নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ সংখ্যা ২০২২ ও একটি একটু বেশি ভালো লাগার কথা- পর্ব – ২ (অব্যবহৃত নাকফুল)

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:০২

পর্ব-১

“অব্যবহৃত নাকফুল” – এর তৃতীয় পরিচ্ছেদে এসে আমি থেমে গিয়ে ছিলাম। ফাহাদ আবির ও তার বাবার মোবাইলের কথোপকথন শুনে, ফাহাদের বাবার মতো আমার বাবা হৃদয়ও কেঁদে ওঠেছিল। একটা শূন্যতা আমাকে গ্রাস করেছিল। আমি ভাবলাম, এরপর পুরো উপন্যাসটা না পড়েও আমি মাসউদ আহমাদের হৃদয়স্পর্শী লেখনীর ভক্ত হয়ে গেলাম। এমন তো হয় । একটা সিনেমার কোন একটা গান বা কোন একটা দৃশ্য. দর্শককে এমন মুগ্ধ করে, বার বার টিকেট কেটে দেখে সিনেমাটা – শুধু একটা গান বা দৃশ্যের জন্য। আমিও পুরো উপন্যাসটা শেষ করেছি দুদিন হলো। আজ লিখতে বসে তৃতীয় পরিচ্ছেদে আবার ফিরে গেলাম-
“সন্ধ্যায়, ফোনের ওপাশে বাবার শুভ্র দাড়ির আড়ালে হাসিমুখ টের পায় ফাহাদ। হ্যাঁ, বাবা। বলো।
-গলাটা খাদে নামিয়ে ফাহাদ কেবল বলে-আব্বা-
-কী হয়েছে, বাবা ফাহাদ?
-আব্বা-
-এবার বাবার গলা কেঁপে যায়। তার কথার স্বরে চিন্তিত ভঙ্গি ফুটে ওঠে।
বাবা আমার, বাবা ফাহাদ-, কী হলো, বাবা? কী হয়েছে তোমার?
-আব্বা, তোমার একটা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট থাকলে-
-ফাহাদের কথা শুনে বাবা হা হা করে হাসতে থাকেন। বহুদিন পর বাবা এমন করে হাসলেন। তিনি যেন জানতেন, কোনো একদিন ছেলে ফোন করে এভাবে তাঁকে প্রশ্ন করতে পারে।
-তুমি কি আমাদের লাল-সবুজের বাংলাদেশ চাওনি, বাবা?
কথাটা মনের ভেতর উঁকি দিলেও মুখে আসে না। তাই বলা হয় না। সে নীরবে ফোনের ওপারের কথায় কান পেতে থাকে।
-কয়েক মুহূর্ত পর, ফাহাদ নিশ্চুপ, বাবাও কোনো কথা বলে না। একটা অস্বস্তিকর মুহূর্ত ঝুলে থাকে। কথা এগোয় না। কথা থেমে থাকে। একটু পরে কথা মুখ বাড়ায়। আর তখন অচেনা গলায় বাবা বলেন, মনে করো, আমি মুক্তিযুদ্ধের একটা সার্টিফিকেট নিলাম। সেটা দিয়ে কিছু সামাজিক সুবিধা ও সম্মান পাওয়া গেল। মাসে মাসে কিছু টাকা, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লিপিবদ্ধ হওয়া। এই তো।
-হুম। এটা তো খারাপ কিছু নয়, বাবা। দেশের জন্য যারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করেছে, তারা এটুকু তো পেতেই পারে। এখানে তো দোষের কিছু নেই। রাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান দেখিয়ে কিছু সুবিধা নিশ্চিত করেছে। সবাই তা গ্রহণও করছে।
-কিন্তু বাবা ফাহাদ, একবার ভেবে দেখো, ব্যাপারটা উপকার করে বিনিময় নেওয়ার মতো সামান্য ও চক্ষুলজ্জার ব্যাপার হয়ে যায় না।?
-ফাহাদ কোন কথা বলে না। কান পেতে সে বাবার কথা শুনতে থাকে।
-এক অদ্ভুত গম্ভীর গলায় বাবা বলতে থাকেন, দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কাজ করা, প্রাণ দেওয়া – এই কাজ সবাই পারে না, বাপ। সবাই যে পারবে, এমনও নয়। কিছু ভালোবাসা গোপনেই সুন্দর। প্রকাশ হলে তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
-ফাহাদ কথা খুঁজে পায় না।
-বাবা জিজ্ঞেস করেন, তোমার কী হয়েছে, বাপ?
-ফাহাদ কিছু বলে না। কেবল আব্বা, ও আব্বা, আব্বা – বলে ডাকতে থাকে।
-বাবা কি খানিকটা বিব্রত হন? তাঁর গলা বুজে আসে। ? চোখ ছল ছল করে?
ফোনের এপার থেকে কিছুই দেখা যায় না।
-এক অপার্থিব নীরবতা নেমে আসে। কথা আর এগোয় না। ফাহাদ ফোন কেটে দেয়।“
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একটা ছেলে ছয় বছর ধরে একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। টিউশনি করে জীবন চলে। বাড়িতে অসুস্থ মা। বয়স তিরিশ পেরিয়ে যাচ্ছে। সরকারি চাকরির বয়স শেষের দিকে। বাবার একটি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ফাহাদকে আরো দুবছর সুযোগ করে দিতে পারতো। কিন্তু বাবা হয়েও ছেলের এই সুবিধাটুকু করে দিতে কুণ্ঠিত নীতিবান বাবা। তাঁর কথাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বাপ ও ছেলের কান্নায় ভারি হয়েছে বাতাস।
.
উপন্যাসকে আমার কাছে মনে হয় মাছির চোখের মতো। অসংখ্য ছোট ছোট চোখ মিলেই মাছির চোখ। চারিদিকে তার ব্যাপ্তি। তেমনি উপন্যাসেরও অসংখ্য চোখ। আমি সেই অসংখ্য চোখের মধ্য থেকে একটা উজ্জ্বল চোখের বর্ণনা উপরে করেছি। আরো দুটো উজ্জ্বল চোখ আমার চোখে ধরা পড়েছে। একটা হচ্ছে ফাহাদের মার মৃত্যু, অন্যটা শাওন আশরাফের মার কান্না। এই দুই ঘটনা ও উপন্যাসের সমাপ্তি টেনে আরো একটা পর্ব লেখার ইচ্ছে আছে।
.
শেষ করার কথা দিয়েও কথা না রাখার জন্য দু:খিত।
সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
.
(আগামী পর্বে সমাপ্য)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো পড়তে।

১০ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৫৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.