নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ তায়িফ-বিন-তোফা

অনেক ভালো লাগে নিজের মত করে ভাবতে ,

মোঃ তায়িফ-বিন-তোফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্নফাঁস!!! , আমরা সবাই নিরব সাক্ষী

২৬ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:০৩

৯.৫০ মিনিট, রসায়ন ১ম পত্র পরীক্ষা শুরু হতে আরো ১০

মিনিট সময় বাকী। সকল ছাত্রদের খাতা দিয়েছেন স্যার।

রেজিস্টেশন নাম্বার, বৃত্ত ভরাট করে রুলার টানছে রুপক,

পাশের বন্ধুকে সে দোয়া পড়তে শুনছে।



সামনের সীটে বসা রবিনও রুলার টানতে টানতে নিচু

স্বুরে রুপককে বলছে " দোস্ত আসবে তো?? আমি কিন্তু

ঐ গুলা ছাড়া আর পড়িনাই "। রুপকও ভয়ে ভয়ে আছে, তবু

নিচু স্বরে রিপ্লাই দিল" আরে, চিন্তা করিসনা, এই

পর্যন্ত একটাও মিস হয় নাই "



প্রশ্নের প্যাকেট ছেড়া হোল ৯.৫৫ মিনিটে। হলের স্যার

প্রশ্ন দেখছেন, প্রশ্ন হাতে নিয়ে স্যার

অপেক্ষা করছেন ১০ টা বাজার জন্য। সামনের দিকের

সীটে বসা এক ছেলে ( রুপকের বন্ধু) স্যারের

হাতে থাকা প্রশ্নের অপর পীঠ পড়ার চেষ্টা করল। তার

চেহারাটা মুহূর্তেই উজ্জল হয়ে গেল, পিছনে ফিরেই

সে পুরো হলের উদ্দেশ্যে ভূরু নাচিয়ে হাসি দিল।



ব্যাস, পুরো হলে স্বস্তির বাতাস যেন বয়ে গেল। রুপক

বুঝতে পারল কাল

রাতে ফেসবুকে পাওয়া প্রশ্নটা তাহলে চলেই আসলো,

আর ঠেকায় কে?

হ্যা, রসায়ন ১ম পত্রে ১০ টা সৃজনশীল প্রশ্ন ছড়িয়ে ছিল

ফেইসবুকে। তার মধ্যে ৫ টা প্রশ্নই কমন পেয়েছে রুপক,

কিন্তু MCQ কমন আসে নাই। রুপক চট্টগ্রামে থাকে,

সে এবং তার বন্ধুরা মিলে ঢাকার একটা লিংক

(প্রশ্নদাতা) রেডি করেছিল HSC 14 পরীক্ষা শুরুর

আগেই। প্রতিটা প্রশ্নের জন্য ১০০০ করে দিতে হত

লিংকে। ফেইসবুকে তো অনেক প্রশ্নই পাওয়া যায়, কিন্তু

তাতে রুপক আর তার বন্ধুদের আস্থা নেই।



তারা ঢাকার ঐ লিংক দ্বারা আগে সিওর হয়ে নেয় কোন

প্রশ্নগুলো তারা পড়বে ( ২০টা ফাশ হওয়া প্রশ্ন কি আর

পড়া যায় এক রাতে?)



যাই হোক, পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েই রুপক

আমাকে ফোন দিল ( আমি রুপককে রসায়ন পড়াতাম) । "

ভাইয়া, ও ভাইয়া, ফাটাই দিছি পুরা, ৫ তবে MCQ ক কমন

আসে নাই ভাই, তাও সবাই মিলে ডিস্কাস

করে দিছি ২৭/২৮ টা হবে "।



আমি আর কি বলব? " আলহামদুলিল্লাহ, ভালো "

বলে কেটে দিছি। ওকে যখন পড়াতে যাই প্রথম তখন ওর

আব্বু আমাকে বলেছিল, তুমি রসায়নটা দেখ, বাকী গুলো ও

কম্পলিট করবে অন্য স্যারদের কাছে। রুপক

এমনিতে ভালো ছাত্র ওকে পড়াতে খুব ভালো লাগছে।

কিন্তু কথায় আছেনা? মানুষ দুইভাবে খারাপ কাজ

হোতে দুরে থাকে, এক নিজে থেকে, আরেক খারাপ কাজ

করার চান্স না পেলে। প্রথম পর্যায়ের মানুষ এখন

পৃথিবীতে বিরিল। আর সবাই তো আর আইনেস্টাইন না,

প্রশ্ন পেলে সবাই সেটা দেখবেই।



রুপকও তাই করেছে । আমি এই ভেবে নির্ভার হোলাম,

যাক আমার দায়িত্বটাত পালন করতে পারলাম?

ছেলেটা রসায়নে A+ তো পাবে। পরে আবার বিবেকের

আগুনেই পুড়লাম, এইটা আসলে ঠিক হোল?



এতো গেলো রুপকের কথা, আমার আরেক স্টুডেন্ট

ফিজিক্স পড়ত সরকারি কলেজের এক স্যারের

কাছে ব্যাচে। ফিজিক্স প্রশ্ন ফাস হোলে ওরা সবাই

স্যারে বাসায় যায় প্রশ্ন solve করতে। স্যারের বাসায়

ঢোকার সাথে সাথেই স্যার তার android ডাউস সেট বের

করে বললেন " কিরে, তোরা কোনটা পাইছিস প্রশ্ন,

আমারটার সাথে মিলিয়ে নে, এগুলাই আসবে "

এটা নিয়ে আমার স্টুডেন্টরা প্রচুর হাসা হাসি করছে।

করবেইনা বা কেন? এত নির্মল আনন্দ পরীক্ষার

আগে আর কেউ পায়?

রসায়ন ২ য় পত্রেও একই অবস্থা, সবার কাছে ক সেট

আর খ সেট প্রশ্ন। কিন্তু কেউ

বলতে পারছেনা কোনটা আসবে। পরীক্ষার আগের

রাতে জানতে পারল ক সেট আর খ সেট মিক্স

করে আসবে। আসলেই তাই হোল প্রশ্নে , ক আর খ সেট

মিলিয়েই প্রশ্ন হোল।

রুপকসহ আমার প্রতিটা ছাত্র A+ পাবে রসায়নে। কিন্তু

আমার কোন অবদান নেই। আমি নিজেও ছাত্র মানুষ, ওদের

আর কিবা শেখাব? তাও একটু

চেষ্টা যে করিনি তা বললে ভুল হবে।

রেজাল্ট হোলে ওরা সবাই হয়ত আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে,

আমি তো সেই মিষ্টির যোগ্য হবনা, সেই মিষ্টি আমাত

হজমও হবেনা। ঠিক তেমনি HSC 2014 শিক্ষাবোর্ড হজম

করতে পারবেনা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর কথা উঠলেই এই

সম্পর্কে আমাত ছোট বেলার একটা গল্প

মনে পড়ে প্রশ্ন ফাশ হওয়া নিয়েই।

তখন সেভেনে পড়ি , সেভেনের ২ য় সাময়িক

পরীক্ষা চলছিল। অংক পরীক্ষার আগে আমারা সবাই অংক

প্রশ্ন হাতে হাতে পেয়ে গেলাম। সবাই

তো খুশিতে লাফালাফি করে শুধু ঐ অংক গুলাই

বেশি করে দেখে গেলাম। পরীক্ষার দিন হলে ঢুকে সবার

চোখ ছানাবড়া , প্রশ্ন কমন আসেনাই।

কিছুক্ষণ পর হেড স্যার আসলেন, এসে বল্লেন "

কিরে তোরা নাকি প্রশ্ন পাইছিস? কে কে প্রশ্ন

পাইছিস দাড়া তো? " আমরা কেউ দাড়াইনাই, পাগল

নাকি দাড়াইয়া স্যারের প্যাদানি খাই।

কেউ দাড়াইনাই দেখে স্যার ক্ষেপে গিয়ে হলের

স্যারকে বললেন " দেখেনত, সকালে কে জানি বলল প্রশ্ন

ফাস হোইছে, আমি তাই নতুন প্রশ্ন বানাইলাম, এত কষ্ট

করলাম, আর এখন দেখি কেউ প্রশ্ন পায় নাই, স্কুলের

টাকা আর আম্র শ্রম নষ্ট করলাম "

আমাদের হেড স্যারের কথা শুনে আমাদের হাসি থামেনা,

এক বন্ধু তো আস্তে করে বলেই ফেলল " তাহলে স্যার

আগের পরশ্নেই এক্সাম নিতেন, এইটা কঠিন

লাগতেছে!!! "

আমাদের হেড স্যারের মত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম

নাহিদও হয়ত সরল মনে ভাবছেন প্রশ্ন ফাস

একটি বানানো কথা।

তিনি হয়ত সত্যটা জানতে পারছেননা, অথবা জানতে সময়

ক্ষেপন করছেন।

শ্রদ্ধেয় মন্ত্রীর জন্য লালন এর গান ডেডিকেইট করলাম

" সময় গেলে সাধন হবেনা "

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ৭:২১

সুমাইয়া আলো বলেছেন: নাহিদের পাছায় কেউ লাথি মারেনা ক্যান >)

২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭

মোঃ তায়িফ-বিন-তোফা বলেছেন: ওনার সকল সাফল্য এই প্রশ্নফাস ব্যাপারটাই শেষ করে দিল। আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩০

নিজাম বলেছেন: এই জাতির ভবিষ্যত কী?

২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯

মোঃ তায়িফ-বিন-তোফা বলেছেন: সবাই আমরা শঙ্কিত, কি হবে সামনে, আর কি করেইবা সামাল দিব আমরা এই সময়টুকু, জানা নেই। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৪১

মাইরালা বলেছেন: জয় নকলের জয় :) :) :) :) :D :D :D :D :D

নকল যুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই ;) ;) ;) ;)

নকলের দাবীতে ৩ দিনের হরতাল দিলাম :#) :#) :#)

২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫১

মোঃ তায়িফ-বিন-তোফা বলেছেন: :) :), হ ভাই, নকল নাইলে প্রশ্নফাস, এই দুইটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থারে শেষ কোইরা দিছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.