নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলতে চাই

সামছুল কবির মিলাদ

আমি মুক্ত আমি স্বাধীন

সামছুল কবির মিলাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ সেই ভয়াল ২৫ ফেব্রুয়ারী!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

BDR mutiny, a mystery | 25-26 February 2009 ...



আজ সেই ভয়াল ২৫ ফেব্রুয়ারী!



আমি চিৎকার

করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার।

বুকের

ব্যথা বুকেতে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।



পিলখানা ট্র্যাজেডিতে শহীদ সকল সৈনিকের

জন্য শ্রদ্ধা।



আজ ২৫শে ফেব্রুয়ারী বাঙালী জাতীর ইতিহাসের এক কালো দিন। এই দিনে জাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ট সন্তানদের। বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সব শহীদদের। তাদের আত্বার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি হত্যাকারীদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দাবি করছি।



* সেদিন সেনা অফিসাররা নৃশংসতার শিকার হন যেভাবে :

------------------------------------------------------

" ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৯টা ৫ মিনিট। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল দরবার হলে প্রবেশ করেন। তার কাছে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবুল হক প্যারেড হস্তান্তর করেন। এরপর ডিজি ও ডিডিজি মঞ্চে নির্দিষ্ট আসনে বসেন। বিডিআরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদেও পেশ ইমাম সিদ্দিকুর রহমান কোরআন তেলাওয়াত করেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বিডিআরের নৃশংসতা মেনে নিতে পারেননি পেশ ইমাম। বিদ্রোহের কিছুদিন পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে তিনি হৃদরোগে মারা যান। কোরআন তেলাওয়াতের পর দরবারের সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বক্তৃতা করেন মেজর জেনারেল শাকিল। তিনি আগের দিনের প্যারেডের প্রশংসা করেন। এরপর তিনি ‘অপারেশন ডাল-ভাত’ কার্যক্রম প্রসঙ্গ তোলেন। জেনারেল শাকিল জানতে চান, ডাল-ভাতের দৈনিক ভাতা সৈনিকরা ঠিকভাবে পেয়েছে কিনা। কিন্তু সৈনিকদের জবাব জোরালো ছিল না। দরবারে সাধারণত সৈনিকদের যে ধরনের তাৎক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্ত ইতিবাচক প্রত্যুত্তর থাকে, এ ক্ষেত্রে তা ছিল না। ডিজি ডাল-ভাতের কিছু হিসাব, সৈনিকদের ডিএ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন।



তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে আপনাদের শৃঙ্খলা ভালো ছিল না। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।’ ডিজির এ বক্তব্য সৈনিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাদের চোখ-মুখের ভাষা ছিল কিছুটা ভিন্ন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বদলে গেল সবকিছু। ঘড়ির কাঁটায় আনুমানিক তখন সকাল সাড়ে ৯টা। ডিজি তখনো বক্তৃতা করছিলেন। হঠাৎ ১৩ ব্যাটালিয়নের সিপাহি মাঈন আকস্মিকভাবে অস্ত্র হাতে মঞ্চে উঠেই ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করেন। সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে হট্টগোল শুরু হয়। ওই সময় ডিজি শাকিল পূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকান। ডিজির চোখের দিকে তাকিয়ে সৈনিক মাঈন মঞ্চে অজ্ঞানের মতো হয়ে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী ও কর্নেল আনিস ওই সৈনিককে ধরে ফেলেন। প্রায় একই সময় ৪৪ ব্যাটালিয়নের আরেক সিপাহি কাজল মঞ্চে উঠে আসেন। কিন্তু মাঈনকে পড়ে যেতে দেখে কাজল হঠাৎ কোথাও না থেমে মঞ্চের দক্ষিণ পাশে চলে যান। কিন্তু বেরুনোর পথ না থাকায় জানালার কাচ ভেঙে ফেলেন কাজল। লাফ দিয়ে বাইরে চলে যান। তখনই শোনা যায় একটি গুলির শব্দ। মূলত এটাই ছিল প্রথম গুলির শব্দ।



কি থেকে কি হয়ে গেল। দরবার হল মুহূর্তে ফাঁকা। প্রায় তিন হাজার সৈনিক এবং জেসিও, মুহূর্তের মধ্যে যে যেভাবে পেরেছে, জানালা বা দরজা দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে যায়। অনেক কর্মকর্তাও ওই সময় বেরিয়ে যান। ডিজি, ডিডিজি, সব সেক্টর কমান্ডার ও পরিচালক, তিনজন মহিলা ডাক্তার, সাত-আটজন লে. কর্নেল, ১৫-১৬ জন মেজর, দুজন ক্যাপ্টেন, কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর, আরপি জেসিও, এনএসএ, ডিএডি ফসিউদ্দীন, বিডিআর মসজিদের দুই ইমাম, তিন-চার সিপাহিসহ ৪৫-৫০ জন দরবার হলে থেকে যান। অফিসাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মত্ত হন। অন্যদিকে সিপাহিরা বাইরে গিয়ে নিজেদের সংগঠিত করে এবং নানারকম গুজব ছড়িয়ে দেয়। তারা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি গ্রুপ কাজ শুরু করে।



ঘটনা সামনের দিকে যেতে থাকে। ১৫-২০ মিনিট পর দরবার হলের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে গুলির আওয়াজ আসতে থাকে। একই সঙ্গে `ধর, ধর` শব্দ শোনা যায়। ওই সময় দরবার হলের ভেতর সামনের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে বের হয়ে যায়। এদিকে সিপাহি মাঈনকে কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের জুতার ফিতা দিয়ে বেঁধে ফেলেন। মাঈন মঞ্চের ওপর অজ্ঞানের মতো পড়ে থাকেন। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল কর্মকর্তাদের বলেন, সবাইকে যেন আবার দরবার হলের ভেতর ডেকে আনা হয়, দরবার আবার শুরু হবে। ডিজি চেয়েছিলেন সবকিছু স্বাভাবিক করতে। তার লক্ষ্য ছিল ক্ষুব্ধ সৈনিকদের শান্ত করে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত, যা সেখানে অবস্থানকারী অফিসাররা তখনো পুরোপুরি আঁচ করতে পারেননি।



৯টা ৪০ মিনিটের দিকে দরবার হলের বাইরে গুলির শব্দ বাড়তে থাকে। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল একজন অফিসারকে বললেন, `কে ফায়ার ওপেন করেছে? তাদের ফায়ার করতে নিষেধ কর। সিচুয়েশন ট্যাকল হয়েছে।` এর মধ্যে দেখা গেল লাল-সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিডিআরের একদল সৈনিক দরবার হল ঘিরে কিছুক্ষণ পর গুলি করছে। তখন দরবার হলের জানালা খুলে কর্নেল গুলজার, কর্নেল এমদাদ, লে. কর্নেল এরশাদ এবং লে. কর্নেল কামরুজ্জামান চিৎকার করে বলেন, `তোমরা ফায়ার কর না, তোমরা ফেরত যাও।` এ সময় ভেতরে অবস্থানকারী অফিসাররা দেখেন, ফাঁকা গুলিবর্ষণকারী সৈনিকদের আরেক দল গুলি সরবরাহ করছে। সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের একটি পিকআপ রাস্তা দিয়ে দরবার হলের পাশের মাঠে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে কাচ ভেঙে গুলি দরবার হলের ভেতর ঢুকছিল। কর্মকর্তারা আত্মক্ষার্থে কেউ দেয়াল ঘেঁষে, কেউ পিলারের আড়ালে আশ্রয় নেন। দরবার হলের দিকে গুলি হচ্ছে দেখে মেজর মো. মাকসুদুল হক ক্রলিং করে দরবার হলের পূর্ব দিকে গাড়ি থামার বারান্দার নিচে পৌঁছে যান। সেখানে ৮-১০ সৈনিক ও ধর্মীয় শিক্ষক গুলি থেকে বাঁচতে শুয়েছিলেন। আর আনুমানিক ৫০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে, অর্থাৎ ৫ নম্বর ফটকের দিক থেকে মাথায় লাল কাপড় বাঁধা একজন সিপাহি গাড়ি থামার বারান্দার দিকে গুলি করতে থাকে। ধর্মীয় শিক্ষকের সঙ্গে শুয়ে থাকা সৈনিকদের একজন তখন `আমরা সিপাহি` বলে চিৎকার করে। জবাবে গুলিবর্ষণকারী চিৎকার করে বলে, `সিপাহিরা, সব মাথার ওপর হাত তুলে দৌড়ে এলাকা ত্যাগ কর।` তখন এসব সিপাহির সঙ্গে মেজর মাকসুদও মাথার ওপর হাত তুলে দৌড় দেন এবং সামনের আবাসিক কোয়ার্টারের পেছনের দেয়াল টপকে বাইরে চলে যান। মেজর মাকসুদই প্রথম অফিসার, যিনি এভাবে পালাতে পেরেছেন। বলা যায়, ভাগ্যই তাকে সহায়তা করেছে। সিপাহিদের সঙ্গে তিনি পালাতে পেরেছেন।



ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল তখনো সমাধানের পথ খুঁজছেন। চেষ্টা করছেন কিভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়। এক পর্যায়ে তিনি কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর (এসএম) নুরুল ইসলামকে বলেন, `সৈনিকদের এ রকম ক্ষোভ আছে আপনি তো কোনো দিন একবারও বলেননি!` তখন কেউ একজন ডিজিকে বললেন, `স্যার, গাড়ি লাগানো আছে, আপনি চলে যান।` ডিজি বলেন, `আমি কোথায় যাব এবং কেন যাব?` সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঢাকা সেক্টর কমান্ডার এবং ঢাকার অধিনায়কদের উদ্দেশে বললেন, `ইউ অল রাশ টু দ্য ইউনিট অ্যান্ড গেট ব্যাক ইউর পিপল এবং সবার সঙ্গে কথা বলো অ্যান্ড ট্রাই টু মটিভেট দেম।` এরপর ঢাকা সেক্টর কমান্ডার ও অধিনায়করা দরবার হল থেকে নিজ নিজ ইউনিটের উদ্দেশে রওনা হন। ডিজি মাইকে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক এবং সুবেদার মেজরদের নিজ নিজ ব্যাটালিয়নে কোতের (অস্ত্রাগার) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করার নির্দেশ দেন। এ সময় ঢাকার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিব, ৩৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এনায়েত ও ১৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল বদরুল নিজ নিজ ইউনিটের দিকে রওনা দেন। এর মধ্যে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা চারদিক থেকে দরবার হলের দিকে গুলি করতে থাকে। তখন দরবার হল থেকে কিছু কর্মকর্তা ও বিডিআর সদস্য বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে বের হতে থাকেন।



তদন্ত আদালতকে কামরুজ্জামান জানান, এর আগে ডিজি কথা বলেছেন সেনাপ্রধান ও র‌্যাবের ডিজির সঙ্গে। সবাই জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব চলে আসবে। লে. কর্নেল ইয়াসমীনও লক্ষ্য করেন, তখন ডিজি বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ফোনে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাতে অনুরোধ করছিলেন।



ওই সময় লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামানের মোবাইল সেটে ফোন করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া (পরিচালক, মিলিটারি অপারেশন) জানতে চান, ভেতরে কী অবস্থা। উত্তরে অবস্থা খারাপ শুনে তিনি বলেন, `চিন্তা কর না, ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড থেকে দুটা ব্যাটালিয়ন মুভ করেছে।` তখন পাশ থেকে ডিওটি কর্নেল আনিস ফোন নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।



এক পর্যায়ে দরবার হলে আটকেপড়া রেজিমেন্টাল পুলিশ (আরপি) জেসিও আস্তে আস্তে ওয়াকিটকি শুনছিলেন। লে. কর্নেল কামরুজ্জামান ওয়াকিটকির সাউন্ড বাড়িয়ে দিতে বললে তাতে শোনা যায়, অপর পাশ থেকে বলা হচ্ছে, `অফিসার মেসে অফিসারদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিডিআরের সব গেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। তারা কোত (অস্ত্রাগার) ভেঙে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে যাচ্ছে।` এর মধ্যে দেখা যায় এডিসি ক্যাপ্টেন মাজহার কেঁদে কেঁদে কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। তাকে একজন অফিসার জিজ্ঞেস করাতে জবাবে বললেন, `রাইফেল ভবনে বিদ্রোহী বিডিআররা ঢুকেছে। হাউস গার্ড অনেক আগে চলে গেছে। ম্যাডাম বলছেন, দরজা ধাক্কা দিচ্ছে।` ডিজি শাকিল সব শুনলেন। একপর্যায়ে তিনি মাজহারকে বললেন, `ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে থাকতে বল।` সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ দিকের টয়লেটে লুকিয়ে থাকা মেজর মাকসুম স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারেন যে বিদ্রোহীরা তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মেজর মাকসুমের পাশে বসা মেজর মনিরও তা জানতে পারেন।



দরবার হলে অবস্থানকারী কর্মকর্তারা শুনতে পান গুলির শব্দ অনেক কাছে এগিয়ে আসছে। তখন মঞ্চের সব আলো নিভিয়ে ফেলতে বলেন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল। কর্নেল আনিস একটি লম্বা কাঠ দিয়ে সব বাল্ব ভেঙে ফেলেন। ডিজি মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, `তোমরা গুলি থামাও। তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে।` এ সময় একজন সৈনিক দৌড়ে পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওর হাতে বা কাঁধে গুলি লেগেছিল। ভেতরে থাকা একজন ধর্মীয় শিক্ষক তার পাগড়ির কাপড় দিয়ে ওই সৈনিকের ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এ সময় সিপাহি সেলিম, কাজল, হাবিব, আতাউর, ওবায়েদসহ আরও কয়েকজন বিডিআর সদস্য গুলি করতে করতে দরবার হলে প্রবেশ করেন। তারা হুকুমের স্বরে পর্দার পেছনে লুকিয়ে থাকা কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসতে বলেন।



কর্মকর্তারা তখন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরকে (এসএম) বলেন, `আপনি ওদের থামতে বলেন` সুবেদার মেজর পর্দার বাইরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। সঙ্গে মেজর জায়েদীও যান। দুজনকেই সৈনিকরা ধরে ফেলে। তখন কয়েকটি গুলি করা হয়। তারা মাটিতে শুয়ে যান। দুজন সৈনিক মেজর জায়েদীকে তুলে বলে, `আমাদের সঙ্গে চল।` দরবার হলের বাইরে নিয়ে তারা জায়েদীকে রড দিয়ে মারধর করে। তখনো কেন্দ্রীয় এসএম তার সঙ্গে ছিলেন, তার হাত থেকে রক্ত ঝরছিল। এরপর দুই সৈনিক মেজর জায়েদীকে ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের বাসায় নিয়ে যায়।



ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ২০ মিনিট। সিপাহি সেলিম মাইকে কর্মকর্তাদের বেরিয়ে আসতে বলেন। সেলিম বলেন, `কাম, ওয়ান বাই ওয়ান` এ সময় কর্মকর্তাদের রাজি করাতে কিছু সময় লাগে। ডিজিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মঞ্চের পর্দার ভেতর উত্তর দিকে ছিলেন। ডিজিকে কোনায় একটি চেয়ারে বসানো হলো। অন্যরা সবাই ডিজির গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন। ডিজি শাকিল বললেন, `তোমরা মৃত্যুকে কেন ভয় পাচ্ছ? মরতে তো একদিন হবেই।` কর্মকর্তারা বললেন, `স্যার, আপনার সেফটির দরকার আছে।` ডিজি তখন বললেন, `র‌্যাব বা সেনাবাহিনী কেউ এখনো আসলো না!`



ওই সময় কর্নেল মসিউর ডান দিকের উইং থেকে দৌড়ে বাঁ-দিকের উইংয়ে চলে এলেন। বাঁ-উইংয়ের সিঁড়িতে ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার বারী ছিলেন। কর্নেল মসিউর দুটি সাউন্ড বক্স ওখানকার পেছনের দরজার সামনে একটার ওপর একটা রাখেন। তখন ব্রিগেডিয়ার বারী বলেন, সাউন্ড বক্স গুলি ঠেকাতে পারবে না।



সকাল সাড়ে ১০টা। বিদ্রোহী সৈনিকরা চিৎকার করে কর্মকর্তাদের মঞ্চের ভেতর থেকে বের হতে বলে। তখন মঞ্চের নিচে ১৫-১৬ জন বিদ্রোহী কাপড়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিল। ১০টা ৩১ মিনিটের পরপরই মঞ্চের পর্দার আড়ালে দক্ষিণ পাশে থাকা তিনজন নারী কর্মকর্তাসহ ২০-২৫ জন কর্মকর্তা হাত উঁচু করে পর্দার বাইরে বের হয়ে আসেন। ১০টা ৩১ মিনিটে মেজর রুখসানা তার স্বামীকে মোবাইল ফোনে বিদ্রোহীদের দরবার হলে ঢুকে পড়ার কথা জানান। তিনি পরে স্বামীর মোবাইল সেট থেকে সময় নিশ্চিত করেন।



উত্তর পাশে থাকা ডিজিসহ অন্য কর্মকর্তারা তখনো বের হননি। বিদ্রোহীরা প্রথমেই কর্মকর্তাদের সবার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। সবাইকে তারা মাটিতে শুয়ে পড়তে এবং র‌্যাংক খুলে ফেলতে বলে। কর্মকর্তারা দরবার হলের মেঝেতে শুয়ে পড়েন। তখন তাদের ওপর দরবার হলের ভেতরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মুখে কাপড় বাঁধা একজন বিডিআর সৈনিক তিন-চার রাউন্ড গুলি চালায়। লে. কর্নেল কায়সার ও অপর দুজন কর্মকর্তা এতে গুলিবিদ্ধ হন। গুলি খেয়ে লে. কর্নেল কায়সার উপুড় অবস্থা থেকে চিৎ হয়ে যান।



লে. কর্নেল কায়সার গুলি খাওয়ার পর দরবার হলের ভেতর মহিলা-কর্মকর্তাদের দিকে এক জওয়ান দৌড়ে এসে বলে, `ম্যাডামদের মারিসনে, ওনারা ডাক্তার।` তখন অন্য একজন সৈনিক তাদের নিয়ে দরবার হলের পশ্চিম ফটকের দিকে যায়। তাদের পেছন পেছন অন্য কর্মকর্তারাও আসতে থাকেন।



দরবার হলের মঞ্চের পর্দার আড়ালে উত্তর দিকের উইংয়ে ডিজি, ডিডিজি, কর্নেল আনিস, কর্নেল মশিউর, কর্নেল এমদাদ, কর্নেল জাহিদ, লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান, লে. কর্নেল এরশাদ, লে. কর্নেল আজম, মেজর খালিদ, মেজর সালেহ, এডিসি ক্যাপ্টেন তানভীর, ডিএডি ফসিউদ্দিন, সঙ্গে এনএসও এবং আরপি জেসিও ছিলেন। লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান তদন্ত আদালতকে বলেন, দক্ষিণ দিকের উইংয়ে আশ্রয় নেওয়া কর্মকর্তারা হাত উপরে তুলে পর্দার বাইরে যাচ্ছেন দেখে ডিওটি কর্নেল আনিস ডিজিকে বললেন, `স্যার, ওই দিকে অবস্থান নেওয়া সব অফিসার সারেন্ডার করেছে। আমাদের জন্য কী অর্ডার?` ডিজি কী বললেন তা কামরুজ্জামান ভালোভাবে শুনতে পাননি।



বিদ্রোহীরা হ্যান্ডমাইকে বলছিল, `ভেতরে কেউ থাকলে বাইরে বের হয়ে আসেন।` একই সঙ্গে তারা মঞ্চের দিকে গুলি ছোড়ে। হঠাৎ মুখে কাপড় বাঁধা একজন সৈনিক অস্ত্র-হাতে পর্দা সরিয়ে মঞ্চে ঢুকে চিৎকার করে বলে, `ভেতরে কেউ আছেন? সবাই বের হন।` একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে দুটি গুলি করে সে। গুলি কারও গায়ে লাগেনি। এরপর ডিজিসহ একে একে অন্য কর্মকর্তারা পর্দা সরিয়ে বাইরে আসেন। সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় বিদ্রোহীরা। মঞ্চের নিচে নেমেই কর্মকর্তারা ডিজি শাকিলকে মধ্যে রেখে গোল হয়ে দাঁড়ান। একজন সৈনিক চিৎকার করে বলে, `শুয়োরের বাচ্চারা, সারা জীবন আমাদের সিঙ্গেল লাইন করে হাঁটিয়েছে, নিজেরা গোল করে দাঁড়িয়েছিস!` আবার হুঙ্কার দিয়ে সে বলে, `সবাই সিঙ্গেল লাইন করে দাঁড়া।` লাইনে ডিজি সবার সামনে দাঁড়ালেন। তারপর কিছুটা জ্যেষ্ঠতা মানার মতো সবাই লাইনে দাঁড়ালেন। নির্মম, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা। এরপর বিশ্ববাসী দেখল এক নিষ্ঠুর বর্বর অধ্যায়। "



এবং



* বিদ্রোহের দুই দিন :

----------------------------------



" ২৫ ফেব্রুয়ারি (২০০৯) সকাল নয়টা ২ মিনিট: পিলখানায় দরবার শুরু।

সকাল নয়টা ২৬ মিনিট: ডিজির বক্তব্য চলাকালে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছন থেকে দুজন বিদ্রোহী অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ। বিদ্রোহের শুরু।

নয়টা ৩০ মিনিট: ডিজি নিজে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানসহ অন্যদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে সেনা হস্তক্ষেপের অনুরোধ।

১০টা ৩০ মিনিট: বিদ্রোহীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে দরবার হলে ঢোকে এবং কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসার নির্দেশ।

আনুমানিক ১০টা ৩৫ মিনিট: ডিজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা এক সারিতে দরবার হল থেকে বের হয়ে মাত্র বাইরে দাঁড়ানো মুখবাঁধা সৈনিকেরা ব্রাশফায়ার করে। ডিজিসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তার মৃত্যু।

১১টায় বিদ্রোহীরা ম্যাগাজিন ভেঙে গুলি-বারুদ সংগ্রহ করে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগার লুট।

বিদ্রোহীরা ১৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পিলখানায় বিদ্রোহীদের প্রতি অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ। হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি।

১২টা ৩০ মিনিট: ৩ নম্বর ফটকের সামনে বিডিআরের পক্ষে শতাধিক মানুষের মিছিল।

বিকেল তিনটা: প্রতিমন্ত্রী নানক, সাংসদ ফজলে নূর তাপস ও হুইপ মির্জা আজমের সঙ্গে বিদ্রোহীদের কথা।

বিকেল তিনটা ৪০ মিনিটে তাঁরা ১৪ সদস্যের বিডিআর প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যমুনায় প্রবেশ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ।

সন্ধ্যা ছয়টা ৪৫ মিনিট: যমুনা থেকে বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে নানক ও মির্জা আজম পিলখানায় ফেরা।

সন্ধ্যার পর পিলখানায় বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কর্মকর্তাদের লাশ সরানো শুরু ও পুঁতে ফেলা হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত একটা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রী ও আইজিপি পিলখানার ভেতরে যান।

রাত একটা ৩০ মিনিট: বিদ্রোহীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কিছু অস্ত্র সমর্পণ করে।

২৬ ফেব্রুয়ারি ভোর চারটা ১০ মিনিট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আটকে পড়া ১৫ জন জিম্মিকে উদ্ধার।

২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টা: মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও সাংসদ তাপস বিডিআর ৪ নম্বর ফটকে উপস্থিত হন।

১১টা ৩০ মিনিট: প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

বেলা দুটা ৩০ মিনিট: সরকারের ১২ সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি গঠন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে হোটেল আম্বালায় বৈঠক।

বেলা দুইটা ৩০ মিনিট: টেলিভিশন ও বেতারে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচার। বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যেতে নির্দেশ। ভাষণের পর বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিকেল চারটা: হোটেল আম্বালায় অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের বৈঠক। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নানক ও মির্জা আজম পিলখানার ভেতরে যান।

বিকেল পাঁচটা ৫০ মিনিটে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ শুরু।

রাত আটটা ৩০ মিনিট: পিলখানা থেকে বেরিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা—পরিস্থিতি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। "

- তথ্যসূত্র: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন l







বিডিআর বিদ্রোহ l

নিহতদের আত্মা শান্তিতে থাকুক ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.