নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম \n\nনামঃ মোঃ ওয়ালিউল্লাহ কাউসার \n\nদেখতে এত স্মার্ট নয় কিন্তু এতটাও কম নয়

মোঃ ওয়ালিউল্লাহ কাউসার

মোঃ ওয়ালিউল্লাহ কাউসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামলার ইতিবৃত্ত : পেছন ফিরে দেখা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪

মামলার ইতিবৃত্ত : পেছন ফিরে দেখা
মাওলানা নিজামীর আপিলের রায় ৬ জানুয়ারি


জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায় দেয়া হবে আগামী ৬ জানুয়ারি। সরকারপক্ষের যুক্তি খণ্ডনের পর আপিল বিভাগ রায়ের এ দিন নির্ধারণ করেন।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন। এর আগে সরকার পক্ষের যুক্তিখণ্ডন করেন মাওলানা নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সরকারপক্ষে উপস্থিত ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন মাওলানা নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এজলাস থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া যায় না। ১৯৭১ সালে তিনি ২০ বছরের যুবক ছিলেন। এ কারণে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন বলে যে অভিযোগ আছে, তা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি।’

অন্যদিকে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত থাকলেই যে শাস্তি হবে, এমন কোনো কথা নেই। উস্কানিমূলক কথা বা আচরণের জন্যও শাস্তি হতে পারে।

শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রসিকিউশন মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এনেছে তা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে রাজাকার ও আল বদরে জড়িত থাকার কোন ডকুমেন্ট নেই।

এরপর প্রধান বিচারপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনকে কয়েকটি প্রশ্ন করে বলেন, নিজামী তার বক্তব্যে মাধ্যমে অপরাধের ইন্ধন দিয়েছে কি না? আমরা যদি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স যদি পাই। পুরতন এভিডেন্স তথা ’৭১ এর এভিডেন্স বেশি গুরুত্ব দেব। ওই সময়ের পত্রিকার রিপোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, দন্ডবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধের সহযোগী হলেও সমান দোষে দোষী হতে হয়।

জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নিজামী কোন অপরাধ সংগঠনের ইন্ধন দেননি। এমন কোন এভিডেন্স নেই। তিনি ওইসময় যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাজনৈতিক বক্তব্য। রাজনৈতিক নেতা দাঁড়ালে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, অপরাধের সহযোগী হিসেবে প্রসিকিশনের চারটি অভিযোগ (১১, ১২, ১৩ ও ১৪) থেকে ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে খালাস দিয়েছেন। এসব অভিযোগে ছিল আমি বক্তব্য, বিবৃতি দিয়ে উসকানি দিয়েছি। কিন্তু এসব বিষয় বিশ্বাসযোগ্য ও প্রমাণিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে খালাস দিয়েছেন।

এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা আপিল বিভাগ চাইলে সবকিছু শুনতে পারি। অর্থাৎ খালাস পাওয়া চার্জগুলোর (অভিযোগ) বিষয়ে শুনতে পারব।

জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নিজামী সরাসরি জড়িত ছিলেন বা উসকানি দিয়েছেন, এ ধরনের তথ্য-প্রমাণ কোথায়? প্রসিকিউশন তো তা দিতে পারেনি।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তা দেখছি।

এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ইউটিউবে প্রসিকিউশনের ১৪তম সাক্ষী বলেছেন, ঘটনায় নিজামী জড়িত ছিলেন না। আমরা সে ভিডিওটি আপনার কাছে জমা দিয়েছি।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের এসব নথি আমরা দেখব।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ’৭১ সালে পাকিস্তান আর্মি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। নিজামী তাদের সাথে ছিলেন এমন কোন এভিডেন্স নেই। পাকিস্তান আর্মির ১৯৫ জনের মধ্যে যারা সরাসরি হত্যায় অংশ নিয়েছে, তাদের বিচার হচ্ছে না। অথচ রাজনৈতিক কারণে আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলাম।

এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে সহযোগীদেরও বিচার ও শাস্তি দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

এসময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ’৭১ সালে নিজামী ২০ বছরের একজন যুবক ছিল। মূল আসামিদের বাদ দিয়ে সহযোগী হওয়ায় দন্ডবিধি অনুযায়ী আমাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, আমার শেষ কথা হল- যেহেতু সরাসরি তিনি জড়িত নন, তাই তাঁকে যেন খালাস দেয়া হয়। তার পরও আদালত যদি মনে করেন প্রসিকিউশনের কোনো অভিযোগ আমলে নেবেন, তাহলে তাঁকে যেন গুরু দন্ড না দেয়া হয়।

আদালতে মাওলানা নিজামীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট এস এম শাহজাহান। খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহায়তা করেন এডভোকেট মো.শিশির মনির ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।

গত ২ ডিসেম্বর ডিফেন্স পক্ষে যক্তি উপস্থাপন করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চারটি অভিযোগে মাওলানা নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন এই অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে পারেনি। বলা হয়েছে- তিনি আর্মিদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছেন। ধান ক্ষেতে তেঁতুল গাছের নিচে লুকিয়ে সাক্ষীরা পাকিস্তান আর্মিদের আসতে দেখেছে। অথচ তখন পাকিস্তান আর্মি আসার কথা শুনলে মানুষ পালিয়ে যেত। তখন পুলিশের তথ্য না নিয়ে পাকিস্তান আর্মি মুভ করত না। পাকিস্তান আর্মি কোথাও গেলে পুলিশকে জানিয়ে যেত এবং পুলিশ পথ দেখিয়েছে আর আর্মি সেই পথে গিয়েছে। নিজামীর মতো একজন ১৯ বা ২০ বছরের ছেলের পক্ষে পাকিস্তান আর্মিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা অবাস্তব। তার পক্ষে পাকিস্তান আর্মিকে কমাণ্ড করাও সম্ভব ছিল না।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এই লোকগুলো, রাজাকার মুজাহিদরা না থাকলে পাকিস্তান আর্মি ১০ মাস কেন, তিন মাসও থাকতে পারত না।

এসময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পাকিস্তানী আর্মিদের সহযোগিতা করেছে এদেশের পুলিশ। পুলিশ মুভ না করলে পাকিস্তানী আর্মি আসতো না। তাদের যদি পথ না দেখাতো তাহলে পাকিস্তানী আর্মির বাংলাদেশের এলাকাগুলো চেনার কথা নয়। মাওলানা নিজামীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের পর তিনি (নিজামী) ছাত্র সংঘের দায়িত্বে ছিলেন না। দায়িত্ব ছাড়ার আড়াই মাস পর বুদ্ধিজীবী হত্যা সংঘটিত হয়।

ওইদিন মাওলানা নিজামীর অপর আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান স্বীকার করেছেন, ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী আল বদর কমান্ডার ছিলেন কি-না, এ ব্যপারে কোন দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। সে সময় নিজামী কখনও পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা রাজাকার কমান্ডারদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন কি-না, এ মর্মেও কোন দালিলিক প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, পাবনার সাঁথিয়া এলাকায় একটি মামলায় নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে মাওলানা নিজামীর পাবনায় উপস্থিতির বিষয়ে কোন দালিলিক প্রমাণ বা এ মর্মে কোন পত্রপত্রিকার সংবাদ নেই বলেও স্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এসএম শাহজাহান আদালতে আরও বলেন, ১৯৮২ সালের রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কখনও কোন মামলা হয়নি। মাওলানা নিজামীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে এ সময় তার খালাস দাবি করেন তার আইনজীবী এস.এম শাহজাহান।

গত ২৫ নবেম্বর পেপারবুক উপস্থাপন শেষ হলে মাওলানা নিজামীর আপিলের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে সময়সীমা বেঁধে দেন আপিল বিভাগ। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ নবেম্বর এবং ১ও ২ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ডিফেন্সপক্ষ। আর গত সোমবার প্রসিকিউশন পক্ষে এটর্নি জেনারেল যুক্তি উপস্থাপন করেন। গতকাল মঙ্গলবার তার যুক্তির জবাব দিলেন মাওলানা নিজামীর কৌঁসুলী।

গত ৯ সেপ্টেম্বর এই আপিলের শুনানি শুরু হয়েছিল। ওইদিন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করেন। পরে মাওলানা নিজামীর এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীন তুহিন পেপারবুক পড়েন। মাঝে সুপ্রিম কোর্টের দেড় মাসের অবকাশ ছুটি থাকায় শুনানি ২ নবেম্বর পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়। ওইদিন আংশিক শুনানি হয়। পরদিন ৩ নবেম্বর মাওলানা নিজামীর আপিলের শুনানির দিন ধার্য থাকলেও ওই দিন আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি অনুপস্থিত থাকায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর গত ১৭, ১৮, ২৩, ২৪ ও গতকাল মিলিয়ে ৬ কার্যদিবসে পেপারবুক উপস্থপান শেষ হয়।

গত বছরের ২৩ নবেম্বর মাওলানা নিজামীর খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল আবেদন দায়ের করেন তার আইনজীবীরা। ১২১ পৃষ্ঠার মূল আপিল আবেদনে ১৬৮টি যুক্ত দেখিয়ে মাওলানা নিজামীর খালাস চাওয়া হয়। আবেদনে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র রয়েছে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দায়ের করা মোট ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ৮টিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে ৪টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ৪টি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া বাকি ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মাওলানা নিজামীকে অভিযোগগুলো থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

২ নম্বর অভিযোগ-রুপসী, ডেমরা ও বাউশগাড়ী হত্যাকাণ্ড : অভিযোগ অনুযায়ী এ ঘটনায় প্রায় ৪৫০ লোককে হত্যা করা হয়েছে, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে এবং নারী নির্যাতন করা হয়েছে। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যদণ্ড দিয়েছে।

ডিফেন্সপক্ষের বক্তব্য হলো প্রসিকিউশনের সাক্ষী মোঃ আইনুল হক একাত্তরের ১৪ মে কথিত হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় মাওলানা নিজামীকে উপস্থিত ছিলেন-এ ধরনের কোন বর্ণনা দেননি। তিনি ঘটনার দিন শান্তি কমিটি গঠনের বিষয়ে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেননি। কাজেই মতিউর রহমান নিজামী সম্পর্কে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসিকিউশনের সাক্ষী শামসুল হক নান্নু এ-তো বেশী অসত্য তথ্য ট্রাইব্যুনাল এবং তার বাইরে প্রদান করেছেন। তাকে বিশ্বাস করার কোন সুযোগ নাই। উপরন্তু তার বক্তব্য যে কতটা অসাড় তার প্রমাণ হলো তার নিজের বক্তব্য-‘২৪ মার্চ পাবনা আলিয়া মাদরাসার নিকটবর্তী দোকানদার সেকেন্দার আলীর নিকট থেকে জানতে পারি যে ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ইছহাক, রফিকুন নবী ওরফে বাবলু পাবনা আলিয়া মাদরাসায় বসে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য একটি স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠন করে” অর্থাৎ স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠনের কথা তিনি বলেছেন, এটি হাস্যকর বক্তব্য। আর দুই বছর বয়সে মাওলানা নিজামীকে বোয়াইলমারী মাদরাসায় পড়তে দেখা। প্রসিকিউশনের সাক্ষী জামাল উদ্দিন-এর এই ঘটনা সম্পর্কে কোন প্রত্যক্ষ জ্ঞান নাই। তিনি সাক্ষী মো.আইনুল হক ও শামসুল হক নান্নুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন। এই দু’জনের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তাকেও বিশ্বাস করা যায় না। সাক্ষী জহুরুল হক এই মামলার তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পরে প্রসিকিউশনের সাজানো সাক্ষী হিসাবে হাজির করায় তাকে বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তদুপরি তিনি দাবি করেন ঘটনার রাত্রে তিনি বাউশগাড়ি শহীদ আব্দুল জব্বারের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান পরিষ্কার জানিয়েছেন বাউশগাড়ী গ্রামে আব্দুল জব্বার নামে ঐদিন শহীদ কোন ব্যক্তির নাম তিনি পান নাই। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাথে তার দেখা হওয়ার বিষয়েও মিথ্যাচার করেছেন। কারণ তার মতে ১৭ মে, ২০১৩ তারিখের আগে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা হয় নাই, দেখা যায় তিনি মূল তদন্তের সময় ২০১০ এর ৬ নবেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করেছেন অথচ ঐ সময় তিনি জবানবন্দী দেননি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি একজন মিথ্যাবাদী ও সাজানো সাক্ষী।

৪ নম্বর অভিযোগ-করমজা হত্যাকাণ্ড : এই অভিযোগে বলা হয় ২৪-২৫শে এপ্রিল মাওলানা নিজামী কর্তৃক গ্রামবাসীকে হুমকি প্রদান, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও আক্কাসকে হত্যা করা এবং ১৯৭১ সালের ৮ মে করমজা গ্রামে ভোর বেলায় মেঘা ঠাকুরের বাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ৮ জনকে হত্যা করা। অভিযোগটিতে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

ডিফেন্সপক্ষে বলা হয় প্রসিকিউশনের সাক্ষী নাজিম উদ্দিন খাত্তাব তার জবানবন্দীতে ২৫ এপ্রিল মাওলানা নিজামীকে বোর্ড অফিসে মিটিং করতে দেখা, একাত্তরের ২৮ এপ্রিল সকাল ৮টার পরে মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও আক্কাসকে রাজাকার দালাল আফজালসহ অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক হত্যা করার ঘটনা শোনার কথা এবং একাত্তরের ৮ মে করমজা গ্রামের গণহত্যা, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মেঘাঠাকুরের বাড়িতে ৮ জনকে হত্যা এবং তার মেয়ে ও পুত্রবধূকে ধর্ষণ করার বর্ণনা দিয়েছেন এবং নিজেকে তিনি আংশিক প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে দাবি করেছেন। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম না থাকা এবং পরবর্তী তালিকায় তার নাম আসার আশ্বাস প্রমাণ করে তিনি নিরপেক্ষ সাক্ষী নন। সাক্ষী তার বক্তব্যে বলেছেন যে, মাওলানা নিজামী তার নিজ এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন। তার বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে তিনি মাওলানা নিজামীকে ১৯৭১ সালে চিনতেন না, কারণ প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি সারা দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। এছাড়া ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের ১০-১১ তারিখে রাজাকার আলবদর ক্যাম্প দেখা থেকেই প্রমাণ হয় তিনি সত্য কথা বলেননি, কারণ রাজাকার বাহিনী স্বীকৃত মতে গঠিত হয়েছে মে মাসের পরে। তিনি ঘটনাস্থলে আবু সামা ফকিরের সাথে তার দেখা হওয়ার কথা দাবি করলেও আবু সামা ফকির তার সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, পাক আর্মিদের ভয়ে তিনি তার শহীদ মামা হাবিবুর রহমানের জানাযায় অংশ গ্রহণ করেননি, অথচ লুকায়িত স্থান থেকে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তির শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন। তিনি মেঘা ঠাকুরের বাড়িতে সংঘটিত অপরাধের দুই পর্যায়ে উপস্থিত থাকার কথা বললেও ঘটনার কথা শুনে মেঘা ঠাকুরের বাড়িতে উপস্থিত হওয়া আবু সামা ফকিরের বক্তব্য অনুযায়ী তারও পরে নাজিম উদ্দিন খাত্তাব তথায় উপস্থিত হন। কাজেই তাকে বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারণ নাই। সাক্ষী প্রদীপ কুমার দেব মাওলানা নিজামী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মর্মে সাক্ষ্য না দেয়ায় প্রসিকিউশন পক্ষ বৈরী ঘোষণা করলেও তিনি অসত্য বলেছেন এমন কোন তথ্য বের করতে পারেন নাই। এছাড়া এই সাক্ষী একজন স্বীকৃত প্রত্যক্ষদর্শী, কাজেই তার বক্তব্য অবিশ্বাস করার সুযোগ নাই। সাক্ষী জামাল উদ্দিন ২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর উপস্থিতিতে মেঘাঠাকুরের বাড়ি থেকে মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধারের বর্ণনা করেন। তিনি স্থানীয় লোকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান যে, মাওলানা নিজামীর নেতৃত্বে ঐ হত্যাকাণ্ড ঘটে। অর্থাৎ তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন। তিনি দাবি করেছেন, তিনি ১৯৭১ সাল থেকেই ঘটনা জানতেন। যদি তাই হয়, তাহলে ২০০০ সালে ঘটনার বিষয়ে লোকজনের নিকট থেকে ঘটনার কথা নতুন করে শোনার কথা নয়। ঐ সময়ে থানায় দায়ের করা জি.ডিতে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উল্লেখ না করায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই সাক্ষী অসত্য বক্তব্য প্রদান করেছে। সাক্ষী আবু সামা ফকির এর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তাকে প্রসিকিউশন মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে এই মামলায় সাক্ষী করেছে এবং বিচারের শেষ পর্যায়ে ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পরে তৃতীয় দফার অতিরিক্ত সাক্ষী হিসাবে ২০১৩ সালের ১৭ মে শিখিয়ে পড়িয়ে এই মামলায় সাক্ষী মান্য করে। প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী এই চার্জের ঘটনা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটলেও আবু সামা ফকির নিজেকে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে দাবি করেছেন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে, তিনি কথিত ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী, তাহলে অবশ্যই এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের মুখে মুখে থাকার কথা এবং তাকে যাচাই বা সাক্ষী করার জন্য মামলার শেষ পর্যায় পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোন যৌক্তিকতা নাই। এছাড়াও তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী অথচ ঘটনা ঘটার আগেই তার উদ্ধৃতি দিয়ে নাজিম উদ্দিন খাত্তাব ঘটনা শুনে ফেললেন। সুতরাং তাকে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ দেখা যায় না। এ ছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি মতে দেখা যায় যে, মাওলানা নিজামী করমজা গ্রামে উপস্থিত ছিলেন না। নাজিম উদ্দিন খাত্তাব আবু সামা ফকিরের কাছ থেকে শুনে তার মামা হাবিবুর রহমান ও আক্কাসের হত্যাকা-ের যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সাথে আবু সামা ফকিরের বর্ণনার গুরুত্বপূর্ণ বৈপরীত্য রয়েছে। আবু সামা ফকিরের বর্ণনা অনুযায়ী আর্মিরা গাড়ীতে করে এসে তেঁতুল গাছের নিচে হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় আর নাজিম উদ্দিন খাত্তাবের বর্ণনা মতে রাজাকার এবং দালাল আফজাল ও অন্যান্য রাজাকার এবং আর্মিরা বাস স্ট্যান্ডের নিকটে ধরে হত্যা করে। আবু সামা ফকিরের বর্ণনাটি প্রসিকিউশনের আনুষ্ঠানিক চার্জ এবং ট্রাইব্যুনালের চার্জ গঠনের আদেশের ঘটনাকেন্দ্রিক বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, আর্মির গাড়ি ও তেঁতুল গাছের কথা ফরমাল চার্জ, চার্জ গঠনের আদেশ ও সাক্ষী নাজিমউদ্দিনের বক্তব্যে নেই। নাজিম উদ্দিন খাত্তাবের মতে আবু সামা ফকিরের সাথে তার দেখা হয় ঘটনাস্থলে আর আবু সামা ফকিরের মতে নাজিম উদ্দিন খাত্তাবের নানা বাড়িতে খবর দিয়ে সে বাড়ি চলে যায় এবং সারাদিন আর তিনি ঘটনাস্থলে আসেননি। এ রকম গুরুতর বৈপরীত্য থাকার দরুন এই দুই সাক্ষীর কাউকেই বিশ্বাস করার কোন সুযোগ নেই। শহীদ হাবিবুর রহমান ও শহীদ আক্কাসের নাম প্রসিকিউশনের দাখিলি শহীদ ব্যক্তিবর্গের তালিকায় না থাকাই প্রমাণ করে ঐ সময় হাবিবুর রহমান ও আক্কাস নিহত হন নাই। সর্বোপরি সাক্ষীদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এবং ঘটনার স্বীকৃত প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে সাক্ষী মান্য না করা এবং স্বীকৃত প্রত্যক্ষদর্শী প্রদীপ কুমার দেবকে বৈরী ঘোষণা করাই প্রমাণ করে প্রসিকিউশনের বর্ণনা মতে ২৮ এপ্রিল এবং ৮ মে’র ঘটনা ঘটেনি। উপরন্তু প্রসিকিউশন ও ডিফেন্স পক্ষের অন্যান্য বর্ণনা ও ডকুমেন্ট অনুযায়ী বলা যায় হাবিবুর রহমান মেঘা ঠাকুরের বাড়ির ঘটনার সাথে নিহত হয় যা ৮ মে সংঘটিত হয়- কোনক্রমেই ২৮ এপ্রিলে নয় যার প্রমাণ প্রদর্শনী এবং প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত এম এ হাসানের ‘যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ’ বইয়ের ২৪৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

৬ নম্বর অভিযোগ-ধুলাউড়ি হত্যাকাণ্ড : অভিযোগ হলো-একাত্তরের ২৭ নবেম্ব রাত সাড়ে তিনটায় মাওলানা নিজামী কর্তৃক রাজাকার ও পাক বাহিনী সাথে নিয়ে ধুলাউড়ি গ্রামের আব্দুল আউয়াল সাহেবের বাড়িতে ঘেরাও দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে ভোর সাড়ে ৬টায় পুরুষ মহিলা ও শিশুদেরকে ধুলাউড়ি স্কুলে নিয়ে ৩০ জনকে হত্যা। পরে রাজাকারদের সাথে নিয়ে ২২ জনকে ইছামতি নদীর তীরে নিয়ে হত্যা। এর শিকার ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তি (আন আর্মড সিভিলিয়ান)। এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের বক্তব্য হলো-প্রসিকিউশন সাক্ষী এবং তদন্তকারী কর্মকতার ভাষ্য মতে, উক্ত ঘটনাটি দু’ পক্ষের একটি যুদ্ধের মাঝে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ড এবং যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সুতরাং অভিযোগের বক্তব্য, ‘নিহত সকলে আন আর্মড সিভিলিয়ান ছিলেন’ এটা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অন্যান্য সাক্ষীদের বক্তব্য অনুযায়ী সত্য নয়। প্রথমত উক্ত চার্জের সাক্ষী মোঃ শাহজাহান আলীর মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৮ নবেম্বরের আগে মাওলানা নিজামীকে আমি দেখেছি, আনোয়ারুল হকের নির্বাচনী জনসভায়। নির্বাচনী জনসভা গৌরী গ্রামে হয়েছিল। গৌরী গ্রামটি সাঁথিয়া থানাধীন, আমার গ্রাম থেকে ৫ মাইল দূরে। এই জনসভা শুনতে আমি যাই নাই।’ তিনি যদি জনসভায় না-ই যান তবে সেই জনসভায় মাওলানা নিজামীকে কিভাবে দেখলেন? সতরাং তিনি জেরায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, তিনি টিভি চ্যানেলে অনেকবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তবে তিনি দিগন্ত টি.ভি, চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন কিনা মনে করতে পারেন নাই। দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার স্মরণশক্তি কমে গিয়েছে, কখন কি বলেন তা মনে থাকে না বলে তিনি দাবি করেন। তবে তিনি সেই সাক্ষাৎকারসমূহে ‘১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে তিনি মাওলানা নিজামীকে দেখেননি’ বলে বলেছিলেন সেটা অস্বীকার করেন। ডিফেন্স সেই সাক্ষাৎকারসমূহের ভিডিওসমূহ প্রদর্শন করেছে। সেখানে দেখা যায় যে, তিনি মাওলানা নিজামীকে ১৯৭১ সালে দেখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এই সাক্ষী শপথ করে কাঠগড়ায় এসে তার পূর্বোক্ত সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলায় তার সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কোন কারণ নেই। উপরন্তু তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন তার স্মরণশক্তি কমে গেছে তিনি কখন কি বলেন তা মনে থাকে না। সুতরাং ৪৩ বছর আগের বিষয়ে এধরনের স্মৃতিশক্তিহীন ব্যক্তির সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি জেরার জবাবে বলেছেন, তিনি পাবনা সাঁথিয়ার মিয়াপুর হাজি জসিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি পাস করেছেন। অথচ তিনি তার জবানবন্দীতে বলেছেন, তিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আহত হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলে ৪ বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বলেছেন, তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর সর্বপ্রথম পাবনায় ১৯৭৫ সালে যান। অতএব তিনি হয় ১৯৭২ সালে পাবনার একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন অথবা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ৪ বছর অবস্থান শেষে ১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম পাবনা যাওয়ার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন। সুতরাং এই স্ব-বিরোধী ও সাংঘর্ষিক বক্তব্য প্রদানকারী সাক্ষী বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং তার জবানবন্দী গ্রহণযোগ্য নয়। এই সাক্ষী জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ব্যাংক ডাকাতীতে সহযোগী তার অভিযোগে সোনালী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত হন। তিনি এই চাকরিচ্যুতির আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল করেননি। সুতরাং এই সাক্ষী অসৎ এবং তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি তার জবানবন্দীতে বলেছেন যে, তার সাথে যেসকল মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের মধ্যে তাকে ছাড়া তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। অথচ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, শাহজাহান ছাড়াও আরও একজন বেঁচে যান তার নাম মাজেদ। সাক্ষী শাহজাহান আলী পরে স্বীকার করেন যে, মাজেদ এখনও জীবিত আছেন। এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি অসত্য তথ্য দেয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত উক্ত অভিযোগের সাক্ষী মোঃ খলিলুর রহমানের মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে দেয়া বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ তিনি বলেছেন, ২৭ নবেম্বর দিবাগত রাতে রাত সাড়ে ৩টায় চাঁদের আলোয় তিনি মাওলানা নিজামীকে দেখেছেন। অথচ ঐদিন বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী চন্দ্র অস্ত গিয়েছিল রাত ১টা ২৩ মি. ৫৪ সেকেন্ডে। সুতরাং তার চাঁদের আলোয় মাওলানা নিজামীকে দেখার বিষয়টি অসত্য। তার বক্তব্য অনুযায়ী তার সহযোদ্ধাদের মধ্যে ২ জন (শাহজাহান ও মাজেদ) বাদে সকলে ঐদিন নিহত হন। পরে তিনি বলেন, উক্ত ২ জন এবং কুদ্দুস ছাড়া তার গ্রুপের বাকী সবাই নিহত হন। পরে তিনি বলেন, উক্ত তিন জন ছাড়াও তার গ্রুপের সালাম ঐদিন বেঁচে যায়। একই সাথে তার তিন ধরনের বক্তব্য প্রদান থেকেই বুঝা যায় তিনি অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনাস্থল ধুলাউড়ি গ্রামে তার আত্মীয় গফুর সাহেবের বাড়িতে তিনি ১৯৭১ সালে যাতায়াত করতেন। কিন্তু তিনি একই সাথে উক্ত গফুর ঐ সময় বিবাহিত নাকি অবিবাহিত ছিলেন বলতে ব্যর্থ হন। তিনি যদি ঐসময়ে তার উক্ত আতœীয়ের বাড়িতে সত্যই বেড়াতে যেতেন তবে তিনি অবশ্যই বলতে পারতেন উক্ত আত্মীয় ঐসময়ে বিবাহিত না অবিবাহিত ছিলেন। সুতরাং বলা যায় ঐ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.