কেন?
-কিন্তু মা তো আমাকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতো?
-আমিও দেবো। আমি তো তোমার মার মতোই।
ইরফানের চোখে কৃতজ্ঞতার ছাপ দেখতে পায় মিতালী।
.
স্বপ্নের মতো দিনগুলি কাটতে থাকে মিতালীর-দুষ্টের শিরোমণি ছোট্ট সালমানের সাথে।
ইরফান সকালে বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে, রাতে ফিরে।
রাতে তিন জন একসাথে ডিনার করে।
বাবাকে পেয়ে রাতে সালমানের আনন্দ যেন আরো বেড়ে যায়।
সব কিছু চমৎকার চলছে। তারপরও মিতালী বুঝতে পারে তাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখা হচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর আগে মনে পড়ে মা-বাবা, ভাই-বোন এবং তালহা ও তার পরিবারের কথা। সারাদিন সালমানকে নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই রাতে বিছানায় যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মিতালী ঘুমিয়ে পড়ে।
.
একদিন রাতে খাবার পর ইরফান মিতালীকে বলে, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে?
বুয়া সালমানকে ওর বাবার ঘরে নিয়ে গেছে ঘুমানোর জন্য।
ঘুমে কাতর মিতালীর দিকে তাকিয়ে ইরফানের মায়া হয়।
তাই কোন ভূমিকা না করে আসল কথায় আসে,
-বুঝতে পারছি তোমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তাই আমার কথাটা সংক্ষেপে বলি।
-বলুন, আমি শুনছি।
-কয়েক দিনের মধ্যে আমরা দুবাই যাচ্ছি।
মিতালীর ঘুম মুহূর্তের মধ্যেই উবে গেল,
- কী বলছেন আপনি?
- হ্যাঁ, আমি, আপনি ও সালমান দুবাই যাচ্ছি। আপনাকে একটু অভিনয় করতে হবে, সালমানের মার ভূমিকায়।
- কিন্তু কেন?
- এখানে থাকলে আপনাকে ওদের হাতে আমাকে তুলে দিতে হবে শর্তানুযায়ী।
- কিসের শর্ত?
- আপনি অত কিছু বুঝবেন না। সালমানের মা মারা না গেলে এতো দিনে হয়তো আপনি তাদের কাছেই থাকতেন।
- আমার তো কোন পছন্দ নেই। আপনি যা বলবেন তাতেই আমি রাজি।
- ঠিক আছে, দেখা হবে কাল সকালে, বলেই হাঁটা দিল ইরফান।
তারপরও কিছুক্ষণ মিতালী বসে রইল ডাইনিং রুমে। ইরফান, সালমান ও ওর মার একটা ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। নিজের অজান্তেই একটা অদম্য কান্না ওকে পেয়ে বসল। চাপা কান্নার সাথে ও সালমানের মাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, বোন, তোমার মৃত্যু আমাকে জীবন দিয়েছে। আমাকে ক্ষমা কোরো। আমি যেন সালমানের মা হয়ে ওঠতে পারি।
.
চলবে...
১৩ জুন, ২০২১
মো. শামছুল ইসলাম

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩২

আহমেদ জী এস বলেছেন: শামছুল ইসলাম,




বেশী সিনেমা সিনেমা হয়ে যাচ্ছে মনে হয়! তবুও ব্লগে ক্যাচালের বাইরে কিছু লিখছেন বলে ভালোলাগা জানাচ্ছি।

লেখাটি দু'বার এসেছে।

১৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১০:০৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই।

একটু থ্রিলার টাইপ কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম। তাই হয়তো সিনেমাটিক হয়ে গেছে।

ঠিক করে দিয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.