নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়, আমার কেবল উপায় থাকিলেই ইচ্ছে হয়

শিস্‌তালি

Stay Hungry, Stay Foolish!Stay Sexy, Stay Virgin!!!

শিস্‌তালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুমেরাং! (ছোট গল্প)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

দুপুর আড়াইটা। মতিঝিল এলাকার এই দিকটা শুক্রবার দিন সাধারণত এই সময় বেশ চুপচাপ আর নিরিবিলি থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আজকের শুক্রবার এই এলাকার বেশীরভাগ অফিস আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই খোলা। ২ নং গলির মুখে দাড়িয়ে জাকির তার মোবাইলে একটি কলের অপেক্ষায়......!

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিসমিল্লাহ্‌ ওয়ার্কশপের একটি পুরনো ভাঙাচোরা গাড়ি এসে হাজির হলো। কে বা কারা গাড়িটি পার্ক করেই মুহূর্তের মধ্যে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেল। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত, এই ব্যস্ততার মাঝে কেউই লক্ষ্য করলো না এরকম একটি গাড়ি ঠিক এই মুহূর্তে চালকবিহীন অবস্থায় এখানে থাকার কথা নয়! শুধুমাত্র ইসমাইল ড্রাইভার রেডিও ফুর্তিতে গান শুনতে শুনতে একবার লক্ষ্য করলেও আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কাজ বলতে স্যারের ছেলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করা। ইসমাইল ড্রাইভারের অপেক্ষা শেষ হবার আগেই ২ নং গলির জাকিরের অপেক্ষার পালা শেষ হল। ওস্তাদের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল সে অলরেডি পেয়ে গেছে!



প্ল্যানমাফিক বিসমিল্লাহ্‌ ওয়ার্কশপের গাড়িটি দিয়েই শুরু হলো আগুনের সেই হোলি খেলা!



রেডিও ফুর্তিতে গান শুনতে শুনতে ইসমাইল ড্রাইভারের চোখ প্রায় লেগে এসেছিল। হঠাৎ গাড়ির দরজায় ভয়ংকর লাথির শব্দে তার তন্দ্রাভাব চলে যায়। তার সমবয়সী ছেলেগুলোই কি অবলীলায় তাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে। হারামী হলেও ছেলেগুলো অমানুষ(!) নয়, তাইতো ব্র্যান্ড নিউ গাড়িটি পুড়িয়ে কয়লা করবার আগ মুহূর্তে অন্ততঃ গাড়ির ভেতরে থাকা একমাত্র জলজ্যান্ত মানুষটিকে তারা বের করে আনে।



ঘুম ঘুম চোখে মুহূর্তের মধ্যেই নিজের জীবিকার একমাত্র অবলম্বনকে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখে ইসমাইল অসহায়ের মত আর্তনাদ করতে শুরু করতে থাকে। এইরকম পরিচিত আর্তনাদ জাকিরের রীতিমত অসহ্য লাগা শুরু করে! তাই ইসমাইলকে কষে একটা চড় দিয়ে ঠাণ্ডা করতে জাকির এগিয়ে যেতেই থমকে যায়......



- ' আরে জাকির ভাই তুমি! এইডা তুমি কি করলা! তুমি এইসব কবে থেকে শুরু করলা! তুমি না গাড়ি চালাইতা! আমি আমার মা কে ক্যামনে খাওয়ামু!'- উল্টো ইসমাইলই জাকিরের কলার চেপে ধরে বাচ্চাদের মত আহাজারি করতে থাকে!

- 'রাতে দেখা করিস, ব্যবস্থা করবো'- বলেই এক ঝটকায় দ্রুত সটকে পড়ে জাকির নটরডেম কলেজের দিকে এগিয়ে যায়! আইডিয়াল স্কুলের পর এবার নটরডেম কলেজের সামনে কিছু বাস ভাঙ্গার পালা!



মাস তিনেক আগের ঘটনা। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ হারের সুদে ধার নিয়ে এবং নিজের জমানো সব টাকা দিয়ে একটি সিএনজি চালিত ট্যাক্সি কিনেছিল জাকির। টানা চারদিনের হরতালের ২য় দিন, শ্যামলীতে সিএনজি এক সাইডে রেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই নিজের প্রিয় সিএনজিকে আবিষ্কার করে পিকেটারদের দখলে! সেই সময়ের প্রচণ্ড ভীতু আর নিরীহ প্রকৃতির জাকির আর সাহস করেনি পিকেটারদের মুখোমুখি হবার বরং জান নিয়ে বাসায় ফিরে আসতে পেরে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল! সেই ভীতু জাকিরকে এরপর সাহসী করে তুলবার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয় তাকে ধার দেওয়া সেই মহাজন! ফলাফল সেদিনের সেই নিরীহ জাকির আজ তার দলের ঢাকার একটি জোনের টীম লিডার! তার মাসিক আয়ও এখন আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশী। সুঠাম দেহের ইসমাইলকে অনেকদিন পর দেখে জাকির বেশ আনন্দিত হয়। কারণ সে মনে মনে কিছু নতুন পোলাপাইন খুঁজছিল। ইসমাইলের এই কঠিন সময়কে কাজে লাগিয়ে যদি ওকে দলে নেয়া যায় তাহলে নেতার আরও বেশী সুনজরে আসা হবে!



জাকির অপেক্ষায় থাকে চাকরি হারিয়ে ইসমাইল ঠিকই তার সাথে দেখা করতে আসবে। একদিন...... দুই দিন...... তিন দিন... ঘটনার চতুর্থ দিন রাতে ইসমাইল জাকিরের বাসায় দেখা করতে আসে এবং বিদায়ের আগ মুহূর্তে জাকিরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে, 'এইডা তুমি কি করলা- জাকির ভাই! আমার এখন ভাত খাইয়ারই টাকা নাই আর তুমি আমার আম্মার ওষুধ কেনার রাস্তাডাও বন্ধ কইরা দিলা'- ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল জাকির, ' চিন্তা করিস না। আমার লগে কাজ কর। টেকার অভাব হইব না'



ইসমাইল ও জাকিরের দেখা হবার দু' সপ্তাহের মাথায় ইসমাইল এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক লাখ টাকা ট্র্যান্সফার করে। যেদিন টাকাটা ট্র্যান্সফার হয়েছিল সেদিনই প্রথম আলো'র ফ্রন্ট পেইজে দশজনের ছবিসহ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর একটি নতুন বিজ্ঞাপন দেখা যায়, গতকালকের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত এই দশজনের তথ্য প্রদানকারীকে নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে এবং তথ্য প্রদানকারীর নাম ও ঠিকানা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: আহারে, বড়ই করুন, নির্মম, নিষ্ঠুর , দুঃখময় সাধারণ মানুষের অসহায় জীবনযাপন। ছবিটি দেখে খুবই খারাপ লাগছে।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০০

শিস্‌তালি বলেছেন: আহা... আসলেই! কি কষ্টকর :(

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩২

েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: সব গুলো জানোয়ারের বাচ্চা ।তার চেয়ে বড় জানোয়ার এদের যারা নিযুক্ত করেছে।সময়পযোগী পোস্ট । সহমত ।প্রিয়তে নিলাম ।

১। যাদের লোভ ও লালসার আগুনে পুড়ছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল , তাদের প্রত্যাখান করার জন্য না ভোটের পূণঃ প্রচলন চাই ।
Click This Link

২।বরং ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সব রাজাকারদের বিচার চাই।
Click This Link

৩।জামাতীরা জাহান্নামী ।
Click This Link

৪।কসাই কাদের মোল্লা কতটুকু ইসলামী আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলো?
Click This Link

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০১

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাই আপনার লেখাগুলো বোঝা যাচ্ছে না :(

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫

তাসজিদ বলেছেন: আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০২

শিস্‌তালি বলেছেন: oppekkhai achi onek shundor ekti diner :)

৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫২

শিস্‌তালি বলেছেন: vai mob theke reply dite partesina.comment korte partesi shudhu :( thnx4ur comments

৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫১

অপ্রচলিত বলেছেন: সুন্দর এবং ব্যতিক্রমী সময়ের গল্প।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৬

শিস্‌তালি বলেছেন: :) ধন্যবাদ ভাই! অণুপ্রেরণা পেলাম!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.