নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
যুদ্ধের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অনেকেই ভিটে বাড়িতে ফিরছে। অনেকের চুলা জ্বলছে।
রাবেয়া খাতুনের বসতবাড়ির অনেকটাই আগুনে পুড়ে শেষ। চারটা নারিকেল গাছ আগুনে জ্বলেছে । তুমুল উল্লাসে আগুন দিয়েছিলো হানাদার এবং তার দোসররা। এটা মৌলানা সাহেবের বাড়ি। মওলানা সাহেব তার কোন ছেলেকে শান্তি বাহিনীতে পাঠাননি। নিজেও ইসলাম ও দেশের শান্তির জন্য কিছু করেন নি । এ আবার কিসের মৌলানা ? কিসের দাঁড়িয়ালা পরহেজগার। কত প্রস্রাব করে পানি না নেয়া মুসলমান টুপি পরে শান্তিবাহিনীতে নাম লেখালো। মৌলানা সাহেবের প্রতি আক্রোশটা তাই একটু বেশি। বাড়ির সাথে নারিকেল গাছগুলো তাই নিস্তার পায়নি।
রাবেয়া খাতুন চুলা জ্বালিয়েছেন। গমের রুটি আর ভাজি। পরিস্থিতি আরেকটু ভালো হলে সামনের জমিতে সবজি লাগাবেন। সবজি বাগান করা মওলানা সাহেবের শখ। তিনি ছেলেদের নিয়ে এই কাজটা করেন। শীতে শালগম , পালংশাক আরো কত কি! পালং শাক দিয়ে টেংরা মাছের ঝোল ছেলেদের খুব পছন্দ।
ভেজা খড়িতে আগুন ঠিক মত জ্বলছে না। চোখ জ্বলছে। একমাস হয়ে গেলো তার বড় ছেলের খবর নাই। কোথায় আছে কে জানে। মাসখানেক আগে আশ্রয় নেয়া বাড়িতে এসে দেখা করে গেছে কিছু সময়ের জন্য। এসে বলেছে , "মা আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আব্বাকে বলার দরকার নাই। অনেকেই বলেছে এ আবার কেমন পীর মৌলানা , যার বাড়ি পুড়ায় দেয়। নিশ্চয় আল্লার শাস্তি।"
রাবেয়া খাতুন কিছু বলেন না। মৌলানা সাহেব এই খবর আগেই পেয়েছেন। চুপ করে থেকে শুধু বলেছেন , 'ওরা রাখাল কৃষিনের হাতে মরবি'।
রাবেয়া খাতুন বাঁশের ফুকনি দিয়ে চুলায় ফুঁ দিলেন। আগুন না জ্বলে ধোঁয়া বের হলো। আগুন জ্বলার আগে এমনটা হয়। তাঁর চোখে পানি। সম্ভবত ধোঁয়ার কারণে।
রাবেয়া খাতুন রুটি সেঁকছেন। তিনটে রুটি বেশি বানান। যদি ছেলে এসে খেতে চায়। মৌলানা সাহেব নিজের ঘরে শুয়ে আছেন। আছেন। তপ্ত রুটির গন্ধ তাঁর খিদে বাড়িয়ে দেয়।
রান্না ঘরের দরজায় হুড়মুড় শব্দ হল। রাবেয়া বেগম ঘুরে দেখেন জরাজীর্ণ পোশাকে দুইজন পাক হানাদার দাঁড়িয়ে আছে। চোখ লাল , উস্কোখুস্কো চুল , সারা শরীর জুড়ে ক্লান্তি আর ক্ষুধার প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। গরম রুটির গন্ধ তাদের নাকেও যায় , পেটে আলোড়ন তোলে। তীব্র ক্ষুধায় পেট আর মুখ ইশারায় বুঝিয়ে দেয়। ইশারায় কি বলতে চায় সেটা রাবেয়া খাতুন বুঝতে পারেন। তিনি কোন চিৎকার না করে কয়েকটা রুটি ছুঁড়ে দিয়ে বলেন , “ভাগ যা !”
ওরা দেরি করে না , রুটি তুলে নেয়। দীর্ঘদিন কচু , কাঁচা কলা খাওয়া পেটে তপ্ত রুটির টুকরো পড়বে। ওরা ভাগতে থাকে তবে বেশিদূর ভাগতে পারেনি। অদূরে শিমুল গাছটার নিচে তাদের কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়।
মৌলানা সাহেব বলেছিলেন, “ওরা রাখাল কৃষিনের হাতে মরবি।“
এরা রাখাল কৃষাণের হাতে মরলেও - প্রস্রাব করে পানি না নেয়া টুপি পড়া শান্তিবাহিনীতে নাম লেখানো মুসলমান গুলো অনেকই বেঁচে থাকলো। কারো আত্মীয় , কারো দুলাভাই পরিচয়ে বেঁচে গেল। সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে লাগলো। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায়। সেই স্বাভাবিক নিয়মেই রাবেয়া খাতুন তিনটা রুটি বেশি বানিয়ে রাখতেন । যদি ছেলে এসে খেতে চায়। তপ্ত সে রুটির গন্ধ , খিদে বাড়িয়ে দেয় !
ছবিঃ সংগ্রহ
১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:১৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: সেটাই হয়েছে। দা কাস্তের কোপে মরেছে।
২| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৪৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
অল্প কথা ভালো লিখেছেন।
মৌলানা সাহেব নিজের ঘরে রুটি আছেন।
রুটি নাকি শুয়ে/বসে
১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:১৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: শুয়ে আছেন।
সরাসরি লিখে পোস্ট করলে এই এক সমস্যা। এই বদঅভ্যাস গেলো না।
ধন্যবাদ আপনাকে। বেশি কথা না বাড়িয়েই লিখলাম।
৩| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০২
শাওন আহমাদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:১৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০২
শাওন আহমাদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:১৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৫| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
শায়মা বলেছেন: ছেলে কি ফিরেছিলো ?
১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:০৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: গল্পে ছেলে ফেরেনি। কিন্তু বাস্তবে ফিরে ছিলো। না ফিরলে যে আমার জন্ম হতো না।
৬| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১০
মিরোরডডল বলেছেন:
যদি ছেলে এসে খেতে চায়। তপ্ত সে রুটির গন্ধ , খিদে বাড়িয়ে দেয় !
অল্প কথায় সুন্দর লেখা ।
পড়তে ভালো লেগেছে ।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:২৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: সব কিছু ছাপিয়ে খিদে আর অপেক্ষা।
৭| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২০
ইমরোজ৭৫ বলেছেন: আহা রে। যুদ্ধের সময় মানুষের কত কষ্ট ছিলো।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:২৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ইদানিং কালে অনেকেই কিছু হলে মুক্তিযুদ্ধের তুলনা দিয়ে কথা বলে। আফসোস !
৮| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৩৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শেষ লাইনেই গল্পটা এত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠলো। আহা! মুক্তিযোদ্ধা ছেলেটা আর ফিরবে না, অথচ মায়াময়ী মা আজও অতিরিক্ত ৩টা রুটি বানিয়ে রাখেন।
ছেলেটার তেমন উপস্থিতি নাই গল্পে, মাঝখানে একঝলক ছাড়া। শেষে এসে মনে হলো, ছেলেটাই এ গল্পের প্রাণ। মায়ের চরিত্রটা আবহমান বাঙালি মায়ের মতোই আটপৌরে ও অসাধারণ। মৌলানা সাহেবও অসাধারণ। টুপি পরা মাওলানা হলেই তারা শান্তি বাহিনীর সদস্য ছিলেন, এমন একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে, যা আপনার গল্পে সুন্দর ভাবে কাউন্টার করে বোঝানো হয়েছে।
২ জন হানাদারের হঠাৎ অসহায়ের মতো উদয় হওয়া এবং এক টুকরা রুটি পেয়েই চলে যাওয়া একটু অস্বাভাবিক লেগেছে। তবে, পথিমধ্যে তাদের খুন হওয়াটা ছিল গল্পের দারুণ একটা টার্নিং পয়েন্ট।
ব্লগে মুক্তিযুদ্ধের গল্প এখন দেখি না বললেই চলে।
সুন্দর গল্প। শুভেচ্ছা রইল।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:০৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ২ জন হানাদারের হঠাৎ অসহায়ের মতো উদয় হওয়া এবং এক টুকরা রুটি পেয়েই চলে যাওয়া একটু অস্বাভাবিক লেগেছে।
"যুদ্ধ যখন শেষের দিকে তখন ছন্নছাড়া নিরস্ত্র হানাদার বাহিনী গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে ছুটে বেরিয়েছে পাগলের মত।ক্ষুধায় কচু খেয়েছে , পুকুরের পানি খেয়েছে। আব্বার কাছে এমন শুনেছি। অনেকে রাতে বনে বাদাড়ে সময় কাটাতো। রাতে বের হতো ভয়ে। সহ্য না করতে পারে রাবেয়া খাতুনের রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। এবং রুটি নিয়েই পালিয়ে যায়। ভয়ে আর অপেক্ষা করে না। "
পোস্টটা বড় করতে চাইনি। অনেকেই পড়তে চায়না।
আরো অনেক কথা বলা যেত। তখন হয়তো তেমন ভালো লাগতো না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৯| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৪৬
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ঘৃণ্য পাকিস্তানি রাজাকার হানাদার বাহিনী ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা কারী , ২ লক্ষ মা বোন কে ধর্ষণকারী যুদ্ধাপরাধীদের ধিক্ষার ,
পোস্ট ভালো লাগল।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:২৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: মন্তব্যে সহমত।
অনেক ধন্যবাদ।
১০| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:২৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। গল্পের শিরোনাম চমৎকার। আর গল্পটাও মুক্তিযুদ্ধের সময় ও বিষয় নিয়ে। ভালো লেগেছে আপনার লেখা ।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৫২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি!
ভালো থাকবেন অনেক।
১১| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১০
মোগল সম্রাট বলেছেন: ফিকশন ?
১৯ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: কাল্পনিক না।
১২| ২০ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:১২
ঢুকিচেপা বলেছেন: অল্প কথায় যুদ্ধের সময়ের যে বাস্তাব চিত্র তা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমি চেষ্টা করেছি। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
১৩| ২০ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:১৬
ঢুকিচেপা বলেছেন: **বাস্তব**
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: বুঝে নিয়েছিলাম! ধন্যবাদ।
১৪| ২০ শে জুলাই, ২০২২ ভোর ৪:৩১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো লেগেছে পোস্ট।
একজন মুক্তিযোদ্ধার মা ১৯৭১ সালে তার ছেলের মৃত্যুর আগে ভাত খেতে না পারার কথা স্মরন করে পরবর্তীতে আর কখনও ভাত খাননি। এই ঘটনা পেপারে পড়েছিলাম। এখন বিস্তারিত মনে নেই।
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: হ্যাঁ। এমন অনেক নজির আছে।
১৫| ২০ শে জুলাই, ২০২২ ভোর ৫:১৮
মিরোরডডল বলেছেন:
সাচু,
আনিসুল হকের মা উপন্যাসে পড়েছি ।
সত্যি ঘটনা অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধের গল্প আজাদ আর তার মাকে নিয়ে লেখা ।
যদি পড়া না হয়ে থাকে, অবশ্যই পড়বে ।
খুব কষ্টের !
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আনিসুল হকের মা সবার সংগ্রহে রাখা উচিত।
১৬| ২০ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৫৩
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: অসাধারণ লিখেছে।
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করছি বড় না করতে।
১৭| ২০ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৫৩
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করছি বড় না করতে।
১৮| ২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: আহা কি দারুণ লেখা!
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
১৯| ২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: সেই নয় মাসের গল্প গুলো যে কী বেদনার মর্মান্তিক !
অনেক অনেক ভালোলাগা।
২০ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এই নয় মাসের কত না জানা অজানা গল্প আছে !
ধন্যবাদ মনিরা আপা।
২০| ২২ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৯:১৯
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
সংগ্রামের বছর ১৯৭১ এর পর কি পরিমান মানুষ তাঁদের হারিয়ে যাওয়া আত্মীয় পরিজন বাবা মা ভাই বোন ছেলে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করেছে তা কল্পনাকেও হার মানাবে। তারপরও মানুষ ভুলে গিয়েছে।
আহারে জীবন। এই দেশে মানুষ কি পরিমান কষ্ট করেছে তা লিখে শেষ করা যাবে না। লিখে শেষ করা সম্ভব না।
২৩ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৭:১৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এইদেশের মানুষ যদি এতোসব সত্যিকার অর্থে মনে রাখত হবে এই দেশের অবস্থা এমন হতো না।
চে গুয়েভারা কে দেশের মানুষ চেনে কিন্তু সাত বীর আর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের এই জাতি চেনাতে ব্যর্থ হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৩৯
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
ওরা রাখাল কৃষিনের হাতে মরবি'।