নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়, আমার কেবল উপায় থাকিলেই ইচ্ছে হয়

শিস্‌তালি

Stay Hungry, Stay Foolish!Stay Sexy, Stay Virgin!!!

শিস্‌তালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প- অনুলিখন

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৯

অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র কথা নিশ্চয় সবাই শুনেছেন, আমাদের প্রায় সবাইকেই কমবেশি অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয় কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন অনুরোধে গেলা ঢেঁকির স্বভাব হয় সর্বদা ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে টাইপের!সেই ছোটবেলা থেকেই অনুরোধে ঢেঁকি গিলে আসছি কিন্তু রাফি ভাইয়ের কারণে আমাকে সর্বপ্রথম অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয় গত বছর জুনে , তখনও বুঝিনি কত বড় সর্বনাশেই না পড়তে যাচ্ছি। সেদিন এসএসসি’র রেজাল্ট দিয়েছিল, রাফি ভাইয়ের ছোট ভাই গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে! অত্যন্ত খুশীর খবর- আমি ওনার কাছের মানুষ বলে আমাকে ইনবক্সে জানালেন ছোট ভাইয়ের কীর্তির কথা! আমিও মন থেকে ওর সাফল্যময় ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করে দিলাম। কিন্তু পরমুহূর্তেই তিনি আবদার করে বসলেন, তার ছোট ভাইকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস লিখে দিতে হবে। কি মুশকিল- ওনাকে যতই বুঝাই আপনি নিজেই যা পারেন লিখে ফেলেন তাহলে স্বকীয়তা থাকবে কিন্তু কে শোনে কার কথা! তার দাবী একটাই উনি আমার লেখালেখির বিশাল ভক্ত তাই আমাকে ভক্তের আবদার মেটাতেই হবে। অথচ শুরুতে শুধুমাত্র আমিই ওনার ভক্ত ছিলাম,তিনি আমাকে চিনতেনও না। রাফি ভাই একজন জাতীয় পর্যায়ে খেলা দাবাড়ু এবং বাংলাদেশের পরবর্তী আন্তর্জাতিক মাস্টার হিসেবে তার নামই সবার আগে চলে আসে। আমি নিজে খুব সাধারণ মানের দাবা খেললেও দাবার প্রতি আগ্রহের কারণে মাঝেমধ্যেই দাবা ফেডারেশনে যেতাম আর মুগ্ধ হয়ে রাফি ভাইসহ অন্যান্য সেরা দাবাড়ুদের খেলা দেখতাম। তাই একজন জাতীয় দাবাড়ু আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে শুরুতে এই খুশীতেই আমি অনেকদিন আবেগাপ্লুত ছিলাম। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকল দেখা গেল আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস, ব্লগিং এসব লেখালেখি পড়ে রাফি ভাই নিজেই আমার সবচেয়ে নিয়মিত পাঠক হয়ে গিয়েছেন।বিশেষ করে আমার যে কোন পোস্টে সর্বপ্রথম লাইক কিংবা শেয়ার দিত রাফি ভাই। এরকম একজন শুভাকাঙ্ক্ষীকে মনে কষ্ট দেই কিভাবে, তাই নিজের একমাত্র ছোট ভাই বুয়েটে চান্স পেলে যে স্ট্যাটাস দিব ভেবেছিলাম সেই স্ট্যাটাসটাই একটু এদিক সেদিক করে রাফি ভাইকে ইনবক্স করলাম। যেহেতু আমার ভাইয়ের শেষ পর্যন্ত বুয়েটে পড়া হয়নি তাই সেই সুন্দর স্ট্যাটাসটিও আর টাইমলাইনে শেয়ার করা হয়নি। আগেকার দিনে মানুষ বন্ধুকে প্রেমপত্র লিখে দিতে বলত আর ফেসবুকের কল্যাণে এখন বন্ধুকে স্ট্যাটাস লিখে দিতে হয়! যাই হোক ছোট ভাই গোল্ডেন ফাইভ পাবার সেই স্ট্যাটাসে কয়েকশ লাইক পড়েছিল কিন্তু রাফি ভাইকে যতই বুঝাই এখানে আমার কোন কৃতিত্ব নেই, ছোট ভাই ভাল রেজাল্ট করেছে এরকম যে কোন স্ট্যাটাসেই শত লাইক পড়ে- তবু তার এক কথা আমার লেখনীর কারণেই তার ফেসবুক লাইফের সবচেয়ে হিট স্ট্যাটাস এইটি! সেই শুরু এরপর আমার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল আর পারছিনা গুরু। দুদিন পরপরই রাফি ভাইয়ের নিত্যনতুন আবদার! আজ তার কোন চেসস্কুলে চাকরি হয়েছেতো কাল বিদেশ থেকে এক যুগ পর তার ছোটবেলার বন্ধু দেশে এসেছে কিংবা বছরের শুরুতে সবাই গত বছর কেমন কেটেছে তা নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে বিধায় আমাকেও তার গত বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে একটি সুন্দর স্ট্যাটাস লিখে দিতে হবে! কখনো এমনও হয়েছে সারা সপ্তাহে হয়তোবা আমার নিজের প্রোফাইলেই কোন স্ট্যাটাস দেইনি কিন্তু ঠিকই রাফি ভাইকে একাধিক স্ট্যাটাস লিখে দিয়েছি। সবসময়ই যে বিরক্ত লাগত তা নয় মাঝে মাঝে মজাও লাগত যেমন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবকে রাফি ভাই হারানোর পর সেই স্ট্যাটাস লিখে বেশ মজা পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আহ আমিও যদি কোনদিন এত ভাল দাবা খেলতে পারতাম! কিন্তু মজা পাওয়া স্ট্যাটাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম বরং বেশীরভাগই ছিল অনুরোধে নিতান্ত বাধ্য হয়ে ঢেঁকি গেলা! একবার অনেক অনুরোধের পরও স্ট্যাটাস লিখে দেইনি বলে রাফি ভাই রাগ করে তার ফেসবুক প্রোফাইল অনেকদিন ডিঅ্যাকটিভেট করে রেখেছিলেন। সত্যি বলতে কি সেই সময় আমি আমার পোস্টগুলোতে তার সুন্দর সুন্দর কমেন্টগুলোকে আসলেই অনেক মিস করতাম। অবশেষে তাকে ফোন করে সরি বলে ফেসবুকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। আসলে রাফি ভাইয়ের মত এরকম সহজসরল অসাধারণ একজন মানুষ আর অসাধারণ একজন দাবাড়ুকে ভাল না বেসে থাকা যায় না। মাঝে মাঝে তাই অনিচ্ছাস্বত্তেও তাকে আমার স্ট্যাটাস লিখে দিতে হবে- আমি আমার এই নিয়তি মেনে নিয়েছিলাম।

কিন্তু একদিন আর নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি- আমি রাতে নর্থসাউথে ইভিনিং এমবিএ’র ক্লাস করছিলাম আর এমন সময় রাফি ভাইয়ের বিশাল এসএমএস, প্রিয় স্ট্যাটাস ভাই আমার ইমেইল [email protected] আর আমার পাসওয়ার্ড****** আপনি নিশ্চয় খুব অবাক হবেন আজ আমি রংপুরে দুইজন গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক র‍্যাপিড রেটিং দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। খুশীতে এখনই আমার সবাইকে জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু আমার মোবাইল থেকে কেন যেন ফেসবুকে ঢুকতে পারছিনা। আমি ঢাকার পথে। আপনি আমার প্রোফাইলে ঢুকে একটা সুন্দর স্ট্যাটাস দিয়ে দেন প্লিজ। প্রমিজ, আর কখনও আপনাকে রিকোয়েস্ট করব না।
কি অদ্ভুত,নিজের ফেসবুক পাসওয়ার্ড কেউ কাউকে শেয়ার করে!রাফি ভাই আগেও বহুবার বলেছে আর আমাকে স্ট্যাটাস নিয়ে বিরক্ত করবে না, তাই ওনার প্রমিজের উপর ভরসা করতে পারলাম না। একেতো বোরিং ক্লাস তার উপর এই এসএমএস! ওনার এসএমএস পাবার পর তাই মেজাজটা খুব বিগড়ে গিয়েছিল, প্রথমে অভিনন্দন জানালাম এরপর খুব কড়া কিছু কথা লিখলাম ফিরতি এসএমএসে। সাথে এও জানিয়ে দিলাম ওনার অনুরোধ আমি রাখতে পারছিনা। মনের দুঃখেই হোক কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক রাফি ভাই দেখি কোন রিপ্লাই দিলেন না।
রাতে বাসায় ফিরেই আর নেটে না বসে দিলাম গভীর ঘুম। পরদিন ছুটির সকাল ছিল বলে অনেক দেরীতে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই দেখি আরেক দাবাড়ু রবিন ভাইয়ের প্রায় বিশটি মিসড কল। কলব্যাক করেই যা শুনলাম তার জন্য ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নেও কোন মানসিক প্রস্তুতি ছিলনা।রবিন ভাই হাউমাউ করে কেঁদে জানালেন, রাফি ভাই রংপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে রোড অ্যাক্সিডেন্ট করে এখন রংপুর সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমি যে সময়টাতেই মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওনাকে কড়া এসএমএস করেছিলাম তার একটু পরেই হয়তোবা রাফি ভাইদের ড্রাইভারও তার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। আমি যখন রংপুর হাসপাতালে পৌছাই ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে ... যেই রাফি ভাই বহুবার দাবা বোর্ডে নিশ্চিত পরাজয় থেকে জয়ের হাসি হেসেছিল সেই রাফি ভাইকে জীবনের বোর্ডে এত সহজে হার মেনে নিতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল! ওনার নিথর দেহ দেখে র‍্যাপিড দাবায় ওনার ভয়ঙ্কর দ্রুত গতিতে অদ্ভুত সুন্দর সব চাল দেবার দৃশ্যগুলো বারবার মনে পড়ছিল। ওনার মৃত্যুতে বাংলাদেশের দাবা হয়তোবা খুব ভাল ও সম্ভাবনাময়ী একজন দাবাড়ুকে হারাল আর আমি হারালাম আমার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষীকে!

রাফি ভাইকে আমি কতটা ভালবাসতাম বেঁচে থাকতে কখনই তা প্রকাশ করতে পারিনি বরং বেশীরভাগ সময়ই তার স্ট্যাটাস দেবার অনুরোধে বিরক্তি প্রকাশ করেছি। ওনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড এখনও আমার কাছে আছে, খুব ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে ওনার প্রোফাইলে ঢুকে ওনার হয়ে খুব সুন্দর একটা স্ট্যাটাস দেই।

রাফি ভাই নেই আজ প্রায় ছয় মাস হয় গেছে, আমি প্রায় প্রতিদিনই ওনার শেষ এসএমএসের প্রমিজ, আর কখনও আপনাকে রিকোয়েস্ট করবনা লেখাটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। উনি চলে যাবার পর আমার নিজের প্রোফাইলে এখন আর কোন স্ট্যাটাস দেয়া হয়না। আমার ফলোয়ারদের অনেকেই আমাকে ইনবক্স করে, ভাই আগে এত সুন্দর সুন্দর পোস্ট দিতেন অথচ এখন আপনার কোন পোস্ট দেখিনা কেন? আমি তাদের কাউকেই কোন রিপ্লাই দেইনা, স্রেফ ইনবক্সের মেসেজগুলো পড়ে মলিন একটা হাসি দিয়ে রাফি ভাইয়ের উপহার দেয়া 101 Chess Opening Traps বইটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি!

*** ছোট গল্পটি ছোট্ট মানুষ ক্যাসপারকে উৎসর্গীকৃত :( ৩.৯.২০১৫

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:২০

শিস্‌তালি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আপনার শ্রদ্ধাই তার পরম পাওয়া।। আপনার ব্যাথিতমন ভাল হোক আর রাফি ভাইয়ের মাগফেরাত কামনা করছি।। না ভাই আমার হিসাবে ওনার এ্যাকাউন্টে কিছু না লেখাই ভাল।।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:২১

শিস্‌তালি বলেছেন: এটা গল্প :) ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.