নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঃশব্দ দূরত্বে (৩)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৫

-শুভর মা বাড়ি আছো?
-কে গেন্দা দিদি নাকি?
ঠাকুর ঘর হতে কুন্তলা বেরিয়ে আসে।গেন্দাকে দেখে কুন্তলা এক গাল হাসে।কেন্দা বুড়ি বারান্দায় উঠে আসে।কুন্তলা পিড়ি দেয় বসতে।
-পান খাবে দিদি?
-দাও একটা।জর্দা একটু বেশী দিও।
কুন্তলা পান সাজায়।একটা পান গেন্দাকে দেয়।আর একটি নিজে খায়।ঠিক এমন সময় বাড়ির ছোট মেয়ে প্রীতি কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে আসে।প্রীতি পায়খানা করে প্যান্ট মাখিয়েছে।
-দিদি তুমি একটু বস।আমি মেয়েটাকে দিঘির পারে নিয়ে গিয়ে পরিস্কার করে আনছি।
কুন্তলা হাত ধরে প্রীতিকে ঘাটপারে নিয়ে যায়।নিয়ে যেতে যেতে বলে-বোকা মেয়ে।পায়খানা চেপেছে বলবিনা।
মেয়েকে নিয়ে কুন্তলা ফিরে আসে।
-কিরে বউ ছেলেটাকে দেখছিনা?
গেন্দা কুন্তলাকে প্রশ্ন করে।
-কার কথা বলছো দিদি?শুভ না শান্তর কথা?
কুন্তলা প্রশ্ন করে।
-আসলে আমি ওই মাধব ছেলেটার কথা বলছি।ছেলেটা এত ভাল,কয়েকদিনেই খুব মায়া পড়ে গিয়েছে। ও কোথায়?
-শুভর সাথে খেলতে গিয়েছে।ঠিকই বলেছো দিদি,এই কয়েকদিনেই বাড়ির সবার সাথে মিশে গিয়েছে।মনেই হয়না সে বাহিরের ছেলে।আমার ছোট দুই মেয়ে তো ভক্ত হয়ে পড়েছে নতুন দাদার।
গল্পে গল্পে বেলা পড়ে আসে।শুভরা বাড়ি ফিরে আসে।ধুলোয় মাখামাখি সবার গা।মাধব গেন্দা পিসীকে দেখে খুব খুশি হয়।
-ও পিসী, কখন এলে? ভাল আছো তো?
-হ্যাঁ বাবা,ভালো আছি।মা পেয়ে কি পিসীরে ভুলে গেলি?আরতো যাসনা ও বাড়িতে।
মাধব হেসে উঠে।গেন্দার খুব ভালো লাগে।সে তাকিয়ে তাকিয়ে মাধবকে দেখে।
-পিসী বস। আমি ঘাটপারে যাই।গা ধুয়েই আসছি।
মাধব ঘাটপারে চলে যায়।গেন্দা কুন্তলার কাছ হতে বিদায় নেয়।বাড়ি হতে বেরিয়ে এসে হাঁটা শুরু করে গেন্দা।আচমকা গেন্দার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে।

মাধব যখন খবরটা পায় তখন খুব অবাক হয়ে যায়।গতকাল বিকেলেই গল্প করে গেলো।আর সকালে উঠেই কিনা শুনছে গেন্দা পিসী মারা গিয়েছে।ধীরেন্দ্রর সাথে মাধব আর শুভ কাশিমপুর শ্মশানে যায়।চিতার আগুনের পাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাধব।চারপাশে কত মানুষ,তবুও ভয় ভয় করতে থাকে মাধবের।ফেরার পথে ধীরেন্দ্রর গা ঘেঁষে চলা শুরু করে।
-কি ভয় লেগেছে?
ধীরেন্দ্র প্রশ্ন করে।
মাধব মাথা ঝোঁকায়।
বাড়ি ফিরে দিঘির পারে চলে যায় ওরা।কুন্তলা আগুন জ্বালায় উঠানে।শিল আর শুকনা মরিচ রাখে আগুনের পাশে।স্নান সেরে আগুনের পাশে আসে ধীরেন্দ্র।শিল আর শুকনা মরিচ নিয়ে নিজে যা করে তাই ছেলেদের করতে বলে।

দেখতে কয়েক বছর কেটে যায়।ধীরেন্দ্র তার বড় মেয়ে ডলির বিয়ে দিয়ে দেয় এক ভারতীয়র সাথে।জামাই জাহাজের খালাসি।বিয়ের মধ্যে মাধব সমস্যায় পড়ে তার আত্ম পরিচয় নিয়ে।নানা জনের নানা প্রশ্ন।বাড়ি-ঘর আছে, তো অন্যের বাড়িতে কেন?কোন জাত?ব্রাক্ষ্মণের বাড়িতে অজাত-কুজাত কেন?এই সময় মাধবের সবচেয়ে বড় সহায় হয়ে উঠে কুন্তলা।মাধবকে বিয়ে বাড়িতে সব সময় আগলে আগলে রাখার চেষ্টা করে।তবে কারও কথায় কষ্ট না পেলেও শুভর একটা মন্তব্যে খুব কষ্ট পায় মাধব। ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় শুনতে পায় শুভ জামাইকে বলছে-ও আমাদের বাড়ির আশ্রিত।বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে।ওদের বাড়ির সবাইকে জোর করে ধর্মান্তরিত করেছে।শোনার পর মাধব লাল দিঘীর পারে গিয়ে বসে।লাল শাপলা ফুটে আছে দিঘীর পারে।সে চেয়ে থাকে শাপলার দিকে।চোখ দিয়ে জল গড়াতে থাকে।কতদিন মাকে দেখেনি।ছোট ভাই রিপন কেমন আছে কে জানে।আভা চুপ করে মাধবের পাশে এসে দাঁড়ায়।সে খেয়াল করে মাধব কাঁদছে।
-মাধবদা,আমাকে ওই শাপলা এনে দেবে?
মাধব কোন কথা বলেনা।উঠে দাঁড়ায়।আস্তে আস্তে দিঘীর জলে নেমে যায়।সাঁতরিয়ে শাপলার কাছে চলে যায়।

কুন্তলা দেখতে পায় মাধব স্নান করেছে আবার।খুব রাগ হয়।এত বড় হয়ে গেলো তারপরও বড্ড অবুঝ।সে বেশ রাগ করে।
-তুই এই অবেলায় আবার স্নান করলি যে।
কুন্তলা রাগত স্বরেই বলে।মাধব কথা বলেনা।ঘরের মধ্যে চলে যায়।কুন্তলা আভাকে শাপলা হাতে ঘাটপার হতে আসতে দেখে।সেদিন রাতে কুন্তলা ধীরেন্দ্রর কাছে একটা প্রস্তাব রাখে।প্রস্তাব শুনে ধীরেন্দ্র জানায়,সময়ই বলে দেবে কে কোথায় থাকবে আর কার সাথে কি সম্পর্ক হবে।

ধীরে ধীরে মাধব বদলে যায়।ক্রমাগত প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে উঠতে থাকে সে।তবে মাধব কুন্তলাকে স্থান দেয় তার হৃদয়ের মণিকোঠায়।মায়ের কষ্ট সে কোন ভাবেই সহ্য করতে পারেনা।কাপড় কাচতে মা হাঁপিয়ে উঠেছে দেখলেই মাকে সরিয়ে কাপড় কাচতে লেগে যায়।কুন্তলা যদি বলে মাধব বাপ মাছ কাটা লাগবে।কোন কথা নেই সাথে সাথে মাছ কেটে দেবে।কুন্তলার নিজের ছেলেমেয়েরা এসবের ধারে কাছেও যায়না।যখন মাধবরা মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী,তখন ফের সমস্যায় পরে মাধব।পরীক্ষার একমাস আগে মাধবের সব বই খাতা গাঁজাখোর গনেশ চুরি করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়।মাধব একদম দিশেহারা হয়ে পড়ে।কারণ এই পাড়ায় শুভ আর মাধব ছাড়া আর কোন পরীক্ষার্থী নেই।আর শুভ রাজশাহী থাকে তখন।খুব কষ্ট করে বন্ধুদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় আর পাশও করে মাধব।শুভ ভাল রেজাল্ট করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।ইচ্ছা থাকা সস্ত্বেও মাধব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়না।
-বাবা মাধব তুমি তো আমাদের আর্থিক অবস্থা জানো।আমি আমার অন্যান্য সন্তানদের পড়াশুনার খরচ আর তোমার পড়াশুনার খরচ একসাথে চালাতে পারছিনা।এখন তুমি বল আমি কি করবো?
ধীরেন্দ্র মাধবকে বলে।
ঘরের মধ্যে মাধব,ধীরেন্দ্র আর কুন্তলা।
-ঠিক আছে বাবা।
মাধব মাথা নীচু করে বলে।
-কি ঠিক আছে?তুমি আর পড়াশুনা করবেনা?
ধীরেন্দ্রর কথার কোন উত্তর দেয়না।মাথা নীচু করে থাকে।
-শোন তুমি পড়াশুনা করবে।তবে স্থানীয় কলেজে।ঠিক আছে। এবার তবে যাও।
মাধবের পিছনে পিছনে কুন্তলাও বেরিয়ে আসে।বলে-মন খারাপ করিসনা বাবা।তুইতো যথেষ্ট বড় হয়েছিস সবই বুঝিস।
-না মা।মন খারাপ করিনি।
বাড়ি হতে বেরিয়ে মাধব হাঁটতে হাঁটতে নাটোর রাজবাড়ি চলে এসে খোলা জায়গায় বসে।চিন্তা করে এই পরিবারে সে আশ্রিত কিন্তু উনারা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নিজের ছেলে বলে।এর চেয়ে কি আর চাওয়া থাকতে পারে।সে ঠিক করে নিজের বাড়িতে যাবে।যাই থাক কপালে।সে কাউকে ভয় করেনা।আর কতদিন মাকে দেখেনি।তবে ছোট ভাই রিপন মাঝে মাঝে ট্রেনে চেপে চলে আসে।ওর কাছে এসে কান্নাকাটি করে আর বলে,-দাদা আমার আর ভালো লাগেনা।চল ভারতে চলে যাই।ওখানে গিয়ে আবার আমি হিন্দু হয়ে যাবো।মাধব শান্তনা দেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে আবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।রিপনের নতুন নামও দিয়েছে ওরা-করিম সরকার।তবে বড়দা এখনও আসেনি।মাধবের মনে হয় এই স্থান ছেড়ে সে কোথায় যাবে?কেন যাবে?পাকিস্থান ওর জন্মভূমি।
(দুই)
রিমি আর ভবানী স্কুল থেকে ফিরছিল।রিমি খুব ডানপিটে টাইপের।ভয়-ডর কম।দুই বান্ধবী শিববাড়িতে এসে অন্য বান্ধবীদের বিদায় দেয়।শিব বাড়িতে ওদের আনু কাকা বিড়ি ফুঁকছিল।
-বিড়ি টানবি?
রিমি ভবানিকে প্রস্তাব দেয়।
ভবানি প্রচন্ড অবাক হয়ে তাকায় রিমির দিকে।
-আরে দুই একটান দিলে কিচ্ছু হবেনা।
রিমি বলে।
-মেয়েরা কি বিড়ি খায়?
-মেয়েছেলে বিড়ি টানলে কি ক্ষতি?
ভবানীর প্রশ্নের উত্তরে রিমি বলে।
-কেউ যদি দেখে ফেলে?
-ভর দুপুরে এখানে আর কেউ আসবেনা।
দুইজন আনুকাকার কাছে আসে।আনু একবার ওদের দিকে তাকায় তারপর আবার বিড়ি টানতে থাকে।
-কাকা।
রিমি ডাক দেয়।
আনু সাড়া দেয়না।
-ও কাকা,আমাদের একটা দাওনা।
-হবেনা।দেখ রিমি তুই বড় হচ্ছিস আর ফাজিল হচ্ছিস।যা বাড়ি যা।
-কাকা দু’এক টান দিয়েই চলে যাবো।
রিমির কথা শুনে আনু কানের উপর থেকে একখানা বিড়ি নিয়ে রিমির দিকে এগিয়ে দেয়।
-আগুন?
আনু রিমির দিকে ওর জ্বলন্ত বিড়ি এগিয়ে দেয়।রিমি বিড়ির আগুন দিয়ে বিড়ি ধরায়।দুই টান দিয়ে নাকমুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে।তারপর ভবানীর দিকে এগিয়ে দেয়।ভবানী একটান দিয়েই খক খক কাশতে শুরু করে।
-প্রথমবার এমন হয়। আমারও হয়েছিল।
ভবানী বিড়ি রিমির দিকে এগিয়ে দিতে গেলে রিমি ওকে ফেলে দিতে বলে।ভবানী ফেলে দেয়।
-দেখ রিমি তোর জ্বালায় আর বাঁচিনা।অতখানি বিড়ি নষ্ট করলি?
আনু গজ গজ করতে করতে উঠে গিয়ে আধ খাওয়া বিড়ি কুরিয়ে আনে।

বাড়িতে পৌঁছে বই খাতা রেখে রিমি মায়ের কাছে আসে।তার মা সিঁথি রসগোল্লার রস জ্বাল দিচ্ছিল। আর ওর বাবা দুলাল ছানা ঝরাচ্ছিল।
-মা খেতে দাও।খুব খিদা লেগেছে।পেট একদম চোঁ চোঁ করছে।
-হাত মুখ ধুয়ে আসবি না ওভাবেই খাবি?
মায়ের কথা শুনে রিমি ধুপধাপ শব্দ করে কুয়োতলায় যায়।
-কতবার বলেছি মেয়েদের আস্তে ধীরে হাঁটতে হয়।কে শুনে কার কথা।
সিঁথির কথায় দুলাল হেসে উঠে।
-তোমার লাই পেয়ে পেয়ে মেয়েটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে।
রাগত গলায় সিঁথি বলে।
দুলালের পাঁচ মেয়ে আর দুই ছেলে।সবগুলির গায়ের রঙ চাপা।কিন্তু এই মেয়েটি আর ছোট ছেলেটি টকটকে ফর্সা।দুলাল তার সেজো মেয়েটিকে একটু বেশীই স্নেহ করে।
রান্নাঘরে পিড়ি পেতে বসে রিমি।সিঁথি ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলে,-তোর গা থেকে বিড়ির গন্ধ আসছে কেন?
-আমি বলবো কি করে?
রিমি মনযোগ দিয়ে ভাত মাখাতে শুরু করে।সিঁথি রসের কড়াইয়ের কাছে চলে যায়।রিমি মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে ভাত খাওয়া শুরু করে।
নিঃশব্দ দূরত্বে (১) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (২) (Click This Link)

চলব…………

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:০১

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক-----

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫১

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ অনুপ্রেরণার জন্যে।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গল্প ভালই এগুচ্ছে, চলুক।

একটা বিষয়, মাধব আর শুভ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে শুভ রাজশাহী ভার্সিটিতে কিভাবে ভর্তি হল? উচ্চ মাধ্যমিক কোথায় গেল?

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:২২

সুদীপ কুমার বলেছেন: সময় লাফ দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.