নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা সময় আমি ছিলাম বইয়ের পোকা, আর এখন ইন্টারনেটের!!স্বপ্ন থেকে বাস্তবকে বড্ড ভালোবাসি আমি।

আব্দুল্লাহ তুহিন

আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ... একটু লিখতে ভালোবাসি.. এক কথায় হাতে কলম থাকলে পুরা পৃথিবীকে খাতা বানাই লিখতে পারবো! একটা সময় লিখার উপর অনেক সপ্ন ছিল,!!

আব্দুল্লাহ তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"সামথিং এবাউট কালচার এন্ড "পহেলা বৈশাখ"....(!)

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৫

"আজকে বাংলা মাসের কত তারিখ’?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হলে শতকরা হিসাবে খুব সামান্য সংখ্যক বাঙালির কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যাবে।
‘আজকে ইংরেজি মাসের কত তারিখ’?
এই প্রশ্নটির জবাবে শতভাগ সঠিক উত্তর পাওয়া সম্ভব।
অথচ বাংলা নববর্ষের মচ্ছবে আর বাঙালি সংস্কৃতির নামে এরাই প্রচ- হল্লা করে। ইলিশ আর পান্তা খেয়ে একদিনের বাঙালি সাজে। নানা রকম উপলক্ষের মোড়কে বাংলা নববর্ষ আর বাঙালি সংস্কৃতির মূল লক্ষ্যকে স্পর্শ করার বদলে হট্টগোল করে। এরা সংস্কৃতি যে জীবনের অংশ সেটা বিবেচনা না করে আচার সর্বস্ব একটি অনুষ্ঠানে পর্যবসিত করে। বাংলা বা
বাঙালির কল্যাণ ও উপকার করার জন্য ঐতিহাসিক বিবেচনায় অগ্রসরের কোন পথ ও পন্থা তারা গ্রহণ করে না। করলে সারা বছর ভিন্ন সংস্কৃতির তাঁবেদারি করে একদিনের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার প্রহসন করতে এই শ্রেণিটি কুণ্ঠিত হতো।
,
"এবার আসি সংস্কৃতিতে,,সংস্কৃতি বলতে আমরা আসলে কি বুঝি??
"সংস্কৃতি হলো যে কোনো জাতির মানস দর্পণ, যে দর্পণে প্রতিফলিত হয় সামগ্রিকভাবে গণমানুষের চিন্তা-চেতনা, তথা তাদের জীবন ও মূল্যবোধ। আর সেই মূল্যবোধের অর্থই হচ্ছে সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের উপাসনা। একটি কলি পূর্ণ বিকশিত না হলে যেমন তাকে ফুল বলা যাবে না, ঠিক তেমনি জাতির আংশিক জীবনের প্রতিচ্ছবি কোন কিছুকে পরিপূর্ণভাবে সংস্কৃতি বলা যায় না। অর্থাৎ সংস্কৃতি এমন হতে হবে, যার মাধ্যমে জাতি নির্ভেজাল পরিপূর্ণতা লাভ করে, যে সংস্কৃতি সত্যিকার অর্থে কল্যাণ প্রতীক। জাতির আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক, আহার-বিহার থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে পরিপূরক যে চেতনা তার অন্য নামই সংস্কৃতি।
,

বাংলা নববর্ষের সূচনাঃ (পিছনে ফিরে দেখা)
বাংলা নববর্ষের সূচনা মুসলমানদের হাতে। মুসলিম ঐতিহ্যের হিজরি সনকে ভিত্তি করেই বাংলা সনের উৎপত্তি হয়েছে। ইতিহাসের ভাষ্য মতে, বাংলার স্বাধীন সুলতানি শাসন (১৩৩৮-১৫৩৮) পরবর্তীকালের পাঠান, আফগান ও ঈসা খানের নেতত্বাধীন বারো ভূঁইয়া শাসনের অস্থির ধারাবাহিকতায় মুঘল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) বাংলার খাজনা আদায়ের বিষয়টিকে একটি বিশৃঙ্খল, জটিল ও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে দেখতে পান। রাজনৈতিক সমস্যা ছাড়াও চান্দ্র মাসভিত্তিক
সাল গণনায় দেখা যায় যে, বছরে ১০-১১ দিন করে কমে মাসগুলো ক্রমান্বয়ে সারা বছরে আবর্তিত হতে থাকে। অথচ খাজনাদাতা কৃষিজীবীর জমির ফসল কিন্তু মওসুম মতোই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই উৎপন্ন হয়। এতে খাজনা আদায়ের বার্ষিক সিডিউল প্রতি বছরই পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়।
,
‘খাজনা’ আদায়সহ রাজকার্যের সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট আকবর হিজরীর পাশাপাশি বাংলা সনের প্রবর্তন করেন এবং অগ্রহায়ণের পরিবর্তে বৈশাখ থেকে বর্ষ গননা শুরু করেন। তখন থেকেই বাংলা সন পায় রাজকীয় মর্যাদা। বাংলা সনের গননা শুরু হয় ঈসায়ী ১৫৫৬ সালের ১১ এপ্রিল থেকে। সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি এবং লাভ লোকসানের হিসাব মিলিয়ে হালখাতা (লাল মলাটের নতুন খাতা) খোলার রীতি নববর্ষ উৎসব উদযাপনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। আর এই হালখাতা, খাজনা আদায় করাকে উপজীব্য করে পহেলা বৈশাখের মত একটি লোকজ উৎসবের গোড়াপত্তন হয়। রাজধানী ঢাকায় তিন দশক আগে পটুয়া কামরুল হাসান নিজে ঢোল বাজিয়ে গ্রামীণ মেলার আদলে প্রথম বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) পৃষ্ঠপোষকতায় বৈশাখী মেলা শুরু করেন বাংলা একাডেমীর সবুজ চত্ত্বরে। সেই থেকে শুরু
হেলা বৈশাখের প্রথম পদযাত্রা।
,
পহেলা বৈশাখের কথকতাঃ
চিরদিনই এই বাংলায় চৈত্র বৈশাখ ছিল দুঃখের মাস, অভাবের মাস। কৃষকদের ঘরের মজুদ খাবার প্রায়ই ফুরিয়ে যেত। বৈশাখে বৃষ্টি না হলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো আগামীতে, এ জন্য হিন্দু মুসলমান কৃষক সম্প্রদায়ের দিবানিশি কান্না ছিল বৃষ্টির জন্য। আগুন লাগা রোদ আর ঝকমকে নীল আকাশ দেখলেই থমকে যেত কৃষক, ছলছলে চোখে তাকিয়ে থাকতো ভয়ংকর বিশাল এক নীল পাথরের মত আকাশটার দিকে। চৈত্র-বৈশাখকে নিপীড়ন - নির্যাতন - অত্যাচারের মাসও বলা যায়। এই মাসেই জমিদারদের পাইক পেয়াদা তহশীলদার বাঘের মত মেজাজ নিয়ে ঘুরে বেড়াত গ্রামে গ্রামে। জমিদারদের খাজনা পরিশোধ করতে না পারলে প্রজাদের ছিল মরণাবস্থা। পাইক পেয়াদাদের অমানবিক অত্যাচার শুরু হয়ে যেত প্রজাদের উপর। যে প্রজা খাজনা পরিশোধ করতে পারত না, তার জমিজমা, হালের বলদ কেড়ে নিত তারা। যে প্রজার কিছুই নেই, তার পিঠে পড়ত চাবুকের অসংখ্য আঘাত।পাইক পেয়াদাদের মন কখনও নরম হতো না। নায়েবের হাতে পায়ে ধরে কাঁদলেও সে ক্ষমা করতো না। অবশেষে বউঝিরা হাতের গয়না কিংবা আসবাবপত্র ঘুষ দিলে হয় তো কিছুটা মাফ হতো। তাই এই ভুখা নাঙ্গা-শরীর কৃষকদের কাছে এ দিবসের কোন বিশেষত্ব ছিল না- দুঃখ আর কষ্ট ছাড়া এবং সেই সাথে সম্ভ্রান্ত মুসলিমরা ইসলাম পরিপন্থী বিষয় মনে করে এ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে। মাঝখান থেকে লাভবান হয়েছে হিন্দু জমিদার শ্রেণী।
,
নববর্ষের বর্তমান ধারাঃ
বিগত কয়েক দশক বিশেষ করে নব্বই এর শুরু থেকে বর্ষবরণের এক আশ্চর্য ধারা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। ‘পহেলা বৈশাখে’ ঢাকা পরিণত হয় মেলার নগরীতে। সূর্য ওঠার সাথে সাথে নারী পুরুষ নির্বিশেষে বেড়িয়ে পড়ে বর্ষবরণ আয়োজনে শামিল হতে। লাল
সাদা কাপড় পড়ে রঙিন জীবজন্তুর মুখোশে মুখ ঢেকে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। বছরে একদিন পান্তা ইলিশ খেয়ে সারা বছর ভালোভাবে কাটানোর কুসংস্কার আঁকড়ে ধরে মানুষ মরিয়া হয়ে শানকিতে ভরা পান্তা ভাত আর ইলিশ ভাজা খায় । সেই সাথে প্রায় মাস খানেক আগে থেকেই ধুম পড়ে যায় নতুন কাপড় কেনার। দেওয়া হয় উলুধ্বনি, গাওয়া হয়
পরা হয় চন্দন তিলক, বাজানো হয় ঢাক ঢোলক, আবদ্ধ হয় রাখী বন্ধনে এবং আয়োজন করা হয় উদ্দাম নৃত্য সম্বলিত কনসার্টের, যেখানে চলে সীমাহীন উশৃঙ্খলতা।
,
গত বছরের দৈনিক পত্রিকাগুলোর দিকে তাকালে যার সত্যতা আমরা দেখতে পাই-
"পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৈশাখী উৎসবে অংশ নিতে এসে অন্তত অর্ধশত ছাত্রী লাঞ্চিত হয়েছেন। - বিকেল ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত টি.এস.সি’র গেটে ছাত্রীদের হামলা ও জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪৬ টি। - হামলাকারীরা ছাত্রীদের দু‘দিক থেকে জামা ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। পর ৮-১০ জন করে হামলে পড়েছে।" (দৈনিক যুগান্তর)
শুধুু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেই বর্তমানে বর্ষবরণ উৎসবে উচ্ছৃঙ্খলতা ও নিপীড়নের ঘটনাগুলো প্রায়শই ঘটছে।
,
পরিশেষে এটাই বলব যে,,
বাংলা নববর্ষ ও সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য সম্পর্কে এবং এর ঐতিহাসিকতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অপরিহার্য। অজ্ঞতার মাধ্যমে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান বা অংশগ্রহণ অর্থবহ হতে পারে না। লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন না হলে সেটা উপলক্ষ সর্বস্ব হৈচৈ বৈ আর কিছু হতে পারে না। এর মাধ্যমে মোক্ষ বলতে আসলেই কিছু পাওয়া সম্ভব হয় না। জাতীয় জীবনে সংস্কৃতি নিয়ে চর্চার সময় ইতিহাস সচেতনতার যেমন দরকার, তেমনি পুরো কার্যক্রমের লক্ষ্যও সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। উপলক্ষগুলোও যাতে কোনোভাবেই মূল আদর্শ বা লক্ষ্যকে অতিক্রম করতে না পারে, সে খেয়ালও রাখা দরকার। বিশেষত পুরো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক অর্জনের পথে যাওয়াই মূল মোক্ষ হওয়া বিধেয়। মহৎ উৎসবের সময় উদ্দেশ্যহীন বেলেল্লাপনা কিংবা সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপসংস্কৃতিভিত্তিক কার্যক্রম কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশেষ করে, দুষ্ট, সমাজবিরোধী এবং তস্করগণ যেন
জাতীয় অনুষ্ঠানাদির স্বচ্ছ ইমেজের মধ্যে কালো কলঙ্কের দাগ লেপন করতে না পারে এবং নারী নির্যাতনের কারণ না হয়, সেটা কঠোরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। উপলক্ষে মেতে থেকে লক্ষ্য-বিচ্যুতিও কাম্য নয়। আসন্ন নববর্ষের প্রাক্কালে পূর্ণ সতর্কতা জরুরি
এবং যে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। সবাইকে এ কথাটি অনুধাবন করতে হবে। তবেই উৎসব উদ্দেশ্যহীন হবে না। উৎসবের দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসবোধের মাধ্যমে সজীব ও অটুট থাকবে।

.....(সমাপ্ত).....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.