নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের প্রত্যয়ে...

শারফান উপল

Student

শারফান উপল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ত্রি শতাব্দীর ব্যর্থতার অবসান

২১ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৯


গনিতের সৌন্দর্য হল সমস্যা সমাধানে । আর তা যদি হয় কোন সরল অনুধাবনযোগ্য অথচ দুর্ভেদ্য প্রমাণের তত্ত্ব তাহলে তো আক্ষেপের শেষ থাকে না ।
বিশেষ করে গণিতবেত্তাদের, যাদের এর সমাধানের ক্ষুধা মেটাতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর। এবং এটা “ গিনেস বুক অব ওয়র্ল্ড রেকর্ড” এর মতে সবচেয়ে কঠিন গাণিতিক সমস্যা। তাই এটা সরলিকৃতভাবে ঊপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
গণিতবিদ পিয়েরে ডি. ফার্মা তত্বটি দিয়েছিলেন বলে একে Fermat Last Theorem বা সংক্ষেপে FLT বলে।
তত্বটি হলঃ যদি n>2 হয়, তবে a^(n )+b^n=c^n সমীকরণটির কোন সমাধান থাকবে না । যেখানে a, b এবং c অশূন্য পুর্ণসংখ্যা এবং এরা পুর্ণসংখ্যার সেট Q এর অন্তর্গত । সমীকরণটি দেখে অতি পরিচিত একটি সমীকরণের কথা মনে পড়ে যায়...। আর তা হল পীথাগোরাসের উপপাদ্য। a^2+b^2=c^2
যেখানে সমকোণী ত্রিভূজের লম্ব a ভূমি b এবং অতিভূজ c। উদাহরণস্বরুপ,লম্ব 3একক ভূমি 4 একক ও অতিভুজ 5একক,হলে... 3^2+4^2=5^2
একইভাবে〖 5〗^2+〖12〗^2=〖13〗^2
এমনকি ব্যবীলনীয়রা ৩৫০০ বছর আগে থেকেই 〖 4961〗^2+〖6480〗^2=〖8161〗^2 এটি সম্পর্কে জানত ।
প্রকৃতপক্ষে ফার্মার তত্ত্বটি , পীথাগোরাসের উপপাদ্যের পরিবর্ধিত রুপ। তাহলে দ্বিঘাতের জন্য সমীকরণটি সিদ্ধ হয়, আর ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত বা তদুর্ধ্বো ঘাতের জন্য হয় না... এটাই তো প্রমাণ।। তাহলে জটিলতার কি আছে...??
কিন্তু সমস্যা হল এটা কোন তাত্ত্বিক প্রমাণ নয়!! কারন পীথাগোরাসের নীতি সমতলে অংকিত ত্রিভূজের বাহুর উপর বর্গ বিবেচনার জন্য প্রযোজ্য।
তাহলে একই সমতলে কিভাবে একটি ঘনক কে, দুটি ঘনক থেকে পৃথক করা সম্ভব? (লম্ব, ভুমি থেকে অতিভূজ) তেমনি চতুর্থ বা তদুর্ধ্বো ঘাতের একটি রাশিকে অনুরুপ দুটি রাশি থেকে পৃথক করা।
এছাড়াও পীথাগোরাসীয় সমীকরণের a, b ও c এর জন্য একটি অনন্ত সংখ্যক ধনাত্নক পূর্ণসংখ্যার সমাধান বিদ্যমান। এ ধরণের সমাধান কে পীথাগোরাসীয় ত্রয়ী বলে।
কিন্তু ফার্মার সমীকরণের জন্য ধনাত্নক পূর্ণসংখ্যার কোন সমাধান নেই, যদি কিনা তার ঘাত সংখ্যা ২ থেকে বড় হয়।
আর তাই হয়তোবা ফার্মা মজা করে বলেছিলেন –‘ এর প্রমাণের তুলনায় আমার খাতার জায়গাটা বড্ড ছোট ।‘
বাস্তবিকভাবে তিনি এর কোন প্রমাণ দিয়ে যাননি। আর তাই গণিতবিদদের এটার প্রমাণ খুঁজতে হয়েছে , শতাব্দীর পর শতাব্দী।
ফার্মার মৃত্যুর পর পরবর্তী দু শতাব্দী (1637-1830) ধরে তত্ত্বটি শুধুমাত্র 3, 5 , 7 প্রাইম সংখ্যার জন্য প্রমাণীত হয়েছিল।
( প্রাইম সংখ্যা হল সেই সব স্বাভাবিক সংখ্যা , যা 1 থেকে বড় এবং 1 ও সংখ্যাটি নিজে ছাড়া তার কোন ধনাত্নক ভাজক/ উৎপাদক নেই। যেমনঃ 3 , 5 ইত্যাদি )

তবে কোন প্রচেষ্টাই সফলতার মূখ দেখেনি, আর তাই উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্রশ্ন উঠল –
‘আসলেই কি তত্ত্বটি বাস্তব, নাকি ভিত্তিহীন??
তখন প্রয়োজন পড়ল আরো বিভিন্ন তত্ত্বের সাহায্য নেয়ার। যেমনঃ-
--“যদি ফার্মার ধারণাটি ভিত্তিহীন হয় , তবে Frey এর Elliptic curve (উপবৃত্তীয়/ ডিম্বাকৃতিক বক্ররেখা ) এর অস্তিত্ব বিদ্যমান হবে”।
আর তখন x^n+y^n=z^n সমীকরনের ক্ষেত্রে a ,b ,c ও n পূর্ণসংখ্যা হবে।
(গণিতবিদ Frey দেখান যে যদি x , y , z ও n পূর্ণসংখ্যা হুয় তবে উক্ত সমীকরনে প্রকৃত Elliptic curve বিরাজ করে । যার গঠন হয়-
y^2=x(x+an)(x-bn))
--কিন্তু Taniyama & Shimura দেখান যে প্রত্যেকটা elliptic curve এর সাথে একটা ‘একক গঠনের(modular form) ‘ মিল থাকবে ।
(নীতি টি হল মূলদ সংখ্যা Q এর উপরে সকল elliptic curve মডুলার)
কিন্তু Ribet প্রমান করেন Frey এর Elliptic curve মডুলার নয়। সুতরাং ফার্মার তত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হল।
--আর তখন থেকেই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Andrew Wiles এটা প্রমানের পথ খুঁজে পেলেন।

সকল সংখ্যার ক্ষেত্রে ফার্মার তত্ত্বটি প্রমানের জন্য , তত্ত্বটি বিভিন্ন সংখ্যার সেটের ক্ষেত্রে বিবৃত করা হয়। অর্থাৎ -
যদি N কে প্রকৃত সংখ্যার সেট 1, 2, 3..
Z কে পূর্ণ সংখ্যার সেট 0, ±1, ±2 ..
Q কে মূলদ সংখার সেট a/b যেখানে a ও b, Z এর অন্তর্গত এবং b≠0।
তবে ফার্মার তত্ত্বের সমার্থক বিবৃতি(১) এভাবে দেওয়া যায়-
যদি n ≥ 3 হয় তবে x^n+y^n=z^n সমীকরনের কোন অনগণ্য সমাধান নেই। যেখানে , x, y, z ∈ Z
অর্থাৎ এখানে ফার্মার প্রকৃত বিবৃতি থেকে x, y, z কে, সাধারন সংখ্যার সেট N থেকে , পূর্ণ সংখ্যার সেট Z এ প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই প্রতিপাদন কার্যত হবে যখন x জোড় হবে। আর x যদি বিজোড় হয় তবে x, y, z ত্রয়ী ঋণাত্নক হবে। এবং N এর সমাধান পাওয়ার জন্য x, y, z কে –x, -y, -z দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে ।
তাহলে, এবার এই প্রতিস্থাপনের ধারনায় আসি -
যদি দুইটি ঋণাত্নক হয়, তবে সেটা অবশ্যই হবে x আর y নতুবা y আর z ।
যদি x ও z ঋণাত্নক হয় এবং y ধনাত্নক হয় , তবে সমীকরনটিকে পূণর্বিন্যাস করা যায় এভাবে-
〖(-z)〗^n+y^n=〖(-x)〗^n
ফলে N এর একটি সমাধান পাওয়া যায়।
এখন, যদি শুধুমাত্র একটা ঋণাত্নক হয়, এটি হবে অবশ্যই x অথবা y । যদি x ঋণাত্নক হয় এবং y ও z ধনাত্নক হয় , তবে সমীকরনটির পূনর্বিন্যাসিত রুপ হবে-
〖(-x)〗^n+z^n=y^n
এবং পুনরায় N এর সমাধান পাওয়া যায়।
একইভাবে y যদি ঋণাত্নক হয় ,তবে অনুরুপ সমাধান পাওয়া যায়। সুতরাং সকল ক্ষেত্রে Z এর একটি সমগ্র সমাধান Q এর সমাধানে পর্যবশিত হয় ।
আবার, সমার্থক বিবৃতিটি এভাবেও দেওয়া যায়(২)-
যদি n≥3 হয় তবে x^n+y^n=z^n সমীকরনের কোন অনগন্য সমাধান নেই। যেখানে x, y, z ∈ Q
-কারন x, y, z এর সূচক প্রত্যেকেই সমান ( n এর ক্ষেত্রে)। সুতরাং, যদি Q এর জন্য সমাধান বের করা যায় তবে, তা থেকে একটি যথাপোযুক্ত ভাজক দ্বারা গুন করে Z এর তথা N এর সমাধান পাওয়া যায়।
আবার, সমার্থক বিবৃতি টি দেওয়া হয়(৩) এভাবে –
যদি n≥3 হয় তবে x^n+y^n=1 কোন অনগন্য সমাধান থাকবে না ।যেখানে, x, y ∈ Q
x, y, z ∈ Q এর একটি অনগন্য সমাধানের জন্য মূল সমীকরনের স্বভাবতই একটি অনগন্য সমাধান থাকে। অর্থাৎ -
x^n+y^n=z^n
বা, 〖(x/z)〗^n+〖(y/z)〗^n=1 যেখানে,
x/z, y/z∈ Q
-এবং এটাই নীতিটি প্রমাণে কার্যত ভূমিকা রাখে। কারন এটা ত্রিমাত্রিক সমস্যাটিকে দ্বিমাত্রিক বক্ররেখার (উপবৃত্তীয়) সমস্যায় সংনমিত করে।
আর, এটির বড় সুবিধাটা হল , পূর্ণ সংখ্যা Z এর স্থলে Q এর কাজ করা যায়, যেখানে গণিতের পর্যাপ্ত সূত্র প্রয়োগ সম্ভব।

--অর্থাৎ পীথাগরাসীয় সমীকরনের সাথে ফার্মার সমীকরনের মূল পার্থক্য ছিল সমতলের বর্গকে একটি উপবৃত্তীয় উচ্চ ঘাতের জটিল তলে প্রতিস্থাপন করা।
আর এ জন্য প্রয়োজন ছিল একটি নতুন ব্যাবস্থার(system)। এ জন্য Wiles, Euler system ব্যাবহার করেন। এবং প্রতিস্থাপন করেন Galois Theory এর সাহায্যে।
(Euler System হল একটি উপবৃত্তীয় ব্যাবস্থা যা উহ্য কিন্তু তার উপাদান বাহ্যত এবং এটি উপবৃত্তীয় এককের জন্য প্রযোজ্য।)
(Galois Theory হল ভেক্টর ক্ষেত্রের সমস্যা কে বিন্যাসকরন শ্রেণীতে সংনমন করা)
অবশেষে ১৯৯৩ সালের ২৩ জুন A. Wiles তার সফলতার কথা প্রকাশ করেন
যদিও এটা ছিল বেশ জটিল এবং ত্রুটিপুর্ণ (যা পরবর্তীতে তিনি ও R. Tylor সমাধান করেন) , এবং তা বিশ্ব গণিতবিদদের কাছে চূড়ান্ত গ্রহনযোগ্য বলে গৃহীত হয়।।
--আর তা পরিসমাপ্তি ঘটায় সাড়ে তিনশ বছরের প্রতীক্ষার।। এটা যে শুধু বিংশ শতাব্দীর মানব মস্তিকের সক্ষমতাকে প্রকাশ করে তাই নয় , বরং দেখিয়ে দেয় সেই পথ , আরও অনেক অসমাপ্ত সমাধানের... ।।


তথ্যসূত্রঃ-
-WILES’ Proof of Fermat’s Last Theorem by R. Rubin & A. Silverberg.
-en.m.wikipedia.org/wiki/Fermat”s_Last_Theorym.
- Proof of Fermat’s Last Theorem_ Summary by Micheal Gutmann.
-বহু পথে পীথাগোরাস এবং অনান্য সমস্যা_মোহাম্মদ কায়কোবাদ
-The Proof of Fermat’s Last Theorem by Nigel Boston (spring edition 2003)

শারফান উপল
কুয়েট।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ভাল্লাগছে!!

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২১

শারফান উপল বলেছেন: ধন্যবাদ, কষ্ট করে পড়বার জন্য। :-)

২| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪৬

দরবেশমুসাফির বলেছেন: পিয়েরে ফার্মাট তার ব্যবহৃত বই এরিথমেটিকার মার্জিনে এই কনজেকচারটি লিখেছেন। আরও জানিয়েছিলেন যে এর প্রমান তিনি জানেন কিন্তু বইয়ের মার্জিন ছোট তাই আর লিখতে পারলেন না।

Andrew Wiles এর প্রমানে ফার্মাটের যুগের চেয়ে অনেক আধুনিক গনিত বাবহর করা হয়েছে।ঐ আধুনিক গনিত ছাড়াই ফার্মাট কনজেকচারটি তার সময়েই প্রমান করেছিলেন কিন্তু কাউকে জানিয়ে যান নি।

ফার্মাটের সেই রহস্যময় প্রমান কিন্তু এখনও অনাবিস্কৃত রয়ে গেছে। কাহীনি এখনও খতম হয় নাই।

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২৩

শারফান উপল বলেছেন: হ্যা। উইলসের প্রমানে ত্রুটি ছিল। তবে এখনো পর্যন্ত দেওয়া সমাধানের অইটাই বেস্ট।

৩| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৮

পুলহ বলেছেন: আমি যা বলতে চেয়েছিলাম, দরবেশমুসাফির ভাই আগেই সেটা বলে দিলেন।
উনার কমেন্ট এবং আপনার পোস্টে প্লাস...
ভালো থাকবেন

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২৪

শারফান উপল বলেছেন: ধন্যবাদ, কষ্ট করে পড়বার জন্য।

৪| ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩৩

মহসিন ৩১ বলেছেন: আমার কাছে ট ম্যাথ মানেই হ্রিদকম্প। তবে প্রিয় বিষয় বটে !! অনেকটা লাবিরিন্থ এ ঘুরার মত । পথ হারালেই সব শেষ।

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২৬

শারফান উপল বলেছেন: গনিতের সবটা সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে গনিত বুঝে পড়লে মনে হয় এটা অত্টা খারাপ না :-)

৫| ২২ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

রমিত বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

Fermat's Last Theorem যাকে অন্য কথায় Fermat's conjecture-ও বলা হয়। conjecture মানে হলো an opinion or conclusion formed on the basis of incomplete information (এক ধরনের প্রায় ভিত্তিহীন অনুমান)। আমার জানামতে Andrew Wiles's proof of Fermat's Last Theorem-এ ফের্মা-র সর্বশেষ উপপাদ্যটি শতভাগ প্রমাণিত হয়নি, তবে অনেকটাই প্রমাণিত হয়েছে।

সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৬| ২২ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভাল লাগছে।

কিন্তু কিছুই বুঝি নাই। গনিত মাথায় ঢুকে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.