![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কারাগারে কখনোও যাওয়া হয়নি আমার। আমি এতটা জঘন্য নই। শুনেছি সেখানে কয়েদিরা লোহার খাঁচাতে আবদ্ধ থাকে। বিষয়টা তেমনও না। সেখানে কয়েদিদের কে দিয়ে কাজও করানো হয় সেটা কায়িক কিংবা কঠোর। সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে সহচরদের সাথে খাওয়া-দাওয়া,আমোদ-ফূর্তি, সুখ-দুঃখ বিনিময় সবই ঘটে,তবে সেটা নিয়মের মধ্যে। দিনশেষে আবার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রাত্রিযাপন। এই সার্কেলটি কারাগারের কয়েদিদের চলতেই থাকে সাজার শেষ দিন পর্যন্ত।এরাও বাইরের কর্মবিমুখ মানুষের মত কাজে ব্যস্ত থাকে, কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে এদেরকেও চিকিৎসাও দেওয়া হয়,দেওয়া হয় বাঁচার মত খাবার-পানীয়। আর একদম বৃদ্ধ হয়ে পড়লে কাজ থেকে অব্যহতিও দেওয়া হয়। এখন কেউ যদি মনে করে বাহ্ এতো দারুন জীবণ। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করব? আর চাকরি খোঁজা তো এক বিভীষিকার নাম। মামা,খালুর জোরের পাশাপাশি টাকার জোরও থাকতে হয়। তার চেয়ে বরং একটা মার্ডার করে জেলে গিয়ে বসে বসে খাই। একটু কাজ আর কথা না হয় শুনলাম তাতে কি? জীবণ তো চলে যাচ্ছে। বাস্তবে ফিরে আসি এখন, প্রকৃতপক্ষে রাস্তার ভিক্ষুক যে কি না হাত পেতে পেতে কোনোরকম একবেলা খেয়ে বেঁচে থাকে সেও এরকম পরিকল্পনা জীবনেও মাথায় আনবে না। আসল কথা হল জেলখানার স্বাধীনতা আর পৃথিবীবক্ষে মুক্তভাবে ছুটার স্বাধীনতা বিস্তর ব্যাবধান যেমনটা আকাশ-পাতালের। আমিও কারাগারে ছিলাম শত-সহস্র বছরের ন্যায় একটা বছর তাও আবার এই মুক্ত পৃথিবীতে। সে কাহিনীই বলব আজ।
সেকেন্ডটাইমার শব্দটাকে খুব ভালোভাবে চিনতে হল আমার। প্রথমবারে সফল না। আর প্রথমবারে কয়জনই বা সফল হয়? প্রথমবারে সফল হতে কোন সমীকরণ মেনে চলতে হয় কিংবা কোন পথ পাড়ি দিতে হয় জানা ছিল না আমার। জীবনটা অন্তঃহীন পরীক্ষার সমষ্টিস্বরূপ। জীবনের প্রত্যেক মোড়ের প্রতিটি অলিতে গলিতে শুধু পরীক্ষা আর পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলেও ছাড় নেই। আমার জানামতে আমি খারাপ স্টুডেন্ট না। ভালো আর খারাপের মাঝামাঝি করলে যেমনটা হয় আরকি। সবাই ভালো স্টুডেন্টই বলত। বাবা মায়ের পুরো ভরসা ছিল তাদের মুখ উজ্জ্বল করব। তাদের এবং আমারও স্বপ্ন ছিল অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তুু ভাগ্য সহায় না হলে যা হয় আর কি। অমুক বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই চান্স পেলাম না। সৃষ্টিকর্তা না চাইলে কোনো কিছুই হয়না এমনটাও ভাবতে পারি নাই। নিজেকে নিখাদ চকচকেও মনে হল না। ভেবে নিয়েছিলাম একান্তই নিজের কিছু ত্রুটির কারনেই প্রথমবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ পাইনি। এখানেই সেকেন্ডটাইমারের জীবন শুরু। ব্যাস, জীবনের না দেখা আর না ভাবা ঘটনাগুলো ঘটতে থাকল একের পর এক। অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত দুঃসময় গ্রাস করতে শুরু করল জীবনটাকে। জীবনের হরেক রং চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল।এগুলো নিয়ে ইতিহাস লেখা যায়,লেখা যায় কাহিনীমালা জীবন কক্ষপথে যতগুলো ঘটনাপ্রবাহ ঘুরপাক খায় তাদের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠল এই ঘটনা। বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার পরে চান্স না পাওয়ার খবরটা ছাতকের মত চেয়ে থাকা বাবা-মাকে বলাটা পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টতম কাজের মধ্যে একটি। শুষ্ক এলোচুলের বাবা ফ্যাকাশে মুখকরে আশায় থাকত আমার সফল রেজাল্টের। কিন্তুু বারবার যখন ব্যর্থতার রেজাল্ট শুনাই তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। তখন জীবনে সেই কষ্টের থেকে বড় কোনো কষ্ট আবিষ্কার করতে পারি নি। গলাগলি করা কিছু বন্ধুবান্ধব একসাথে পরীক্ষা দিতাম। যখন সেই দলের কারো কোথাও চান্স হয়ে যায় আর আমার না হয় তখন পুরো পৃথিবীর পুরো অন্ধকার শুধু আমাকেই গ্রাস করে। সেই অন্ধকারে নিজের ভারসাম্য বিলীন হওয়ার মত অবস্থা হয়। আক্ষেপযুক্ত বাবার নিরব চেহারা আর মায়ের বিশ্বাস ঠুনকো করে দেওয়ার মত কষ্ট নিজেকেই বরণ করতে হয়। এগুলো মূলত কষ্ট নয়। কষ্টের সূচনাবৃত্ত তখনই শুরু হয় যখন পাশের বাসার আন্টির ছেলে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় এবং সেই আন্টি আমার ব্যর্থতার কথা জেনেও বাবা-মাকে আমার কথা জিজ্ঞেস করে কোথাও চান্স হয়েছে কি না । আমি ইতিমধ্যে অনেকটা কষ্ট সহ্য করা শিখে গেছি, কিন্তু যখন বাইরের চেনা-পরিচিত আত্নীয়স্বজন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার ব্যাপারে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করে আর প্রত্যুত্তরে বাবা মায়ের শুষ্ক গলা থেকে নিঃসৃত গুটিকতক আলাপচারিতা আমার কাছে ভীষন বেদনাদায়ক মনে হয়,যেই কষ্টটা ইতিমধ্যে সহ্য করা কষ্টেকেও নিমিষেই হারিয়ে দেয়।।
খুব ছুটে চলা মানুষ আমি, ঘরের থেকে বাইরেই সময় বেশী দিতাম, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতাম,কিন্তুু এখন জীবন মরণ কারন ছাড়া বাইরে যাই না। যেতে মন চায় না। এই ব্যর্থতার মুখ মুক্ত পৃথিবীকে দেখাতে আত্না সায় দেয় না। খুব ইচ্ছে হয় বাইরের উন্মুক্ত স্নিগ্ধ বাতাসে গা ভিজাতে, কিন্তুু রাত্রী ছাড়া তা আর সম্ভবপর হয়ে উঠে না। রাত্রীর আধাঁরে নিজের আধাঁরটা মিশিয়েই খানিকটা স্বস্তি পাই। পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকার ছোট ভাই,বড় ভাই,আর জাদরেল টাইপের কিছু মানুষ জীবনটাকে নড়ভঙ্গ করে দিয়েছে। পাশের বাড়ির আন্টিরা তো লাগামহীন ভাবে আছেই ।এদিকে পাশের বাড়ির পরের বাসার আন্টির মেয়ের ঢাবিতে চান্স হয়েছে, পুরো ফ্যামিলিতে আনন্দের বৃষ্টি, মাঝে মাঝে মধ্যরাতেও আমার কানে ফুটে উঠে। আমি এখন নিশাচর হয়ে গেছি, দিবালোকের বিচরণ অনেকাংশে কমে গেছে। আর কোনো জীবন-মরণ নিমিত্তে বাইরে গেলে ধরণীর আসল রূপ দেখতে পাই। নিজেকে তখন কেন জানি সেলিব্রেটি মনে হয়। আশেপাশের পরিচিত মানুষজন আমার দিকে তাকিয়ে তাকে যেন কিছু বলার জন্য বহুকাল থেকে আমাকে খুঁজছে। আমি এগুলো গুরুত্ব না দিয়ে চোখ সোজা রেখে সোজাপথ চলি। হঠাৎ কেউ আমার নাম ধরে ডাকলে এক পৃথিবীর সমস্ত অস্থিরতায় বুকটা কেঁপে উঠে। ডেকে নিয়ে কি প্রশ্ন করবে সেই প্রশ্নটা আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। তবে উত্তর দিতে গিয়ে বুক ফাটে আর হৃদয়ে টান পড়ে। এখন অনেকেই আমাকে চিনে, এমনকি আমি যাদেরকে চিনতামও না। অনেককে মুখচেনা চিনতাম, জীবনে তেমনভাবে কথাও বলা হয়নি। আজ তারাও আমাকে বুলেটবিদ্ধের নামে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মাঝে মাঝে কোনো অনেকে আমাকে বলে অমুকের ছেলেটাতো ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেয়েছে আর তমুকের মেয়েটা তো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। কিন্তুু তুমি পেলে না কেন? তুমি তো ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলে না? এতসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে এসব পরবাসিদের মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথা হৃদয়ে বুলেটবিদ্ধ হয়। আমি এটা জানতাম যে খারাপ খবর বাতাসের আগে ছড়ায়। কিন্তুু আমার ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হল কি না জানিনা।এরা কি আমার এই ব্যর্থতার খবর জানে না? আসলে মানুষজন আমার ব্যর্থতার খবর জেনেও আমাকে বারবার ডেকে নিয়ে প্রশ্নের তীর ছুড়ে। কলিজা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়, হৃদয়ে মধ্যে বেদনার প্রাসাদ উঠে। চাপা কান্না সবসময় থাকে। দুর্বোধ্য কষ্টের দেয়াল গড়ে উঠে অন্তর মাঝারে।শান্ত্বনা দেওয়ার মত লোক হাতেগোনা।
সেকেন্ডটাইমারের একটা বছর মাথায় কয়েকশ টন ওজনের চাপ সবসময় থাকে। ইচ্ছা করলেই চাপমুক্ত হওয়া যায় না।মনের মধ্যে সবসময় অস্থিরতা বজায় থাকে। আমি এখন ফেসবুকেও কম ডুকি । ভার্সিটি কোচিং করার সময় এক ভাই বলেছিল ভালো করে পড়াশোনা কর, ভালো করে পরীক্ষা দাও নাহলে দেখবে তোমার বন্ধুবান্ধব চান্স পেয়ে ফেসবুকে ফটোআপলোড দেওয়া শুরু করবে আর তোমার তাতে বেদনার লাইক দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। সেই ভাইয়ের কথাটি এখন উন্মুক্ত সত্যপ্রায়। প্রায়সময়ই বন্ধুবান্ধবদের দেখা যায় তাদের ভার্সিটির লগো প্রচারের জন্য ফেসবুককেই সক্রিয় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে।তাদের হাসিমাখা মুখসহ ক্যাম্পাসের দৃশ্য অহরহ হোমপেজে আসতে থাকে। চাপা কষ্টটা ক্রমান্বয়ে বর্গের সমানুপাতিক হারে বাড়তেই থাকে। কি করলাম জীবন ? আমাকে দিয়ে কি কিছুই হবে না? আমি কি তাৎপর্যহীন পৃথিবীতে এসেছি?প্রশ্নগুলো সর্বদাই মনে ঘুরপাক খায়, উত্তর সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন ।আমি এখন পড়াশোনা করেছি দ্বিতীয়বার পরীক্ষার জন্য এটাই অন্তিম সুুযোগ। এখন পড়তে পড়তে আমি আর ক্লান্ত হই না আগের মত। এখন গভীর রাতের সাথে সন্ধি হয়ে গেছে । আগে পড়তাম ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার জন্য আর এখন পড়ি বাঁচার জন্য। যেটাকে বলে অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম।কারন ইতিমধ্যে আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমি খু্ব একটা জীবিত না। দুনিয়ার মানুষের পক্ষাঘাতে অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের খেয়ালীপনা,কটুক্তি, প্রশ্নের তীর শান্ত নিরুদ্রপ জীবনকে উত্তাল ঝঞ্জায় রূপান্তর করেছিল। দীর্ঘ নির্ঘুম রাত,একলা শুকতারা, গভীর দীর্ঘশ্বাস, ঝাঁকড়া চুল,মায়ের চোখের জল,বাবার ভীষন আক্ষেপ এগুলো ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। এসব থেকে অন্তত বাঁচতে চেয়েছিলাম। কলঙ্কের গ্লানি মুছতে চেয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পরীক্ষা নেয় এমনটা ভেবেই সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখেই সবকিছু নতুন থেকে শুরু করেছিলাম। এর মাঝে অসংখ্য ব্যথাবহ অশেষ রাত্রী কেটে গিয়েছে। মানুষজন এখন আমাকে নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। সবাই ধরে নিয়েছে আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না,আমি গোল্লায় গেছি। আমি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েছি একা একা চুপিসারে কারণ মানুষের প্রশ্নের তীরে আর তীরবদ্ধ হতে চায়নি। আজ বাবা-মার দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার দেওয়া পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি সফল হয়েছি প্রথমবার না হলেও দ্বিতীয় বার। সে যাইহোক সফল হয়েছি আমি। পুরো দুনিয়া জয়ের আনন্দ পেয়েছি আমি। এই এক বছরে অনেক নিরব অশ্রু ঝরেছে আমার চোখে কাউকে দেখায়নি। বেসিনে গিয়ে মুখ ধোঁয়ার মানে এক পানি দিয়ে অন্য পানি মুছেছি। কিন্তুু আজ আমি উত্তীর্ণ হওয়ার খবর শুনে চোখ দিয়ে যে অশ্রু ঝরেছে সেটা মুছিনি। অশ্রুসিক্ত চোখেই বাবা- মাকে সে খবর জানিয়েছি। মায়ের চোখেও অশ্রু ছলছল করছে, সেটা অন্যরকমের অশ্রু মনে হল কষ্টেরও না আবার আনন্দেরও না । বোধহয় সৃষ্টিকর্তা তার দোয়া কবুল করেছেন তার জন্য প্রশংসার অশ্রু। পুরো এক বছরের সেই দিনটাতে আমি বাবার চেহারায় নিরব আক্ষেপের ভাবটা দেখিনি। দিনটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান যা অর্থদিয়ে ক্রয় করার মত নয়।
অভিজ্ঞতা মানুষের মূল্যবান সম্পদ। মানুষ ইচ্ছা করলেই অভিজ্ঞতার সনদপত্র অর্জন করতে পারে না। তার জন্য লাগে শ্রম আর ধৈর্য্য। এই এক বছর পৃথিবী নামক কারাগারে থেকে আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছি। কষ্টকে কিভাবে বুকের খাঁচাতে আটকে রাখতে হয়,কিভাবে হাহাকার আর আক্ষেপের মুহূর্ত সামাল দিতে হয়, চোখের পানিকে কীভাবে অন্য পানি দিয়ে মুছতে হয়, কিভাবে দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে উপকূলে পৌঁছাতে হয়, কিভাবে জীবনের অন্ধকারকে কোনো এক সকালের শান্ত নরম সূর্যের কিরনে আলোকিত করতে হয়,কিভাবে ধৈর্য্যধারন করে শত বাঁধা পেরিয়ে সফল হতে হয়,কিভাবে মানুষের কথার তীর বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়,কিভাবে ব্যথাবহ অশেষ রাত্রীগুলো পাড়ি দিতে হয়,কিভাবে বিনিদ্রায় রজনীযাপন করতে হয়। আমি আরো শিখেছি যে কিভাবে পরিশ্রম করে সাফল্য চিনিয়ে আনতে হয়। আমি জেনেছি যে পরিশ্রমের কাছে প্রতিভার কোনো মূল্য নেই। পরিশ্রমই সব।আমি এও জেনেছি মানুষকে সন্তুুষ্ট করা মানুষের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। আমি চাই সবার উচিত এভাবে একটা বছর কারাগারে থেকে জীবনের মানে বোঝা। জীবনের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা শেখা।আজকাল ঠুকরো ঠুকরো করে এক আত্নবিশ্বাসের পাহাড় এখন অামার বুকে জমে গেছে । আমি এখন আত্নবিশ্বাসী ভবিষ্যতে কোনো কষ্টই আমাকে আর কষ্ট দিতে পারবে না। এই আত্নবিশ্বাসটা সকলের অর্জন করা উচিত নয় কি??
আমি শিখেছি দুনিয়ার বৈচিত্র্যময় অনেক অভিজ্ঞতা এই একটা বছর কারাগারে থেকে। এসব অভিজ্ঞতা চাইলেই একজন অর্থ দিয়ে খরিদ করতে পারবে না। যারা সৌভাগ্যবান সৃষ্টিকর্তা শুধু তাদেরকেই এসব অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দেয়। এজন্য অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজন সৃষ্টিকর্তাকে সর্বোপরি সাড়া দেওয়া। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে ছুটে বেড়াই। ক্যাম্পাসের প্রতিটি সবুজ ঘাসের সাথেও বন্ধুত্ব হয়েছে। মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার আনন্দ খুঁজে পাই। পৃথিবীকে অসম্ভব সুন্দর মনে হয়। ফাগুন-বসন্তের সৌন্দর্যতা মনে দাগ কাটে। আকাশটা আগের চেয়ে বেশীই নীল মনে হয়। আদিত্যের কিরণকে সুড়সুড়ি মনে হয়।জীবনের স্যাঁতস্যাঁতে দিনগুলির পরিসমাপ্তি হয়েছে। এক বছরের কষ্ট এখন আমাকে আর কষ্ট দিতে পারে না। আমি দুঃখের পরশপাথরে জীবনে পেয়েছি অমৃত্যসুখ। এখন আমি নিজেই নিজেকে অনুপ্রেরনা দেই , অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য এখন অন্যকারো দ্বারস্থ হই না ।নিজেকে আজ বড় স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হয়। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি যখন বেশি হয় তখন যেমন সুখ অনুভূত হয়,এখন আমার ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়।আর জীবনে দুঃখগুলো আসে জীবনকে গড়তে, জীবনকে জীবনের মানে বুঝাতে। আমি আমার দুঃখগুলোকে সালাম জানাই। ছোট বেলার ভাব সম্প্রসারণটার কথা মনে হচ্ছে" দুঃখের মত পরশ পাথর আর নেই "
"নিশ্চই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি
অবশ্যই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি"
তুমি হারালে বিশ্বাস, ফুটবে না ফুল মহীতে-
তুমি হও শক্ত নিয়ে প্রস্তর মন বাঁচ এ পৃথ্বীতে।
যদি হও দুর্বল তবে কর শক্ত পণ বলি তা আমি-
প্রশ্ন কর অন্তর মাঝারে,কেন আসা ধরায়? কে তুমি?
নাজমুল হক সৈকত
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফিশারীজ এন্ড মেরিন সাইন্স
১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪০
নাজমুল হক সৈকত বলেছেন: জ্বি, ধন্যবাদ। আপনাকেও স্বাগতম।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৩৬
ওমেরা বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম ।