নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ

নিজের ব্যাপারে কিছু লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ

ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপারেশন রেড লাইট ( প্রথম পর্ব )

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২০

একঃ



ফোনের রিংটোনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো । রাতে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি । ফোনটা ধরে



- হ্যালো !!

ওপাশ থেকে, " হ্যালো !! কমান্ডার আব্দুল্লাহ !! আমি ডিজিএফআই থেকে মেজর জেনারেল শাখাওয়াত বলছিলাম । "

ঘুম ঘুম ভাবটা দূর হয়ে গেলো ।

- জ্বি স্যার । বলেন ।

- একটা জরুরী ব্যাপারে কথা ছিলো । আজকে ১১টায় হেডকোয়ার্টারে দেখা করো ।

- ওকে স্যার ।



মনে মনে ভাবছিলাম যে কি এমন ব্যাপার হতে পারে যে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স থেকে আমার ডাক পড়লো । একটু পরেই কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল আজিজ স্যার ফোন দিলেন ।



- শাখাওয়াত স্যারের ফোন পেয়েছো ?

- জ্বি স্যার ।

- ওকে তাহলে ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে দেখা হচ্ছে ।



১০টার মধ্যেই রেডি হয়ে গেলাম । ঠিক ১০টা ৪৫ এ পৌঁছে গেলাম ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে । গিয়ে দেখি স্কুল জীবনের পুরানো বন্ধু লে.কর্ণেল ইয়াসির ও বসা । জিজ্ঞেস করতেই জানলাম ওর বর্তমান পোস্টিং ডিজিএফআইতে ।



স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললো, " মামা যতটা ভাবতেছো ব্যাপারটা তারচেয়ে সিরিয়াস । এই কেসের মেইন দায়িত্বটা আমাকেই দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তোমাকে দরকার কারণ এই কেসে একজন কমান্ডো লাগবে । আর বর্তমানে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে তুমিই একমাত্র SWADS এর কমান্ডো । আর বাকি ডিটেইলস স্যার জানাবে । "



বুঝে গেলাম মারাত্বক সিরিয়াস এক কেসে ডাকা হয়েছে আমাকে । হুদাই কোন কমান্ডোকে এই ধরণের মিশনে ডাকা হয় না । স্নায়ু শক্ত করে ফেললাম । বুঝতে পারছি দেশের উপরে কোন মস্তবড় আঘাত আসতে চলেছে । মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম কমিশন প্রাপ্তির দিনে নেওয়া সেই শপথ অনুযায়ী " প্রাণ দিয়ে হলেও দেশকে রক্ষা করবো । "



ঠিক ১১টায় ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাখাওয়াত স্যারের রুমে ডাক পড়লো আমার আর ইয়াসিরের । ভেতরে যেতেই আমাকে বসতে বলার আগে বলে নিলেন, " কেসটা খুবই টপ সিক্রেট ব্যাপার । যা এখন শুনবা তা যেন বাইরের কেউ না জানে । মিডিয়াতে এই খবর ফাঁস হলে বিপদ আছে । "



আমি বললাম, " স্যার কেউ জানবে না । "



দুইঃ



প্রথম খবর শুনে তেমন ধাক্কা খেলাম না কারণ খবরটা আমার আগেই জানা । সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সচিবকে তার মেয়েসহ অপহরণ করা হয়েছে । আরেকটা খবর পেলাম এই অপহরণ তদন্তের দায়িত্বে থাকা র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের মেজর নজরুল ও তার আগে দায়িত্ব পাওয়া সিআইডির পুলিশ সুপার আরিফ ও সহকারি পুলিশ সুপার তামান্না তিনজনেই নিহত হয়েছেন । এই খবরটা পত্রিকাতে দেখেছিলাম ।



তবে আসল ঘটনা এই মাত্র জানলাম আর সেটা হলো, " বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে গেছে । "



তাও যা তা কোন কিছু নয়, আমাদের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য যেটা শত্রু রাষ্ট্রের হাতে পড়লে আমাদের মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে । বড় একটা শক খেলাম কারণ আমাদের শত্রু রাষ্ট্র পাকল্যান্ডের গুপ্তচরেরা এই কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।



প্রথম দিকে অপহরণের ব্যাপারটা এত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কারণ তথ্য যে চুরি গেছে এটা প্রথমে ধরা পড়েনি । ঈদের ছুটির সময়ে তথ্য চুরি হয় আর চুরি করে ঐটার জায়গাতে ভুয়া একটা কাগজের বান্ডিল রেখে যাওয়া হয় । যে কারণে ইঞ্জিনিয়াররা না চেক করা পর্যন্ত ব্যাপারটা ধরা পড়েনি । তবে এই ব্যাপারে ভিতরে যে গাফেলতি হয়েছে এই ব্যাপারে বোঝা যাচ্ছে , সবার সন্দেহের তীর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের দিকে । ইতিমধ্যেই জানতে পারলাম তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং গ্রেফতারও করা হয়েছে ।



শাখাওয়াত স্যারঃ বুঝলে আমরা এখনো সিউর না এই ফাইল টা কোথায় আছে ।

আমিঃ কেন ? স্যার

- কারণ ওদের গুপ্তচরদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে । ফাইল পেলে ওরা সোজা উড়াল দিতো ।

- গুপ্তচর গুলা কারা ?

- কতিপয় দেশী-বিদেশী লোক যাদেরকে আগে আটক করেও প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।

- ওদের উপরে নজর রাখা হয়েছে ?

- হ্যা । তবে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না ।

- তাহলে ??

- সেটা তোমাদের বের করে নিতে হবে ।

- ওকে স্যার ।

- শুনো আমাদের এই মিশনের নাম " অপারেশন রেড লাইট " । কারণ যে প্রোজেক্টের ফাইল চুরি গেছে ওইটার নাম ছিলো " প্রোজেক্ট রেড লাইট " । আর শুনো তোমার কেস সম্পর্কিত সব কিছুর ডিটেইলস এই একটা ফাইলে পাবা । আজকে থেকেই কাজ শুরু করে দাও । সময় খুব কম । আমাদেরকে খুব দ্রুত ওই চুরি যাওয়া তথ্যের ফাইলটা বের করতে হবে । আর সচিব ও তার মেয়েকেও । কারণ সচিবের থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারবে ওরা ।

- জ্বি স্যার । আল্লাহ ভরসা !

- ওকে । আর তোমাদের সহযোগীরা ইয়াসিরের রুমে অপেক্ষা করছে ।

- ওকে স্যার

- নাউ ইউ মে লিভ । অল দা বেস্ট ।

- থ্যঙ্কু স্যার ।

- ডোন্ট ফরগেট দেশের ভবিষ্যত এখন তোমাদের হাতে ।

- ইয়েস স্যার ।



মহাপরিচালকের রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি আর ইয়াসির । বের হওয়ার পরেই ও বললো, " বুঝলা কুদ্দুস সাহেবকে আমার অপরাধী মনে হয় না । "

- কেনো ?

- ফাইলটা পড়ে দেখো । কোথাও একটা ঘাপলা ঘাপলা আছে মনে হবে ।

- ওকে ।



ইয়াসিরের রুমে যেতেই পরিচয় হয়ে গেলো আমাদের সহকারীদের সাথে । মেজর বাধন, ক্যাপ্টেন রাকিব আর লেফটেন্যান্ট বিথি ।



সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে ইয়াসির বললো, " আগে একটু ফাইলটা পড়ে নাও । তারপরে ঠিক করবো আমাদের কর্মপ্রণালি । "

ফাইলটা পড়তে বসলাম । জানতে পারলাম একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য ।



তিনঃ



প্রতিরক্ষা সচিবের নাম মুশফিকুর রহমান । অস্ট্রেলিয়ার নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এসেছেন । ঈদের দিন তাকে মেয়েসহ অপহরণ করা হয়েছে । মেয়ের নাম প্রান্তি রহমান । মেয়েটা কয়েকদিন হয়েছে দেশে এসেছে । তার আগে সে বাবার মতই বিদেশে নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো । মেয়েটা অনেক মেধাবী আর মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট ধারী । এছাড়াও পুরা কেস ফাইলটা পড়ে অনেক ঘাপলা দেখতে পেলাম ।



সচিবকে ঈদের দিন অপহরণ করা হয়, ঐদিনেই সিআইডিকে এই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় । ৩ দিন পরে মতিঝিল থেকে সিআইডির দুই কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার হলে দায়িত্ব দেওয়া হয় র‍্যাবকে । এরপরে ৪ দিন পরে র‍্যাব কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেলে ব্যাপারটা সবাইকে ভাবিয়ে তুলে । মজার ব্যাপার ঈদের পর থেকে ওই " প্রোজেক্ট রেড লাইট " এর কাগজের কোন খোঁজ কেউ নেয় নাই । কাগজের জিম্মাদারি ছিল যুগ্ম-সচিব কুদ্দুস সাহেবের । উনি ঈদের আগেরদিনই লন্ডন গিয়েছিলেন এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে । উনি দেশে আসার পরে মন্ত্রণালয়ে চুরির ব্যাপারটা প্রকাশ পায় । এরপরেই অপহরণ কেস নতুন দিকে মোড় নেয় ।



তদন্ত কর্মকর্তাদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখলাম ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে তাদের মৃত্যু হয়েছে । একমাত্র কারাতের আঘাতেই এমনটা হওয়া সম্ভব । ব্যাপারটা বেশ চিন্তার ।



গুপ্তচর বলে সন্দেহ করা হচ্ছে আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যক্তিকে । বাধন বললো ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট লোকটার চেহারার সাথে পাকল্যান্ডের সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তা লে.কর্ণেল মোহাম্মদ ইউনূসের চেহারার সাথে অনেক বেশি মিল । যে কারণে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে । ওর উপরে চিলের নজর রাখা হয়েছে । লোকটা থাকে গুলিস্তানের এক বাসায় । তবে তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি কারণ এতে হয়তো তারা আরো বেশি সতর্ক হয়ে যাবে !!



কেস ফাইল পড়ে ইয়াসিরকে বললাম, " চুরি কিভাবে হলো ব্যাপারটা পরিষ্কার না । পুরা ব্যাপারটা কেমন ঘোলাটে !! "

- আসলেই । কি করবা এখন তাইলে ??

- কুদ্দুস সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে ।

- উনি এখন সিআইডি হেফাজতে । রাজারবাগের কার্যালয়ে রাখা হয়েছে তাকে ।

- চলো তাহলে ।



চারঃ



ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজারবাগ আসতে প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে গেলো আমাদের । ঐখানে গিয়ে কুদ্দুস সাহেবের সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলাম । অনুমতি মিললো ...



আমাদের দেখেই বললেন " ওয়াহ !! শেষ পর্যন্ত ইন্টেলিজেন্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । দেরি করে ফেলেছে । আরো আগেই ডাকা দরকার ছিল । "

ইয়াসিরঃ কুদ্দুস সাহেব আমার সাথে হচ্ছেন কমান্ডার আব্দুল্লাহ !! SWADS এর একজন কমান্ডো ।

আমার দিকে তাকিয়ে কুদ্দুস সাহেব বললেন, " কমান্ডার যত দ্রুত পারো এই কাগজগুলা উদ্ধার করো । আমি মরি না বাচি তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু ওই গুলা না পাওয়া গেলে দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে ।

- তা স্যার ঈদের আগের দিনের ঘটনাটা একটু বলবেন কি ?

- সিউর ।

একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন উনি । এরপরে বলতে শুরু করলেন

" ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফ্লাইট ছিলো । ওইদিন সচিব স্যারের সাথে এক অনির্ধারিত মিটিং শেষ করতে করতে প্রায় সোয়া ৪টা বেজে যায় । বাসা থেকে বারবার ফোন আসছিলো । তাড়াহুড়ায় ছিলাম অনেক । ঘুরাক্ষণেও ভাবিনি এমনটা হবে । তাহলে লন্ডন যাওয়ার পরিকল্পনাই করতাম না । " একটু থামলেন উনি ।

- এরপরে কি হলো ??

- তাড়াহুড়া ছিল । সচিব স্যার বললেন ফাইলটা চেক করতে । আমার আসলে নিজের চেক করতে যাওয়া উচিত ছিল ।

- আপনি নিজে চেক করেননি ??

- না আমার সহকারী বুশরা তাসনিমকে পাঠিয়েছিলাম ।

- এরপরে ??

- ও এসে বললো " স্যার সব ঠিক আছে । " আমিও নিশ্চিন্তে বের হয়ে গেলাম ।

- বুশরা কি বুঝতে পারবে কোনটা আসল আর কোনটা নকল ??

- হ্যা ওই অফিসে কেবল ও আর আমিই বলতে পারবো এইটা ।

- ও আচ্ছা বের হওয়ার আগে কাউকে কিছু জানাননি ??

- হ্যা সচিব স্যারকে বলে এসেছিলাম " সব ঠিক আছে । " ঐ সময় স্যারের রুমে স্যারের মেয়েও ছিলো ।

- ধন্যবাদ আপনাকে ।



সিআইডির কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ইয়াসির বলতে লাগলো " দেখলা । তোমাকে আগেই বলেছিলাম ওনাকে নির্দোষ মনে হচ্ছে । "

- হুম । আসলে ওনাকে লোক দেখানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে । তেমন শক্ত প্রমাণ ওনার বিপক্ষে নেই । আদালতে কেস গেলে এমনিতেই খালাস পেয়ে যাবে ।

- এখন কি করবা ??

- বুশরার সাথে দেখা করতে হবে ??

- ওকে তো মনে হয় অফিসে পাওয়া যাবে ।

- চলো ।



রাজারবাগ থেকে পুরান হাই-কোর্ট । প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়ে বুশরার খোঁজ করতে জানা গেলো আজকে সে অফিসে আসেনি ।

হটাতই মন সতর্ক হয়ে উঠলো । বললাম, " ওর বাসার ঠিকানা নাও । ওর বাসায় যাবো আমরা । " প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোয়ার্টারে নয় ঢাকার মগবাজারে ওর বাসা । বাসায় গিয়ে দেখি দরজা খোলা । সন্দেহ হলো । সাবধানে ভিতরে যেতেই ঘরের অবস্থা দেখে চমকে উঠলাম । পুরা ঘর তছনছ হয়ে আছে । বুঝতে পারছি মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র সহকারী সচিবকেও অপহরণ করা হয়েছে ।



বিথি আর বাধনকে বললাম, " এই জায়গাতে তোমরা তদন্ত করে দেখো । " ইয়াসিরকে বললাম, " চলো । একটু অফিসে যাবো । "



পাঁচঃ



বুশরার বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে উঠলাম । মনে হাজারটা প্রশ্ন আসছে । সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে । জানি এখন খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে । কিন্তু মাথা ঠান্ডা করে বসে ভাবার সময়টাও হাতে নেই আমাদের ।

অফিসে বসে ফুলস্পীডে এসি দিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম । চোখ বন্ধ করে ভাবতে আমার ভালো লাগে । এই সময় মাথা কাজ করে বেশি ।

" আচ্ছা ইয়াসির ঘটনার শুরু থেকে যদি আমরা শুরু করি তাহলে একটা ব্যাপার ভেবে দেখো আমাদের প্রতিপক্ষ কিন্তু এখনো ঐ কাগজটা পায় নাই । তাইলে বলো তো ওইটা কোথায় গেলো ?? "

- কিভাবে সিউর যে পায় নাই । এটা তো আমাদের অনুমান ছিল ।

- আমি সিউর । পেলে বুশরাকে অপহরণ করা হতো না । আর এই ধরনের কাজে ওরা যথাসম্ভব রাখঢাক করে কাজ করবে । কিন্তু ওরা কি করতেছে ?? পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ব্যাপারটা যে সিরিয়াস সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে । অথচ আমরা এই ধরণের মিশনে গেলে কি করতাম ??

- যত পারা যায় গোপনে কাজ সারতাম ।

- হ্যা কিন্তু ওরা কি করছে ??

- মনে হয় বেশি মরিয়া হয়ে গেছে ।

- উহু আমার তদন্ত কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয়টা ভালো ঠেকছে না । খামোখা ওরা খুন করতে যাবে না ।

- তাহলে ??

- খুব সম্ভব ওদের তদন্তে এমন ফল বের হয়ে আসছিলো যেটা ওদের জন্য আরো বেশি সমস্যার কারণ হতো ।

- হতে পারে ।

- হ্যা । এক কাজ করো রাকিবকে পাঠাও । ও গিয়ে ওদের প্রতিবেদন গুলা নিয়ে আসুক ।

- ওকে । আমরা কি করবো ?? বসেই থাকবো ??

- না রাকিব আসুক । এরপরে যেখানে অফিসারেরা খুন হয়েছে ঐ জায়গাগুলা একটু দেখতে যাবো ।

- কি দেখবা ??

- আশেপাশের এলাকা গুলা দেখতে চাই ।

- এই রাত ১১টায় যাবা ??

- হ্যা এইটাই উপযুক্ত সময় ।

- ওকে ।



রাকিবের নিয়ে আসা প্রতিবেদন গুলা দেখতে দেখতে ১২টা বেজে গেলো । তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই । উল্লেখযোগ্য কিছু হয়তো তাদের মাথায় ছিলো যেটা আর এখন পাওয়া সম্ভব না ।



রাস্তা-ঘাট ফাঁকা । সময় লাগলো না বেশি মতিঝিলের এই জায়গাটাতে পৌঁছাতে । ২টা খুনের জায়গাই খুব কাছাকাছি । একটা মতিঝিল আর জসীমউদ্দিনের মিলিত সড়কের ঠিক পাশের গলিতে । অন্যটা এজিবি কলোনীর কাচা বাজারের ঠিক সামনে ।



জায়গাটা এমনিতে খুব ভালো না । এই এলাকাতে ছোটখাট অপরাধ রাত-দিন চলতেই থাকে । মন বলছে এই ছোট অপরাধগুলার মাঝেই বড় অপরাধ দানা বেধে উঠেছে । খুব ছোট থেকে এই এলাকাতে বড় হয়েছি । আশেপাশের অলি-গলি সব আমার চেনা । সম্প্রতি কমলাপুরের দিকের রাস্তায় যেতে নাকি একটা নাইট ক্লাব হয়েছে । যে কারণে এই এলাকাটা এখন অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠেছে । নাইট ক্লাবের এই তথ্যটা আমাদেরকে দিলেন মতিঝিল থানার ওসি তাশফিক আহমেদ । মস্ত বড় ভুড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, " আর বইলেন না স্যার গত ২ মাস ধরে শান্তিতে খাইতেও পারি না ঘুমাইতেও পারি না । প্রতিদিন একটা না একটা গন্ডোগল হবেই । "



জিজ্ঞেস করলাম, " সিআইডির কর্মকর্তাদের সর্বশেষ কোথায় দেখা গেছে ?? "

- ওই ক্লাবেই স্যার । এমনকি র‍্যাবের মেজরকেও সেইখানেই সর্বশেষ দেখা গেছে ।

- ওহ !! তাহলে তো এই ক্লাবে একটু ঢু মারতেই হচ্ছে ।

- আস্তাগফিরুল্লাহ !! স্যার এই জায়গাতে এখন গেলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে ।

- আমার নষ্ট হবে না । আপনার নষ্ট হইলে যাওয়া লাগবে না । ইয়াসির চলো । সময় কম আমাদের হাতে ।



নাইট ক্লাবের ভিতরে প্রবেশ করেই একটা ধাক্কা খেলাম । প্রচন্ড জোরে গান বাজছে । আর প্রচুর মানুষ । এত মানুষের ভিতর থেকে কাকে জিজ্ঞেস করবো ?? কে আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে ?? চোখ পড়লো একজন কমবয়সী ওয়েটারের উপর ।



- এই ছেলে এইদিকে আসো !!

- জ্বি স্যার বলেন কি দিব ।

- কোন কিছু দিতে হবে না । তোমার সাথে আমার কথা আছে ।

- স্যার এখন ব্যস্ত ।

- তাহলে ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাবো ।

এইটা শুনে সতর্ক হয়ে গেলো ও । নিচু কন্ঠে বললো " বলেন কি জানতে চান ?? "

একটু অবাক হলাম । ও বুঝলো কি করে আমি কিছু জানতে এসেছি !!

জিজ্ঞেস করতেই বললো " এইটা নাকি এখানের নিত্ত-নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে । "

ওকে নিহত অফিসারদের ছবি দেখাতেই বললো " পত্রিকায় দেখেছে তাদেরকে । ওইদিন দেখেই চিনে গিয়েছে যে আগের রাত তারা এইখানে এসেছিলো । "

জানলে পারলাম তিনজনের কেউই এইখানে কিছু খায়নি । আর তিনজনেই হটাত করে বের হয়ে গেছে ।



আর কিছু জানার নেই । তাই বের হয়ে আসতে গেলাম । হটাত হাত চেপে ধরলো ইয়াসির । বললো " মাথা নামাও । কুইক !! "

মাথা নামিয়ে বললাম, " কি হয়েছে ?? "

- ঐ যে দেখ সামনের লোকটা ।

- চেনা চেনা লাগছে যে ।

- হ্যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঝাড়ুদার । নাম জালাল উদ্দিন ।

- হুম ব্যাটা এইখানে মনে হয় নেশা করতে আসছে ।

- মনে হয় না হাব-ভাব দেখে ।

- তাই তো !! কেমন জানি মনে হচ্ছে কারো সাথে দেখা করতে আসছে !!

- ইন্টারেস্টং মনে হচ্ছে ।

- অপেক্ষা করে দেখি ব্যাটা কি করে !!

ছয়ঃ



অনেকক্ষণ ধরে আমি আর ইয়াসির বসে আছে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে । রাত প্রায় দেড়টা বাজে । এইখানে এসে তেমন সন্দেহজনক কিছুই করেনি জালাল । আগ্রহ হারাচ্ছি আমরা । বের হব ভাবছি এমন সময়েই একজন লোক এসে ঢুকলো ক্লাবের মধ্যে । লাল আলোতে অস্পষ্ট হলেও চিনতে আমাদের কারোরই ভুল হলো না লোকটাকে । আব্দুল মজিদ যার আসল নাম মোহাম্মদ ইউনূস । এই লোক এইখানে কি করে !! শক্ত হয়ে বসলাম আমরা ।



মজিদ ভিতরে ঢুকেই সতর্ক দৃষ্টিতে আশপাশ দেখে নিলো । এরপরে খুব সাবধানে গিয়ে জালালের পাশে বসলো । বসেই কথা বলা শুরু করলো না । ভাবটা এমন যে কেউ কাউকে চিনে না । একটু পরে তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করলো । হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে ইয়াসির বলে , " মামা কি করবা ?? গ্রেফতার করবা ?? "

- না কোন লাভ হবে না ।

- তাহলে ?

- দেখি ওরা এরপরে কি করে ??

- কথাগুলা শুনতে পারলে ভালো হইতো ।

- হ্যা তা তো হইতোই ।



একটু পরে আরো ২জন লোক আসলো । মজিদের কাছে গিয়ে কি একটা বলতেই সে বের হওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো । ২ জনের একজন রইলো জালালের কাছে অন্যজন মজিদের সাথে বের হয়ে গেলো । আমি ইয়াসিরকে জালালের উপরে চোখ রাখতে বলে বের হয়ে গেলাম ।



বের হতে হতে একটু দেরি হয়ে গেলো । বের হয়ে দেখি মজিদ আর তার সঙ্গী বাজারের রাস্তার দিকে হাটছে । এই রাতে পুরা বাজার ফাঁকা । একজন মানুষ নেই আমাদের তিনজন ছাড়া । পিছে তাকালেই আমাকে দেখতে পাবে তাই খুব সাবধানে পিছু নিতে হচ্ছে । বুঝতে পারছি কমান্ডো হওয়ার সুবিধাটা । এইসব আমার কাছে ডালভাতের মতই । একটু পর পরেই তারা পিছে তাকাচ্ছে । কিন্তু আমার কৌশলের সাথে পেরে উঠছে না । বেশ কিছুক্ষণ চললো তাদের সাথে আমার এই লুকোচুরি খেলা । একটু পরে এজিবি কলোনীর হাসপাতাল জোনের ভিতরে ঢুকে গেলো তারা ।



হাসপাতাল জোনে ঢুকতেই পরে বিশাল এক ঈদগাহ মাঠ । মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণ দিকে কলোনীর শেষ মাথায় একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিং আছে । সেই বিল্ডিং এ গিয়ে ঢুকলো তারা । বিল্ডিং এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুই দেখলাম না । তবে জানি অনেকগুলা চোখের সতর্ক পাহারা রয়েছে । সতর্ক ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে লাগলাম । লক্ষ্য একটা জানালা ।



জানালা দিয়ে ভিতরে তাকালাম । অন্ধকার !! চোখে আলো একটু সয়ে আসতেই ভিতরে ৮ জন লোক দেখলাম । একজন চেয়ারে বাধা । বড় চুল ।



আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে বুঝলাম একটা মেয়ে ।

ধক করে উঠলো বুকের ভিতরটা !!

বুশরা !!



( চলবে )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: আপনার মৌলিক রচনা? যদি আপনারই হয় তো বলবো, দারুণ লিখেছেন আপনি। ব্রাভো... !:#P

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ বলেছেন: জ্বি ভাই লেখাটি সম্পূর্ণ আমার নিজের মৌলিক রচনা

ধন্যবাদ।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০১

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: আপনার মৌলিক রচনা? যদি আপনারই হয় তো বলবো, দারুণ লিখেছেন আপনি। ব্রাভো... !:#P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.