নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিজ (২য় অংশ)

২১ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৩০


কঙ্কাবতী আজ দারুণ খুশি।আজ ভাই আর মাসহ দাদুর বাড়িতে বেড়াতে যাবে।ওর দাদুর বাড়ির নামটা একটু অন্যরকম-পণ্ডিতপুকুর।একদিন দাদুকে প্রশ্ন করেছিল,কেন এই স্থানের নাম পণ্ডিতপুকুর হলো।দাদু উত্তর করেনি।নাটোর থেকে ওরা বাসে উঠে। নন্দীগ্রাম পর্যন্ত বাস।তারপর সিএনজি করে পণ্ডিতপুকুর গ্রাম।সিনজি করে যাবার সময় ও মুগ্ধ হয়ে চারপাশের দৃশ্য দেখে।মাঠের পর মাঠ সবুজ আর সবুজ।আর মাথার উপর নীল আকাশ।বেলা দুটোয় ওরা দাদুর বাড়িতে পৌঁছে।রাস্তায় কাকাতো ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে ছিল।ওদের সিনজি হতে নামতে দেখেই হই হই করে এগিয়ে আসে।


পূর্ণিমা রাত।রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে কঙ্কাবতী বোনদের সাথে গিয়ে খোলায় বসে।কঙ্কাবতীর জ্যাঠার দুই মেয়ে।লীলা আর নীলা।দু’বোনই অসম্ভব সুন্দরী।লীলা বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বিবাহিত।দীপিকা কাকার মেয়ে।কঙ্কাবতীর চেয়ে এক বছরের বড়।দীপিকা দশম শ্রেণীতে আর কঙ্কাবতী নবম শ্রেণীতে উঠেছে।নীলা সব বোনদের মধ্যে ছোট।
-দীপিকা এবার তোর রেজাল্ট কেমন হয়েছে।
লীলা প্রশ্ন করে।
-আমার রেজাল্ট শুনে তুমি কি করবে?আমি গাঁয়ে থাকি।তুমি বরং বলো কঙ্কার রেজাল্ট কি।
দীপিকা গড় গড় করে বলে যায়।
-তাইতো কঙ্কা,তোর খবর কি?
লীলা প্রশ্ন করে।
-৯৫% নম্বর পেয়েছি।
কঙ্কাবতী ধীরে ধীরে বলে।
কিছুক্ষণ সবাই চুপ করে থাকে।ধূ ধূ মাঠে জ্যোৎস্নার প্রাচুর্য সবাইকে যেন আবিষ্ট করে ফেলে।লীলাই নীরবতা ভাঙ্গে।
-মেয়েদের ভালো রেজাল্ট করে কি লাভ?ওই শেষতক ছেলেরা গায়ের রঙ দেখে।বুক দেখে আর পাছা দেখে।
-কি যাতা বলছো দিদি?কঙ্কাবতীর মত ভালো ছাত্রী কয়জন আছে?
দীপিকা বেশ উষ্মার সাথে লীলাকে বলে।
কঙ্কাবতী কোন উত্তর করেনা।চুপচাপ জ্যোৎস্না দেখে।ও লীলার কষ্টা বুঝতে পারে।লীলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইন্টার পড়া অবস্থায় বাড়ি হতে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।তবে একথা সত্য ওর গায়ের রঙের জন্যই কিনা কোন ছেলের আগ্রহী চোখ ও এখনও খুঁজে পায়নি।
-চলো যাই।রাত বাড়ছে।
নীলা বলে।
ওরা সবাই উঠে পড়ে।বৈঠকখানার পাশ দিয়ে যেতে যেতে দাদুর কন্ঠ কঙ্কাবতীর কানে ভেসে আসে।দাদু বলছে-মেয়েরা হলো দ্বিজ।কঙ্কাবতীর মাথায় শব্দটা গেঁথে যায়।রাতে শোবার পরও মাথা হতে শব্দটি বেরোয়না।শেষ রাতে কঙ্কাবতী খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখে।ও দ্বীজেন কাকার বাড়িতে শিউলী ফুল তুলতে গিয়েছে।ফুল কুড়াতে গিয়ে দ্বীজেন কাকুদের ঘরে চোখ যায়।একটা ছেলে মুগ্ধভাবে ওর দিকে চেয়ে আছে।চোখে চোখ পড়ার পর কঙ্কাবতী আবিষ্ট হয়ে পড়ে।চোখ সরাতে পারেনা।
-কঙ্কা,ও কঙ্কা।ওঠ।চল পূজার ফুল পেড়ে আনি।
দীপিকা কঙ্কাবতীকে ডেকে তুলে।
কঙ্কাবতী রেডি হয়ে দীপিকার সাথে বেড়িয়ে পড়ে।শীতকাল।বেশ কুয়াশা পড়েছে গ্রামে।দ্বীজেনবাবুদের বাড়ি একটু দূরেই।দ্বীজেনবাবু অনেক বড়লোক।উনার শখ হলো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো।বিশাল বাড়িতে ফুল গাছের রাজত্ব।গ্রামের সবাইকে উনি বাড়িতে প্রবেশাধিকার দেননা।তবে অরুপদের বাড়ির কথা আলাদা।কঙ্কাদের দেখে দ্বীজেনবাবু দরজা খুলে দেন।

ফুল কুড়ানোর সময় কঙ্কাবতী আড়চোখে দ্বীজেন বাবুর ঘরের দিকে চায়।ফাঁকা ঘর।
-কিরে কঙ্কা,ওই ঘরের দিকে এত ঘন ঘন চাচ্ছিস কেন?
দীপিকা প্রশ্ন করে।
-কোথায়?আমি তো ফুল কুড়াচ্ছি।
কঙ্কাবতী দ্রুত উত্তর করে।
ফুল কুড়ানো শেষ হলে ওরা বাড়ির পথ ধরে।
-দীপিকা সাথে কে?অরুপের মেয়ে?
গ্রামের পরিচিত মহিলা যাবার সময় দীপিকার কাছে জানতে চায়
দীপিকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।তবে হাঁটা থামায়না।ওদের কানে কথা ভেসে আসে-দুই বোনই কালো।তবে অরুপেরটা বেশী কালো।
দীপিকা আর কঙ্কাবতী জোড়ে পা চালায়।
-মেয়েরাই বুঝি মেয়েদের বড় শত্রু?
দীপিকা প্রশ্ন করে।
কঙ্কাবতী উত্তর করেনা।মনে মনে ভাবে,এতো কালো হলো কেন ও।একদিন মাকে প্রশ্ন করেছিল কঙ্কাবতী,-মা,আমি এতো কালো কেন?
মা উত্তর করেছিলো-কঙ্কা মা আমার,তোমার চোখ দুটো কি সুন্দর!কত টানা টানা!কি সুন্দর তোমার মুখের আকৃতি,মনে হয় যেন পাথরে খোদাই করা।কালো হয়েছো তো কি হয়েছে?মানুষের সৌন্দর্যতো মানুষের মনের উজ্জলতায়।
মায়ের কথা শুনে মাকে জড়িয়ে ধরে কঙ্কাবতী।মা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে-পাগলী মেয়ে আমার।



চার বছর পর।প্রায় সন্ধ্যা।দীপিকা ছেলে কোলে নিয়ে দ্বীজেন বাবুর দরজায়।
-কঙ্কা,কথা শেষ কর।সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
কমলেশের হাতের মধ্যে কঙ্কাবতীর হাত।
-ছাড়ো যাই।সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
-আর একটু।
কমলেশ এই কথা বলেই কঙ্কাবতীকে জড়িয়ে ধরে আচমকা ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়।কঙ্কাবতী থর থর করে কেঁপে উঠে।
-কঙ্কা,আর দেরী করা ঠিক হবেনা।বাড়ি থেকে কেউ খুঁজতে আসবে।
দীপিকা জোড়ে জোড়ে বলে।

(চলবে)
প্রথম অংশের লিংক(Click This Link)




মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:১২

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো লাগল ।

২| ২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:০১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: দাদা ভাল লেগেছে। লাইক দিলাম।

৩| ২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:৫৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্প ভাল লাগল। সাথে আছি।

৪| ২২ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.