নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়, আমার কেবল উপায় থাকিলেই ইচ্ছে হয়

শিস্‌তালি

Stay Hungry, Stay Foolish!Stay Sexy, Stay Virgin!!!

শিস্‌তালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়ংকর টিউশনি!

১১ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০০

ছাত্র হিসেবে আমি কখনোই আহামরি কিছু ছিলাম না কিন্তু ছাত্র হিসেবে আমি যতটা খারাপ মানের, টীচার হিসেবে তার চেয়েও বহুগুণ বেশী খারাপ ছিলাম অর্থাৎ কোন একটা অংক আমি নিজে নিজে করে ফেলতে পারলেও কিভাবে এন্স্যার বের করেছি সেটা বুঝাতে গেলে যাকে বুঝাতাম সে একসময় ধৈর্য্যহারা হয়ে বলত, দোস্ত তুই বুঝানোর পর মাথায় আগে যা ছিল সেটাও এখন নাই হয়ে গেছে! তাই এই ধরনের অকার্যকর বুঝানোর ক্ষমতা নিয়ে আমার লাইফে টিউশনি নামের কোন গল্প থাকবে না সেটাই খুব স্বাভাবিক কিন্তু প্রেম একবার এসেছিল জীবনের মত আমারও একদিনের একটা মজার টিউশনির গল্প আছে!
কলেজ লাইফ পর্যন্ত আমাকে বাসা থেকে কোনরকমের হাত খরচ দেওয়া হতনা, আম্মু শুধু স্যারদের বাসা/স্কুল কলেজের কনভেয়েন্স হিসবে রিকশাভাড়ার চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশী দিত প্রতিবার- এমনকি জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি লাইফেও আব্বু শুরুতে মাসে মাত্র তিন হাজার টাকা দিত, পরবর্তীতে বিবিএ পাশের সময় তা বেড়ে সাড়ে চার হাজার টাকা হয়েছিল- তারপরও আমি জাবিতে এক্সট্রা টাকা ইনকামের জন্য দুবার পার্ট-টাইম জব করলেও কখনো ভুলেও টিউশনি করব এই চিন্তা মাথায় আনিনি আর এর মূলে ছিল ক্লাস নাইনে পড়ুয়া দুই ভাইবোন আর আমার একদিনের টিউশনির সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা!
জাবিতে ভর্তি হবার আগে আমি দিনদশেক চট্টগ্রাম ভার্সিটির মার্কেটিংয়ে ক্লাস করেছিলাম, কাছের প্রায় সব বন্ধুরাই তখন চট্টগ্রামের বাইরে পড়তে চলে গিয়েছে তাই সে সময়টা আমার বেশ খারাপ আর বোরিং কাটছিল চট্টগ্রামে আর ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরও দেখা গেল কনভেয়েন্সের সামান্য বেশী দেওয়া ছাড়া বাসা থেকে এক্সট্রা হাতখরচ দেবার কোন লক্ষণ নাই, আমিও সেসময় একটু মাইনকা চিপায় কারণ ক্লোজ ফ্রেন্ডরা প্রায় সবাই বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, মেডিকেল, আইইউটি, ঢাবি কিংবা এমআইএসটিতে আর আমি একমাত্র চবিতে চান্স পেয়ে বাপের কাছে কিভাবে হাতখরচের এক্সট্রা টাকা চাই! তাই চবির এক বন্ধুকে সাহস করে বললাম, একটা টিউশনি ম্যানেজ করে দিতে।
দুদিনের মধ্যেই বন্ধু টিউশনি ম্যানেজ করে ফেলল, আমার বাসার কাছেই ক্লাস নাইনে পড়ুয়া দুই ভাইবোনকে জেনারেল ম্যাথ আর সায়েন্স পড়াতে হবে …
সময়মতো বুকভরা সাহস আর রোমাঞ্চ নিয়ে জীবনের প্রথম টিউশনির শুভ সূচনা করতে সেই বাসায় পড়াতে হাজির হলাম, গিয়েই দেখি ভাইটি ক্লাস নাইনে পড়লেও গায়ে গতরে আমার চেয়ে বেশ ভালোরকমের স্বাস্থ্যবান- অনেকটা ছোটখাটো হাল্কের মত ফিগার এবং এত বড় ছেলেকে মা জালিবেত নিয়ে দৌড়াচ্ছে কারণ সে আজ প্রথমদিন ড্রয়িংরুমে পড়তে ইচ্ছুক না বেডরুমে পড়বে কিন্তু মাতৃআদেশ ভাইবোনকে ড্রয়িংরুমেই পড়তে হবে। মা-ছেলের টম এন্ড জেরী খেলা শেষ হলে ছেলেকে অন্যরুমে রেখে মা জানাল, কিছু মনে করবেন না আমার ছেলে একটু মেন্টালি চ্যালেঞ্জড! আমি ওকে বুঝিয়ে আপনার কাছে একটু পরে পাঠাচ্ছি, আপনি আপাতত আমার মেয়েকে পড়ানো শুরু করেন। আমি ঢোঁক গিলে বললাম, ঠিক আছে মেয়েকে পাঠিয়ে দেন।
মেয়ে রুমে আসার পর পড়ানো শুরু করতে গিয়ে দেখি, ক্লাস নাইনের মেয়ে এ প্লাস বি হোল স্কয়ার কিংবা এ প্লাস বি হোল কিউবের সূত্রও জানেনা- বুঝিয়ে দেবার পরও নাকি তার মাথায় এই সহজ সূত্রদুটোর একটাও কিছুতেই ঢুকছেনা! আসলেই বুঝতেছেনা নাকি ফাজলামি করছে ঠিক বুঝলাম না কারণ সেই ফাজিল মেয়েটা একটু পর বলে, স্যার আপনার বাসা আমি চিনি, আপনার রুমের ঠিক অপজিটেই আমার একটা বান্ধবীর বাসা। ফাজিল মেয়েটি যে আমার রুমের ঠিক অপজিটেই রাস্তার অপর পারের বিশাল লম্বা চুলের মেয়েটার কথা বলছে সেটা বুঝতে পারলেও আমি না বোঝার ভান করে বললাম, তাই নাকি? কই আমিতো জানিনা!
একটু পর মা বুঝিয়ে সুঝিয়ে ছেলেকে পড়াতে পাঠালেন এবং এজ এক্সপেক্টেড ম্যাথে এই ছেলের অবস্থা বোনের চেয়েও খারাপ। আমি কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারলাম না এই বিদ্যা দিয়ে দুই ভাইবোন কিভাবে ক্লাস নাইনে উঠল, হিসাব মেলাতে না পারলেও মনে মনে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করতে থাকলাম, আল্লাহ্‌ আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার কর।
আল্লাহ্‌ আমার দোয়া কবুল করলেন, ঠিক একদিন পরই জাবিতে চান্স পেয়ে গেলে আমি আমার চবি বন্ধুকে জানিয়ে দিলাম দোস্ত আমিতো ঢাকায় চলে যাচ্ছি, তুই একটু কষ্ট করে আন্টিকে জানিয়ে দিস- টিউশনিটা আমার আর করা হবে না। আমার নিজেরই ফোন করা উচিত ছিল কিন্তু কেন যেন ইচ্ছে হয়নি কিংবা আমার কাছে হয়তোবা আন্টির নাম্বার ছিল না- ঠিক মনে নেই এখন!
চট্টগ্রামে আমার বাসায় গেলে আমি যখনই সেই বাসাটা ক্রস করি, আমার তখন খুব জানতে ইচ্ছে করে সেই দুই ভাইবোন এখন কেমন আছে? শেষ পর্যন্ত তারা কতদুর পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছিল!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৯

অক্পটে বলেছেন: ভালো লাগল। অনেকটা স্মৃতি রোমন্থনের মতো।

১১ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:১৬

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২৯

মেরুভাল্লুক বলেছেন: বর্তমানে পাশের হারের যে অবস্থা তারা ভালভাবেই পাশ করেছে বলে আমার ধারনা

১১ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩২

শিস্‌তালি বলেছেন: এটা ২০০৪ সালের কাহিনী ভাইজান

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শেষ হয়েও হইলোনা শেষ
শুরুই হইলোনা তার আবার শেষ !!

১১ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫

শিস্‌তালি বলেছেন: হাহাহা ভালোই বলেছেন।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টা পড়ে ভালো লাগলো।

১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:২৪

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.