নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হ য ব র ল

অজানাবন্ধু

হ য ব র ল

অজানাবন্ধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

হামিদ মীর: একজন ভুল মানুষের প্রস্থান -পিনাকী ভট্টাচার্য

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:২৬

ঠিক কোন যোগ্যতায় হামিদ মীর বাংলাদেশের প্রধান দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখে যেতেন সেটা এক রহস্য। আমরা ছাপার অক্ষরে যা দেখি সেগুলোতে অবলীলায় বিশ্বাস স্থাপন করার এক দুর্লভ গুণ আমাদের রয়েছে!



এই দুর্লভ গুণের ঘাড়ে সিন্দাবাদের মতো সওয়ার হয়ে কর্পোরেট মিডিয়াগুলো এতদিন আমাদের সাপকে দড়ি আর দড়িকে সাপ হিসেবে চিনিয়েছেন। মূলধারার মিডিয়ার পাশাপাশি ব্লগ আর সোশ্যাল মিডিয়ার উন্মেষে এ চালাকিগুলো মাঝেমধ্যেই নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। হামিদ মীরের চালাকি সেটার সাম্প্রতিক উদাহরণ।



হামিদ মীরকে নিয়ে উচ্ছ্বাস তৈরি করে ‘প্রথম আলো’ আর ‘ডেইলি স্টার’। আমরা যারা সবসময় পত্রপত্রিকায় চোখ রাখি তারা নামটি কম-বেশি জানি। সে সময় তার বয়স হবে পঁয়ত্রিশের কাছাকছি। হামিদ মীরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় একজন ব্যতিক্রমী বাংলাদেশপ্রেমী পাকিস্তানি হিসেবে যিনি কিনা একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিচার চান।



হামিদের লেখা ধারাবাহিকভাবে পড়লে মনে হয়, তার আসল লক্ষ্য পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাক। নিয়মিতভাবে এ ‘ক্ষমা-তত্ত্ব’ প্রচারের জন্য ‘প্রথম আলো’ লেখক হিসেবে হামিদ মীরকে এবং বিপরীতভাবে তিনিও ওই পত্রিকাটি বেছে নিয়েছেন।



পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর

পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর

বাবার কারণে বাংলাদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়েছে। তার বাবাকে দেওয়া ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা`পুরষ্কার গ্রহণ করে তার সেই বাংলাদেশপ্রেমী ইমেজ উত্তুঙ্গ হয়েছে। পুরষ্কারটি বাবার পক্ষ থেকে হামিদই গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশে এসে। পিতার সম্মানের পুরো উত্তরাধিকারও ভোগ করেছেন তিনি। এটা তার ইমেজে নতুন একটি পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছে।



এছাড়া হামিদ নাকি একবার বলেছিলেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারাও করবেন। আর এ সব খবরই আমরা পেয়েছি দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর বরাতে। অর্থাৎ তাকে মোটামুটি বীরের মর্যাদায় স্থান দেওয়ার কাজটুকু কিন্তু আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো এবং বিশেষ করে ‘প্রথম আলো’ করে রেখেছে।



এ পর্যন্ত লিখতে পারলে বোধহয় ভালোই হত। কারণ সে ক্ষেত্রে হয়তো কিছু একটা লিখে উপসংহার টেনে দেওয়া যেত। কিন্তু বাদ সাধল অতিসম্প্রতি পাকিস্তানের দৈনিক ‘জং’-এ উর্দুতে লেখা হামিদ মীরের একটি কলাম। Click This Link



তিনি যা লিখেছেন তার সারমর্ম করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে– গোলাম আযম হচ্ছেন একজন জাতীয় বীর আর বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার বিচার করা হচ্ছে। এছাড়াও লিখেছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত নব্বই বছরের বৃদ্ধ গোলাম আযমকে বাইরে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো!



উর্দুতে লেখা তার এই নিবন্ধ পড়তে গেলে হোঁচট খেতে হয়। কারণ তার লেখা বলে যে পদার্থগুলো আমরা এতদিন পড়ে এসেছি তার সঙ্গে এই লেখার একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ইংরেজিতে তার লেখার যে ধরন সেটির চেয়ে তার উর্দু লেখা ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন, শব্দের ব্যবহার ভিন্ন, রেটরিক ভিন্ন।



তিনি দুই ভাষায় লিখেন। ইংরেজিতে লেখার উদ্দেশ্য থাকে পাকিস্তানের উর্দু না-জানা শিক্ষিত সমাজ আর আন্তর্জাতিক পাঠক। পুরোমাত্রায় সেকুলার ঘরানার ইংরেজি লেখায় তাকে একজন আধুনিকমনস্ক অগ্রসর মানুষ মনে হবে। আর উর্দুতে লিখেন ইংরেজি না-জানা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য, যেখানে তিনি পুরোদস্তুর প্রতিক্রিয়াশীল। এভাবেই উনি তার পাঠককুলকে আলাদা করে দু পক্ষকেই খুশি করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রেখেছেন।



তালেবান-ঘনিষ্ঠ বলে হামিদ মীরের সমালোচনা রয়েছে। তালেবানরা যে তাকে বিশ্বাস করে সেটার প্রমাণ এটাই যে তিনিই প্রথম সাংবাদিক যিনি একাধিকবার ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এমনকি তোরাবোরা পর্বতগুহায় সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া ওসামার শেষ সাক্ষাৎকারটাও নিয়েছিলেন হামিদ। এসব সাক্ষাৎকার তাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দেয়।



তবে হামিদের তালেবান-ঘনিষ্ঠতা প্রমাণিত হয় ২০১০ সালে, যখন তালেবানের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড উসমান পাঞ্জাবির সঙ্গে অপহৃত সাবেক আইএসআই এজেন্টের মুক্তি বিষয়ে তার টেলিফোন-সংলাপ ফাঁস হয়। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয় সে খবর। Click This Link



ওই সংলাপে খুব স্পষ্টভাবে হামিদ মীর অপহৃতকে ‘একজন বিশ্বাসঘাতক ব্যাড মুসলিম’ বলে অভিহিত করে তার মুক্তির বিরোধিতা করেন। এরপর অপহৃতের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ফাঁস হওয়া টেলিফোন-সংলাপ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, তার ভয়েজের স্যাম্পল নিয়ে এ কথোপকথন কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে। আমরা সাঈদীর ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর জানি সেটা করা সম্ভব নয়।



দু দিকে রিভার্স খেলা এবং আন্তর্জাতিক আগ্রহ ধরে রাখার জন্য মাঝেমাঝেই ইস্যু লাগে। যখন তাকে নিয়ে আলোচনায় ভাটা পড়ে তখন তিনি নিজেই ‘আল কায়েদার কাছে তিনটি আণবিক বোমা থাকার তত্ত্ব’ হাজির করেন। তিনি বললেন, সেসব বোমা ছোঁড়া হবে লন্ডন, প্যারিস ও লস অ্যাঞ্জেলসে।



গত বছর হঠাৎ তার গাড়ির নিচে গাড়ি-বোমা পাওয়া যায়। আবারও তিনি আলোচনায় আসেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তানে অনেক সহিংসতা ঘটলেও গাড়ি-বোমার ব্যবহার সেটাই প্রথম। অনেকের ধারণা এটাও একটা সাজানো নাটক।



‘জং’-এ প্রকাশিত হামিদ মীরের লেখাটির বাংলা অনুবাদ ‘প্রথম আলো’ না ছাপালেও তাদের প্রিয় সাংবাদিকের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। ৩১ জুলাই, ২০১৩ হামিদের ই-মেইলের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, তিনি বিহারীদের বীর বলেননি। এ বিবৃতি বিশ্বাস করার মতো আস্থা আন্তর্জাতিকভাবে হামিদ মীরের নেই।



হামিদ সম্পর্কে এফবিআইয়ের কর্তাব্যক্তি পল উইলিয়ামস যা বলেছেন আগ্রহী পাঠকরা সেটি পড়ে দেখতে পারেন। তিনি বলেছেন, “হামিদ মীর অনেকবার তার বিবৃতির উলটো কথা বলে পার পেতে চেয়েছেন, লোকটা ভয়ানক মিথ্যাবাদী।“ Click This Link



বাংলাদেশের প্রধান মিডিয়ার জন্য দুঃসংবাদ, এতদিনে তিলতিল করে গড়ে তোলা হামিদ মীর নামের ‘ডিপ-কভার’ এজেন্টের কলঙ্কিত প্রস্থান ঘটল। মীরকে দিয়ে করাতে চাওয়া এজেন্ডার বাস্তবায়ন তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ল!



আমরাও বারবার ভুল মানুষের উপর আস্থা আনি, ভালোবাসি, প্রতারিত হই, আবার আস্থা আনি…।





কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল

আর কোনটা যে সূর্যমুখী–

বারবার দেখেও

আমার ভুল হয়ে যায়,

আমি আলাদা করতে পারি না৷

ওলকপি এবং শালগম,

মৃগেলের বাচ্চা এবং বাটামাছ,

মানুষ এবং মানুষের মতো মানুষ–

বারবার দেখেও

আমার ভুল হয়ে যায়,

আমি আলাদা করতে পারি না৷



পিনাকী ভট্টাচার্য: ব্লগার, লেখক ও শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী।



সূত্র

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪৮

তোমোদাচি বলেছেন: পিনাকী ভট্টাচার্য !!! এইটা কে, কোন ধান্ধার মানুষ, আগে সেটা ভাল করে জেনে নেই, তারপর হামিদ মীর প্রসঙ্গে আসব!

যা দিনকাল পড়ছে, কারে বিশ্বাস করার উপায় নাই!!

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

অজানাবন্ধু বলেছেন: সত্যিই আজকাল মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন।

পিনাকী ভট্টাচার্য: ব্লগার, লেখক ও শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী।

এভাবেই তার পরিচয় লেখাতে উল্লেখ করেছেন।
তার বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানিনা।

২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪

টুনা বলেছেন: একটা গালি দেবার ইচ্ছে হচ্ছিল। তবে উর্দু লেখাটা আগে উর্দুভাষীকে দিয়ে পড়াব। আপনাকে অবিস্বাস করছি না। তার পরেও এতো বড় খবরটা আরো যাচাই করে নিই।


ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯

অজানাবন্ধু বলেছেন: ভাইজান/বুবুজান লেখাটা আমার না ।
লিংক সবার নিচে যুক্ত করা আছে।
তাছারা লেখকের পরিচয় ও উল্লেখ করা হয়েছে।

যাচাই করে মতামত দিবেন আশা করি।

সত্য/মিথ্যা আমারও জানা দরকার।

৩| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭

বনসাই বলেছেন: প্রকৃতই আমি আজ আকাশ থেকে পড়লাম। খুব জোরে মতিরে একটা গাল দিতে মন চাইলেও রোজার জন্য দিলাম না।

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮

অজানাবন্ধু বলেছেন: হামিদ মীর এর লিখা আমরও ভাল লাগত। এখন মনে হচ্ছে তার বিষয়ে ভাল ভাবে জানা দরকার।

৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭

খেলাঘর বলেছেন:


গোলাম আযমের চিকিৎসা হওয়া দরকার, কবর থেকে হাড়গোড় তুলে সিন্দু নদীতে ফেলে দেয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.