নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির বিচারে বিশ্বাসী

নিজের জাতি আর মানুষের কল্যাণেই শান্তি পাই।

বিদ্রোহীসৌরভ

আমার প্রয়োজন একটি সুন্দর পৃথীবী ।বিশেষজ্ঞদের আলোচনার (কপি-পেস্ট )আধিক্য থাকবে ।

বিদ্রোহীসৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলোচনার উদ্যোগ তো নিতে হবে সরকারকেই

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:০২

দেশ একটি সংকটময় অবস্থার দিকে যাচ্ছে আগামী নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকার ক্ষমতায় থাকবে সে নিয়ে। কিন্তু সরকার গোঁ ধরে বসে আছে, তাদের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। সরকারের যুক্তি হলো, তাদের অধীনে নির্বাচন করা সংবিধানে আছে। কিন্তু সেই সংবিধান কে রচনা করল।সরকারই সেই সংবিধানের রচয়িতা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কোনো রকম তোয়াক্কা করা হয়নি। সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি সরকার কর্তৃক গঠিত সংবিধান পর্যালোচনার কমিটিতে বক্তব্য দিয়েছে সত্য, তবে তারা সবাই নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দিয়েছিল ।



কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, সরকার যখন সংসদের মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা উঠিয়ে দিল, তখন সুশীল সমাজের এবং বিরোধী দলের চাওয়াকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হলো না। অথচ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিজেরাই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে। শাসনতন্ত্রে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীটি আনার আগে সরকারের অবশ্যই অন্যদের ভাবনাকে আমলে আনা উচিত ছিল। এখন দেশের জনগণ মনে করে, বর্তমান সরকার শুধু নিজেদের সুবিধার জন্য সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি তুলে দিয়েছে। অথচ সংবিধান থেকে এ বিধানই বাদ দেওয়ার জন্য জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারকে ম্যান্ডেট দেয়নি। আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেই চলেছেন যে সংবিধানে যেভাবে আছে সেভাবেই নির্বাচন হবে, এর থেকে একচুলও নড়া হবে না। কিন্তু এটা তো কোনো প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদের কথা হলো না।



রাজনীতি ও গণতন্ত্রে আপস করে চলতে হয়, এটা ভুলে গেলে চলবে না। সরকার চালাতে গেলে যাদের বক্তব্য পছন্দ হবে না, তাদের ভাবনার কথাও ভাবতে হয়। সারা বিশ্বে সরকার চলে আপসরফার মাধ্যমে। বিরোধী দলকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে বিশ্বের কোথাও গণতন্ত্র চলেনি, চলবেও না। আজকে সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী বলছেন, বিরোধী দল প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিরোধী দল প্রস্তাব দেবে কেন? সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব তো আসতে হবে সরকার থেকেই। আর বিরোধী দল তো অনেক আগে থেকেই তাদের আকাঙ্ক্ষাকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে। সেই আকাঙ্ক্ষা হলো, নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে অবশ্যই নির্দলীয়। সরকার যদি এ ক্ষেত্রে নতুন কথা বলতে চায়, তাহলে সেটা সরকার থেকেই আসতে হবে।



দেশের মানুষ মনে করে, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো প্রধানমন্ত্রীকে নতুন কিছু বলতে হবে। তাঁর পুরনো কথা মানুষ অনেক শুনেছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো নির্বাচনকে সন্দেহের উর্ধ্বে রাখার জন্য তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। আর এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কোনো বিকল্প ধারণা থাকলে সেটার ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যদি সরকারের দেয় বিকল্প কোনো প্রস্তাবে রাজি হয়, তাহলে জনগণও সে ধরনের সরকার মেনে নেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমান সরকারের জন্য মানুষ সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দেওয়াকে মূল কারণ বলে মনে করে। অনেক কারণেই বর্তমান সরকারের জনসমর্থন তলানিতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা হারানোর অন্যতম কারণ। সংবিধানে ওই ব্যবস্থা থাকলেই সরকার দেশ ভালো চালাক বা মন্দ চালাক মানুষ সরকারের মেয়াদ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু এখন মানুষের মধ্যে একটা হতাশা লক্ষ করা যায়। অন্য অনেকেই বলতে পারেন দেশে কী হবে, দেশ আসলে কিভাবে চলবে, দেশে আদৌ কোনো নির্বাচন হবে কি না ইত্যাদি। এসব শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব তো সরকারেরই। পঞ্চম সংশোধনীর ওপর কোনো সংশোধনী আনতে হলে তো সরকারকেই সেই উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে বিরোধী দলের বিকল্প প্রস্তাবের কথা বলে লাভ নেই।



অন্য কথা হলো, আজকে আওয়ামী লীগের যদি সংবিধান সংশোধন করার মতো মেজরিটি সংসদে না থাকত, তাহলে পঞ্চম সংশোধনী কিভাবে শাসনতন্ত্রে আসত? শুধু ক্ষমতা আর সুযোগ আছে বলে সংবিধানের এই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হলো? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, আজকে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা বাদ দেওয়া হলে তারা কি তা মেনে নিত? জনগণ মনে করে, তারা কখনো তা মেনে নিত না এবং আজকে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে বিএনপির যে অবস্থান, তাদের অবস্থান আরো বেশি শক্ত হতো। দেশ আরো বেশি হরতাল-অবরোধ প্রত্যক্ষ করত।



দেশে নামেমাত্র গণতন্ত্র আছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সব নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে দলের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে হয়। বর্তমান পদ্ধতিতে সংসদ সদস্যদের কোনো স্বাধীনতা নেই। সব ক্ষমতা এক ব্যক্তি সেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত।

সংসদে ভিন্নমত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নেই। বাইরেও ভিন্নমত প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে এই দেশে গণতন্ত্রের নামে যা হচ্ছে, তা স্বৈরতন্ত্রেরই আরেক চর্চা। দেশে ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। অতি নিরীহ লোকদের বিভিন্ন অজুহাতে যখন তখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এত লোককে গ্রেপ্তারের ঘটনা এর আগে কোনো সরকারের অধীনে আর হয়নি। অধিকার একটা মানবাধিকার সংস্থা। এ সংস্থার তথ্য-উপাত্ত আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তারাও ব্যবহার করেছিল। অথচ হেফাজতের ইস্যুতে সরকার অধিকারের সেক্রেটারি জেনারেল আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করল। যে আদিলুর রহমানকে আগে কেউ চিনত না, সেই আদিলুর রহমান তো এখন অনেকটা বীর। হেফাজতের সভায় পুলিশি আক্রমণ তো ঘটেছে। গভীর রাতে কেন জলকামান মেরে ঘুমন্ত লোকদের, ইবাদতে থাকা লোকদের হটানোর জন্য আক্রমণ করতে হবে? সরকার নিজে ভেবে দেখতে পারে আর কতজন লোকের সমর্থন তাদের জন্য অবশিষ্ট আছে। নির্বাচনে কেন সরকারি দল হারছে, সেটা ভোটাররা বুঝলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে কেন অপারগ।



লেখক : আবু আহমেদ

অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.