![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত দুই বছর ধরে পাশের মহল্লার বিউটি কুইন জরিনাকে পছন্দ করে ধলা মিয়া। ধলা মিয়ার নাম ধলা মিয়া হলেও সে কিন্তু দেখতে ধলা নয়।তার ধলা মিয়া নামের পেছনে একটা গল্প আছে।ধলা মিয়া তার মা বাবার চতুর্থ সন্তান। তার বড় দুইটি ভাই এবং একটি বোনের গায়ের রং কালো হওয়ায় তার মা বাবা চেয়েছিল চতুর্থ সন্তানটি যেন ফর্সা হয়। এবং তারা মানত করল যে,চতুর্থ সন্তানটির নাম রাখবে ধলা মিয়া/বাণু।ধলা মিয়ার জন্ম হলো।কিন্তু সে ফর্সা হলোনা। সে তার বাপ-দাদা এবং ভাইবোনদের মতোই কালো গাত্রবর্ণ নিয়ে জন্ম নিল।কিন্তু যেই কথা সেই কাজ।মা-বাবা তার নাম রাখলো," ধলা মিয়া"।
মা-বাবার খায়েশের নামটা নিয়ে স্কুল,কলেজ এবং ভার্সিটিতে প্রায় ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো তাকে।কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে সে যযখন বলতো,"আমার নাম ধলা মিয়া" তখন অনেকে তার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকতো।এমনভাবে তাকাতো যেন ধলা মিয়া গায়ের রং কালো হওয়া সত্ত্বেও এমন একটা নাম রেখে মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলেছে।অনেকেই আবার তার নাম শুনেই হেসে খুন হয়ে যেতো।বিশেষ করে ক্লাসের মেয়েরা এই কাজটা বেশি করতো। আচ্ছা ধলা মিয়ার দোষ কী?সে তো নিজে এই নাম রাখেনি।নাম রেখেছে তার মা বাবা। তার দিকে কেন মানুষ এভাবে তাকাবে?তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে?
যা বলছিলাম,ধলা মিয়া ২ বছর ধরে পাড়ার বিউটি কুইন জরিনাকে পছন্দ করে।ধলা মিয়া এই দুই বছর প্রায় প্রতিদিন মেয়েটার কলেজে যাওয়ার পথে দাড়িয়ে থাকতো।কিন্তু একটি বার ও সে জরিনার সাথে কথা বলতে পারেনি।ধলা মিয়াকে পাড়ার ছেলে বুড়ো সবাই ভয় পায়।ধলা মিয়া যে ভয়ানক কাজ করে বেড়ায় তা নয়।তার দুই বড় ভাই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল।সেই সুবাদে এলাকার সবাই তাকে ভয় পায়।পাড়ায় নতুন কোন সুন্দরী মেয়ে আসলে পাড়ার ছোট ভাইদের মাঝে প্রায় ই গন্ডগোল হয়। ধলা মিয়াকেই এই গন্ডগোল সমাধান করতে হয়। যে ধলা মিয়াকে পাড়ার সবাই ভয় পায় সে ধলা মিয়া আবার জরিনাকে ভয় পায়।জরিনার সাথে চোখাচোখি হলে ধলা মিয়ার বুকে ভুমিকম্প হয়,ধলা মিয়া লজ্জা পায়।জরিনার মাঝে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই তবু ধলা মিয়া ভয় পায়। ধলা মিয়া মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয় পৃথিবীর কাউকে সে ভয় পায়না কিন্তু জরিনাকে ভয় পায় কেন?
ধলামিয়ার কালাচান নামে একটা বন্ধু আছে যে ধলামিয়ার মনের কথা জানতো।জানতো,তার বন্ধু একটা জটিল সমস্যায় আছে।কালাচান ধলা মিয়াকে যতবার দেখেছে ততবার বব্ধুর কাছে শুনেছে যে,সে মনের মানুষকে মনের কথা বলতে না পারার জটিল সমস্যায় ভূগছে। কালাচান বন্ধুর সমস্যা নিয়ে ব্যাথিত ছিলো।কালাচান অনেক বার বলেছে ধলা মিয়া যেন সামনা সামনি জরিনার সাথে কথা বলে।কিন্তু ধলা মিয়া ভয় পায়।সে তো কুচকুচে কালো।জরিনা যদি রিজেক্ট করে দেয়?আর "ধলা মিয়া" নাম শুনে তো আরো পছন্দ করবেনা।ক্ষ্যাত ডাকবে।
কালাচান একদিন বন্ধুকে বললো,
-দোস্ত একটা বুদ্ধি বাইর করছি
-কী বুদ্ধি?
-তুই জরিনারে ফেসবুকে প্রপোজ কর।
-আমার তো ফেসবুকে আইডি নাই।
-আইডি নাই তো কী হইছে? আইডি খুলবি।
-আচ্ছা এখন খুলে দে।
-হুম খুলতেছি।নাম কী ধলা মিয়া ই দিব?না অন্যকিছু?
-নিজের নাম বাদে অন্য নাম দেয়া যায়?
-হ্যা যায়। কী নাম দিব?
-কিন্তু এইটাতো প্রতারনা।নিজের মা বাবার দেওয়া নাম না দিয়ে অন্য নাম? পাপ হবে দোস্ত ।আর জরিনার কাছে যদি ধরা খাই?
-আরে ধুর! কী কস তুই?তোর জরিনাও তাইলে প্রতারক।ওর ফেসবুক নাম এঞ্জেল জারিন
-কেম্নে কী? ওর নাম তো জরিনা। জারিন কেম্নে? হয়তো বানান ভুল হইছে।আর নামের আগে এঞ্জেল ক্যান? উমম এঞ্জেল মানে তো পরী। এইটা ঠিক আছে।জরিনা তো দেখতে পরীর মতোই। এঞ্জেল জারিন! আহ! কী সুন্দর নাম দিছে দেখছস? এইজন্যই ওকে এত ভালোবাসি।
-হইছে! এলা অফ যা। তোর জন্য একটা সুন্দর নাম পাইছি।এই নাম দিলে প্রতারনা হবেনা।পাপ ও হবেনা। জরিনার কাছে ধরাও খাবিনা। "শুভ্র"। শুভ্র মানে সাদা।সাদা মানে ধলা।তোর নাম তো ধলা মিয়া।
-দোস্তরে, তরে থ্যানকস দিয়া ছোট করবনা।আয় একটু জড়ায়া ধরি।
ধলা মিয়া কালাচানকে জড়িয়ে ধরে আছে। তার মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ কারন সে কালাচানকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছে।
রাতে তারা দুজন মিলে ফেসবুকে একাউন্ট খুলল।শুভ্রের একটি ছবি এডিট করে ফর্সা বানিয়ে সেটা প্রোফাইল পিকচার দেয়া হলো। কালাচান শুভ্রকে ফেসবুক চালানোর নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিলো।এঞ্জেল জারিনকে রিকুয়েস্ট পাঠালো।দৈনিক একটি করে স্ট্যাটাস ও জারিনের প্রতিটি ছবিতে লাইক দেওয়ার উপদেশ দিল।কিন্তু জারিন রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেনা।দিন যায়,সপ্তাহ যায় রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট হয়না।
ধলা মিয়া কালাচানকে বললো,"দোস্ত আমাকে এখনো ঝুলাই রাখছে"
-ডেইলি লাইক দিতেছিসতো?
-হ্যা।স্ট্যাটাস ও দিচ্ছি।কালকে স্ট্যাটাস দিলাম দেখসনাই? "তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে, আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য"
-হ্যা দেখছি। স্ট্যাটাস সুন্দর হইছে।তুই এক কাজ কর। জরিনার সব ছবিতে কমেন্ট কর পাম্প দিয়ে।
-পাম্প দিব ক্যান? ও তো এমনিই সুন্দরী।
-আচ্ছা ওর ফটোতে নিয়মিত কমেন্ট কর।
শুভ্র ঐ রাতে জারিনের প্রোফাইলের পাবলিক প্রাইভেসীতে থাকা সব ফটোতে কমেন্ট করল।এবং রাত ১২:৩৫ ঘটিকায় জারিন শুভ্রের রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করল।
শুভ্র মেসেজ দিলো,"অনেক ধন্যবাদ জারিন"
জারিন আন্সার দিল," :-) "
শুভ্রের খুব ভালো লাগছে।জারিন তাকে হাসির ইমো পাঠিয়েছে।
-তোমার নামটা অনেক সুন্দর
-থ্যাংক্স
-তুমিও অনেক সুন্দর
-তাই?
-হুম।দুই বছর ধরে কথাটা বলতে চেয়েও বলা হয়নি।
- আপনি আমাকে দুই বছর ধরে ফলো করেন? অদ্ভুত মানুষ তো আপনি।এতদিন রিকুয়েস্ট দেননি কেন?
-আমার আগে ফেসবুক একাউন্ট ছিলোনা
- তাহলে কোথায় ফলো করতেন?
-তুমি কলেজ যাওয়ার সময়।
- অদ্ভুত!
-একটা কথা বললে রাগ করবানাতো?
-জ্বী বলেন
-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই তোমাকে।
-wtf!! কী বলছেন এসব? আপনি এত অভদ্র জানলে আপনার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করতামনা -_-
জারিনের এই মেসেজে শুভ্রের কান্না পেয়ে গেল।তার সাথে কেউ কখনো এত কড়া ভাষায় কথা বলেনি।
- রাগ করোনা প্লীজ। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই।জনম জনম তোমাকে কাছে পেতে চাই।
-নিজের টাইমলাইনের চেহারা দেখেছেন কখনো?
-কেন? টাইমলাইনে কী হয়েছে?
-আপনার স্ট্যাটাসগুলোতে কোন লাইক নেই।
-তুমি লাইক দাওনি তাই লাইক নেই তুমি ছাড়া আমার কোন ফ্রেন্ড ও নেই।
- -_-
- এমন করছ কেন জারিন?টাইমলাইন আর লাইক দিয়ে কী হবে? আমি চাকরি করি।স্যালারি ৩৫০০০ টাকা।নিজেদের বাড়ি আছে। তোমার পাশের মহল্লায় থাকি।আমি বিয়ে করে তোমাকে হ্যাপি রাখব জারিন :-)
- আপনার টাকা নিয়ে আপনি থাকেন।
- তোমার ভালোবাসা পেতে আমি সব করতে পারব।কী করতে হবে বল প্লীজ! আমি তোমাকে ছাড়া খুব অসহায়।
-আপনার টাইমলাইনের ডেইলি ইনকাম অন্তত ১০০০ এবং মাসিক ইনকাম ৩৫০০০ হতে হবে।
-টাইমলাইনের ইনকাম মানে?
- -_- আমি লাইকের কথা বলছি।
- :-( আমি এত লাইক কই পাব? এত ফ্রেন্ড কই পাব? আর তুমি লাইক দিয়ে কী করবে?
- সেসব আমি জানিনা।আমার বান্ধবীদের বিএফ রা সবাই সেলিব্রেটি। আপনাকেও সেলিব্রেটি হতে হবে
- লাইক দিয়ে জীবন চলেনা জারিন।তুমি আমার প্রথম প্রেম।তুমি আমার ব্যাপারে খবর নিয়ে দেখ।বিয়ে করতে রাজি নাই বা হলে কিন্তু আমার বন্ধু হয়ে একবার দেখ জারিন।
- হুরর! আজাইরা। ব্লক লিস্টে যা বলদা!!
অতঃপর সহজ সরল শুভ্র ওরফে ধলা মিয়ার নির্ভেজাল ভালোবাসা নির্মমভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় সে তার ফেসবুক একাউন্ট ডিএক্টিভ করে দিল। এবং মেয়েটি কিছুদিন পর অপরিচিত এক সেলিব্রেটিকে ভালোবেসে ধোকা খেয়ে শুভ্রকে হন্যে হয়ে খোজতে লাগল।কিন্তু শুভ্র ফেসবুকে নেই।জারিনের চোখের সামনে শুভ্রের স্ট্যাটাসটা ভাসছে,"তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম তোমার জন্য।শুধু তোমার জন্য।"
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
রাইসুল আবিদ বলেছেন: অনেকদিন নাতো। মাত্র ১ বছর পর আসলাম
অনেক ধন্যবাদ
২| ০৩ রা মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩
মহানাজমুল বলেছেন: একটা ভালো গল্প পড়লাম
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮
রাইসুল আবিদ বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারো ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
৩| ০৩ রা মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মজা পেলাম।
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৮
রাইসুল আবিদ বলেছেন: মজা ছাড়া কী আছে জীবনে?
ধন্যবাদ
৪| ০৩ রা মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫১
ইমাম উদদীন বলেছেন: Kalponik
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫
রাইসুল আবিদ বলেছেন: জ্বী কাল্পনিক। রম্যগল্পের মাধ্যমে প্রেমে পড়লে সহজ সরল ছেলেদের মনের অবস্থা কেমন হয় সেটা তুলে ধরার চেস্টা করেছি এবং মেয়েদের ভয়ংকর ফেসবুকাসক্তি এবং ভার্চুয়াল লাইকের প্রতি মোহের ব্যাপারটাকে ব্যাঙ্গ করেছি।
ধন্যবাদ
৫| ০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লাগল।
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৮
রাইসুল আবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: জারিনের চোখের সামনে শুভ্রের স্ট্যাটাসটা ভাসছে,"তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম তোমার জন্য।শুধু তোমার জন্য।"''---------- ভাল লেগেছে ---
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭
রাইসুল আবিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৭| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ফেসবুকে পড়ছিলাম। এই সময়ের বাস্তবতা এইটাই। ++
০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭
রাইসুল আবিদ বলেছেন: হুম। আগে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম । আসলেই মানুষগুলো ফেসবুককে দুনিয়া ভাবতে শুরু করেছে।
অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:২২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আরে অনেকদিন পর! লেখা ভালো লেগেছে।