নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিজ (১ম অংশ)

১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:১৫



গতকাল রাত্রে কঙ্কাবতী একটুকুও ঘুমাতে পারেনি।পুরো বিষয়টায় যে আবেগের গভীরতা ছিল,তা ক্রমেই মাত্রা হারাচ্ছে।কমলেশের সাথে প্রায় দু’ঘন্টা ফোনে আলাপ হয়েছে।কমলেশ এখনই বিয়ে করতে চায়।কঙ্কাবতীরও অমত নেই।তবে ওরা দু’জনেই চায়,পারিবারিকভাবে এই বিয়েটা হোক।তবে গতরাতের টেলিফোন আলাপের পর কঙ্কাবতীর মনের প্রজাপতি পাখা মেলা বন্ধ করে দিয়েছে।
কঙ্কাবতী খুব সকালেই বিছানা থেকে উঠে পড়ে।ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ছোট ভাই শুভ্রকে ডেকে তোলে।
-ভাই ওঠ।বাড়ি যাবিনা।
-আর একটু ঘুমাতে দে।
-বেলা হলে বাসে খুব ভীড় হবে।উঠতো।উঠ।
শুভ্র কিছুক্ষণ কোঁ কোঁ করে।তারপর বিছানা থেকে নেমে বাথরুমের দিকে যায়।
কঙ্কাবতী আর তার ছোট ভাই শুভ্র রাজশাহী শহরে থেকে পড়াশুনা করে।ওদের বাড়ি নাটোরে। একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ হতে কঙ্কাবতী সবেমাত্র ইন্টার্নী শেষ করেছে।আর শুভ্র রাজশাহী কলেজে এইচ এস সি প্রথম বর্ষের ছাত্র।


-মা,তোমার শরীর কেমন আছে?
কঙ্কাবতীর প্রশ্ন শুনে দেবলীনা কঙ্কাবতীর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।তারপর খুব নীচুস্বরে জানায়,পাঁচদিন ধরে তার পায়খানার বেগ নেই।
কঙ্কাবতী দেবলীনার কাছে গিয়ে বসে।দু’হাত দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।
-তুমি আবার খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছো?এমন করলে তুমি বাঁচবে?
-আমার মরে যাওয়াই ভালো।
হাত দিয়ে মায়ের মুখ চেপে ধরে কঙ্কাবতী।
-কি অলুক্ষণে কথা বলছো মা?তোমরা ছাড়া আমাদের দুই ভাইবোনের আর কে আছে?
-তুই যদি আমাদের নিয়ে এতোই ভাবতিস,তাহলে আমাদের কথা রাখতিস।
খুব চাপা রাগতস্বরে দেবলীনা কঙ্কাবতীকে বলে।
কঙ্কাবতী মায়ের কাছ হতে উঠে আসে।শুভ্রর ঘরের দিকে হেঁটে যায়।শুভ্রকে বলে অসমোলাস্ক আনতে।শুভ্র টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায়।

দেবলীনা চুপ করে বসেই ছিল।বিভাবতীকে দেখে মেজাজ খিঁচড়ে যায়।আজকাল ঘরে বা কোথাও একলা থাকলেই হলো,বিভাবতী ওর সামনে এসে হাজির হবে।আর বিভাবতী চলে গেলে,মেজাজ এমন চড়ে থাকে যে কেউ ভালো কথা বললেও দেবলীনার রাগ বেড়ে যায়।
-মেয়ে মানুষ করে কি লাভ হলো?
বিভাবতী মুচকী হেসে দেবলীনাকে প্রশ্ন করে।
-আমার মেয়ে এখন ডাক্তার।
-তো?সেই তো বিয়ে করবে এক ম্যান্দামারা ডিগ্রী পাস ছেলেকে।
-ছেলেরা অনেক বড়লোক।
-তাতে কি?তোমাদের ফ্যামিলির সাথে যায়?
-যাও।তুমি আমার সামনে থেকে যাও।
কঙ্কাবতী ঘরে ডুকছিল।দেখে মা শূণ্যে হাত ঝাঁকাচ্ছে।
-কি হয়েছে মা?
-কিছুনা।
-রাতে কি খাবে মা?

রাতের খাবার শেষ হলে,কঙ্কাবতী বাবার সাথে আলাপে বসে।
-বাবা,কমলেশের কাকা তোমার সাথে কথা বলবে।
অরুপের মন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠে।তবুও একমাত্র মেয়ে।বড় আদরের।নিজেকে শান্ত করে নেয়।জানে ঘুড়ির সুতা আর ওদের হাতে নেই।
-এখন বলবে?
-ফোন করছি।
কঙ্কাবতী ফোনে কমলেশের কাকাকে ধরিয়ে দেয়।অরুপ কিছুক্ষণ কথা চালিয়ে যায়।কঙ্কাবতী বাবার সামনে থেকে উঠে অন্য ঘরে চলে যায়।
কমলেশের কাকার মূল কথা কয়েকমাসের মধ্যে কমলেশ আর কঙ্কাবতীর বিয়ে দিয়ে দেয়া।অরুপ সবকথা শুনার পর বলে,মেয়েকে সবেমাত্র ডাক্তারি পাস করিয়ে এনেছে,তাই হাতের অবস্থা খারাপ।বিয়ের প্রস্তুতি নিতে তার দু’বছর লাগবে।

অরুপ কথা শেষ করে কঙ্কাবতীকে ডাকে।
-কথা হলো বাবা?
-হ্যাঁ,হয়েছে।
-ওরা চাচ্ছে এখনই আমরা বিয়েটা সেরে ফেলি।
-এখন আমার পক্ষে বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব নয়।আমাকে সময় দিতে হবে।
-এখন বিয়ে দিলে সমস্যাটা কোথায়?
-কঙ্কা মা,তুমি স্বার্থপর হয়োনা।
-বাবা,বিয়ে করতে চাওয়াটা কি স্বার্থপরতা?
-এই সময় বিয়ে করতে চাওয়াটা স্বার্থপরতা।
-কেন?
-কেন?তোমাকে পড়িয়ে আনতে বত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।তোমার ছোট ভাই বিভিন্ন জায়গায় ভর্তির চেষ্টা করবে।ভালো না হলে তাকেও প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে হবে।বলো এতো টাকা আমরা কোথা হতে জোগাড় করবো?
কঙ্কাবতী কিছুক্ষণ চুপ থাকে।তারপর নীরবতা ভাঙ্গে।
-সন্তানকে মানুষ করা,বিয়ে দেওয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব।
-অবশ্যই বাবা-মায়ের দায়িত্ব।তবে কি জানো মা,সন্তান যদি বাধ্য হয়।এই জায়গায় তুমি তো বাধ্য নও মা।প্রথম যখন আমার কানে আসলো,তুমি তখন এস এস সিতে পড়।তোমাকে প্রথমে বোঝালাম।তুমি শুনলে না।তোমাকে বোকলাম,মারধর করলাম।কোন কিছুতেই কোন কিছু হলোনা।মধ্যখান হতে তোমার রেজাল্ট খারাপ হয়ে গেলো।তোমাকে ইন্টারমিডিয়েটে থাকাকালীন বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম,তোমার মা আর তুমি বেঁকে বসলে।আজ তোমার বিষয়টা তোমার মা সমাজে কিভাবে ম্যানেজ করবে,এই চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ।বলা চলে মানসিক রুগী।এখন তুমি নিজের স্বার্থটাই দেখছো।ওই ছেলেকে বিয়ে না করলে কি হবে?প্রেম হতেই পারে।অসম প্রেম সুখ দিতে পারেনা।
-বাবা,আমার ফেরার রাস্তা নেই।
-কি এমন হয়েছে,যে তুমি ফিরতে পারছোনা?তোমাদের কোন অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ভিডিও আছে ওদের কাছে?বল আমাকে।আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
-না বাবা।
-কঙ্কা মা শোন,ছেলের কাকার সাথে আমার কথা হলো।আমি জানিয়ে দিয়েছি,তোমাদের বিয়েতে কিছু দিতে পারবোনা।
কঙ্কাবতী কোন উত্তর করেনা।কোন কিছু নিয়ে তার ভাবতেও ইচ্ছা করেনা।বাবা চলে গেলে সাদা টাইলসের উপর পায়ের আঙ্গুল ঘঁষতে থাকে।সাদা টাইলসের উপর ওর কালো পা প্রকটভাবে ভেসে উঠে।

(চলবে)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: ভাল লাগল, পরের পর্ব পড়ার জন্য অপেক্ষা আছি।

২০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ,সাথে থাকুন।

২| ২০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:৪৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল গল্পটি। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

২০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:৫৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম।

২০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৪| ২০ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: কবিতা লিখে কী হয়?
ভাবতে ভাবতে কেবলই মনে হচ্ছে-
আর না লিখলেই বা কী !!!

২০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:০০

সুদীপ কুমার বলেছেন: সময় কাটে।নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.