"নীল ডায়েরীর গল্প : ০২"

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২

ঘটনা ১:

অনেকদিন পর সেদিন রিক্সা চড়লাম।জায়গাটা ছিল গ্রামের দিকে।রাস্তা পাকা হলেও বেশ ভাঙা-চোড়া।ঝাঁকুনি গিলতে গিলতে ভাবি,হাড়ের জয়েন্টগুলি বুঝি এখনি আলাদা হয়ে যাবে।বাবারে!........­.... বলতে বলতে চোখ চলে গেল রাস্তার ধারে।
দেখি,ধূলি-ধূসরিত আদুল গায়ে ২টা বাচ্চা যাচ্ছে।গায়ের রং মিশমিশে কালো।একটার পিঠে চড়েছে আরেকটা।
বড়টা ছেলে,বয়স বড়জোর পাঁচ হবে।
আর ছোটটা মেয়ে।আড়াই বছর বয়সী।

এই তপ্ত রোদে রিক্সার ভেতর বসে আমারই অবস্থা কাহিল।আর এই পিচ্চি ছেলেটা কি পরম মমতায় আর সস্নেহে ছোট্ট বোনটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে হেটে চলেছে।বোনটা মাঝে মাঝে পিছলে পড়ে যাচ্ছে।অথচ কি নিদারুণ-নির্বিঘ্ন সে!এই মূহূর্তে সবটুকু ভরসা আর আশ্রয়স্থল তার বড় ভাই।
ওদের ছবি তুলতে চেয়েছিলাম। কিন্ত রিক্সা থেকে নামা সম্ভব ছিল না।ইশ!
তবে ওদের মায়াময়-কালো,সরল মুখদুটো ভুলতে পারছি না!


ঘটনা২ :

তমালিকা (ছদ্মনাম) কে আমি অনেকদিন প্রাণখোলা হাসি দিতে দেখি নি।অবশ্য ওর সাথে আমার খুব কমই দেখা হত।বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় হলেও আমি ওর সাথে কত সহজেই না মিশেছি!একটা সময় বুঝতে পারলাম, মেয়েটার মনে একটা গভীর দুঃখবোধ আছে।আর সেটা হচ্ছে,তার গায়ের রংটা মিশমিশে কালো।
ওর একটা ছোট বোন ও আছে।এই বোনটা আবার প্রতিমার মত সুন্দরী।তমালিকার বিয়ে না হবার দরুন ছোটটার ও বিয়ে দেয়া যাচ্ছে না।এদিকে দু'জনেরই বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে।পরিবারের সবার কাছে তাই তমালিকা এখন এক দুঃসহ বোঝার নাম।অথচ এরাই তার গুনের কদর না করে পারবে না।

যখন সূর্য ডুবে চারিদিকে কালো আঁধার নেমে আসে,কবি তার প্রেমিকার কাল চুল নিয়ে শব্দের ধুম্রজাল সৃষ্টি করেন,হিমুরা মায়াময় আঁধারের আহবানে পিচঢালা পথে আদুল পায়ে হাঁটতে থাকে কিংবা নগরীর অভিজাত কোন এক হোটেলে কারো ক্যান্ডল-লাইট ডিনারটা রোমান্টিসিজমে উপচে পড়ছে ......তখন গ্রাম-বাংলার কোন এক নিভৃত পল্লীতে, তমালিকার মত কোন এক তরুনীর উষ্ণ নোনাজলে ভিজে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া বালিশের কোণাটা কোনদিন কারো চোখে পড়েছে কিনা আমার জানা নাই!


কালো ছেলে-মেয়েদের মনে একটা চাপা কষ্ট থাকে।কেউ সহজে আদর করে না,মিশতে চায় না বা মিশলেও অন্য রকম চোখে দেখে!আমাদের সোসাইটিতে (স্পেশালি বিয়ের বাজারে) চামড়া সাদা হলে সে লাখ টাকার সাদা হাতি,বাদামী হলেও টেনেটুনে চালিয়ে নেয়া যায় আর কালো হলে সর্বনাশ!
লোকে বলবে,"ভাই/ভাবী আর বইলেন না,ছেলে/মেয়ের রং তো পুরাই ডিপজইল্যা কালা!সাদা সাদা চোখ ২টা খালি দেখা যায়।"

আমাদের ধর্মের দিকে তাকালে দেখতে পাই,ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল (রাঃ) এর গায়ের রং ছিল কুচকুচে কালো,হজ্ব পালন করার সময় মুসলিমরা যে পাথরে চুমু খায় ('হাজরে আসওয়াদ' ) সেইটার রংটাও কিন্ত কুচকুচে কাল।দুনিয়া সেরা মূল্যবান রত্ন হচ্ছে হীরা-সেইটাও কিন্তু কয়লার (একচুয়ালি কার্বন) আরেক টা রূপ!


মানুষ যখন গরু কিনতে যায় তখন নাকি কালো গরু প্রিফার করে।তাহলে..... তাহলে কালো মানুষে প্রবলেম টা কই!অথচ মানুষ তো "আশরাফুল মাখলুকাত"-"সৃষ্টির সেরা জীব।"

আসল প্রবলেম টা চেতনার রংয়ে।
আর এই রংটা সাদা হওয়া জরুরী।
খুব জরুরী।

শেষ হবে একটা কথা দিয়েই,
"আল্লাহ সেরা স্থপতি।আর....
আল্লাহ যা বানিয়েছেন তাতেই আলহামদুলিল্লাহ্‌।"

২ টি +১/-০