![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফার্স্ট ইয়ারে একটা মেয়ে আছে। অধরা। একদম পারফেক্ট একটা মেয়ে। যেমন চেহারা তেমন হাইট। বাপের টাকাপয়সা আছে। নাচ পারে গান পারে কবিতা পারে। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। ডিবেটার। অসাধারণ ব্যবহার। অসাধারণ কণ্ঠ। অসাধারণ ড্রেস সেন্স।
আমরা সবাই অধরার জন্য পাগল। শুধু আমরা না, ক্লাসমেট সিনিয়র জুনিয়র স্যার ম্যাডাম সবাই ওর জন্য পাগল। কিন্তু অধরা তার নামের মতই অধরা। সে প্রেম করে না। কারণ তার যোগ্য ছেলে নাকি এখনও সে খুঁজে পায় নি।
শুধুমাত্র নিচের সব শর্ত যে ছেলে পূরণ করতে পারবে, অধরা তার কাছেই ধরা দেবে।
ক/ ছেলের হাইট কমপক্ষে ছয় ফুট হতে হবে।
খ/ ধবধবে ফর্সা বা লালচে হতে হবে।
গ/ অধরার চেয়ে কমপক্ষে তিন বছরের বড় হতে হবে।
ঘ/ ডাক্তার হতে হবে। ফার্স্ট পার্ট করা থাকতে হবে (চর্ম যৌন, মানসিক ও বেসিক সাবজেক্ট বাদে)।
ঙ/ ঢাকায় কমপক্ষে দুটো বাড়ি থাকতে হবে
চ/ আগে একটাও প্রেম করা যাবে না
ছ/ এক বাপের এক ছেলে হতে হবে। থাকলে ছোট বোন থাকতে পারে, হাইয়েস্ট একটা।
জ/ বাপ মা জীবিত থাকতে হবে এবং ব্যাপক টাকাপয়সার মালিক হতে হবে
ঝ/ হানিমুনে নেপাল যেতে হবে
ঞ/ বিয়ের সাথে সাথে মেয়েকে একটা ফ্ল্যাট লিখে দিতে হবে ও একটি প্রাইভেট কার কিনে দিতে হবে
ট/ মেয়ের কোন কাজে কখনও বাঁধা দেয়া যাবে না এবং কোন কিছুতে বাধ্য করা যাবে না।
ঠ/ চুল পাকা হওয়া যাবে না
ড/ সিরিয়াস হতে হবে কিন্তু আঁতেল হওয়া যাবে না
ইত্যাদি।
তো এতসব শর্তের কারণে আমরা কেউই অধরার চারপাশে ঘেঁষতে পারি না। কেউ ক তে আটকায়, কেউ খ তে, কেউ গ তে, কেউ একসাথে কয়েকটা, কেউ সবকয়টায়। কিন্তু কোনভাবেই সব শর্ত পূরণ করবে এমন কাউকে পাওয়া যায় না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমরা একের পর এক বিয়ে করতে থাকি। বাসর ঘরে বউয়ের মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলি - "অধরা!" অনেকে আবার বিয়েও করে না, চুপচাপ পথ চেয়ে বসে থাকে, যদি কখনও অধরা সদয় হয়!
মেডিকেল ছেড়ে দেশে ছড়িয়ে যাই। অধরাকে মনে পড়ে, দিনে একবার দুবার তিনবার। ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বললে শেষ প্রশ্ন থাকে, "অ্যাই, অধরার কি বিয়ে হয়েছে?"
তারপর অনেক দিন পর।
অধরার সাথে দেখা হল। রিইউনিয়নে। অধরা আগের মতই সুন্দর। আগের মতই বুকে ঝড় উঠল আমাদের।
আমাদের বউরা সব টের পেল। ক্ষণে ক্ষণে মুখ ঝামটা দিয়ে বলতে লাগল, "আজ বাড়ি আসো, খবর আছে"।
অধরার পাশে কেউ নেই। তবে কি অধরা আজও একাই? সাহস করে কাছে চলে গেলাম অধরার।
"অধরা, ভাল আছ?"
"আপনি...?"
"আমি অমুক ব্যাচের সালেহ। ঐ যে, খালি ফেসবুকে লিখতাম"।
"ও, সালেহ ভাই! ভাল আছেন?"
"হ্যাঁ। তুমি একা যে? আজও পাও নি তাকে?"
অধরা চোখ ছোট করে আমার দিকে তাকাল। আমার হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল।
আমি অনুভূতি চেপে রেখে বললাম, "সব শর্ত পূরণ করে এমন কাউকে পাও নি?"
অধরার চোখে পানি।
"পেয়েছিলাম। হারিয়ে ফেলেছি"।
জানি না, কেন যেন খুব উল্লাস হচ্ছিল। যেন অধরার পরাজয়ে আমার বুক থেকে অনেক দিনের চেপে থাকা ভারী একটা পাথর নেমে গেল।
বললাম, "কেন?"
অধরা বলল, "একটা শর্ত দিতে ভুলে গিয়েছিলাম ভাইয়া। কোন শর্ত জানেন?"
বললাম, "না তো। কোন শর্ত?"
অধরা বলল, " 'আমাকে ভালবাসতে হবে। একদম হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে হবে'। এই শর্তটা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমি যা চেয়েছি সবই পেয়েছি, শুধু ভালবাসা পাই নি। মানুষটা আমাকে কখনও ভালবাসে নি। এমন কেন হল বলতে পারেন সালেহ ভাই? কেন মনে হল ভালবাসা না পাওয়া আর কিছুই না পাওয়া সমান? কেন মনে হল ভালবাসা না পেলে আর সবকিছু পাওয়া বৃথা? কেন মনে হল এক টুকরো ভালোবাসার জন্য আমি আমার সারা পৃথিবী বিক্রি করে দিতে পারি? কেন? কেন? কেন?"
এ প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা ছিল না। অধরা চলে গেল। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। আমার আনন্দও হচ্ছিল না, কষ্টও হচ্ছিল না। শুধু কেমন যেন ভোঁতা একটা অনুভূতি।
ঘুরতে ঘুরতে আমার বউয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল।
বউ চোখ পাকিয়ে বলল, "কি এমন কথা ঐ মেয়ের সাথে? কি এমন কথা?"
কেন যেন আমি বউয়ের হাতটা একটু বেশি জোরে চেপে ধরলাম। যেন কোনদিন ছাড়ব না এমনভাবে
©somewhere in net ltd.