নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
ছোটবেলা থেকেই আমার অন্য ভাইদের চেয়ে আব্বা আমাকে বেশী ভালোবাসতেন।যদিও আমাকে আলাদা করে ভালোবাসার কোন বিশেষত্ব আমি আমার মাঝে কখনোই খুঁজে পাইনি।তবে আব্বার চোখে আমি তার কার্বন কপি অথবা তার কপি পেস্ট। শুধু আব্বার চোখে বললে ভুল বলা হবে চাচ্চুরা, মা আর খালামনিরাও এমনটাই মনে করতেন।আব্বা বলতেন তিনি নাকি আমার চোখে মায়াভরা পৃথিবী খুঁজে পেতেন।অথচ আমি আমার ডার্কসার্কেল পড়া কোটরে ঢোকা চোখে মায়ার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পেতাম না।
আব্বা আমাকে বেশী ভালোবাসায় অন্য ভাইয়েরা এটা সুযোগ হিসেবে ব্যাবহার করতো।আমাকে দিয়ে বলিয়ে আব্বার কাছ থেকে অনেক কিছু হাসিল করিয়ে নিতো।আমাদের মধ্যে বড় ভাইয়া ছিলো সবচেয়ে ফাঁকিবাজ। ও ঠিকমত পড়তে চাইতো না। আব্বা ওকে সায়েস্তা করার জন্য একবার মহল্লার খুব বদমেজাজি এক টিচার আমাদের জন্য ঠিক করে দিলেন। উনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় এসে আমাদের পড়িয়ে যেতেন আর ভাইয়াকে পেদিয়ে।
লোকটা সত্যি ভিষণ বদমেজাজি ছিলো, সাথে মারের হাতও ছিলো বেশ। ভাইয়াকে খুব মারতো। আমাদের না মারলেও আমরা তাকে দেখতে পারতাম না। লোকটার মুখে কোন রসকষ ছিলো না। ভালো কথাও চিরতা ভেজানো পানির মতো লাগতো।
ভাইয়া যখন তার মার খেয়ে অতিষ্ঠ, তখন আমাকে বললো আমি যেনো আব্বাকে বলে টিচার পরিবর্তন করি।আমিও রাজি হয়ে গেলাম কারণ এই রসকষহীন খাম্বা টাইপ টিচার আমারও পছন্দ ছিলোনা।
যেই কথা সেই কাজ। আব্বাকে বলে টিচার পরিবর্তন করে, অন্য টিচার রাখা হলো।
ওই টিচার আর এই টিচারের বিস্তর ফারাক প্রথম দিন থেকেই চোখে পড়তে লাগলো। ওই টিচার যতোটা বদমেজাজি ছি্লো এই টিচার ঠিক ততোটাই হাসিখুশী আর আন্তরিক ছিলো।
মানুষটা আমাদের খুব যত্নসহকারে পড়াতেন।ছবি এঁকে দিতেন, গান শোনাতেন আহ! কি গানের গলা ছিলো তার। আমাকে মাঝেমাঝেই তার সাইকেলের সামনেে এবং আমার ফুপু কে পেছনের সিটে বসিয়ে এ মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় ঘুরে বেড়াতেন আর এটা সেটা কিনে খাওয়াতেন (এই সেই ফুপু যার সাথে আমার শৈশব মিশে আছে, এই ফুপুর কথাই এর আগে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম)।
স্যারের বাসায় মেহমান আসলে মাঝেমধ্যে রাতে আমাদের বাসায় থাকতেন। উনি আমাদের বাসায় থাকা মানেই আমাদের ঈদের খুশী কারণ ওই একটাই উনি আমাদের ঘুমানোর আগ পর্যন্ত রাক্ষস খোক্কসের গল্প শোনাতেন। উনি আমাদের পড়া মুখস্থ আর মনোযোগ বাড়াতে প্রতিদিন সবাইকে একটা করে টেবলেট খাইয়ে পড়ানো শুরু করতেন।কি আশ্চর্য! টেবলেট গুলো কাজ করতো। দিব্যি আমাদের পড়ায় মনযোগ চলে আসতো, পড়া মুখস্থও হয়ে যেতো। যদিও বড় হবার পর বুঝতে পেরেছি ওই টেবলেট গুলো আসলে উইদাউট মেডিসিনে হোমিওপ্যাথী ওষুধ ছিলো।
আসলে তখন ওষুধ গুলো কাজ করেনি। ওষুধ খেলে আমাদের পড়ায় মনযোগ আসবে এই বিশ্বাসটাই আমাদের কাজে দিয়েছে। আর স্যার সেই বিশ্বাসটা কাজে লাগিয়ে আমাদের পড়িয়েছেন। স্যার আমাদের মাঝেমাঝে জ্বীন পরীর ছবি এনে দিতেন। আমারাও তা বিশ্বাস করে যত্ন করে রেখে দিতাম বড় হওয়ার পর বুঝেছি অগুলো ফটোশপের কাজকর্ম ছিলো।
ছেলেবেলা টা সত্যিই অনেক ভালো ছিলো।কত সামান্য কিছুও অনেক অসামান্য কাজ দেয়ার ক্ষমতা রাখতো।
কোন অপূর্ণতা ছিলো না। পুরো জগৎটাই হাসি-আনন্দ আর ভালোবাসার দেয়ালে ঘেরা ছিলো।
ছবিঃ গুগল
২৫ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২৯
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমাদেরও মাঝেমাঝে আটকে রাখার জন্য বিকেল ৫টার মতো বিদ্ঘুটে টাইমে পড়াতে আসতেন। তখন খুব কান্না পেতো। বিকেলটা নষ্ট হয়ে যেত।
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:৪৬
জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর লেখনী!
২৫ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: ভালোবাসা আপনার জন্য ভাই।
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৫
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: এখন ওই স্যার কোথায়?
২৫ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৫
শাওন আহমাদ বলেছেন: আছেন আগের ঠিকানাতেই কিন্তু দেখা হয়না। হয়তো জীবন সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৩১
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: বাসায় প্রাইভেট পড়েছি ৪মাস। এর মধ্যে ২মাস পুরা মাসের প্রতিদিন টিচার বাসায় এসেছে। মার্চ মাসে ২০দিন এসেছে। এপ্রিলে একদিনও আসেনি। এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে!
২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৫৫
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমি দীর্ঘ সময় পড়েছি। চাপে রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছিলো মূলত।
৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:১৮
পোড়া বেগুন বলেছেন:
গৃহ শিক্ষক আগেও ছিলো, এখনো আছে; তবে পাল্টেছে চরিত্র।
আগে তারা ছাত্র- ছাত্রীদের লেখা পড়ার সাথে আদব কায়দাও
শিক্ষা দিতেন আর এখন শুধুই টাইমপাস আর সুযোগ পেলে
প্রেমের ছবক!
খুবই ভালো স্মৃতিচারণ! ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:০৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: সত্যিই সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পাল্টেছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৩৩
রযাবিডি বলেছেন: সেই সব শিক্ষক আর আজ নেই। এখনকার শিক্ষক হচ্ছে ঘড়ির কাটার সাথে চলা, ঘন্টা হিসেবে সপ্তাহে ৪ দিন। সবই এখন কমার্শিয়াল হিসাব।
২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:০৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: সময় বদলেছে আর সময়ের সাথে সব বদলেছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৭| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৪৮
জ্যাকেল বলেছেন: আপনার ত বয়স এত বেশি না। এখনই ভাল স্মৃতিচারণ করা শিখে গেছেন। বাহ দারুণ!
২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:১২
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমি সেই লেভেলের স্মৃতিখোর! স্মৃতি জমিয়ে রাখার অনেক গুলো বয়াম আছে আমার। আমি সেখানে রঙ বেরঙের স্মৃতি গুলো জমিয়ে রাখি। যখন তখন বয়াম খুলে চারণ করি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৮| ২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৩৬
জটিল ভাই বলেছেন:
বাহ্! এই না শিক্ষক!
২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৫১
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৯| ২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৪৩
সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: সকল শিক্ষকেরা এভাবেই বেঁচে থাকেন তাঁদের শাগরেদদের হৃদয়ে। বিনম্র শ্রদ্ধা আপনার শিক্ষকের জন্য। আমার শিক্ষককে নিয়ে লেখা একটি পোস্ট। সময়ের অভাবে এগুতে পারছি না, তাই আর লেখা হচ্ছে না!
২৬ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৫১
শাওন আহমাদ বলেছেন: সময় করে লিখে আমাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২৪
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: আমাকে স্যার পড়াতে আসতেন বিকেল ৫ টার পর। মাত্র স্কুল ফিরতাম তখন। ফুটবল/ক্রিকেট খেলার টাইমে স্যার আসতেন তাই বিরক্ত লাগতো। আপনার স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো।